1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্য

শিশুমৃত্যু রাজনৈতিক সমস্যা?

১৩ মার্চ ২০১৮

মাঝে মাঝেই হাওয়া ওঠে৷ রাজনীতি থেকে সমাজ সকলেই শিশুমৃত্যু নিয়ে শোরগোল ফেলে দেয়৷ তারপর আবার যেই কে সেই৷ ভারতে শিশুমৃত্যু নিয়ে কি আদৌ ভাবিত কেউ? কন্যা সন্তানদেরই বা অবস্থা ঠিক কী?

Indien Uttar Pradesh Krankenhaus Kind mit Sauerstoffmaske
ছবি: Imago/Hindustan Times/D. Gupta

শিশুমৃত্যু বরাবরই ভারতের একটি বড় সমস্যা৷ এবং আশঙ্কার বিষয়ও বটে৷ যদিও সাম্প্রতিক বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সমীক্ষা বলছে, ভারতে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কমেছে৷ তবে তা এখনো আশাপ্রোদ নয়৷ ইউনিসেফ এবং ল্যানসেটের হিসেব অনুযায়ী, ১৯৯০ সালে যেখানে প্রতি হাজারে ভারতে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১২৫, ২০১৫ সালে সেই সংখ্যাটা চল্লিশের ঘরে এসে ঠেকেছে৷ ২০১৭ সালে সেই সংখ্যা আরো কমেছে বলেই তাঁদের মত৷ কিন্তু প্রতি হাজারে ৩০-৪০টি শিশুর মৃত্যুও মোটেই খুব আনন্দের খবর নয়৷ যেখানে সরকারের দাবি অনুযায়ী, দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এখন যে কোনো পশ্চিমি দেশের সঙ্গে তুলনীয়৷ মনে রাখা দরকার, শিশু মৃত্যুর এই গোটা পরিসংখ্যানই কিন্তু ১ থেকে ৫৯ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের ধরে৷ কিন্তু এর বাইরেও শিশুমৃত্যুর বহু ঘটনা ঘটছে৷ সমীক্ষায় যা সবসময় উঠে আসে না৷

শিশুমৃত্যুর কথা উঠলেই মনে পড়ে যায় সাম্প্রতিক অতীতে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের ঘটনা৷ যে অঞ্চলের মানুষ উত্তরপ্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ৷ গত বছরের অগস্ট মাসে সেখানকার একটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে ২৯০টি শিশুর মৃত্যু হয়৷ যা নিয়ে তোলপাড় পড়ে গিয়ছিল দেশ জুড়ে৷ অভিযোগ, সময় মতো অক্সিজেন দিতে না পারার কারণেই ওই শিশুদের মৃত্যু হয়৷ যাদের অনেকেই ভর্তি ছিল ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে৷ এবং বাকিরা এনকেফেলাইটিস ইউনিটে৷ অভিযোগ, হাসপাতালটি অক্সিজেনের বিল মেটায়নি বলে নতুন অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয়নি সেখানে৷ এবং তার ফলেই অতগুলি শিশুর মৃত্যু হয়৷ গাফিলতির অভিযোগ ওঠে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে৷ কিন্তু এখনো পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ কারণ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগের অভিযোগও আছে৷

সমস্যা হলো, ভারতের সমস্ত কিছুই এখন রাজনৈতিক হয়ে গিয়েছে৷ শিশু মৃত্যুর ওই ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজনৈতিক মঞ্চ৷ যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন বিপক্ষের রাজনীতিকেরা৷ আবার আদিত্যনাথও বিরোধীদের জবাব দিতে অন্যান্য রাজ্যে শিশু মৃত্যুর পরিসংখ্যান দিতে শুরু করেন৷ বিতর্কের প্রবল উত্তাপে হারিয়ে যায় মূল সমস্যাটি৷ কেউ তদন্ত করে দেখলেন না. কেন এভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিশুমৃত্যু ঘটছে৷

ভারতে শিশুমৃত্যুর পিছনে আসলে অনেকগুলি কারণ দায়ী৷ বহু সংস্থা বহুবার সেই কারণগুলির দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করেছে৷ কিন্তু সরকার কখনোই সেভাবে সাড়া দেয়নি৷ শিশুদের নিয়ে কাজ করে ‘ক্রাই'৷ তাদের এক আধিকারিকের মতে, মায়ের স্বাস্থ্য নিয়ে এ দেশে এখনো সেভাবে সচেতনতা গড়ে ওঠেনি৷ গ্রামাঞ্চলে বহু মা অপুষ্টিতে ভোগেন৷ ফলে তাঁরা যে শিশু প্রসব করেন, জন্ম থেকে সেই শিশুরাও অপুষ্টির শিকার হয়৷ বহু শিশু সেই কারণেই মারা যায়৷ এছাড়া, বহু প্রত্যন্ত গ্রামে এখনো চিকিৎসক পৌঁছয়নি৷ স্বাস্থ্য শিবির থাকলেও নেই ন্যূনতম পরিকাঠামো৷ ফলে এখনো দাই বা গ্রামীণ বৃদ্ধাদের হাতে সন্তানপ্রসব হয়৷ বহু শিশুর মৃত্যু হয় সেখানেও৷ চিকিৎসকের কাছে পৌঁছাতেই পারেন না মায়েরা৷ আবার অনেক সময়, সন্তান প্রসব হলেও জন্মের ঠিক পর শিশুদের সাধারণ রোগগুলির চিকিৎসার জন্যও অনেক সময় চিকিৎসক পাওয়া যায় না৷ সাধারণ জন্ডিস কিংবা জ্বরেও শিশুদের মৃত্যু হয়৷

সাধারণ এই কারণগুলির বাইরেও কিছু ঘটনা থেকে যায়৷ কোনো পরিসংখ্যানে যা পাওয়া যায় না৷ ভারতের বহু গ্রামে, বিশেষত উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানার মতো অঞ্চলে কন্যা সন্তানকে মেরে ফেলার প্রবণতা এখনো বহাল৷ ভারতে বহুবছর আগে আইন করে জন্মের আগে ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ বন্ধ হয়েছে৷ কিন্তু গ্রামে গ্রামে সেই ব্যবস্থা এখনো আছে৷ বহু ভ্রুণকে জন্মের আগেই মেরে ফেলা হয়৷ বছরকয়েক আগে তেমনই কিছু ভ্রুণের সন্ধান মিলেছিল উত্তরপ্রদেশের একটি ভ্যাটে৷ অনেক সময় আবার কন্যা সন্তানের জন্ম হওয়ার পরেই তাকে মেরে ফেলা হয়৷ প্রতি বছর কত সংখ্যক কন্যা সন্তানকে মারা হচ্ছে, এখনো পর্যন্ত তার নির্ভরযোগ্য কোনো সংখ্যা না মিললেও, সংখ্যাটি নেহাত কম নয়৷ প্রতি হাজারে শিশু মৃত্যুর সংখ্যার সঙ্গে সেই সংখ্যাটিও জুড়লে দেখা যাবে ভারতে শিশু মৃত্যুর পরিস্থিতি ভয়াবহ৷

স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলেছবি: privat

কিন্তু কীভাবে এই সমস্যা থেকে বেরনো সম্ভব? বিশেষজ্ঞদের মত, সামগ্রিকভাবে সামাজিক স্তরে সংস্কারের কাজ না চালাতে পারলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়৷ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক আক্ষেপ করে বলেছেন, গ্রামে গ্রামে গিয়ে কাজ করতে চান সব চিকিৎসকই৷ কিন্তু পরিকাঠামো না থাকলে কোথায় যাবেন তাঁরা? শহরের হাসপাতালে চিকিৎসা করলে অনেক বেশি মুনাফাও হয়, পরিকাঠামোও পাওয়া যায়৷ গ্রামে গ্রামে চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতি ঘটাতে না পারলে এই সমস্যার সুরাহা হবে না৷ পাশাপাশি, স্বাস্থ্য নিয়ে রাজনীতি অচিরেই বন্ধ হওয়া দরকার৷ শিশু মৃত্যু নিয়ে রাজনৈতিক কোন্দল বন্ধ করার জন্য সকলের সমান আগ্রহ দেখানো উচিত৷ এবং তৃতীয়ত, কন্যা সন্তানের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে হবে৷ ছেলে মেয়ের মধ্যে তফাত করার প্রবণতা যতদিন সমাজে থাকবে, কন্যাভ্রুণ হত্যাও চলবে ততদিন৷ ২০০৪ সালে মণীশ ঝাঁ একটি সিনেমা বানিয়েছিলেন, ‘মাতৃভূমি'৷ যে ছবিতে দেখানো হয়েছিল, একটা সময় আসবে যখন গ্রামে গ্রামে আর কোনো মহিলা থাকবে না৷ এক ভয়াবহ কাল্পনিক জগৎ তৈরি করেছিলেন মনীশ৷ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিলেন সমাজের কদর্য দিকটি৷ ২০০৪ সালের ভারত আর ২০১৮ সালের ভারতের মধ্যে অনেক তফাত৷ বহুক্ষেত্রে বহু উন্নতি হয়েছে৷ উপমহাদেশে ভারত এখন অন্যতম বৃহৎ শক্তি৷ অর্থনীতি উন্নতি করছে লাফিয়ে লাফিয়ে৷ কিন্তু সামাজিকভাবে আমরা এগোচ্ছি তো? মনীশের সেই প্রশ্ন এখনো প্রাসঙ্গিক৷ খুবই প্রাসঙ্গিক৷ সেই প্রশ্নের উত্তর দেশ যতদিন দিতে পারবে না, শিশুমৃত্যুর হারও ততদিন কমবে না৷

ভারতের শিশুমৃত্যু নিয়ে আপনার মন্তব্য লিখুন নীচের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ