জার্মানিতে শিশুদের যৌন নিপীড়নের ৭০ শতাংশই ঘটনা ঘটে পরিবারের মধ্যে বা পরিচিত মহলে৷ বহুক্ষেত্রে মায়েরা সময়মতো হস্তক্ষেপ করেন না বলে নিপীড়ন চলতে থাকে৷
বিজ্ঞাপন
একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন জার্মানিতে শিশুদের যৌন নিপীড়নের বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখছে৷ বুধবার কমিশন তাদের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন পেশ করে৷ কমিশন ইতিমধ্যেই শত শত নিপীড়িত ও নিপীড়নের সাক্ষীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে ও এজাহার সংগ্রহ করেছে৷
কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জার্মানিতে শিশুদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে প্রধানত পরিবারের মধ্যে অথবা পরিচিত মহলে৷ এর পরেই আসে স্কুল বা অপরাপর প্রতিষ্ঠান৷
প্রধানত মেয়েরাই যৌন নিপীড়নের শিকার হয় বলে বার্লিনে প্রতিবেদনটি পেশ করার সময় জানান কমিশনের প্রধান সাবিনে আন্ড্রেসেন৷
শিশুদের যৌন নিপীড়নের ক্ষেত্রে জার্মানিতে প্রথম স্থানে রয়েছে নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্য, যার পরেই আসছে দক্ষিণের বাভেরিয়া রাজ্য৷
শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষায় যা করণীয়
শিশুদের কি প্রতিদিন গোসলের প্রয়োজন আছে? বাড়ি বা জায়গা বদল শিশুদের কতটা মানসিক চাপ বাড়ায় কিংবা অ্যান্টি-ডিপ্রেশন সেবনে কি শিশুদের আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ে? বিভিন্ন সমীক্ষার থেকে পাওয়া এ রকম নানা প্রশ্নের উত্তর থাকছে৷
ছবি: Colourbox
বাড়ি বদল শিশুদের মানসিক চাপ বাড়ায়
মা-বাবার চাকরি বা অন্য কোনো কারণে যেসব শিশুর ঘন ঘন বাড়ি বদল করতে হয়, তারা মানসিক চাপে ভোগে৷ এই তথ্যটি এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জার্নাল অফ অ্যাডোলেসেন্ট হেল্থ ম্যাগাজিনে৷ সেনা পরিবারের মোট ৫ লক্ষ শিশুদের নিয়ে এক সমীক্ষা চালিয়েছিল তারা৷ দেখা গেছে, বাড়ি বা জায়গা বদলের কারণে অনেক শিশুকেই পরে মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Sachs
সূর্যের আলো দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়
যেসব শিশু বাইরে মুক্ত হাওয়ায় খেলাধুলা করে এবং যথেষ্ট আলো পায়, তাদের চোখের দৃষ্টি ভালো থাকে৷ কারণ শিশু বয়সেই চোখের স্বাস্থ্য গঠনের জন্য আলো প্রয়োজন৷ এই তথ্যটি জানা গেছে এক আন্তর্জাতিক গবেষক দলের করা সমীক্ষার ফলাফল থেকে৷ চীনে গ্রীষ্মকালের চেয়ে শীতকালে শিশুদের চোখ বেশি খারাপ হয়৷ স্মার্টফোন এবং কম্পিউটার ব্যবহারের কারণে শিশুদের চোখের দিকে বিশেষভাবে নজর রাখার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Mazraawi
প্রতিদিন গোসলের কোনো প্রয়োজন নেই !
শিশুদের গোসল করানো সহজ কাজ নয়, যদিও অনেক মা-বাবার ধারণা প্রতিদিনই শিশুদের গোসল করা প্রয়োজন৷ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিশেষজ্ঞ ড. রবার্ট সিডবুরি জানান, শিশুদের গায়ে একটু-আধটু জীবাণু থাকলে ক্ষতি নেই, বরং শরীরটা জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে শেখে এবং এর মধ্য দিয়ে ইমিউন সিস্টেমও আরো শক্তিশালী হতে পারে৷ তাই সপ্তাহে তিন-চারদিন গোসলই শিশুর জন্য যথেষ্ট৷
ছবি: Colourbox
শিশুদের স্বাস্থ্যে আপেলের গুরুত্ব
আপেলের উপকারের কথা অনেকের জানা থাকলেও প্রতিদিন হয়তো কোনো শিশুরই আপেল খাওয়া হয়ে ওঠে না৷ তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৩ হাজার শিশুকে নিয়ে করা এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, যেসব বাড়ন্ত শিশু প্রতিদিন একটি করে আপেল খায়, তাদের অতিরিক্ত ওজন বাড়া বা মোটা হওয়ার ভয় থাকে না, অর্থাৎ আপেল বেশি মোটা না হতে সহায়তা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দূষিত বাতাস, পরীক্ষার ফলাফল খারাপ
বাতাসে দূষণের মাত্রা যত বেশি, স্কুলের পড়া-লেখায় শিশুদের মনোযোগ তত কম, অর্থাৎ দূষিত বাতাসে থাকলে শিশুদের শেখার ক্ষমতা কমে যায়৷ ৭ থেকে ১০ বছর বয়সি ৩৯টি স্কুলের ২৭০০ শিশুকে নিয়ে স্পেনের বার্সেলোনা বিশ্ববিদ্যালের করা গবেষণা থেকে এই তথ্যটি বেরিয়ে এসেছে৷ তাই শিশুদের শারীরিক, মানসিক বিকাশ ও পুরো মনোযোগের জন্য চাই দূষণমুক্ত বাতাস ও সুন্দর পরিবেশ৷
ছবি: FARS
‘অ্যান্টি-ডিপ্রেশন ওষুধ’ শিশুদের কাজে দেয় না
ডিপ্রেশনে ভোগা ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সি মোট পাঁচ হাজার শিশুকে নিয়ে আন্তর্জাতিক এক গবেষক দলের গবেষণা থেকে বেরিয়ে আসা এ তথ্যটি ‘ল্যানসেট’-ম্যাগাজিনে প্রকশিত হয়েছে৷ সেখানে বলা হয়েছে, ‘অ্যান্টি-ডিপ্রেশন ওষুধ’ শিশুদের ক্ষেত্রে তেমন কাজে দেয়না, বরং এই ওষুধ সেবনের ফলে কারো কারো আত্মহত্যা করার চিন্তা বেড়ে যায়৷
যারা শৈশবে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তারা ছাড়া সাক্ষীদের মতেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিগ্রহকারী হয় শিশুটির বাবা, ভাই অথবা সৎভাই৷
এখানে মায়েদের মনোভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কেননা, মাত্র স্বল্প কয়েকটি ক্ষেত্রে মায়েরা নিগৃহীত শিশুদের কথা বিশ্বাস করে তাদের পাশে দাঁড়ান বলে জরিপে দেখা গেছে৷
মায়েরা যে তাদের সন্তানের যৌন নিপীড়ন নীরবে সহ্য করে যান, তার কারণ স্বামী বা সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কে এই সব মহিলাদের অসহায়ত্ব৷
‘‘এই রিপোর্ট থেকে মায়েদের ব্যর্থতার একটা ধারণা পাওয়া যায়, কিন্তু এ-ও দেখা যায় যে, শিশুদের যে কিভাবে সাহায্য করতে হবে, সে ব্যাপারে মায়েরা কতটা কম জানেন,'' জার্মান ডিপিএ সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন শিশুদের যৌন নিপীড়ন সংক্রান্ত কমিশনের সদস্য ইওহান্নেস-ভিলহেম ব়্যোরিশ৷
জার্মানি ও সাবেক পূর্ব জার্মানিতে শিশুদের যৌন নিপীড়নের যে নানা ধরনের পন্থা প্রচলিত ছিল, তার তদন্তের জন্য এই নিরপেক্ষ কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়৷ কমিশনের কাজ হলো, কী ধরনের পারিবারিক, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় শিশুদের যৌন অপব্যবহারের পথ খুলে যায়, তা নির্ধারণ ও চিহ্নিত করা৷
আগামী বছর এই তদন্ত কমিশন খ্রিষ্টীয় গির্জা সম্প্রদায়গুলিতে শিশুদের যৌন নিপীড়ন ও সাবেক পূর্ব জার্মানিতে শিশুদের যৌন অপব্যবহার সম্পর্কে তাদের রিপোর্ট পেশ করবে৷