ঢাকার বাংলা মোটরে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের নতুন ভবন৷ নয় তলা বিশিষ্ট এ ভবনের প্রায় ৫৭,০০০ বর্গফুট জুড়ে আছে সমৃদ্ধ পাঠাগার, চিত্রশালা, মিলনায়তন, সংগীত ও চলচ্চিত্র আর্কাইভ, অতিথি কক্ষ, বই বিক্রয় কেন্দ্র ইত্যাদি৷

বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ৷ গত প্রায় ৩৫ বছর ধরে যিনি নিরন্তর কাজ করে চলছেন আলোকিত মানুষ গড়ার লক্ষ্যে৷

বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র ভবনের ‘কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি’৷ এর সমৃদ্ধ সংগ্রহশালায় আছে প্রায় দুই লাখ বই৷ বছরে দশ হাজারের মতো পাঠক-পাঠিকা এই গ্রন্থাগার থেকে বই পড়ার সুযোগ পান৷ শুধু পাঠাগারেই নয়, এখান থেকে বই বাড়িতে নিয়ে পড়ারও সুযোগ আছে৷

বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের নানান কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম প্রকাশনা কার্যক্রম৷ এই কর্মসূচির আওতায় বাংলা ভাষাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও ভাষার শ্রেষ্ঠ বইগুলো প্রকাশ করে থাকে৷

বাংলাদেশে ভালো গ্রান্থাগার ব্যবস্থার অভাববোধ থেকেই বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র চালু করে ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার ব্যবস্থা৷ এই ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার প্রতি সপ্তাহের নির্ধারিত সময়ে শহর ও গ্রাম মিলিয়ে গড়ে ৪০টি এলাকায় গিয়ে আধঘণ্টা থেকে দু’ঘণ্টা পর্যন্ত সদস্যদের মধ্যে বই দেওয়া-নেওয়া করে৷ ১৯৯৯ সালে চালু হওয়া এই কার্যক্রম বর্তমানে বাংলাদেশের ৫৮টি জেলার ২৫০টি উপজেলার ১৯০০ লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে৷

বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরিগুলোর প্রতিটিতে কজ করেন একজন করে গ্রন্থাগারিক বা লাইব্রেরিয়ান৷ পাঠকদের কাছে বই বিতরণ, পাঠ শেষে বই বুঝে নেয়সহ ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির তদারকি করেন তাঁরা৷

বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারে সাধারণ সসদ্য ও বিশেষ সদস্য হয়ে বই পড়ার সুযোগ আছে সমাজের সব শ্রেণির, সব বয়সের মানুষের৷ সদস্যরা সপ্তাহের নির্ধারিত সময়ে এলাকায় আসা লাইব্রেরি থেকে পছন্দের বইটি বাড়িতে নিয়ে পড়ার সুযোগ পান৷

সপ্তাহের নির্ধারিত সময়ে বিভিন্ন এলাকায় যাওয়া বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারে বসেও বই পড়ার সুযোগ আছে পাঠকদের৷ এছাড়াও বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্যে আছে দেশভিত্তিক উৎকর্ষ কার্যক্রম, আলোর স্কুল, আলোর পাঠশালা, শ্রবণ দর্শন, প্রাথমিক শিক্ষকদের বই পড়ার কর্মসূচি ইত্যাদি৷

‘‘যখন নিজেকে ক্লান্ত মনে হবে বা যথেষ্ট মনোযোগ নেই পড়াশোনায়, তখন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়লে তা মনে রাখা সহজ হয়৷’’ টেক্সাসের একটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ৩০০ ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে করা এক সমীক্ষার ফলাফল থেকে এই তথ্য জানা গেছে৷ যারা দাঁড়িয়ে পড়াশোনা করেছিলো, তাদের মনোযোগ ছিলো অনেক বেশি – যারা বসে পড়াশোনা করেছিলো তাদের তুলনায়৷ তাছাড়া বন্ধুদের সাথে পড়াশোনা বা আলোচনা করলেও বেশি মনে থাকে অনেকের৷

ছোটবেলা থেকেই যারা অস্থির প্রকৃতির হয়, পড়াশোনা বা অন্য কিছুতেও তেমন আগ্রহ নেই বা মন বসাতে পারেনা – তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছুটা ভিন্ন ব্যবস্থা নিতে হবে৷ অর্থাৎ শিশু বা ছাত্র-ছাত্রীকে কোনো পোষা প্রাণী কিনে দেয়া যেতে পারে৷ ছোট ভাই-বোনের খানিকটা দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে, যাতে করে ওরা কাজের প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে উঠতে পারে, আত্মবিশ্বাস বাড়তে পারে৷ কারণ আত্মবিশ্বাসই পড়াশোনায় মনোযোগ এনে দেবে৷

পড়ুয়াদের যে যথেষ্ট ভিটামিন দরকার সে কথা আর কে না জানে? তবে শুধু জানা নয়, তা কার্যে পরিণত করতে হবে৷ তাই ছাত্র-ছাত্রীদের চাই যথেষ্ট ভিটামিন, মিনারেল এবং পানীয় – অর্থাৎ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার৷ প্রধান খাবারের ফাঁকে ফাঁকে আপেল খাওয়া যেতে পারে, যাতে মিনারেল, আয়রন এবং প্রচুর ভিটামিন রয়েছে৷ জার্মানরা প্রচুর আপেল খায়, মনোযোগ ঠিক রাখতে জার্মানির কোন কোনো স্কুলের টিফিনে আপেল খেতে দেয়া হয়৷

বিভিন্ন বাদাম – বিশেষ করে আখরোট, সামুদ্রিক মাছ, শাক-সবজি, ফল, গ্রিন- টিসহ বিভিন্ন চা৷ যা শরীর এবং মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী৷ পড়াশোনার মাঝে পাকা টমেটো বা টমেটোর জুসও খাওয়া যেতে পারে৷ কারণ মাত্র ১০০ গ্রাম টমেটোতে আছে ২৫ গ্রাম ভিটামিন ‘সি’ এবং পটাশিয়াম৷ কাজেই পান করতে পারেন ছাত্র-ছাত্রীরা টমেটোর জুস বা অন্য কোন ফল বা সবজির রসও৷

ফাস্টফুডে ব্যবহার করা হয় নানা রকম রাসায়নিক উপাদান, যা অনেকের ক্ষেত্রেই অ্যালার্জির কারণ হয়ে থাকে এবং যা মনোযোগ এবং শরীরে তার প্রভাব ফেলে৷ জার্মানির খাদ্য বিশেষজ্ঞ ডা. ইয়ুর্গেন শ্লুইটারের মতে, ‘‘দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি যে ভুক্তভোগী অনেকেই সেকথা জানতে বা বুঝতে পারে না৷’’ আজকের তরুণদের প্রিয় খাবার ফাস্টফুড এবং মিষ্টি পানীয় হলেও শরীর ও মস্তিষ্কের কথা মনে রেখে সে সব থেকে কিছুটা সাবধান হওয়া উচিত৷

আজকাল দেখা যায় অনেকে পড়ার ফাঁকে একটু বিশ্রামের জন্য ফেসবুকে ঢোকেন বা গেম খেলেন, যাতে আসলে মোটেই বিশ্রাম হয় না৷ তার চেয়ে বরং কর্মক্ষমতা বাড়ায় সেরকম ছোট এক টুকরো ডার্ক চকলেট মুখে দিয়ে পছন্দের গান শুনতে পারেন৷ অথবা বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলতে পারেন৷ সোজা কথা মনোযোগটাকে কিছুক্ষণের জন্য অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া৷ এতে করে মাথাটা খালি তো হবেই এবং পড়াশোনায়ও মনোযোগ ফিরে আসবে৷

গবেষকরা মনে করেন, শারীরিক পরিশ্রম অর্থাৎ খেলাধুলা বা ব্যায়াম যে কোনো মানুষকে যে কোনো চাপ থেকে সহজে মুক্তি দিতে সাহায্য করে৷ ব্যায়াম বা খেলাধুলা করার ফলে শরীরে হরমোনের প্রকাশ ঘটে কিছুটা অন্যভাবে৷ আর স্বাভাবিকভাবেই তার প্রভাব পড়ে মনোযোগেও৷