1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘শিশুর আচরণের পরিবর্তনকে গুরুত্ব দিতে হবে'

সমীর কুমার দে ঢাকা
৩০ অক্টোবর ২০১৮

কীভাবে ও কাদের দ্বারা শিশুরা যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে? কী করে হবে তাদের রক্ষা? এসব নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রেরণা'র সাধারণ সম্পাদক শেখ যাদী রেজিনা পারভীন৷ 

Kinder Gewalt Symbolbild
ছবি: Imago/Imagebroker

ডয়চে ভেলে : বাংলাদেশের শিশুদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা কি বাড়ছে, নাকি কমছে?

শেখ যাদী রেজিনা পারভীন : আমাদের দেশে শিশুদের নিয়ে অনেকভাবে কাজ হচ্ছে৷ সরকারি ও বেসরকারিভাবে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত এর চিত্রটা হতাশাজনক৷ শিশুদের নিপীড়িত হওয়ার ঘটনা কিন্তু দিন দিন বাড়ছেই৷ আসলে আমাদের শিশুদের নিয়ে যে গবেষণা, সেখানে আমরা দেখি যে, নিপীড়নের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই৷

এর কোন পরিসংখ্যান আছে?

গত দু'বছরের একটা পরিসংখ্যান আমি বলতে পারি৷ শিশু অধিকার ফোরামের যে রিপোর্ট আছে, সেখানে বলা হয়েছে, তিন মাসের মধ্যে ১৭৬ জন শিশু ধর্ষিত হয়েছে এবং তার মধ্যে ১১০ জন মারা গেছে, যা খুবই দুঃখজনক

কোন ধরনের পরিবেশে সাধারণত এ ধরনের নির্যাতন বেশি হয়?

মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবী হিসেবে আমি যেটা দেখি, এখানে পরিবেশ বিষয় না, এটা যে কোনো জায়গায় হতে পারে৷ আমাদের শিশুদের আমরা সব সময় নিরাপদে রাখতে পারছি না৷ এটা খুবই দুঃখজনক যে, কখনো বাড়িতেও নিপীড়িত হচ্ছে, কখনো পথে হচ্ছে৷ আমরা যদি রাস্তার বাচ্চাদের দেখি, আমাদের মনে হয় যে, ওদের বেশি নির্যাতিত হওয়ার কথা৷ কিন্তু যারা বাড়িতে থাকে খুবই কাছের স্বজনের মাধ্যমেও তারা নিপীড়িত হচ্ছে৷ আমরা এমনও দেখি যে, বাবা-মা খুব যত্ন করে শিশুটিকে লালন-পালন করছেন৷ তাঁরা যখন অফিসে যাচ্ছেন, তখন বাসায় তাকে যে পরিচর্যা করছেন তার দ্বারাও শিশুটি নিপীড়িত হচ্ছে৷ আসলে সবাইকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে৷

‘শিশুদের নিপীড়িত হওয়ার ঘটনা বাড়ছে’

This browser does not support the audio element.

কোন বয়সের মানুষের মধ্যে এই কু প্রবণতা বেশি দেখা যায়?

আমি মনে করি, এটা একটা মানসিক অসুস্থতা৷ এটা আসলে অনেকের মধ্যে কিশোরকালেও পাওয়া যায়৷ আবার অনেকের ক্ষেত্রে একটু বড় হয়েও দেখা যায়৷ আবার মধ্যবয়সিদের মধ্যেও দেখা যায়৷ এখানে আসলে বয়স কোনো বিষয় না৷

এই কু-প্রবণতা বা অপপ্রবণতা মানুষের মধ্যে কেন দেখা দেয়?

এটা তো মূল্যবোধের একটা ব্যাপার৷ আমরা ছোটবেলা থেকে কী শিখেছি? বাবা-মা কী শেখাচ্ছেন? সেটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ আবার স্কুলের শিক্ষকরাও কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ শিক্ষকরা কী শিখাচ্ছেন? যারা ভালো শিক্ষা পাচ্ছে, তারা কিন্তু বিপথে যায় না৷ যারা ভালো শিক্ষা পাচ্ছে না, তাদের অনেকেই বিপথে চলে যাচ্ছে বা অনৈতিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে৷ এর আসলে অনেক কারণ আছে৷ আমরা টেকনোলজির একটা প্রবণতা দেখি৷ এখন এটা আপনি কীভাবে ব্যবহার করবেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ৷ একটা ছোট বাচ্চা ঘরের মধ্যে মোবাইল নিয়ে কী করছে আমরা কিন্তু খোঁজ রাখছি না৷ এগুলোর খোঁজ রাখতে হবে৷ তাদের অনেককেই দেখা যায় যে, তারা সারা রাত জেগে থাকে এবং সকালে স্কুলে যেতে দেরি করছে৷ আনমাইন্ডফুল থাকছে৷ তার দৈনন্দিন কাজ-কর্মেও ব্যাঘাত ঘটছে৷ সেটা তো বাবা-মাকে দেখতে হবে৷ ইন্টারনেট কিন্তু এখন একটা রোগ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে৷ এর কারণে তার দৈনন্দিন স্বাভাবিক যে কার্যক্রম, সে তা করতে পারছে না৷ এটা অ্যাডিকশনের মতো হয়ে গেছে৷

যৌন নিপীড়নের শিকার হলে শিশুদের মধ্যে কী ধরনের প্রভাব পড়ে?

আসলে এর প্রভাব তো ব্যাপক৷ এটা এক কথায় বলা যাবে না৷ আমাদের কাছে যেসব শিশু আসে, তাদের মানসিক চাপের কারণে অনেক সময় শরীরেও প্রভাব পড়ে৷ অনেককে হঠাৎ অসুস্থ হতে দেখি৷ যেসব শিশু অ্যাবিউজ হয়েছে, তাদের অনেক সময় কথা বন্ধ হয়ে যায়৷ তাকে কোনোভাবেই কথা বালানো যায় না৷ সে হাসি-খুশি থাকে না, খেলতে যায় না৷ কিন্তু এগুলো বাবা-মা বুঝতে পারেন না৷ তাঁরা জোর করেন৷ কিন্তু শিশুটার মনের অবস্থা তার সঙ্গে কথা বলে বোঝার চেষ্টা তাঁরা করেন না৷ আসলে যৌন নির্যাতনের বিষয়গুলো জানাতে হবে শিশুদের৷ বোঝাতে হবে৷ আপনি বলছিলেন যে, কারা করে? আসলে আমার ঘরের মানুষটিও কিন্তু আমার শিশুটিকে অ্যাবিউজ করছে৷ এখন আমি বলতে চাই, পরিবারের আপনজন দ্বারাও কিন্তু শিশু নির্যাতিত হচ্ছে৷ এখনও এটা অনেকেই স্বীকার করতে চাচ্ছেন না৷ অনেক দিন ধরে শিশুটা অ্যাবিউজ হলে সে কিন্তু সুইসাইডও করে৷ এ ধরনের শিশুদেরও আমরা পাই৷

এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে বের হতে করনীয় কি?

আমি বলব আমাদের সার্বজনীনভাবে অনেক কিছু করার আছে৷ এটা আমাদের ঘর থেকে শুরু করতে হবে৷ শিক্ষকদের সচেতন হতে হবে৷ যাঁরা শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের তৎপরতা বাড়াতে হবে৷ শিশুদের সচেতনতামূলক অনেক প্রোগ্রাম করতে হবে৷ এখানে মিডিয়াকেও একটা ভূমিকা পালন করতে হবে৷ আমাদের শিশুদের তাদের শরীর সম্পর্কে জানাতে হবে৷ সে যদি এটি সম্পর্কে না জানে, তখন তো সে বুঝবে না যে, তার কোন অঙ্গগুলো গুরুত্বপূর্ণ৷ আমরা যে ছোটবেলায় নিজেরাও শিখেছি ‘গুড টাচ, ব্যাড টাচ' সেই জিনিসগুলো তাদের বোঝাতে হবে৷ এখন কিন্তু নয় বছরের একটা শিশুও এগুলো খুব ভালোভাবে নিতে পারে৷ এই শিশুকে বাবা-মা, স্কুল শিক্ষক সবাই মিলে এভাবে তৈরি করতে হবে৷ শুধু পাঠ্যপুস্তক না, মূল্যবোধের জন্য তাদের এই জিনিসগুলো শেখানো খুব প্রয়োজন৷ আসলে শিক্ষার কারিকুলামের মধ্যে এই জিনিসগুলো থাকা দরকার৷ এখন অনেক কিছু আছে৷ তবে আরো কিছু বাড়ানো দরকার৷ পাশাপাশি চর্চাটাও বাড়ানো দরকার৷

সমাজে কী ধরনের সচেতনতা বাড়ানো যায়?

আমি যদি মানবাধিকারের দিক থেকে বলি, একজন মানুষের যে অধিকার, তার যে কথা বলার অধিকার, তার থেকে আমরা অনেক দূরে আছি৷ দেখুন, আমাদের যে শিশুটি নির্যাতিত হচ্ছে, তার পরিবার কী কথা বলছে? প্রতিকারের জন্য তিনি কিছু বলছেন না৷ এখন সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে৷ এখন সবাইকে বুঝতে হবে, এটা আমার একার লজ্জা না৷ আমি যে ভুক্তভোগী হয়েছি, সেটার প্রতিবাদ করতে হবে৷ শুধু আমার জন্য নয়, সমাজের সবার জন্য৷ আমি সচেতন হলে আরেকটি পরিবারকে এই ধরনের পরিস্থিতির শিকার হতে হবে না৷ এখন আর আমরা চুপ করে থাকব না৷ আমদের চুপ করে থাকা উচিত না৷ কিছুদিন আগে আমি একটা পোস্ট দেখলাম সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে৷ স্কুল ড্রেস পরা একটি মেয়েকে পাশের লোক গায়ে হাত দিচ্ছে৷ পরে মেয়েটা যখন প্রতিবাদ করল তখন বাসের অন্যান্য লোকজন ওই ছেলেটিকে বাস থেকে নামিয়ে দিল৷ এত মানুষের মধ্যে যখন একটা মেয়ের সঙ্গে এই ধরনের ঘটনা ঘটে, তখন কিন্তু বুঝতে হবে যে, সবাইকে প্রতিবাদ করতে হবে৷ আমরা সবাই মিলে যদি সাহস নিয়ে, মনের জোর বাড়িয়ে প্রতিবাদ করি, তাহলে কিন্তু এই ধরনের প্রবণতা অনেক কমে যাবে৷

বাবা-মা বা স্বজনরা শিশুদের রক্ষা করতে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেন? আমরা যদি কর্মজীবী হই, তাহলে খেয়াল রাখতে হবে, বাড়িতে যে তার দেখাশোনা করছে, সে ঠিকমতো করছে কিনা৷ বাসায় সে কী করছে প্রতিক্ষণ সেটা মনিটরিং করতে হবে৷ কোন পরিবেশে আপনি শিশুটিকে রেখে যাচ্ছেন, তার খোঁজ-খবর নিতে হবে৷ শিশুটি স্কুল থেকে ফেরার পরে হঠাৎ কেন মন মরা হয়ে গেল, তার মধ্যে পরিবর্তন আসছে কিনা, সেই জিনিসটা জানার চেষ্টা করতে হবে৷ এক্ষেত্রে শিক্ষকদের একটা বড় ভূমিকা রাখতে হবে৷ শিশুর শিক্ষকদেরও খেয়াল রাখতে হবে যে, শিশুটি কেন পড়াশোনায় মনোযোগ দিচ্ছে না৷ কেন মন-মরা থাকছে৷ এগুলো কিন্তু শিক্ষকদের নজরেই আগে আসবে৷ শিক্ষকরা যদি কোনো শিশুর আচরণে পরিবর্তন দেখেন, তখন কিন্তু অভিভাবকদের শিশুটির এই পরিবর্তন সম্পর্কে অবহিত করতে হবে৷ একটা আশার কথা হলো, আমাদের কাছে অনেক শিক্ষক এই ধরনের শিশুদের নিয়ে আসছেন৷ তাঁরা এই শিশুদের আচরণগত পরিবর্তনগুলো খেয়াল করে আমাদের বলছেন৷ এখন কিন্তু মিডিয়া শিশুদের নিয়ে অনেক টক শো করতে পারে, যেখানে অংশ নেবে শিশুরা৷ তাদের কথা বলবে, তারা কথা বলতে শিখবে, তারা প্রতিবাদ করতে শিখবে৷ শিশুরা যদি এখানে আসে, তখন তারা কিন্তু দেখবে যে, তারা কথা বলতে পারে, তারা প্রতিবাদ করতে পারে৷ এভাবে শিশুদের তৈরি করতে হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ