বাংলাদেশ মা ও শিশুর মৃত্যুর হার কমিয়ে আনায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে৷ এর স্বীকৃতিও মিলেছে৷ মা ও নবজাতকের টিটেনাস সংক্রমণ নির্মূলে সাফল্যের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) মতে, প্রসবকালীন অপরিচ্ছন্নতা ও যত্নের অভাবে মেটারনাল অ্যান্ড নিওনেটাল টিটেনাস (এমএনটি) প্রাণঘাতি হয়ে দাঁড়ায়৷এতে মৃত্যুর হারও খুব বেশি৷ বিশেষ করে এ সময়ই টিটেনাসের বিস্তার ঘটে৷ তবে যথাযথ চিকিৎসা হলে টিটেনাসের ঝুঁকি থেকে দূরে থাকা যায়৷
স্বাস্থ্যকর পরিবেশে সন্তান প্রসব করলে, নাভির নাড়ির যত্ন নেয়া হলে এবং মায়েদের টিটেনাসের ভ্যাকসিন দেয়া হলে সহজেই এমএনটি প্রতিরোধ করা যায়৷ এটি সাশ্রয়ী এবং অত্যন্ত কার্যকর৷
এমএনটি প্রতিরোধে সাফল্যের জন্য ডাব্লিউএইচও-র সাটিফিকেট গ্রহণের পর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘এমএনটি নির্মূল আমাদের জন্য একটি বিরাট সাফল্য৷''
আবদুল্লাহ শাহরিয়ার
শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় ডাব্লিউএইচও-র দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক অফিসে মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে ডাব্লিউএইচও বাংলাদেশের প্রতিমন্ত্রীর কাছে এই সনদ হস্তান্তর করে৷
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ডাব্লিউএইচও-র আঞ্চলিক কমিটির ৬৯তম অধিবেশনে যোগদানের জন্য জাহিদ মালেক ৫ সেপ্টেম্বর থেকে কলম্বো সফর করছেন৷
জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘সরকার অন্যান্য রোগের কারণে মা ও নবজাতকের মৃত্যু আরো কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে৷''
প্রসঙ্গত, মাত্র এক দশক আগেও দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার ছয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ৷ আর ১৯৯০ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে মাতৃমৃত্যু হার শতকরা ৬৯ ভাগ কমেছে, যা এই ছ’টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ অগ্রগতি৷ ১৯৯০ সালে প্রতি এক লাখে গড়ে যেখানে ৩৯৯ জন মায়ের মৃত্যু হয়েছিল সেখানে ২০১৫ সালে তা কমে ১৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে৷
এই সময়ে পাঁচ বছরের নীচে শিশু মৃত্যু প্রতি হাজারে ৮৮ জন থেকে কমে ৩৮ জন হয়েছে৷ আর নবজাতকের মৃত্যু প্রতি হাজারে ৪২ থেকে কমে ২৩ হয়েছে৷
২০০৭ সালে যেখানে শতকরা ২৩ জন নবজাতকের জন্মের সময় প্রশিক্ষিত ধাত্রীর সহায়তা নিতেন, এখন তা হয়েছে শতকরা ৪২ ভাগ৷
‘শিশু কাঁদলে, তাকে কোলে তুলে নিন’
বাচ্চা কাঁদলে কোলে তুলে নেয়াটাই স্বাভাবিক, বিশেষ করে উপ-মহাদেশের বাবা-মা এবং পরিবারের মানুষদের কাছে৷ এ নিয়ে তাঁদের মনে কোনো প্রশ্ন নেই৷ কিন্তু জার্মানিতে? চলুন বিস্তারিত জানা যাক এই ছবিঘর থেকে৷
ছবি: Fotolia/st-fotograf
শিশুরা কাঁদে কেন?
যে কোনো শিশুই চিৎকার করে কেঁদে তার ভূমিষ্ঠ হওয়ার খবর জানিয়ে দেয়৷ তারপরও কারণে-অকারণেই ওরা কাঁদে৷ এই সুন্দর ভুবনের সাথে মানিয়ে নিতে ওদের যেমন কিছুটা সময় লাগে, তেমনই নতুন মা-বাবারও লাগে খানিকটা সময় সব কিছু গুছিয়ে নিতে৷ যা খুবই স্বাভাবিক৷
ছবি: Fotolia/S.Kobold
আমার কান্না কেউ কি শুনছে না?
মাঝে মাঝে শিশুরা চিৎকার করে ওঠে, বিশেষ করে কাছাকাছি অনেকক্ষণ কোনো শব্দ শুনতে না পেলে৷ অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই হয়ত তখন কাঁদে তারা৷ মজার ব্যাপার, ঐ মুহূর্তে কেউ কাছে গিয়ে কথা বললে বা কোলে তুলে নিলে সাথে সাথেই শিশুদের কান্না থেমে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাঙালি বাবা-মায়ের সন্তান
দেশে সন্তান জন্মের পর থেকেই সে বাচ্চা কোলে কোলে থাকে৷ বাচ্চা কাঁদুক আর না কাঁদুক৷ নতুন মা সারাক্ষণই তাঁর শিশুটিকে নিয়ে ব্যস্ত আর সেই শিশু সর্বক্ষণই পেয়ে থাকে মায়ের শরীরের উষ্ণতা৷ শিশুকে কোলে নেওয়ার জন্য বাবা-মা ছাড়াও আত্মীয়স্বজন থাকেন৷ এছাড়া, বাচ্চাকে শুধু দেখাশোনা করার জন্য আলাদা লোকও অনেক সময় রাখা হয়৷
ছবি: picture-alliance/Joker
জার্মান শিশু
জার্মানিতে কোনো শিশু কাঁদলেই চট করে কোলো তুলে নেওয়া হতো না কয়েক বছর আগ পর্যন্তও৷ শিশু কাঁদলে ওকে শুইয়ে রাখা হতো৷ এক সময় সেই ছোট্ট শিশু কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পরতো৷ কারণ, মা সারাক্ষণ বাচ্চাকে কোলো নিলে বাড়ির অন্য কাজ কে করবে? রাতে প্রতিদিন ঘড়ি ধরে একই সময়ে বাচ্চাকে বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হতো ঘর অন্ধকার করে৷ বলা বাহুল্য জার্মানিতে গ্রীষ্মকালে প্রায় ১১টা পর্যন্ত বাইরে সূর্যের আলো থাকে৷
ছবি: Getty Images/Afp/Timothy Clary
সময় পাল্টেছে, বদলেছে চিন্তাধারা
একদিকে যেমন জার্মানির মতো উন্নত দেশগুলিতে প্রযুক্তি দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনই অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশেরও কিছু বিষয় গ্রহণ করতে শুরু করেছে তারা৷ শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. গেন কামেদা বলেন, পশ্চিমের সংস্কৃতিটা এমন যে শিশুরা মায়ের শরীরের উষ্ণতা কম পায়, কারণ এ দেশে বাচ্চারা বিছানায় বেশি সময় থাকে আর এটাই হয়ত শিশুদের রাতে কান্নাকটি করার বড় কারণ৷
ছবি: Yuri Arcurs/Fotolia
নতুন বাবা-মা
নতুন মা-বাবার নানা প্রশ্ন, শিশুটির কান্নার কারণ তাঁরা বুঝতে পারেন না৷ ক্ষুধা, শরীর খারাপ, ক্লান্ত নাকি আদর, কি চায় বেবিটি? আসলে শরীরের উষ্ণতা পেলে শিশুরা সব কিছুই ভুলে যায়, যদি না বড় কোনো শারীরিক কষ্ট থেকে থাকে, বলেন ডা. কামেদা৷ তাঁর পরামর্শ, পিতা-মাতা হলে অনেককিছুই বাদ দিতে হয়, তাই বাইরে গেলে শিশুকে কোলে করে সঙ্গে নেবার চেষ্টা করবেন – যাতে শিশুটি শরীরের উষ্ণতা পায়৷
ছবি: Fotolia/detailblick
ডাক্তারের পরামর্শ
নতুন বাবা-মায়ের জন্য ডাক্তার কামেদার আরো পরামর্শ, শিশুর কাছাকাছি থাকুন, শিশুকে সময় দিন, কোলে তুলে নিন৷ অল্প কিছুদিন পরেই দেখবেন, শিশু শুধু কাঁদেই না, বরং খুব শীঘ্রই তারা হাসতে শিখবে, হাসাবে মা-বাবাকেও৷
ছবি: Fotolia/st-fotograf
7 ছবি1 | 7
এ নিয়ে সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালে নারী ও শিশু বিষয়ক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই সাফল্যের পিছনে কাজ করেছে কমিটমেন্ট, কারণ, আর্থিক সামর্থ তেমন ছিল না৷ সরকারের সঙ্গে এনজিওগুলো সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে, ফলে দ্রুত ফল পাওয়া গেছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের কৌশল হলো প্রতিরোধ কার্যক্রম এবং সচেতনতা৷ যেহেতু ডাক্তার কম, তাই প্রশিক্ষিত ধাত্রীদের ওপর জোর দেয়া হয়েছে৷ স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়ি বাড়ি পঠানো হচ্ছে৷ এর সঙ্গে মা ও শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় টিকাগুলো নিশ্চিত করা হয়েছে৷''
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মা যা খাবেন না
বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন জন্মের পর থেকে ৬ মাস পর্যন্ত শিশুকে কেবল মায়ের দুধ খাওয়াতে হয়৷ তাই দেখে নিন শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর দিনগুলোতে মা’দের কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত নয়৷
ছবি: Colourbox/yarruta
টকজাতীয় ফল
সাধারণত টকজাতীয় ফল নতুন মায়ের শরীরের জন্য ভালো, কেননা, এতে প্রচুর ‘ভিটামিন সি’ থাকে৷ তবে কিছু কিছু শিশু ‘ভিটামিন সি’ সহ্য করতে পারে না৷ ফলাফল শিশুদের ডায়রিয়া দেখা দেয়৷ অর্থাৎ ‘ভিটামিন সি’- তে শিশুটির অ্যালার্জি আছে৷ তখন মায়ের করণীয় টক ফল খাওয়া বন্ধ করা৷
ছবি: Fotolia/cut
চা বা কফি
অল্প পরিমাণে চা-কফি পান করা যেতে পারে৷ কিন্তু দিনে ২-৩ কাপের বেশি চা-কফি পান করলে মায়ের শরীর থেকে দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরেও ছড়িয়ে পড়বে ক্যাফিন৷
ছবি: Fotolia/Africa Studio
সামুদ্রিক মাছ
সামুদ্রিক মাছে পারদের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে৷ আর কোনো মা যদি বেশি সামুদ্রিক মাছ খান তবে তার দুধেও পারদের পরিমাণ বেড়ে যায়৷ আর এই দুধ খেলে শিশুর স্বাস্থ্যহানি হতে পারে৷
ছবি: DW/Sarah Wiertz
পিপারমেন্ট
ধারণা করা হয়, পিপারমেন্টে মায়ের স্তনে দুধের পরিমাণ বাড়ে৷ তবে এটা এখনো প্রমাণিত হয়নি৷ যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও মাদক অধিদপ্তর পিপারমেন্টকে মাতৃস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ হিসেবে অনুমোদন করেছে৷ তবে সতর্কও করেছে এই বলে যে, মাত্রাতিরিক্ত পিপারমিন্ট গ্রহণ করলে মায়ের হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, অ্যালার্জি ও মাথাব্যথা হতে পারে, যা শিশুর দেহে প্রভাব ফেলবে৷
ছবি: Colourbox
মদ্যপান
৯ মাসের অপেক্ষার অবসান৷ শিশু জন্মের পর সপ্তাহে এক ‘পেগ’ মদ্যপান করা যেতেই পারে৷ তবে, যুক্তরাষ্ট্রের হেল্থ অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের অধ্যাপক ডাক্তার জ্যাক নিউম্যানের মতে, এর চেয়ে বেশি পরিমাণে মদ্যপান করলে শিশুর স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে৷
ছবি: Reuters/T. Peter
চকলেট
থিওব্রোমিন নামে একধরণে পদার্থের উপস্থিতি আছে চকলেটে, যেটা অনেকটা ক্যাফিনের মতোই৷ দিনে ৭৫০ মিলিগ্রামের বেশি থিওব্রোমিন গ্রহণ করলে শিশুর ঘুমে ব্যাঘাত বা অস্থিরতা দেখা দিতে পারে৷
ছবি: Colourbox
ভেষজ চা
অনেকেই মনে করেন, ভেষজ চা খেলে রক্ত পরিষ্কার হয় আর দুধ উৎপাদনের মাত্রা বাড়ে৷ তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এখনো তা প্রমাণ করতে পারেনি৷ যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও মাদক অধিদপ্তর এটা মায়েদের জন্য অনুমোদন করেনি, কেননা, এর বিশুদ্ধতা, নিরাপত্তা ও এটা কতটা শক্তিশালী এসব সম্পর্কে তারা নিশ্চিত নয়৷ তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, নতুন মায়েদের ভেষজ চা না খাওয়াই ভালো৷
ছবি: Fotolia/gaai
চীনা বাদাম
যদি পরিবারে কারো চীনা বাদামে অ্যালার্জি থাকে, তবে চীনা বাদাম খাওয়া থেকে মায়ের বিরত থাকা উচিত৷ চীনা বাদামে এমন কিছু প্রোটিন আছে যা অ্যালার্জির কারণ৷ এই প্রোটিন বুকের দুধের সাথে শিশুর দেহে প্রবেশ করে৷ তাই তখন তার দেহে লালচে দাগ দেখা যায়৷
ছবি: Fotolia
8 ছবি1 | 8
এমন একটি খবরে আপনাদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাই৷ তাই লিখুন নীচের ঘরে৷