শিশু-কিশোরদের ভিডিও গেমের আসক্তি ঠেকাতে যা করছে চীন
৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
অপ্রাপ্তবয়স্করা কতক্ষণ ভিডিও গেম খেলতে পারবে সম্প্রতি সে সংক্রান্ত একটি নতুন আইন চালু করেছে চীন৷ সেটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তার একটি রূপরেখাও দিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বে ভিডিও গেমের সবচেয়ে বড় বাজার চীন৷ বাজার বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান নিউজুর হিসাবে চলতি বছর ভিডিও গেমের বাজারের আকার চার হাজার কোটি ডলার ছাড়াবে৷
চীনে তরুণদের মধ্যে ক্রমশ ভিডিও গেমে সময় কাটানোর প্রবণতা বাড়ছে৷ কিন্তু শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে এটি রীতিমতো আসক্তিকে পরিণত হচ্ছে, যা নিয়ে চিন্তিত কর্তৃপক্ষ৷ তাদের জন্য এমনকি ক্লিনিকও খুলেছে সরকার, যেখানে নানা থেরাপি দিয়ে আসক্তদের ভিডিও গেম থেকে দূরে রাখার চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে৷
কিন্তু তাতেও সন্তুষ্ট হতে পারছে না সরকার৷ এবার আইন করে ভিডিও গেম খেলার নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে৷ গত সোমবার থেকে চালু হওয়া নতুন এই আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সিরা সপ্তাহে তিন ঘণ্টার বেশি ভিডিও গেম খেলতে পারবে না৷ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ন্যাশনাল প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনপিপিএ) বলছে আইনটি করা হয়েছে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করেই৷
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চীনের ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ শিশু-কিশোর অনলাইনে গেম খেলে৷ কর্মদিবসে ১৩ শতাংশের বেশি শিশু দৈনিক দুই ঘণ্টারও বেশি সময় মোবাইল গেমে যুক্ত থাকে৷
সোশ্যাল মিডিয়া কি মানসিক চাপে ফেলে?
02:27
শিশু-কিশোরদের ভিডিও গেমে আসক্তি কমানোর এমন আইনী উদ্যোগ এবারই প্রথম নয়৷ ২০১৯ সালেও এমন একটি আইন পাস করা হয়েছিল৷ তাতে কর্মদিবসে দেড় ঘণ্টার ও ছুটির দিনে তিন ঘণ্টার কম সময় গেম খেলার জন্য বেঁধে দেয়া হয়৷ রাত ১০ টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত গেমিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের এই সংক্রান্ত মাসিক ব্যয় বয়সভেদে ২৮ থেকে ৫৭ ডলারের মধ্যে সীমিত করে দেয়া হয়৷
অনলাইনে ভিডিও গেম খেলার ক্ষেত্রে অপ্রাপ্তবয়স্কদের প্রকৃত নাম পরিচয়, এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার দেয়ারও বাধ্যবাধকতা আছে চীনে৷ টেনসেন্ট ও নেটইজ-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সিস্টেমও সেভাবেই তৈরি করেছে৷ অপ্রাপ্তবয়স্করা যাতে রাতে বাবা-মার পরিচয় ব্যবহার করে লগইন করতে না পারে সেজন্য গত জুলাইতে টেনসেন্ট চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তিও চালু করে৷
নতুন আইন অনুযায়ী, পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ বছরের কম বয়েসিরা সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অনলাইনে গেম খেলতে পারবে না৷ শুধু শুক্র, শনি ও রোববার এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে এক ঘণ্টা করে খেলার সুযোগ পাবে৷ এই নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অনলাইন গেমিং কোম্পানিগুলোকে তাদের সিস্টেম তৈরি করতে হবে৷ ব্যবহারকারীরা যেন যথাযথ পরিচয় দিয়ে লগইন করে সেটিও তাদের নিশ্চিত করতে হবে৷
এই নিয়ম ঠিকমতো পালন করা হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করতে নজরদারি বাড়াবে বলে জানিয়েছে এনপিপিএ৷ কোন কোম্পানি আইন ভঙ্গ করলে তদন্ত করে তাদের কড়া শাস্তি দেয়া হবে বলেও জানিয়েছে তারা৷ বিধিনিষেধ এড়াতে শিশুরা যাতে বড়দের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে অভিভাবক ও স্কুলগুলোকেও নজরদারি বাড়াতে বলেছে কর্তৃপক্ষ৷
এফএস/এসিবি (রয়টার্স)
স্মার্টফোনে আসক্তি? বিরতি নিন!
সপ্তাহে প্রায় দেড় হাজার বার নাকি আমরা স্মার্টফোনে ঢুকি৷গবেষকদের মতে এই হিসেব বের করা বেশ কঠিন ছিলো৷ তাঁরা মাল্টিটাস্কিং থেকে বিরতি নেয়া প্রয়োজন বলে জানান, সেইসাথে তার কারণগুলোও৷
ছবি: picture-alliance/PhotoAlto
মাল্টিটাস্কিং
যে প্রতিদিন অসংখ্যবার মাল্টিটাস্কিং করে সে যে মাল্টিটাস্কিং-এ ভালো হয় তা নয়, বরং এর মধ্য দিয়ে তার মনোযোগে দীর্ঘমেয়াদী বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়৷ এই তথ্য নিউরো বিজ্ঞানী মানফ্রেড স্পিত্সারের৷ প্রকাশ হয়েছে সাইবারক্রাঙ্ক (সাইবার সিক)–এ৷
ছবি: imago/Indiapicture
গুণগতমান ভালো হওয়া সম্ভব নয়
একসাথে অসংখ্য মেসেজ পাঠানো, ইন্টারনেট সার্চ, ছবি তোলা , পোষ্ট, আবহাওয়ার খবর জানা-এত কাজ বা মাল্টিটাস্কিং কেউ করতে পারলেও কাজের গুণগত মান তেমন ভালো হতে পারেনা বা সম্ভব নয়-জানান বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বই পড়া
আমরা যখন একটা বই পড়ি তখন কেউ কোনো প্রশ্ন করলে, মুখ তুলে হয় প্রশ্নের উত্তর দেই, না হয় বইয়ে মনোযোগ থাকে৷ একসাথে দুটো কাজ হয়না৷ ব্রিটিশ গবেষকরা জানিয়েছেন মাল্টিটাস্কিং আমাদের জন্য নয়৷ মনোবিজ্ঞানী এবং নিউরো-গবেষকদের মতে, অমনোযোগের কারণে অনেকসময় কম শোনা বা বধিরতা প্রকাশ পায়৷
ছবি: Picture alliance/Blickwinkel/McPHOTO
কম মাল্টিটাস্কিংর ফলাফল ভালো
মাল্টিটাস্কিং বিষয়ে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের করা এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, হেভি মাল্টিটাস্কারদের চেয়ে কম মাল্টিটাস্কারদের ফলাফল ভালো ছিলো৷
ছবি: DW-TV
ডিজিটাল বার্নআউট
বন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার মার্কোভেটস ডিজিটাল বার্নআউটকে ভয়ঙ্কর বলে বর্ণনা করেন৷
ছবি: Fotolia/ Franck Boston
স্মার্টফোনের সাথে লাভ/ হেইট সম্পর্ক
স্ট্যাটিস্টা-এর করা এক জরিপে দেখা যায়, ঘুমানোর আগে হাতে স্মার্টফোন আবার জেগেই স্মার্টফোনে চোখ রাখা অভ্যাসে দাড়িয়েছে অনেকের৷ মানুষের সমস্ত মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে সেল ফোন৷ কিন্তু প্রশ্ন , এই বিরক্তিকর অভ্যাসগুলি নিয়ন্ত্রণ করা কেন এত কঠিন?
ছবি: picture-alliance/ANP
উত্তর খুব সহজ
খুব সহজ উত্তর, কারণ ডিজিটাল বিশ্ব আমাদের মুগ্ধ করে কাছে টানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Gateau
জার্মানদের স্মার্টফোন প্রেম
জার্মানিতে ১৪ থেকে ২৯ বছর বয়সিদের প্রতি দুইজনের একজন এবছর প্রায়ই অফলাইনে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন এক সমীক্ষায়৷
তবে স্মার্টফোন, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব, স্ন্যাপচ্যাট, হোয়াটসঅ্যাপ এসব আজকাল আর শুধু তরুণদের বিষয় নয়৷
ছবি: DW/G. Hofmann
স্যোশাল মিডিয়ায় প্রবীণেরা
জার্মানিতে অসংখ্য ৮০ বছর বয়সিরাও নিয়মিত স্যোশাল মিডিয়ায় দিনে দুই থেকে তিন ঘন্টা ব্যয় করে থাকেন৷ তবে বেশিরভাগই স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য জানতেই ইন্টারনেটে ঢোকেন৷ তাছাড়া তাদের নাতি নাতনির সাথে নাকি কেবল স্মার্টফোনেই আজকাল যোগাযোগ সম্ভব৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y. Mok
শতকরা ৯০ ভাগ
২০১৮ সালে শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি জার্মান ইন্টারনেট ব্যবহার করতেন৷ গড়ে দিনে ১৯৬ মিনিট বা তিন ঘণ্টা ১৬ মিনিট ৷ তা ২০১৭ সালের চেয়ে ৪৭ মিনিট বেশি৷ তবে ৩০ বছর বয়সিদের ক্ষেত্রে এই হিসেব ছিলো দিনে ছয় ঘণ্টা৷ এই সমীক্ষাটি করে জার্মান টিভি চ্যানেল এআরডি এবং জেডডিএফ৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
আশার কথা
আশার কথা
১৪ থেকে ২৯ বছর বয়সিদের প্রতি দুইজনের একজন ২০১৯ সালে ইন্টারনেটে তুলনামূলকভাবে কম ঢুকবেন অর্থাৎ ২০১৭ সালের চেয়ে শতকরা মাত্র ১০ভাগ বেশি৷ শতকরা ১৪ ভাগ ৬০ + মানুষ স্মার্টফোন, ইন্টারনেট কম ব্যবহার করার কথা জানায় ফোরসা প্রতিষ্ঠানের করা এক সমীক্ষা৷