রাস্তাঘাটে যৌন হয়রানির জন্য জরিমানা এবং ১৫ বছরের কম বয়সি শিশুর সঙ্গে যৌনতাকে ধর্ষণ হিসেবে বিবেচনার বিধান রেখে ফ্রান্সের পার্লামেন্টে নতুন একটি আইন পাস হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে নতুন একটি কঠোর আইন পাস করেছে ফ্রান্সের পার্লামেন্ট, যাকে ইউরোপীয় দেশটিতে ব্যাপক সামাজিক পরিবর্তেনর ইঙ্গিত হিসেবে অভিহিত করছে দেশটির সরকার৷
আগামী সেপ্টেম্বরে নতুন এই আইন কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে৷
এই আইনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, প্রাপ্তবয়স্ক কোনো ব্যক্তি ১৫ বছরের কম বয়সি কোনো মেয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে তা ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার পথ সুগম হয়েছে৷
ফ্রান্সের বিদ্যমান আইনে ১৫ বছরের কম বয়সিদের সঙ্গে যৌনতা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়৷ তবে তা ধর্ষণ হিসেবে বিবেচনার জন্য প্রসিকিউটরদের প্রমাণ করতে হয় যে, জোর করে শিশুটির সঙ্গে এটা করা হয়েছে৷
এর সুযোগ নিয়ে গত নভেম্বরে ১১ বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ থেকে খালাস পান ৩০ বছরের এক ব্যক্তি৷ ওই ঘটনায় নির্যাতিতার সম্মতি না থাকার বিষয়টি প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছিলেন আইনজীবীরা৷
এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে ২৮ বছরের এক ব্যক্তি এবং ১১ বছরের আরেক শিশুর একই ধরনের ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ দেখা দেয়৷
নতুন এই আইন শিশুদের সঙ্গে যৌন অপরাধে নিরুৎসাহিত করবে বলে মন্তব্য করেছেন ফ্রান্সের লৈঙ্গিক সমতা বিষয়ক জুনিয়র মন্ত্রী মারলিন শিয়াপা৷
যৌন হয়রানির জরিমানা
রাস্তায় বা গণপরিবহণে যৌন হয়রানির জন্য তাৎক্ষণিকভাবে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে এই আইনে৷ এজন্য যৌন নিপীড়ককে ৯০ থেকে ৭৫০ ইউরো পর্যন্ত গুণতে হবে৷
আইনে কারও অনুমতি ছাড়া পোশাকের নীচ দিয়ে শরীরের ছবি তোলার জন্য ১৫ হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা এবং এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে৷
এই সপ্তাহের শুরুর দিকে রাস্তায় যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় এক নারীকে একজনের মারধরের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে ফ্রান্সে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়৷
এএইচ/ডিজি
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
শিশুরা বিকৃতকাম মানুষের সহজ শিকার৷ সারল্যের সুযোগ নিয়ে সহজে ভোলানো যায় তাদের৷ অনেক সময় শিশুরা বুঝতে পারে না, চিনতে পারে না পিশাচের থাবা৷ আর বুঝলেও করতে পারে না প্রতিবাদ, প্রতিরোধ৷ শুধু একটা অস্বস্তি থেকে যায় সারাটা জীবন৷
ছবি: picture alliance/abaca
ভয়াবহ অবস্থা ভারতে
ভারতের জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের অর্ধেকেরও বেশি বাচ্চা যৌন নিগ্রহের শিকার৷ তবে সবচেয়ে ভয়ংকর সত্য হলো, নাবালিকা বা শিশুর ওপর যৌন হেনস্থার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে পরিবারের মধ্যে, পরিবারেরই কোনো মানসিক বিকারগ্রস্ত সদস্যের হাতে৷ তাই সে সব ঘটনা পুলিশের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, হচ্ছে না কোনো ডাইরি অথবা মামলা৷
ছবি: Fotolia/Gina Sanders
হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব
এভাবে প্রতিদিন বিকৃত যৌন নির্যাতনে হারিয়ে যাচ্ছে অগুন্তি শৈশব৷ অনেকক্ষেত্রেই শিশুরা বুঝে উঠতে পারছে না, বলে উঠতে পারছে না তাদের অমানবিক সেই সব অভিজ্ঞতার কথা৷ তাই শিশুদের প্রতি যৌনাসক্ত, বিকৃত মানুষগুলো থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালে৷ সমাজবিদরা বলছেন, এ জন্য আগাম সতর্কতার দায়িত্ব নিতে হবে অভিভাবক এবং স্কুলের৷ শিশুকে দিতে হবে তার প্রাপ্য শৈশব৷
ছবি: Fotolia/Kitty
যেভাবে বোঝাবেন বাচ্চাদের
সহজ ভাষায় খেলা বা গল্পচ্ছলে শিশুদের এ বিষয়ে একটা ধারণা গড়ে তোলা যেত পারে৷ বাচ্চাদের বলতে হবে যে, তাদের শরীরটা শুধুমাত্র তাদের৷ অর্থাৎ কেউ যেন তাদের ‘গোপন’ জায়গায় হাত না দেয়৷ তাই কোনো আত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তির আচরণ অস্বস্তিকর ঠেকলে, কেউ তাদের জোর ঘরে কোনো ঘরে নিয়ে গেলে, খেলার ছলে চুমু দিলে বা শরীরের কোথাও হাত দিলে – তা যেন মা-বাবাকে জানায় তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিনিয়ে দিন যৌনাঙ্গ
অনেক বাবা-মা নিজ সন্তানের সঙ্গে যৌনাঙ্গ নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠা বোধ করেন৷ কিন্তু এই লজ্জা কাটিয়ে উঠতে হবে এবং খুব ছোটবেলাতেই ছবি এঁকে অথবা গল্পে-গানে বাচ্চাকে তার শরীরের অন্য সব অঙ্গের মতো যৌনাঙ্গ, লিঙ্গ ইত্যাদি চিনিয়ে দিতে হবে৷ এমনটা করলে কেউ যদি তাদের সঙ্গে পিশাচের মতো ব্যবহার করে, তাহলে শিশুরা সহজেই বলতে পারবে কে, কখন, কোথায় হাত দিয়েছিল৷
ছবি: DW/S.Rahman
শিশুর কথা শুনুন, তার পক্ষ নিন
শিশু যাতে আপনাকে বিশ্বাস করতে পারে, বন্ধুর মতো সবকিছু খুলে বলতে পারে – সেটা নিশ্চিত করুন৷ আপনার বাচ্চা যদি পরিবারের কাউকে বা আপনার কোনো বন্ধুকে হঠাৎ করে এড়িয়ে যেতে শুরু করে অথবা আপনাকে খুলে বলে বিকৃত সেই মানুষের কৃতকর্মের কথা, তবে সময় নষ্ট না করে শিশুটির পক্ষ নিন আর তিরস্কার করে বাড়ি থেকে বার করে দিন ঐ ‘অসুস্থ’ লোকটাকে৷
ছবি: Fotolia/pegbes
স্কুলেরও দায়িত্ব আছে
বাচ্চারা দিনের অনেকটা সময় স্কুলে কাটায়৷ তাই যৌন শিক্ষার ক্ষেত্রে স্কুলের একটা বড় দায়িত্ব থেকে যায়৷ তবে স্কুলের মধ্যে, বিদ্যালয় চত্বরেও ঘটতে পারে শিশু নির্যাতনের ঘটনা৷ তাই স্কুল থেকে ফেরার পর বাচ্চা যদি অতিরিক্ত চুপচাপ থাকে, একা একা সময় কাটায় বা পড়াশোনা করতে না চায়, তাহলে ওর সঙ্গে কথা বলুন৷ জানতে চান কী হয়েছে, প্রয়োজনে স্কুল কর্তৃপক্ষকেও জানান৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel
ছেলে-মেয়ে সমান!
আমাদের সমাজে ছোট থেকেই মেয়েদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়৷ মেয়ে হলেই হাতে একটা পুতুল আর ছেলে হলে ধরিয়ে দেয়া হয় বল বা খেলনার পিস্তল৷ ছেলের পাতে যখন তুলে দেয়া হয় মাছের বড় টুকরোটা, তখন মেয়েটির হয়ত এক গ্লাস দুধও জোটে না৷ এ বৈষম্য বন্ধ করুন৷ বাবা-মায়ের চোখে ছেলে-মেয়ে সমান – সেভাবেই বড় করুন তাদের৷ তা না হলে নারীর ক্ষমতায়ন হবে কীভাবে? কীভাবে কমবে শিশু নির্যাতন?