রিউম্যাটিক ডিস-অর্ডার বা বাত যে কোনো রোগীর জন্য কষ্টকর৷ সঠিক সময় রোগ শনাক্ত করতে না পারলে সারা জীবন ধরে এর থেকে নিষ্কৃতি নেই৷ জার্মানির একটি ক্লিনিক পূর্ব ইউরোপের অনেক শিশুর মুখে আবার হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে চলেছে৷
বিজ্ঞাপন
শিশুদের রিউম্যাটিক ক্লিনিকের গেস্ট-হাউসে স্থান পেয়ে মারিয়া মিত্রেভা ও তার মা নতুন জীবন পেয়েছেন বলা চলে৷ তখন তাঁদের মনে হয়েছিল, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই স্বদেশ বুলগেরিয়ায় ফিরে যেতে পারবেন৷ মারিয়া-র রিউম্যাটিক ডিস-অর্ডার বা বাত রয়েছে৷ এই ‘অটো-ইমিউন' রোগ তার শরীরের ইন্দ্রিয়গুলির ক্ষতি করছে৷ বুলগেরিয়ায় ওষুধ পাওয়া যায় নি৷ তাই দেশ ছাড়াই ছিল শেষ ভরসা৷ বিদেশ থেকে অনেক পরিবারই শিশুদের রিউম্যাটিক ক্লিনিকের শরণাপন্ন হয়৷
যেমন রাশিয়ার মেয়ে আনা-র কাছে গার্মিশ পার্টেনকিয়র্শেনের ক্লিনিকই ছিল শেষ ভরসা৷ মস্কোর ডাক্তাররা তার শরীরে রিউম্যাটিক ডিস-অর্ডার খুঁজে বার করতে তিন বছর সময় নিয়েছিলেন৷ ক্লিনিকের প্রধান প্রফেসর ড. ইয়োহানেস পেটার হাস বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরে সংক্রমণের পরিণাম হিসেবে কার্টিলেজ নষ্ট হয়ে যায়৷ তারপর হাড়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ এই প্রক্রিয়া চলে ধীর গতিতে৷ এটা ঘটে, যখন শিশুদের শরীরে কয়েকটি অ্যাটাক হয় অথবা জয়েন্টে কোনো সংক্রমণ দেখা যায়৷ উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবেই এমনটা ঘটে৷''
ঠিক সময় রোগ শনাক্ত না হওয়ায় আনা অনেক বছর ধরে টিউবারকুলোসিস বা যক্ষ্মারোগের ওষুধ খেয়ে গেছে৷ রিউম্যাটিক অ্যাটাকের কারণে তার হাঁটু শক্ত হয়ে গেছে৷ এরপর তার কৃত্রিম জয়েন্টের প্রয়োজন পড়বে৷ জার্মানি আসার পর সপ্তাহে দু'দিন ক্লিনিকে যেতে হয়৷ রোগীদের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি করাই সেখানকার কর্মীদের লক্ষ্য৷ হাসপাতালে সবকিছুই একই ছাদের নীচে প্রস্তুত, চাইলেই নাগালের মধ্যে৷ আছে নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ডাক্তার ও ফিজিওথেরাপিস্ট৷
জার্মানিতে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক সমস্যা
কিশোর-কিশোরীরা ভোগেন নানা মানসিক সমস্যায়৷বড়রা ওদের দিকে একটু খেয়াল রাখলেই হয়তো বেচে যেতে পারে ফুলের মতো সুন্দর অনেক জীবন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কেমন আছে নিজের সন্তান ?
অনেক মা-বাবা প্রায়ই জানেন না যে তাদের আদরের সন্তান কেমন আছে৷ ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সিদের মৃত্যুর প্রধান কারণ দুর্ঘটনা আর দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে আত্মহত্যা৷ জার্মানিতে প্রায় প্রতিদিনই দু’একজন আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে৷
ছবি: fotolia/Mikael Damkier
শেষ চিঠি
লেনার মা সুজানে বলেন, তাঁর মেয়ে ১৬ বছর বয়সে ব্লেড এবং ছুরি দিয়ে কয়েকবারই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলো৷ প্রথমদিকে বাবা-মা বা স্কুলের শিক্ষক কেউ সেটা খেয়ালই করেনি৷ চিঠির বাক্সে লেনার লেখা বিদায়ী চিঠি পেয়ে বুঝেছেন, যে তাঁর মেয়ে মানসিক সমস্যায় ভুগছে, জরুরি সাহায্য বা চিকিৎসার প্রয়োজন৷
ছবি: DW/Janine Albrecht
অনুভূতির প্রকাশ
হাইডেলব্যার্গ ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকের প্রফেসার ড. রমুয়াল্ড ব্রুনার বলেন, যদি কেউ নিজের হাত বা পায়ের রগ কেটে ফেলে বা এ ধরনের কিছু একটা করে বসে, তাহলে বুঝতে হবে এটা ওদের রাগ, দুঃখ বা হতাশার প্রকাশ মাত্র৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিজেকে কষ্ট দেওয়া
১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সি কিশোর-কিশোরীদের ওপর একটি সমীক্ষা চালানো হয় এবং সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের পরিচয় গোপন রাখা হয়৷ সমীক্ষার ফলাফলে ছেলেদের মধ্যে ৮ জন এবং মেয়েদের মধ্যে ১৮ জন স্বীকার করেছে, তাদের এই ছোট্ট জীবনে অন্তত তিনবার হাত পা কেটেছে, নিজেদের কষ্ট দিয়েছে, তাদের জীবনের দুঃখ, কষ্ট বা হতাশা ভুলে যাবার জন্য৷
ছবি: picture-alliance/ dpa/dpaweb
ইন্টারনেট, ফেসবুক, মোবাইল
আজকের আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির যুগে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অনেকেই যোগাযোগের জন্য বেছে নেয় কৃত্রিম মাধ্যম ইন্টারনেট, ফেসবুক৷ তাদের মধ্যে অনেকেই ইন্টারনেট নেশাগ্রস্ত৷ এদের অনেকের মতে, মোবাইল ছাড়া জীবন চলাই সম্ভব নয়৷
ছবি: Fotolia/Konstantin Yuganov
আসল বন্ধু পাওয়া যায়না
একথা ঠিক, যে আজকের দিনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ অনেক সহজ হয়েছে এবং ব্যবহারও হচ্ছে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব যোগাযোগ আসল বন্ধু পেতে কোনো কাজে আসেনা৷ বরং এসব বিষণ্ণতার দিকেই ঠেলে নিয়ে যায় এবং ভয় ও আত্মহত্যার চিন্তা করতে সহায়তা করে৷
ছবি: picture-alliance/ZB
বসঃসন্ধিকাল
ছেলে মেয়েদের বসঃসন্ধির সময় ওদের আত্মসম্মানবোধ, অকারণেই মন খারাপ হওয়া বা ঘুমের সমস্যা দেখা দেওয়া প্রাকৃতিক নিয়মেই ঘটে থাকে৷ তবে এ সব সমস্যা যদি ঘনঘন দেখা দেয় বা বাড়াবাড়ি হয়, তাহলে সেটা মানসিক অসুস্থতা বলেই ধরতে হবে এবং চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে, বলেন ড.ব্রুনার৷
ছবি: Fotolia/Alliance
শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে
কিশোর-কিশোরীদের এই ধরনের সমস্যায় স্কুলের শিক্ষকদের আরো বেশি এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলোচনা করতে হবে
মানসিক সমস্যায় শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবক, ছোট-বড় অনেকেই ভোগে এবং আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয়৷ এ ধরনের সমস্যাগুলোর শুরুতেই গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন মনোবিজ্ঞানীরা৷
ছবি: Fotolia/JenKedCo
শরীর চর্চা
রাগ, দুঃখ বা হতাশা থেকে সহজে বের হওয়ার উপায় শারীরিকভাবে বা অন্য কোনোভাবে ব্যস্ত থাকা৷ কোনো কাজে যুক্ত হওয়া৷ হতে পারে খেলাধুলা বা যে কোনো ধরনের শরীরচর্চা৷ হতে পারে বাগানের কাজে কাউকে সাহায্য করা, যে কাজ সত্যিকার অর্থেই মনকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
হাসপাতালে মারিয়াকে একেবারে নতুন ধরনের ওষুধ দেয়া হয়েছে৷ এমন ইঞ্জেকশন যা বুলগেরিয়ায় পাওয়া যায় না৷ কর্টিসোন-এর থেকে তাতে আরাম বেশি৷ দেশে সেই ইঞ্জেকশনই পেত সে৷ ফলে শরীর ফুলে গেছে৷
ফিজিওথেরাপিস্ট-রা ক্লিনিকের ডাক্তারদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করেন৷ প্রতিটি শিশুর জন্য আলাদা ট্রেনিং কর্মসূচি স্থির করা হয়৷ শরীরের নাড়াচাড়া বিশ্লেষণ করে সঠিকভাবে জানা যায়, কোন জয়েন্ট-এর এক্সারসাইজ কীভাবে করা উচিত৷ আনা-র জন্যও নির্দিষ্ট এক্সারসাইজ ঠিক করা হয়েছে৷ ক্রীড়াবিজ্ঞানী মাটিয়াস হার্টমান বলেন, ‘‘আনার ত্বকের উপর যে বল লাগিয়ে দিয়েছি, তা দিয়ে শরীরের থ্রিডি অ্যানালিসিস করতে পারি৷ প্রতিটি জয়েন্টের অ্যাঙ্গল সম্পর্কে জানতে পারি৷''
বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতিটি জয়েন্ট ঠিক কোন মাত্রায় রিউম্যাটিক ডিস-অর্ডারে আক্রান্ত হচ্ছে৷ সাতটি ক্যামেরা শরীরে সেই ছবি তোলে৷ থেরাপি কাজ করবে কি না, সেই তথ্য থেকে তা বোঝা যায়৷ আনা-ও বছরের শুরু থেকে নতুন ওষুধ খাচ্ছে৷ জার্মানি থেকে সে সেই ওষুধ কিনে নিয়ে যায়৷
বহু বছর ধরে কোর্টিসন নেবার পর মারিয়া তার পরিণাম থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে৷ ক্লিনিকে সে সাঁতারও শিখছে৷ তার মা এখনো দেশ-বদলের ধকল সামলাচ্ছেন৷ তবে মেয়ের স্বাস্থ্যের খাতিরে তিনি সবই করছেন৷ মা ও মেয়ের জন্য গার্মিশ পার্টেনকিয়র্শেনে আসাই ছিল একমাত্র পথ৷ মারিয়া যখন জার্মানিতে আসে, তখনও সে হুইলচেয়ারে বসতো৷ আর এখন স্বাস্থ্যের সমস্যা সত্ত্বেও সে মোটামুটি বিভ্রাটহীন জীবনের আশা করছে৷