সমৃদ্ধ ধ্রুপদী শিশু সাহিত্যের আধার বাংলা ভাষা৷ কিন্তু আধুনিক যুগে এ সাহিত্যের যেন আকাল পড়েছে৷ একেই দেশে বই পড়ার ঠিক যেন একটা সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি, তারওপর কেউ যেন এদিকটায় খেয়ালই করছেন না৷
বিজ্ঞাপন
টমটম আর বুড়ো বুদ্ধের গল্প৷ আমার পড়া প্রথম গল্পের বই৷ মফস্বলের কিণ্ডার গার্টেন স্কুলে প্রথম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় তৃতীয় হবার পুরস্কার৷ সেইদিনটির কথা খুব আবছা হলেও মনে আছে৷ গাঢ় সবুজ রঙের প্যান্ট আর সাদা শার্টের ইউনিফর্ম পরে দীঘির পাড় ধরে স্কুল থেকে অনেকটা দৌঁড়েই ফিরি বাড়িতে৷ জামা জুতো খুলে এরপর অন্য কিছু ভাববার সময় কোথায়?
বই নিয়ে উঠোনে, কাঠের চেয়ারে বসে পড়তে শুরু করি৷ পাশের বাড়ির আমগাছের ঘন পাতাগুলোর ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো গোল গোল করে আমার গায়ে পড়ে, পড়ে ছবি আর হরফে সাজানো বইয়ের পাতায়৷
পরীক্ষা শেষ৷ বাড়ির কাজ করার তাড়া নেই৷ আমি ছুটে চলি টমটমের সঙ্গে, কোনো দুঃসাহসিক অভিযানে৷ বইয়ের সঙ্গে সেই যে সখ্যতা, সেই যে বন্ধুত্ব, তা এখনো রয়ে গেছে৷ আমরা কেউ কাউকে ছাড়িনি৷
মেলার বাইরে বইয়ের মেলা
রাজধানী ঢাকার কয়েকটি জায়গায় গড়ে উঠেছে বইয়ের আধুনিক কিছু দোকান৷ শুধু বই কেনাই নয়, লেখক-পাঠকদের জন্য নানান আয়োজনও আছে নতুন এ সব বইঘরে৷ ঢাকার এ রকম কয়েকটি বইয়ের জগত দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Abdullah Al Momin
পাঠক সমাবেশ সেন্টার
ঢাকার শাহবাগে আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেটের বিপরীতে অগ্রণী ব্যাংকের দ্বিতীয় তলায় বৃহৎ বইয়ের দোকান ‘পাঠক সমাবেশ সেন্টার’৷
ছবি: Abdullah Al Momin
বই প্রেমীদের নতুন ঠিকানা
পাঠক সমাবেশ সেন্টার কেবল বইয়ের বিক্রয় কেন্দ্রই নয়, এখানকার বইয়ের জগতে অন্তত একবেলা সময় সাচ্ছন্দে সময় কাটাতে পারেন বইপ্রেমীরা৷
ছবি: Abdullah Al Momin
নানা আয়োজন
শুধু বই কেনা-বেচাই নয়, বইকেন্দ্রিক নানা অনুষ্ঠান, প্রকাশনা উৎসব, পাঠচক্র, সাহিত্য আড্ডা দেয়ারও চমৎকার জায়গা শাহবাগের এই পাঠক সমাবেশ সেন্টার৷
ছবি: Abdullah Al Momin
দীপনপুর
রাজধানীর কাটাবন মোড়ে আরেক বইয়ের জগত ‘দীপনপুর’৷ ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছিলেন প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন৷ গত বছর তাঁর ৪৫তম জন্মদিনে যাত্রা শুরু হয় এই বইঘরটির৷
ছবি: Abdullah Al Momin
দীপনের স্মৃতি
দীপনের মৃত্যুর পর তাঁর সহধর্মিনী ডা. রাজিয়া রহমান জলি স্বামীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে চালু করেন এই বইয়ের দোকান৷ জাগৃতির হাল ধরার পাশাপাশি দীপনের স্মৃতি ও চেতনাকে ধরে রাখতেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ভিন্নধর্মী এই বুকশপ ক্যাফে৷
ছবি: Abdullah Al Momin
শিশুদের জন্য ‘দীপান্তর’
দীপনপুরে শিশু-কিশোরদের জন্য রয়েছে ‘দীপান্তর’৷ শিশুরা এখানে পড়তে পারবে বই, আঁকতে পারবে ছবিও৷ পাশাপাশি আছে খেলাধুলা করার ব্যবস্থা৷
ছবি: Abdullah Al Momin
দীপনপুরের যত আয়োজন
দীপনপুরে বই পড়তে পড়তে চুমুক দেয়া যাবে চা কিংবা কফির পেয়ালায়৷ প্রয়োজনীয় বইটি না থাকলে অর্ডার সাপেক্ষে যথাসময়ে বাড়িতে পৌঁছে যাবে৷ এছাড়া ক্রেতারা অনলাইনেও বই কিনতে পারেন দীপনপুর থেকে৷
ছবি: Abdullah Al Momin
বাতিঘর
ঢাকার বাংলা মোটর এলাকায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের অষ্টম তলায় চালু হয়েছে বইঘর ‘বাতিঘর’৷ ৫০০০ বর্গফুট জায়গাজুড়ে এ বইয়ের জগতে আছে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা শাখার বিষয়াবলীর পাশাপাশি খেলাধুলা, রাজনীতি ও সমকালীন বিজ্ঞান, দর্শন আর লোকসংস্কৃতির উপর রচিত লক্ষাধিক বইয়ের সংগ্রহ৷
ছবি: DW/Abdullah Al Momin
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা
২০০৫ সালে চট্টগ্রামে ছোট পরিসরে যাত্রা শুরু করেছিল বাতিঘর৷ ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ভবনে তিন হাজার বর্গফুটের বড় পরিসরে পুরনো জাহাজের আদলে সম্প্রসারিত হয় বাতিঘর৷ ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় আরো বড় পরিসরে চালু হলো বাতিঘরের দ্বিতীয় শাখা৷
ছবি: DW/Abdullah Al Momin
বইয়ের ভাণ্ডার
ঢাকার বাতিঘরে প্রায় শতাধিক বিষয়ের ১০ হাজার লেখক ও এক হাজার দেশি-বিদেশি প্রকাশনা সংস্থার লক্ষাধিক বইয়ের বিষয়ভিত্তিক বৈচিত্র্যপূর্ণ সংগ্রহ রয়েছে৷
ছবি: DW/Abdullah Al Momin
নানান কর্নার
বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাতিঘরে আছে বিষয় ভিত্তিক কর্নার৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ভ্রমণ ও প্রবন্ধ কর্নার’, ‘কবিতা কর্নার’, ‘দর্শন কর্নার’,‘শীর্ষেন্দু-সুনীল-সমরেশ কর্নার’, ‘মুহম্মদ জাফর ইকবাল কর্নার’ ‘ছোটগল্প কর্নার’, ‘ইতিহাস কর্নার’ ‘রহস্যগল্প কর্নার’ ইত্যাদি৷
ছবি: DW/Abdullah Al Momin
বেঙ্গল বই
রাজধানীর ধানমণ্ডিতে দেশি-বিদেশি বই বিকিকিনির সাথে পড়ুয়াদের এক নতুন আড্ডাস্থল ‘বেঙ্গল বই’৷ গল্প, উপন্যাস থেকে শুরু করে এখানে মিলবে শিল্পকলা, সাহিত্য, স্থাপত্যবিষয়ক বইও৷
ছবি: DW/Abdullah Al Momin
বিশাল আয়োজন
বেঙ্গল বইয়ের তিন তলা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা জুড়ে আছে দেশি-বিদেশি বই৷ নিচতলায় সব শ্রেণির পাঠকের জন্য আছে পুরনো বই ও ম্যাগাজিন৷ দোতলার বারান্দায় বসে কফি খেতে খেতে গল্প করার ব্যবস্থাও আছে৷
ছবি: DW/Abdullah Al Momin
নানা আয়োজন
বেঙ্গল বই-এ নিয়মিত পাঠচক্র, কবিতা পাঠের আসর, নতুন লেখা ও লেখকের সঙ্গে পরিচিতিমূলক সভা, প্রকাশনা উৎসব, চিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন থাকে৷ অসুস্থ বা প্রতিবন্ধীরা হুইলচেয়ারে পুরো জায়গা ঘুরে নিজের পছন্দমাফিক বই কিনতে পারবেন৷ প্রবীণদের জন্য রয়েছে বইয়ে বিশেষ ছাড় এবং বাগানে বসে আড্ডা দেওয়ার ব্যবস্থা৷
ছবি: DW/Abdullah Al Momin
আকাশকুসুম
বেঙ্গল বই ভবনের তিনতলার প্রায় পুরোটাই শিশুদের জন্য৷ ‘আকাশকুসুম’ নামে সেই রাজ্যে শিশুবান্ধব পরিবেশে বইপড়া ছাড়াও গল্পবলা, আবৃত্তি, ছবি দেখা ও আঁকাআঁকির মধ্য দিয়ে শিশুরা হারিয়ে যেতে পারবে অন্য জগতে৷
ছবি: DW/Abdullah Al Momin
15 ছবি1 | 15
আমাদের পাড়ায় একটা বইয়ের দোকান ছিল৷ বই ভাড়া পাওয়া যেত৷ সপ্তাহে এক টাকা করে বোধ হয়, ঠিক মনে নেই৷ বাড়ির বড়রা আমায় পাঠাতেন বইয়ের নাম লিখে৷ বড়দের বই ছিল আলাদা৷ ওখানে প্রেম ভালোবাসার কথা লেখা থাকতো৷ ওসব আমার পড়া বারণ৷
আমি পড়তাম তিন গোয়েন্দা, বড়জোর দস্যু বনহুর৷ পাঠ্যবইয়ে সুকুমার রায়, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, ফররুখ আহমদসহ বিখ্যাত সব কবি লেখকদের লেখা পড়তে পাই৷
এরপর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের পাঠচক্রে পূর্ব ও পশ্চিমের সাহিত্যিকদের খুঁজে পাই৷ আস্তে আস্তে দেশ-বিদেশের কালজয়ী সব লেখার সঙ্গে পরিচয় হয়৷
এতকিছু বলার একটাই কারণ, আমার শিশুবেলায় সাহিত্যের সঙ্গে সখ্য, গল্পের প্রতি আগ্রহ, সম্ভবত বাড়ির বড়দের কাছে গল্প শুনে শুনে৷ কিন্তু সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিতি একেবারেই ছন্নছাড়াভাবে৷ যেটা যখন পেয়েছি, পড়েছি৷ এর কারণ বোধ করি, শিশু সাহিত্য পড়ার একটা স্বাভাবিক সংস্কৃতি নেই আমার বাংলাদেশে৷ অন্য দেশেরটা অত জানি না৷
কিন্তু তার বড় দরকার৷ পাঠ্যসূচিতে যা আছে, তা তো পড়বেই শিশুরা৷ কিন্তু তা যতটা না আগ্রহ, তার চেয়ে পরীক্ষার খাতায় কতটা উগড়ে দেয়া যায় সেই প্রতিযোগিতা৷ যেমন এখনকার শিশুরা৷ স্কুলের পড়া পড়তে পড়তে এদের সময় কোথায় গল্পের বই পড়ার৷
আমাদের সময়ও এতটা ছিল না৷ ঐ যে খাটের নিচে শুয়েও বই পড়েছিলাম, সেটা তো আজও জানে না বাড়ির লোকেরা৷
ছোটদের জন্য ১০টি ক্ল্যাসিক জার্মান বই
ম্যাক্স আর মরিৎস থেকে শুরু করে বোবো ডরমাউজ অবধি জার্মান ভাষায় লেখা বহু ছোটদের বই সারা বিশ্বে নাম করেছে৷ সেরকম ১০টি ছোটদের ‘ক্ল্যাসিক’ নিয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: picture alliance/dpa/H.Hollemann
ছোট্ট ছুছুন্দরী
জার্মান ভাষায় তার নাম ‘মাউলভুর্ফ’, ইংরেজিতে বলে ‘মোল’৷ ভল্ফ অ্যারব্রুখ-এর ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত বইটির শীর্ষক ছিল: ‘যে ছোট্ট ছুছুন্দরী নিজের চরকায় তেল দিতে জানত’৷ বেচারা ছুছুন্দরীর মাথায় গু লেগে গেছে, এই হলো তার সমস্যা – বড়রা নাক কুঁচকোলেও, কাহিনিটা ছোটদের কাছে খুবই মজার৷ এমনকি অ্যারব্রুখ বইটার জন্য ২০১৭ সালে প্রথম জার্মান লেখক হিসেবে অ্যাস্ট্রিড লিন্ডগ্রেন পুরস্কার লাভ করেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/Peter Hammer Verlag
ম্যাক্স আর মরিৎস
উইলহেল্ম বুশের লিখিত ও চিত্রিত ‘ছেলেদের সাতটি দুষ্টুমি’ ১৮৬৫ সালে প্রকাশিত হয় এবং আজ প্রায় প্রবচনের পর্যায়ে উঠে গেছে৷ দু’টি পাজি ছেলের নানা ধরনের দুষ্টুমির গল্পগুলো আবার গদ্যে নয়, পদ্যে বলা হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/H.Hollemann
খরগোশের স্কুল
আলব্যার্ট সিক্সটাস-এর ‘ডি হেজশেনশুলে’ বইটি প্রকাশিত হয় ১৯২৪ সালে, অলঙ্করণ করেছিলেন ফ্রিৎস কখ-গোটা৷ এটাও বস্তুত ছড়ার বই৷ খরগোশ ভাই-বোন হান্স আর গ্রেটে – অবশ্যই গ্রিম ভাইদের প্রখ্যাত রূপকথা হান্সেল ও গ্রেটেল থেকে এদের নাম নেওয়া হয়েছে – এরা স্কুলে যেত এমন একটা সময়ে, যখন মাস্টাররা কড়া আর শেয়ালরা ধূর্ত ছিল৷
ছবি: picture alliance/dpa/F.Kraufmanm
পুতুলনাচে গণ্ডগোল
নিল্স ভ্যার্নারের ১৯৫৮ সালের বইটির অলংকরণ করেছিলেন হাইঞ্জ বেহলিং৷ কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানিতে বইটি খুবই জনপ্রিয় ছিল, এমনকি তার উপর ভিত্তি করে একটি ফিল্মও তৈরি করা হয়েছিল৷ আজও জার্মানির পূর্বাঞ্চলে বইটির জনপ্রিয়তা অম্লান৷ কাহিনি হলো: ঠাম্মার জন্মদিনের পার্টির জন্য তৈরি করা প্যানকেকগুলো চুরি করেছে কোনো এক খুদে শয়তান৷ তারপর তাকে সে কি তাড়া, সে কি তাড়া...!
ছবি: Eulenspiegel
লেখার বদলে আঁকা
আলি মিটগুচ-কে তথাকথিত ‘লুকনো ছবির বই’-এর জনক বলে গণ্য করা হয়৷ তাঁর প্রথম বই বেরোয় ১৯৬৮ সালে, নাম ছিল ‘রুন্ডহেয়ারুম ইন মাইনার স্টাট’ বা ‘আমার শহরের চারপাশে’৷ বইটি তার পরের বছর জার্মান কিশোর সাহিত্য পুরস্কার পায়৷ সেযাবৎ মিটগুচের আরো বই বেরিয়েছে এবং শুধু জার্মানিতেই নয়৷ তাঁর বইতে কথা থাকে না বটে, কিন্তু থাকে ঠিক সেই পরিমাণ হাসি৷
ছবি: Ravensburger
তিন বন্ধু
হেল্মে হাইনে-র ‘ফ্লেন্ডস’ বইটি বেরোয় ১৯৮২ সালে: একটি শুয়োর, একটি মুর্গি ও এক ইঁদুরের অ্যাডভেঞ্চারের কাহিনি৷ আদতে বার্লিনের বাসিন্দা হাইনে বর্তমানে নিউজিল্যান্ডে বাস করেন৷ তাঁর বই নানা ভাষায় অনুবাদ হয়েছে৷ ‘ফ্রেন্ডস’ বইটিকে ভিত্তি করে জার্মান ভাষার একটি কার্টুন ছবি বেরোয় ২০০৯ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বোবো ডরমাউজ
বোবো নামের খুদে ডরমাউজ ইঁদুরকে নিয়ে লেখা বইটিতে চিড়িয়াখানা, খেলার জায়গা অথবা খিড়কির বাগানে রোজ যা ঘটে, তা নিয়ে সহজ-সরল করে আঁকা ছবিগুলোর সাথে কিছু কিছু লেখা যোগ করা হয়েছে৷ সুইস লেখক মার্কুস অস্ট্যারভাল্ডার-এর বইটি বেরোয় ১৯৮৪ সালে; সেযাবৎ বোবো ডরমাউজকে নিয়ে নানা কার্টুন সিরিজ তৈরি হয়েছে৷
ছবি: rowohlt
রংধনু মাছ
সুইশ লেখক মার্কুস ফিস্টার-এর রংচঙে ছবির বইটি বেরোয় ১৯৯২ সালে৷ নানারঙের আঁশযুক্ত মাছটির কাহিনির উপজীব্য হলো সব কিছু পরস্পরের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া, বন্ধুত্ব ও নিজেকে আবিষ্কার করা৷ গল্পটা বহু ভাষায় অনুবাদ হয়েছে ও একটি মিউজিক্যাল ও কার্টুন সিরিজে পরিণত করা হয়েছে৷ বাথটবে নিয়ে খেলা করার জন্যও প্লাস্টিকের রংধনু মাছ কিনতে পাওয়া যায়৷
ছবি: Nord Süd Verlag
‘নেক্সট প্লিজ’
ডাক্তারের চেম্বারে গেলে রোগীর যখন ডাক আসে, তখন তার হৃৎকম্প নিয়ে লেখা এই কবিতাটির রচয়িতা অ্যার্ন্সট ইয়ান্ডল৷ কবিতাটি প্রকাশিত হয় ১৯৭০ সালে৷ ১৯৯৭ সালে নর্মান ইয়ুঙ্গে কবিতাটির উপর ভিত্তি করে লেখা একটি ছোটদের বই-এর অলংকরণ করেন ও বইটি জার্মান কিশোর সাহিত্য পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়৷
ছবি: Beltz und Gelberg
‘গ্রাফেলো’
ব্রিটিশ লেখক জুলিয়া ডোনাল্ডসন আর জার্মান অলংকরণশিল্পী আক্সেল শেফলার মিলে এই ক্ল্যাসিকটি সৃষ্টি করেন ১৯৯৯ সালে৷ তার জার্মান সংস্করণ প্রকাশিত হয় ২০০২ সালে৷ কাহিনি হলো: একটি ইঁদুর অন্যান্য জীবজন্তুদের তার কাল্পনিক বন্ধুর কথা বলে ভয় দেখাচ্ছে৷ পরে দেখা গেল, সেই ভীতিকর গ্রাফেলো সত্যিই আছে! এই কাহিনির ভিত্তিতে তৈরি ২০১১ সালের একটি কার্টুন ছবি অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/dpa/ZDF/Orange Eyes
10 ছবি1 | 10
সেই আগ্রহটা কোথায় এখনকার শিশুদের? ওরা খাটের নীচে গিয়ে বড়জোর গেমস খেলে মোবাইলে৷ অথবা বন্ধুদের সঙ্গে সেল্ফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেয়৷ লাইক তো পেতেই হবে৷
বাংলায় শিশুসাহিত্যের ক্লাসিকগুলো অনেক সমৃদ্ধ৷ কিন্তু সেইসঙ্গে এ যুগের শিশুদের জন্যও সমৃদ্ধ সাহিত্য প্রয়োজন৷ তার কতটা আছে সেখানে?
একুশের বইমেলা ঘুরলে কিছুটা আঁচ করা যায় যে, শিশুদের জন্য কেমন লেখা আসছে বাজারে৷ বইমেলা চলাকালীন ছুটির দিনগুলোতে শিশুপ্রহর করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ তাই শুক্র ও শনিবার সকালগুলোতে শিশুদের বেশ ভিড় হয়৷
১০ বছরের নীচের শিশুরা মূলত ছবি দেখে বই পছন্দ করে৷ আর সেই বইগুলোর অনেকগুলোই এতটাই নিম্নমানের যে, তাকে সাহিত্য বলতে রুচিতে বাঁধবে৷
শিশুদের জন্য প্রকাশিত বইয়ে বানানসহ যে কোনো ধরনের ভুল অমার্জনীয় অপরাধ, যেটি হরহামেশাই করা হয়ে থাকে৷ এছাড়া টেক্সটের সঙ্গে মিল নেই ছবির৷ ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করা হচ্ছে ছবি৷ কিছু টেক্সট দিয়ে ছাপিয়ে দিচ্ছে৷ ব্যবসাও হচ্ছে ঢের৷ কিন্তু ক্ষতি যা হচ্ছে আমাদের শিশুদের৷
এছাড়া বইমেলায় সিডিও পাওয়া যায়৷ আজকাল পড়তে চায় না কেউই৷ সবাই ভিডিও দেখতে চায়৷ তাই সারা পৃথিবীতে ভিডিওর এত কদর৷ তাই এরও কাটতি ভালো৷
কিন্তু এ সবের মাঝেও যে ভালো কাজ নেই, তা নয়৷ সবকিছুর ওপরে শিশুর পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি৷ বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র যা করে আসছে কয়েক যুগ ধরে, স্কুলগুলোতেও তা করা উচিত৷ নিয়ম করে শিশুকাল থেকেই পাঠ্যসূচির বাইরের শিশু সাহিত্য পড়তে উদ্বুদ্ধ করা দরকার৷ প্রযুক্তির এই যুগে তো আরো বেশি করে করা দরকার৷ তাহলেই হয়ত একটা বই পড়ার সংস্কৃতি বহাল থাকবে, যা জাতির মননকে সমৃদ্ধ করবে৷
আয় যেখানে খ্যাপার গানে
নাইকো মানে নাইকো সুর৷
আয়রে যেথায় উধাও হাওয়ায়
মন ভেসে যায় কোন্ সুদূর৷
শিশুর মন যদি মোবাইল, ল্যাপটপ, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে কোন সুদূরে ভেসে না বেড়ায়, তাহলে টমটমের গল্প গল্পই থেকে যাবে৷ বাস্তবে টমটমদের খুঁজে পাওয়া যাবে না৷
লেখাটি নিয়ে কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷