সৌদি আরবের সরকার নিয়ন্ত্রিত হিউম্যান রাইটস কমিশন এইচআরসি রবিবার জানিয়েছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন শিয়া তরুণের সাজা কমিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড করা হয়েছে৷ অপরাধ সংঘটনের সময় তারা নাবালক ছিলেন৷
বিজ্ঞাপন
২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি বিক্ষোভে অংশ নেয়ার সময় আলি আল-নিমরের বয়স ছিল ১৭৷ তিনি প্রখ্যাত শিয়া পণ্ডিত নিমর আল-নিমরের ভাতিজা৷ ২০১৬ সালে নিমর আল-নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলে সৌদি আরব ও ইরানে প্রতিবাদ হয়েছিল৷
সৌদি আরবের বিশেষায়িত অপরাধ আদালত আলি আল-নিমর সহ দাউদ আল-মারহুন ও আব্দুল্লাহ আল-জাহেরকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল৷ তাদের শিরশ্ছেদ করা হতো৷
গ্রেপ্তারের সময় মারহুনের বয়স ছিল ১৭ আর জাহেরের ১৫৷
রয়টার্সকে এইচআরসি জানিয়েছে, নিমর নয় বছরের বেশি সময় জেল খেটেছেন৷ রবিবার তার সাজা কমানো হয়৷ মারহুন ও জাহেরের সাজা কমানো হয় গত নভেম্বরে৷
এই তিনজনের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে জেলে কাটানো সময় গণ্য করা হবে বলে জানিয়েছে এইচআরসি৷ ফলে ২০২২ সালে তারা মুক্তি পেতে পারেন৷
সরকারের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেসন্সের কাছে এসব তথ্যের সত্যতা জানতে চেয়েছে রয়টার্স৷ তবে এখনো উত্তর পাওয়া যায়নি৷
পাঁচ মাস আগে সৌদি আরবের পাবলিক প্রসিকিউটর ঐ তিন তরুণের বিরুদ্ধে দেয়া রায় পুনরায় বিবেচনার নির্দেশ দিয়েছিলেন৷
তারও আগে, মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিদের মধ্যে যারা অপরাধ সংঘটনের সময় নাবালক ছিলেন তাদের সাজা কমিয়ে তাদেরকে কিশোর সংশোধনাগারে ১০ বছর বন্দি রাখতে একটি রয়েল ডিক্রি জারি করা হয়েছিল৷
অবশ্য সরকারি গণমাধ্যম কিংবা গেজেটে কখনো এই ডিক্রি প্রকাশ করা হয়নি৷
এইচআরসি জানিয়েছে, এই ডিক্রি বর্তমানে আটক থাকা সব নাবালকের জন্য কার্যকর হবে৷
মৃত্যুদণ্ডবিরোধী সংগঠন রিপ্রাইভ তিন তরুণের সাজা কমানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে৷ তবে এই ডিক্রি যেন সব কিশোরের ক্ষেত্রে কার্যকর করা হয় সেই আহ্বান জানিয়েছে৷ ‘‘সত্যিকারের পরিবর্তন মানে কিছু হাই-প্রোফাইল কেসের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া নয়, এর মানে হচ্ছে, এটা নিশ্চিত করা যে, সৌদি আরবে আর কখনো শিশু বয়সে করা ‘অপরাধের' দায়ে কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে না,'' বলেন রিপ্রাইভের পরিচালক মায়া ফোয়া৷
গিলোটিনে মাথা কাটা, হাতির পায়ে পিষ্ট করা- প্রাচীনকালে এ ধরনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পদ্ধতি অনেককে আতঙ্কিত করে৷ কিন্তু এরচেয়েও নৃশংস কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যার কথা হয়ত আপনাদের জানা নেই৷ সেগুলো দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: fotolia
শরীরকে দ্বিখণ্ডিত করা
বহু বছর আগে ইংল্যান্ডে এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো৷ অপরাধী দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে সাজা দেয়ার স্থানে নিয়ে যাওয়া হতো৷ তারপর দুই পা’র মাঝ বরাবর কেটে ফেলা হতো৷
ছবি: picture-alliance/Godong/C. Leblanc
শূলে চড়ানো
রোমান সাম্রাজ্যে এ পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ছিল৷ যীশু খ্রীস্টকেও এভাবেই মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল৷ কাঠের তক্তার সঙ্গে হাত ও পায়ে পেরেক ঠুকে সেই তক্তা দাঁড় করিয়ে দেয়া হতো৷ এভাবে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত ব্যক্তিটি৷
ছবি: Reuters/J. Costa
কলম্বিয়ার টাই
কলম্বিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশে প্রথমে অপরাধীর মাথা কেটে ফেলা হতো৷ তারপর জিভ টেনে বের করে মাথাটা গাছে বেঁধে রাখা হতো৷
ষাঁড়ের পেটে
সিসিলিতে অ্যাক্রাগাসের শাসনামলে এই ভয়াবহ পদ্ধতির প্রচলন শুরু হয়৷ লোহার ষাঁড় বানানো হতো৷ অপরাধীকে ঐ ষাঁড়ের পেটে ঢুকিয়ে এর নীচে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হতো৷ ষাঁড়ের মুখ দিয়ে বের হতো অপরাধীর আর্তনাদ৷ মনে হতো ষাঁড়টিই চিৎকার করছে৷
ছবি: picture alliance/Blickwinkel/W. G. Allgoewer
সেপুকু
জাপানী যোদ্ধা সামুরাই এই পদ্ধতি ব্যবহার করতেন৷ নিজের হাতেই অপরাধীর অন্ত্র বের করে আনতেন, আর যখন অপরাধী ছটফট করতো, তখন সামুরাইয়ের কোনো সহযোগী তরবারি দিয়ে অপরাধীর শিরচ্ছেদ করে দিতো৷
ছবি: Museum Kunstpalast, Düsseldorf, Graphische Sammlung
লিং চি
চীনে বিংশ শতাব্দিতে এসে এই পদ্ধতি বাতিল করা হয়৷ এ ধরণের মৃত্যুদণ্ডে অপরাধীর প্রতিটি অঙ্গ একে একে ছিন্ন করা হতো৷ আর চেষ্টা করা হতো, যাতে সে দীর্ঘ সময় এ অবস্থায় জীবিত থাকে৷
ছবি: Fotolia/D. Presti
জীবন্ত পুড়িয়ে মারা
১৯৩৭ সালে জাপানের সৈন্যরা বন্দি চীনাদের এই শান্তি দিয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
স্প্যানিশ থাবা
প্রাচীন কালে স্পেনে লোহা দিয়ে বিড়ালের থাবার মতো ধারালো হাতিয়ার বানানো হতো৷ আর অপরাধীর চামড়া ঐ হাতিয়ার দিয়ে খুবলে নেয়া হতো৷ চামড়ায় সংক্রমণের কারণে ঐ ব্যক্তির মৃত্যু ছিল অবধারিত৷
ছবি: fotolia
ক্যাথরিন হুইল
অপরাধীকে চাকার সঙ্গে বেঁধে দেয়া হতো৷ আর জল্লাদ ঐ চাকা ঘুরাতে থাকত, পাশাপাশি লাঠি দিয়ে প্রহার করতো৷ ফলে হাড্ডি ভেঙে ঐ ব্যক্তির মৃত্যু হতো৷