ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বুধবার জানিয়েছেন, চীনের প্রেসিডেন্টকে কিয়েভে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন। এদিকে বাখমুতের লড়াই আরো তীব্র হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
পূর্ব ইউক্রেনের বাখমুতে ইউক্রেনের সেনার সঙ্গে রাশিয়ার প্রাইভেট আর্মি ভাগনার গ্রুপের তীব্র লড়াই চলছিল। বুধবার ভাগনার গ্রুপের প্রধান জানিয়েছেন, বাখমুতে তাদের সেনাবাহিনীর বিপুল ক্ষতি হয়েছে। প্রচুর সেনার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু শেষপর্যন্ত তারা বাখমুতের অধিকাংশ এলাকাই দখল করে নিতে পেরেছেন। রয়টার্সের দাবি, একটি অডিও মেসেজে একথা জানিয়েছেন, ভাগনার আর্মির প্রধান।
ওয়াশিংটনের সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ারও জানিয়েছে, বাখমুত এখন রাশিয়ার হাতে। গত সাতদিনে একটু একটু করে রাশিয়া এই কৌশলগত এলাকাটি দখলে নিয়েছে বলে তাদের দাবি। বস্তুত, রয়টার্সও একই কথা জানিয়েছে। তাদের দাবি, ভাগনার আর্মির প্রধানের ভয়েস মেসেজে সে কথাই বলেছেন।
ইউক্রেন-রাশিয়ার তীব্র ড্রোনযুদ্ধ
কয়েকদিন আগেও ইরানের ড্রোনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে দেশে দেশে৷ বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল- ইরানের দেয়া ড্রোন দিয়ে রাশিয়ার হামলা থামাতে হবে৷ সম্প্রতি ইউক্রেনও ড্রোন হামলা শুরু করায় যুদ্ধ রূপ নিয়েছে ‘ড্রোনাড্রোনিতে’৷
ছবি: Stringer/REUTERS
ইউক্রেন তখন অসহায়
২০২২ সালের শেষ দিকে ইউক্রেনে নিয়মিত দেখা যেতো এমন দৃশ্য ৷ নিয়মিত বিরতিতে মৃত্যুদূত হয়ে উড়ে আসতো রাশিয়ার পাঠানো ড্রোন৷ সেই ড্রোনের ফেলা বোমায় ধসে পড়তো ভবন, মৃত্যু হতো অনেকের৷ ড্রোনের বিরুদ্ধে লড়াই এভাবে বন্দুক দিয়েই করতেন ইউক্রেনের সৈন্যরা৷ দূর আকাশে কিছু দেখা গেলেই এভাবে বন্দুক উঁচিয়ে গুলি ছুঁড়তেন তারা৷
ছবি: Vadim Sarakhan/REUTERS
প্রথম মাসে ২২০টি ড্রোন ধ্বংস
২০২২ সালের অক্টোবরে ইউক্রেনের সৈন্যরা গুলি করে কমপক্ষে ২২০টি ড্রোন ধ্বংস করে৷ তারপরও অবশ্য ড্রোন হামলার ভয়াবহতা কমানো যাচ্ছিল না৷
ছবি: Roman Petushkov/REUTERS
যুদ্ধ রাশিয়ার, আলোচনায় ইরান
ওপরের ছবিতে ড্রোন থেকে ফেলা বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের একটি আবাসিক এলাকা৷ এমন ভয়াবহ সব হামলার জন্য রাশিয়ার প্রতি নিন্দা জানালেও বারবারই ঘুরেফিরে আসছিল ইরানের কথা৷ কারণ, ইউক্রেনের দাবি- ইরানের দেয়া শাহেদ-১৩৬ ড্রোন দিয়েই এসব হামলা চালাচ্ছিল রাশিয়া৷ ইউক্রেন তখন রাশিয়াকে এভাবে ড্রোন দিয়ে সহায়তা করায় বিশ্ব নেতৃত্বের প্রতি ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও তোলে৷
ছবি: Oleksii Chumachenko/ZUMA Wire/IMAGO
কিয়েভে ইরান-বিরোধী বিক্ষোভ
রাশিয়া ইরানের দেয়া ড্রোন দিয়ে হামলা চালাচ্ছে- এই অভিযোগে কিয়েভে ইরান দূতাবাসের সামনে বেশ কয়েকবার বিক্ষোভ সমাবেশ করেন কিয়েভবাসীরা৷
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জার্মানির মিউনিখ শহরেও ইউক্রেনীয় শরণার্থীরা রাশিয়াকে ড্রোন দেয়ায় ইরানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেন৷
ছবি: Sachelle Babbar/ZUMAPRESS/picture alliance
ড্রোনের জবাবে ড্রোন
তবে ইউক্রেন এখন আর শুধু ড্রোন-হামলা ঠেকিয়েই অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করছে না৷ ইউক্রেনীয় সৈন্যরাও ড্রোন পাঠিয়ে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়ার সৈন্যদের ওপর৷ ওপরের ছবিতে দনেৎস্কের ভুলেদার এলাকা থেকে ড্রোন হামলা চালাচ্ছেন এক ইউক্রেনীয় সৈন্য৷
ছবি: Lisi Niesner/REUTERS
সার্চ লাইটের আলোয় ড্রোন খোঁজা
শুধু হামলা চালালেই তো হবে না, প্রতিরক্ষের হামলা নস্যাৎও করতে হবে৷ কিয়েভের আকাশে সার্চ লাইটের আলো ফেলে তা-ই নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন ইউক্রেনের সৈন্যরা৷ আলোয় রাশিয়ার কোনো ড্রোন দেখা গেলেই গুলি চালান তারা৷
ছবি: Gleb Garanich/REUTERS
অ্যান্টি-ড্রোন রাইফেল
দনেৎস্কের হরলিভকা এলাকায় অ্যান্টি-ড্রোন রাইফেল হাতে ইউক্রেনের এক সৈন্য৷
ছবি: Oleksandr Ratushniak/REUTERS
রিমোট হাতে যুদ্ধ
ইউক্রেনে প্রায়ই সৈন্যদের হাতে এক ধরনের রিমোট দেখা যায়, যেগুলোর একমাত্র কাজ ড্রোন পরিচালনা করা৷ ছবির এই সৈন্যের হাতেও ড্রোন চালানোর একটি রিমোট৷
ছবি: Lisi Niesner/REUTERS
রাশিয়াতেও ড্রোন-আতঙ্ক
ইদানীং রাশিয়ার কিছু অঞ্চলে ইউক্রেনের ড্রোন বেশ আতঙ্ক ছড়িয়েছে৷ ওপরের ছবিটি রবিবার (২৬ মার্চ) রাশিয়ার তুলা অঞ্চলের কিরীভস্ক শহরে তোলা৷ ইউক্রেনের পাঠানো ড্রোন থেকে ফেলা বোমায় সেখানকার ভবনও বিধ্বস্ত৷
ছবি: Vitaliy Belousov/SNA/IMAGO
ভরসার অপর নাম ইউএভি
কোনো চালক ছাড়াই ছোট ছোট এসব বাহন উড়ে যে কোনো জায়গায় চলে যেতে পারে বলে এগুলোর আরেক নাম আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকেল, সংক্ষেপে ইউএভি৷ জাপোরোনিঝিয়ায় ইউক্রেনীয় এই সেনার হাত থেকে এক্ষুনি উড়ে যাবে ইউএভিটি৷
ছবি: Stringer/REUTERS
12 ছবি1 | 12
জেলেনস্কির আমন্ত্রণ
এদিকে বুধবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে তিনি খোলা আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিয়েভে গিয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতি নিজের চোখে খতিয়ে দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি। গত কয়েকমাসে চীনের সঙ্গে রাশিয়ার সখ্য বেড়েছে। রাশিয়াকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছে চীন। অতি সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে শিয়ের বৈঠক হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জেলেনস্কির এই বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ। জেলেনস্কির বক্তব্য, পুটিন শিয়ের কাছে যতটা সাহায্য চেয়েছিলেন, চীন তা দেয়নি। ফলে এমন হতেই পারে, শি কিয়েভের পরিস্থিতি দেখে ইউক্রেনকে সমর্থন করবে। বস্তুত, সম্প্রতি শি মস্কোয় গেছিলেন। সেখানে রাশিয়ার প্রশাসন তাকে যুদ্ধ পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছে।
জার্মানির ঘোষণা
এদিকে জার্মানি ঘোষণা করেছে, আগামী নয় বছরে সব মিলিয়ে ১২ বিলিয়ন ইউরো খরচ করা হবে ইউক্রেনের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য। ধীরে ধীরে এই অর্থ ব্যয় করা হবে। জার্মানির প্রতিরক্ষা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত কয়েকদিন ধরে এনিয়ে বৈঠক করেছে। তারপরেই বাজেট কমিটিকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮ বিলিয়ন ইউরোর নতুন সামরিক অস্ত্র দেওয়া হবে ইউক্রেনকে। আর চার বিলিয়ন ইউরো খরচ করা হবে পুরনো অস্ত্র বদলের জন্য।