ইউরোপের উত্তরাঞ্চলে শীতকাল দীর্ঘ ও অন্ধকারে আচ্ছন্ন এক সময়৷ অবসাদ কাটিয়ে মানুষকে চাঙ্গা করে তুলতে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন আলোর উৎসবের আয়োজন করছে৷ অভিনব ইনস্টলেশনে ভরে যাচ্ছে গোটা শহর৷
বিজ্ঞাপন
গোটা কোপেনহেগেন শহর ‘লাইট আর্ট গ্যালারি'-তে রূপান্তরিত হয়৷ বছরের সবচেয়ে অন্ধকার সপ্তাহগুলিতে ডেনমার্কসহ গোটা বিশ্বের শিল্পীরা সেখানে তাঁদের ইনস্টলেশন আর্ট তুলে ধরেন৷ ফলে শীতকালেও রাজধানী শহর অসংখ্য পর্যটক আকর্ষণ করে৷ কেউ নাটকীয় ও স্বপ্নময় এই উৎসব সত্যি পছন্দ করেন৷ কেউ বা বছরের এই সময়ে বাইরে বেরিয়ে আলোকিত শহর দেখে মুগ্ধ হন৷
শীতের অবসাদ কাটাতে ডেনমার্কের শিল্পী মাডস ভেগাস ‘ইটারনাল শোডাউন’ নামের শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেছেন৷ সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত কোপেনহেগেন বন্দরে ১৪০টিরও বেশি নিওন বাল্ব সবকিছু আলোকিত করে রাখে৷ মাডস বলেন, ‘‘কোপেনহেগেন শহরের নাগরিকদের জন্য এবারের শীতকালের শেষে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে উষ্ণ এই আলো থাকছে৷ এটি মনে করিয়ে দিচ্ছে, যে আমরা অন্ধকার পর্যায় পেছনে ফেলে এসেছি৷ সূর্য শীঘ্র ফিরে আসছে৷’’
শীতের অন্ধকারেও উষ্ণতা আনছে আলোর উৎসব
03:37
সবুজ লেজার রশ্মি এই আলোক উৎসবের প্রতীক৷ এই নিয়ে দুবার কোপেনহেগেন শহরে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ গোটা শহরজুড়ে ইনস্টলেশন সাজানো হয়েছিল৷ তবে বিশাল ব্যয়বহুল আলোকসজ্জার বদলে রুচিসম্মত শিল্পকর্মকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে৷ ডেনিশ সত্তার সঙ্গে এই মনোভাব খাপ খেয়ে যায়৷ আলোর ক্ষেত্রেও সেই সংযম চোখে পড়ে৷ আলোর উৎসবের আয়োজক কাটিয়া ট্যুসট্রুপ বলেন, ‘‘বায়ুদূষণ এড়াতে, প্রাণীদের বিরক্ত না করতে এবং আমাদের ঘুমের ছন্দ নষ্ট না করতে অনেক বছর ধরে ঠিক যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু আলো থাকতো – বাকিটা অন্ধকার রাখা হতো৷ অন্ধকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আলো সৃষ্টি করা হতো৷’’
কোপেনহেগেন শহরের জনপ্রিয় টিভোলি পার্কও আলোর উৎসবে মেতে উঠেছিল৷ ডেনমার্কের লেখক হান্স ক্রিস্টিয়ান আন্ডারসেনের রূপকথার গল্প থেকে প্রেরণা নিয়ে অরিগামি হাস সৃষ্টি করা হয়েছিল৷ দিনে বেশ কয়েকবার আকাশে কৃত্রিমভাবে লেজারের মাধ্যমে অরোরা বোরিয়ালিস ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল৷
নববর্ষ থেকে ইস্টারের সময় পর্যন্ত সাধারণত এই পার্ক বন্ধ থাকে৷ আলোর উৎসবের কারণে গত বছর থেকে শীতকালেও টিভোলি খোলা রাখা হচ্ছে৷ হাতেনাতে তার ফলও পাওয়া যাচ্ছে৷ টিভোলির আলোক ডিজাইনার ইয়েস্পার কংসহাউগ বলেন, ‘‘দর্শকরা সত্যি প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন৷ এক সমীক্ষা অনুযায়ী আরও বেশি মানুষ সন্ধ্যায় এখানে আসছেন৷ এর আগে কখনো সন্ধ্যাবেলায় এত মানুষ দেখা যায়নি৷ দর্শকরা নিজেদের ভালো অভিজ্ঞতা ও আলোর কথা বলেন৷’’
ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ পর্যন্ত কোপেনহেগেন শহরে উজ্জ্বল শিল্পকর্মগুলি শোভা পেয়েছে৷ ‘অর্ব ফ্যামিলি’-র মতো কিছু ইনস্টলেশন এমনকি স্থায়ীভাবে শহরে থেকে গেছে৷
আন্টিয়ে বিন্ডার/এসবি
বিশ্বের এক ডজন আলোর উৎসব
বিশ্বজুড়ে আলোর উৎসবে যোগ দিচ্ছে নতুন নতুন শহর৷ কেউ স্কয়ার বা রাস্তাকে সাজিয়ে তুলছে আলোর রঙে, কেউ আবার ভবন সেতু, বা ঐতিহাসিক স্থাপনা৷ কারো ক্ষেত্রে এটি ধর্মীয় উৎসব, আবার কারো ক্ষেত্রে এটি নিছক আনন্দ উদযাপন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/MAXPPP/P. Juste
লিওঁ
ক্রিসমাস মৌসুমের শুরুতে প্রতি ডিসেম্বরেই রাইনের পাড়ের ফরাসি শহরটি আলোয় সেজে ওঠে৷ ঐতিহ্যবাহী এই আয়োজন চলে আসছে উনিশ শতক থেকে৷ দিনের আলো ফুরিয়ে এলে লাইটিং আর্টিস্টরা বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে আলো ফেলে নানা রকম ইল্যুশন তৈরি করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/MAXPPP/J. Philippon
লন্ডন
২০১৯ সালের ১৮ থেকে ২১ জানুয়ারি গ্রেট ব্রিটেনে অনুষ্ঠিত হবে ‘লুমিয়ের লন্ডন’ উৎসব৷ সারারত জুড়ে টেমসের পাশের রাস্তা ও স্থাপত্যগুলো আলোকিত হবে নানা রঙে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
সৌল
বছরের প্রথম পূর্ণচন্দ্রকে দ্বিতীয় নববর্ষ হিসেবে পালন করেন কোরিয়ানরা৷ ২০১৯ সালের এই ‘জিয়ংওল ডায়বোরেয়াম’ উৎসব পালন হবে ৪ ফেব্রুয়ারি৷ পিরামিড আকৃতির আগুন আর আধুনিক এলইডি আলোর খেলায় দুর্ভোগ দূরে সরিয়ে সৌভাগ্যকে আমন্ত্রণ জানাবেন কোরীয়রা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jeon Heon-Kyun
মন্ট্রিয়ল
ক্যানাডিয়ান এই শহরে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে ‘মন্ট্রিয়েল এন লুমিয়েঁ’ অনুষ্ঠিত হয়৷ তবে প্লাসে দেস আর্তস সাবওয়ে স্টেশনে প্রতিদিনই থাকে আলোর খেলা৷ ১৩ মিয়ার লম্বা গ্লাস টিউবে শতাধিক ফ্লুরোসেন্ট বাল্বের আলোয় সেখানে বলা হয় সুরের গল্প৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/G. Schwermer
বাল্টিমোর
প্রতি বছর মার্চে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর শহর পরিণত হয় আলোর শহরে৷ শহরের বন্দর এলাকায় চলে আলোকে কাজে লাগিয়ে নানা ধরনের উদ্ভাবনী খেলার প্রদর্শনী৷
ছবি: Light City Baltimore
সিডনি
অস্ট্রেলিয়ার এই শহরে বছরজুড়ে নানা ধরনের উৎসব চলতে থাকে৷ বিশেষ করে জুন মাসের আয়োজনে আলোর দৃষ্টিনন্দন ইনস্টলেশনগুলো দেখতে প্রতি বছর শহরটিতে জড়ো হন ২০ লাখেরও বেশি মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Griffith
জেরুজালেম
গ্রীষ্মকালে জেরুজালেমের পুরোন শহরে চলে উৎসব৷ থ্রিডি প্রজেকশনে শহরের দৃশ্যই পালটে ফেলা হয়৷ জেরুজালেম শহরটি ইহুদি, খ্রীস্টান ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র শহর বলে বিবেচিত৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
মস্কো
গ্রীষ্মের শেষের দিকে রুশ রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয় ‘সার্কল অব লাইট’ উৎসব৷ আশেপাশের সব ভবনকে ক্যানভাস বানিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয় নানা চিত্র৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Fadeichev
বার্লিন
জার্মান রাজধানীর আলোয় মেতে ওঠার সময় হচ্ছে অক্টোবর৷ ফ্যাস্টিভাল অব লাইটস দেখতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে সৌন্দর্যপ্রেমী মানুষ আসেন শহরটিতে৷
ছবি: picture alliance/Photoshot/S. Yuqi
ফ্রাঙ্কফুর্ট
এক বছর পর পর মাইন নদীর তীরে অবস্থিত জার্মান শহরটিতে আয়োজন হয় আলোক উৎসবের৷ শুধু শহরে নয়, ফ্রাঙ্কফুর্টের আকাশজুড়ে ছড়িয়ে দেয়া হয় আলোর নানা শিল্প৷ পরবর্তী ‘লুমিনালে’ আয়োজিত হবে ২০২০ সালে৷
ছবি: picture alliance/dpa/B. Roessler
ঘেন্ট
বেলজিয়ামের এই শহরটির আলোক উৎসব দেখতে আসেন পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ৷ এই উৎসবের আয়োজন হয় তিন বছর পর পর৷ ২০১৮ সালের উৎসবে ৪০টি বিশাল লাইট ইনস্টলেশন প্রদর্শিত হয়৷ পরবর্তী আয়োজন ২০২১ সালে৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/J. Tack
ঢাকা-কলকাতা
বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে পালিত হয় আলোর উৎসব দীপাবলি বা দিওয়ালি৷ মূলত হিন্দুদের হলেও অন্য ধর্মাবলম্বীরাও আনন্দে শামিল হন৷ প্রতিটি ঘরের সদর দরজা থেকেই শুরু হয় আল্পনা বা রাংগোলি দিয়ে মেঝে সাজানো৷ আল্পনা আঁকা হলে তার ওপর জ্বালানো হয় প্রদীপ৷ সারি সারি প্রজ্বলিত প্রদীপের আলোয় দূর হয় সমস্ত আঁধার৷