1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শীতের সঙ্গে আমার আজও বনিবনা হলো না

৮ জানুয়ারি ২০১৮

জার্মান পড়শিরা বলেন: সে কি? এতদিন হয়ে গেল...৷ সাকুল্যে ৩৮ বছর, কিন্তু আমি আজও শীতকাতুরে৷ পড়শিকে বোঝাই: ধরুন পৃথিবীটা একটা কিচেন আর আপনার জন্ম ওভেনে, কিন্তু বাস রেফ্রিজারেটরে৷ তাহলে?

Deutschland Schwarzwald im Schnee
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman

প্রবাস আর প্রবাসীর শেষ অবস্থা হলো, সে দেশে গেলে গরমে মরে, আর বিদেশে থাকলে শীতে৷ শুনেছি নাকি প্রশান্ত মহাসাগরে কী সব খোলার মতো দ্বীপ আছে, যেখানে সারা বছর মলয়ানিল আর লোকে লুঙি আর মাথায় ফুলের মুকুট পরে কলার পাতে ভাপা মাছ খায়৷ এবার ম'লে সেখানেই জন্মাব ঠিক করেছি৷

এক রাশিয়ান বন্ধুর শুনে সে কি হাসি! তার আদত বাড়ি সাইবেরিয়ার ওদিকে৷ বলল শীতকালে নাকি মাছ ধরে বঁড়শি থেকে ছাড়িয়ে ট্রাকে ছুঁড়ে ফেলতে ফেলতে মাছ বাতাসেই জমে গিয়ে টঙাস করে ট্রাকের মেঝেতে পড়ে৷ পরে সেই মাছ যখন বাজারে বিক্রি হয়, তখন কায়দা করে ফ্রিজারে রাখা হয় বটে, কিন্তু সে ফ্রিজারের কোনো বিদ্যুতের কনেকশান থাকে না – বলতে কি, গোটা বাজারেই ইলেকট্রিক নেই৷ কিন্তু শীত তো আছে৷ ‘‘আরে খুঁড়লে এখনও ম্যামথ পাওয়া যায়, আর এ তো শুধু মাছ,'' ডাঁটিয়ে বলল আলেক্স৷

ওর দাদুর বাড়ি আর একটু গাঁয়ের দিকে৷ দাদু-দিদার কাছে গেলে, জানলার কার্নিশ থেকে জল চুঁইয়ে যে সব বরফের চোঙা হয়ে থাকে, তার একটা ভেঙে নিয়ে প্যানে গলিয়ে চায়ের জল গরম করা হয়৷ মাংস রাখা থাকে হিটিং বিহীন পাশের একটা ঘরে: দিব্যি জমে বরফ হয়ে থাকে রেইনডিয়ারের মাংস৷ দাদু গিয়ে করাত দিয়ে সেই মাংস কেটে নিয়ে এলে, তবে দিদা নাতির জন্যে মাংস রাঁধেন৷ আহা৷

কত টেম্পেরেচার সে দেশে? এই প্রশ্ন করতে আলেক্স বলল: শীতে না গরমে? দু'টোই, আমি বললাম৷ শীতে মাইনাস ৬০ অবধি নামে শুনেছি, গরমে ৪৫ অবধি উঠতে দেখেছি৷ এ তো দেখছি ওভেন আর রেফ্রিজারেটরের মহামিলন – বললাম আমি৷ বলে আবার প্রশান্ত মহাসাগরের ম্যাপ দেখতে শুরু করলাম৷

সে তুলনায় ইউরোপ নাতিশীতোষ্ণ, কিন্তু এখানকার শীতের আবার নানান ফ্যাকড়া আছে৷ সে সব ফ্যাকড়ার অনেকটাই গিন্নির কাছে শেখা, কেননা সে এই শীতের দেশের মেয়ে৷ ধরুন ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে শীত নাকি শুকনো শীতের চাইতে বেশি কষ্টদায়ক৷ শুনেই আমি বললাম, হ্যাঁ, কলকাতার ভ্যাপসা গরমের চেয়ে যেমন দিল্লির শুকনো গরম ভালো৷

ঐ একই কারণে নাকি তাপমাত্রা যখন শূন্যের কাছাকাছি নামে, তখন শীতে অনেক বেশি কষ্ট পেতে হয়, কিন্তু মাইনাস দশে ততটা শীত করে না! দেখেছি, কথাটা সত্যি৷ ব্যাখ্যাটাও খুব সহজ-সরল: তাপমাত্রা শূন্যের নীচে নামলে আর বাতাসে আর্দ্রতা থাকে না৷ ঐ সেই স্যাঁতসেঁতে গরমের মতো স্যাঁতসেঁতে শীত আর কি৷

শীতের জামাকাপড়৷ জার্মানিতে থাকলেই মানুষজনের কাছে দু'টি আপ্তবাক্য শুনবেন৷ প্রথমত, খারাপ আবহাওয়া বলে কিছু নেই; আছে শুধু ভুল বা অপর্যাপ্ত জামাকাপড় পরা লোকজন৷ অর্থাৎ ঠিকমতো শীতের জামা পরলে আবার শীত কোথায়? দ্বিতীয়ত, সেই জামাকাপড় পরতে হবে ‘‘পেঁয়াজের নীতি'' অনুসারে, অর্থাৎ পরতের ওপর পরত জামাকাপড়৷ একখানা ভারী সোয়েটার বা কোট বা ওভারকোট নয়, একটার ওপর আরেকটা৷ প্রতি দুই পরতের মধ্যে বাতাসের ইনসুলেশান থাকায় শীত আর ঢুকতে পারে না, আবার শরীরের তাপ বেরতে পারে না৷

ছবি: DW/P. Henriksen

তৃতীয়ত, পরিশ্রম৷ হাঁটাহাঁটি, চলাফেরা করলে শরীর যত গরম হয়, শীত তত কম লাগে৷ শীত দেখলেই যাদের কম্বলের ভেতরে সেঁধোতে ইচ্ছে করে, আমি তাদের একজন – ওদিকে গিন্নির আবার বরফ পড়া দেখলে মেয়েবেলায় ব্রেসলাউতে স্যাচেল কাঁধে লিসিয়ুম যাবার কথা মনে পড়ে যায়, পথে বরফের গোলা তৈরি করে ছোঁড়াছুঁড়ি, মারামারি, সে নাকি ভীষণ মজা৷ বিশেষ করে পাভেউ নামের একটা ছেলে –

ব্যস, ঐ অবধি শুনেই আমার শীতের ওপর আরো রাগ বেড়ে যায়৷ আমি সেই পাভেউ-এর ছবি দেখেছি৷ ছোঁড়াকে সত্যিই দেখতে ভালো – তবে নিশ্চয় আমার মতো বুদ্ধিমান নয় – হ্যাঁ, কি বলছিলাম? শীতের সঙ্গে আমার আড়ি কিন্তু টেম্পারেচারের দরুণ নয়, আলোর দরুণ৷ শীতকালে দিনটা যে ছোট হতে হতে ঘণ্টা আটেকের হয়ে দাঁড়ায়, তাতেই আমার আপত্তি৷ মানুষজন অন্ধকারে উঠে অফিসে গিয়ে আবার অন্ধকারের মধ্যেই বাড়ি ফেরেন৷ রাত যেন শেষই হতে চায় না৷ মনস্তাত্ত্বিকরাও বলেন, শীতে আলো থাকে না বলেই নাকি এদেশের মানুষজন বিষাদে ভোগেন৷

আর আমি এদেশে বিষাদে ভুগি শীত কি গ্রীষ্মের কারণে নয়; আমি বিষাদে ভুগি এ দেশটা সে দেশ নয় বলে৷ ভেবে দেখেছি, ভাদ্দরমাসের তালপাকা গরমের জন্যেও যেরকম মন কেমন করে, সেরকম শীতের ফুলকপির জন্যে৷ গরমকাল মানে যেদেশে আম-কাঁঠাল আর লিচুর মরশুম, সেদেশের মানুষ গরমের ওপর রাগ করবে কী করে? বর্ষার ওপরে রাগ করতে গেলে মনে পড়ে রবি ঠাকুরের হাজারটা গান আর খিচুড়ি৷ শীতের ওপর রাগ করা সম্ভবই নয়, হর্টিকালচারাল গার্ডেন আর সেই-মেয়েটা-যার নাম-করতে-নেই, তারা আছে কী করতে? মাসির বুনে দেওয়া একমেবাদ্বিতীয়ম নীলরঙের হাফহাতা সোয়েটার পরে বড়মামার সঙ্গে ইডেন গার্ডেনের সোনালি রোদ্দুরে জয়সীমার সারাদিন ধরে ঠুক ঠুক করে ৭৪ রান –

প্রবাসী শীতে কষ্ট পায়, না প্রবাসে, সে কথাটা তাকে কে বলে দেবে?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ