শীতকালে কীভাবে সুস্থ্ থাকা সম্ভব, কী করলে রোগ-ব্যাধি আক্রমণ করবে কম– সেসব বিষয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডীন প্রফেসর ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে : শীতকালে মানুষের কী কী ধরনের রোগ হয়?
অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ : শীতের কারণে মানুষের সাধারণ সর্দি-কাশি, অ্যাজমা বা হাঁপানি বাড়ে, ব্রঙ্কাইটিস বাড়ে, সিজন চেঞ্জের জন্য কিছু ভাইরাস জ্বর হচ্ছে৷ বিশেষ করে যাদের ব্যাথা জাতীয় রোগ আছে, বয়স্কদের ক্ষেত্রে বেশি গিটে গিটে ব্যাথা বেড়ে যায়৷ ঠান্ডার কারণে এই রোগগুলো বেশি দেখা যায়৷ টনসিল ফুলে যায়, সাইনোসাইটিজ হয়, যেটা ছোট বাচ্চাদের বেশি দেখা যায়৷ স্কিনের কিছু রোগ বাড়ে৷ অ্যালার্জি হয়৷ চামরা শুষ্ক হয়ে যায় বলে এই রোগ বেড়ে যায়৷
এই রোগগুলো শীতকালেই কেন বেশি হয়?
যেহেতু আর্দ্রতা চেঞ্জ হয়, বাতাসে ধুলা-বালি বেশি উড়ে, তাই শীতকালে এসব রোগ বেশি হয়৷ আর ঠান্ডা লাগলে তো যে কারো কাশি বা অ্যাজমা হতেই পারে৷ এগুলো তো ঠান্ডার রোগ৷ ঠান্ডার সময়ই বেশি হয়৷ গরমকালে যে হয় না, তা নয়৷ তবে শীতকালেই বেশি হয়৷ শীতে মাসলগুলো স্টিফ হয়ে যায়৷ মাংসগুলো খিচে আসে ঠান্ডার জন্য৷ এ কারণে ব্যাথাগুলো আরো বেড়ে যায়৷
‘যেহেতু আর্দ্রতা চেঞ্জ হয়, বাতাসে ধুলা-বালি বেশি উড়ে, তাই শীতকালে রোগ বেশি হয়’
কোন বয়সি রোগী এই ধরনের রোগে বেশি আক্রান্ত হয়?
রোগ যে কারো হতে পারে৷ কিন্তু ছোট বাচ্চা বা বয়স্ক যারা, তাদের রোগটা বেশি হয়৷ যাদের বয়স ৬০-৭০ বছর তাদের সহ্য ক্ষমতা কমে আসে৷ ফলে তারা আক্রান্ত হন বেশি৷ বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও একই বিষয়৷
এবার রোগীর হার কেমন?
রোগী আমরা পাচ্ছি বিচ্ছিন্নভাবে৷ শহরে তুলনামূলক শীত কম৷ কিন্তু গ্রামে শীত আছে, কুয়াশাও আছে৷ ঢাকায় সব সময় শীত কমই থাকে৷ এখানে বেশি গাড়ি চলে, গাছপালা কম, তাই এখানে শীতও কম৷ বা অন্য শহরেও কম৷ কিন্তু গ্রামে এটা একেবারেই কম না, সেখানে ভালোই শীত পড়ে৷
এই রোগগুলো থেকে দূরে থাকতে করণীয় কী?
ঋতু পরিবর্তনকালীন অসুখের ঝুঁকি এড়ানোর ছয় উপায়
ঋতু পরিবর্তন মানেই নানা সংক্রামক রোগের আবির্ভাব৷ এ সময়ে প্রায় বাড়িতেই কেউ না কেউ অসুস্থ থাকে৷ তবে একটু সতর্ক হলেই কিন্তু এসব অসুস্থতার ঝুঁকি থেকে নিজেকে দূরে রাখা যায়৷
ছবি: Imago/United Archives
হাত দিয়ে ঢেকে নিন
হাঁচি এলে হাত দিয়ে নাক ঢেকে নিন৷ বেশি কাশি হলেও এমনটাই করা উচিত যাতে ভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে৷ বিশেষ করে বেশি কাশি ও হাঁচি হলে সতর্ক হওয়া বেশি জরুরি, কারণ, তখনই রোগ ছড়ায়৷ আর সর্দি, কাশির সাথে জ্বর হলে বিছানায় থাকা উচিত৷
ছবি: Fotolia/Brenda Carson
ঘনঘন হাত ধুতে হবে
রোগ যাতে না ছড়াতে পারে, তার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার হাত পরিষ্কার রাখা৷ নির্দিষ্ট সময় পরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে অন্তত ৩০ সেকেন্ড ধরে দুই হাত ঘষে ঘষে ধুয়ে নিন৷ যাঁরা গণপরিবহনে যাতায়াত করেন কিংবা এখানে-সেখানে হাত রাখেন বা ধরেন, তাঁদের আরো বেশি করে হাত ধুতে হবে৷ তাছাড়া অপরিষ্কার হাত দিয়ে কখনো চোখ মোছা উচিত নয়, কারণ, তাতেও সংক্রমণ হতে পারে৷
ছবি: bilderbox
‘ওয়ানটাইম’ রুমাল
অনেকে একটি রুমাল দিয়ে বারবার নাক-মুখ মোছেন আর এতে জীবাণু আরো সহজে ছড়ায়৷ তাই একবার ব্যবহারযোগ্য বা ওয়ানটাইম টিস্যু পেপার ব্যবহার করুন এবং ব্যবহৃত টিস্যু সাথে সাথেই ডাস্টবিনে ফেলে দিন৷ ডাস্টবিন তাড়াতাড়ি পরিস্কার করুন৷
ছবি: Deutsche Standards
দূরত্ব বজায় রাখুন
আপনার কাছাকাছি কারও সর্দি-কাশি বা হাঁচি হলে ,তার কাছ থেকে অন্তত দুই মিটার দূরে থাকুন৷ নইলে হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে জীবাণুগুলো বাতাসে ভেসে সহজেই আপনার কাছে চলে আসতে পারে৷
ছবি: Kzenon/Colourbox
হ্যান্ডশেক নয়!
আপনি নিজে বা আপনার বন্ধু, পরিচিত কিংবা কোনো সহকর্মী যদি অসুস্থ থাকেন, তাহলে শুভেচ্ছা বিনিময় করার সময় হ্যান্ডশেক করা থেকে বিরত থাকুন৷ হ্যান্ডশেক করার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন রোগের জীবাণু অন্যের দেহে ছড়িয়ে যেতে পারে৷ তাই করমর্দন করার ব্যাপারে সতর্ক করে দেন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ জিলকে বুদা৷
ছবি: Colourbox
টিকা নিন
যাদের সহজে ঠান্ডা লাগে বা শর্দি-কাশি হয়, অর্থাৎ যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা দূর্বল, তারা আগে থেকেই সতর্কতামূলক টিকা নিতে পারেন৷ ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফুসফুসের রোগের জন্য তো অবশ্যই টিকা নেয়া উচিত৷ এতে শুধু নিজেই যে সুস্থ থাকবেন, তা নয়, আপনার আশপাশের মানুষদেরও সুস্থ রাখবেন৷ তবে এ ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
6 ছবি1 | 6
প্রথম কথা হলো, শীতকে প্রটেক্ট করতে হবে৷ ভালো গরম কাপড় পরতে হবে৷ বিশেষ করে বাচ্চাদের ভালো গরম কাপড় পরাতে হবে৷ মাথা ঢাকতে হবে, কানে শীত বেশি লাগে, কান ঢেকে রাখতে হবে৷ খেয়াল রাখতে হবে, ঠান্ডা যেন না খায়, কুসুম কুসুম গরম পানি খেতে হবে৷ যে কোনো ধরনের ঠান্ডা, যেমন আইসক্রিম, কোক এগুলো খাওয়া যবে না৷ বিশেষ করে যারা বয়স্ক বা ছোট বাচ্চা, তাদের উষ্ণ গরম পানি দিয়ে গোসল করতে হবে৷ দুপুরের দিকে পানিতে ঠান্ডা কম থাকে৷ তখন গোসল করতে হবে৷ আর যাদের অ্যাজমা আছে, তাদের চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে চলতে হবে৷
শীতকালীন রোগ প্রতিরোধে সরকারের কী কোনো ব্যবস্থা থাকে?
সরকারের বাস্তবে কিছু করার দেখি না৷ এটা তো আবহাওয়ার ব্যাপার৷ সরকার মানুষকে সচেতন করতে প্রচারমাধ্যমকে কাজে লাগাতে পারে৷ মানুষকে সচেতন করতে পারে৷ তবে গ্রামে-গঞ্জে যারা গরীব মানুষ, সরকার তাদের শীত বস্ত্র বা কম্বল দিতে পারে৷ বিশেষ করে প্রচার বাড়াতে হবে৷
ধূলিকণা এই রোগগুলোর ক্ষেত্রে কতটা প্রভাব বিস্তার করে?
এটা তো কিছুটা প্রভাব রাখেই৷ কারণ, শীতকালে বৃষ্টি হয় না৷ আর কনষ্ট্রাকশনের কাজ তো চলেই৷ রাস্তা খোড়া হচ্ছে, বিল্ডিং হচ্ছে, এতে ধূলিকণা তো উড়ছেই৷ এজন্য জনগনকেই সচেতন হতে হবে৷ তারা যেন ধূলিকণা এড়িয়ে চলেন৷ ইচ্ছে করলে মাস্ক পরতে পারেন৷ মুখ ঢেকে চলতে পারেন৷ বিশেষ করে বাচ্চারা ধূলাবালির মধ্যে যেন খেলাধূলা না করে৷ এছাড়া তো আর কোনো রাস্তা নেই৷
শীতকালে কি খাবারের ক্ষেত্রে কোনো সতর্কতা আছে?
খুব একটা কিছু নেই৷ তবে ঠান্ডা খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো৷ ঠান্ডা পানি বা ঠান্ডা খাবার না খাওয়াই ভালো৷ কোনো খাবার রান্নার পর রেখে দিলে বা ফ্রিজে রাখলে ঠান্ডা হয়, সেগুলো না খেয়ে গরম গরম খাওয়াই ভালো৷ গরম পানি খেলে আর অ্যালার্জি ফুড এড়িয়ে চললে ভালো ফল মিলতে পারে৷
ধূলিকণা থেকে বাঁচতে হলে কী করণীয়?
শীতের গ্রাম বাংলা
শীত মৌসুমে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে আসে বড় ধরণের পরিবর্তন৷ আর এ পরিবর্তন সবচেয়ে বেশি ধরা দেয় গ্রাম-বাংলায়৷ বাংলাদেশের শীতকালের কিছু ছবি দেখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: Muhammad Mostafigur Rahman
কুয়াশা ঢাকা সকাল
শীতের সকালে প্রায়ই কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় গ্রাম বাংলার প্রতিটি প্রান্তর৷ ঢেকে যায় কুয়াশার চাদরে৷ অনেক সময় ঘন কুয়াশায় সূর্যের দেখা মেলে অনেক দেরিতে৷
শীত মৌসুমে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠ হলুদ গালিচায় ঢেকে ফেলে সরিষার ফুলে৷ এ সৌন্দর্যের জুড়ি নেই৷
ছবি: Muhammad Mostafigur Rahman
শীতের শবজি
শীতে গ্রাম বাংলায় চাষ হয় নানা ধরণের সবজি৷ এ সময়ে ফসলের মাঠ সবুজে ভরে ওঠে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
আগুন পোহানো
গ্রাম-বাংলায় এখনো আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন অনেকেই৷ শীতের সকালে চাদর মুড়িয়ে আগুনের পাশে বসে থাকার মজাই আলাদা৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
শীতের পিঠা
শীতে খেজুরের রস দিয়ে গ্রাম বাংলায় তৈরি হয় নানা রকম পিঠা৷ এটা শীতের আরেক আকর্ষণ৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
শীতের খেলা
শীতে মাঠ থেকে ফসল তোলা হয়ে গেলে ছেলে-মেয়েরা মেতে ওঠে নানান গ্রামীণ খেলায়৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
মাছ ধরা
শীতে জলাশয়গুলো শুকিয়ে গেলে খালে-বিলে মাছের আধিক্য দেখা যায়৷ এ সময়ে বাংলাদেশের অনেক জায়গাতেই হয় মাছ ধরার উৎসব৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
শীতের কষ্ট
সব ভালোর বিপরীতেই খারাপ কিছু দিক থাকে৷ তেমনি শীতেরও আছে খারাপ দিক৷ শীত বেশি জেঁকে বসলে নিম্ন আয়ের অনেক মানুষই কষ্টে পড়েন৷ শীতের কষ্ট ছাড়াও ঠান্ডাজনিত নানান রোগেও ভোগেন কেউ কেউ৷
ছবি: bdnews24.com
9 ছবি1 | 9
ধূলিকণা থেকে বাঁচতে হলে যতটা সম্ভব কম ঘোরাফেরা করতে হবে৷ তারপরও তো মানুষকে কাজ করতে হয়, ফলে যদি মাস্ক পরেন তাহলে কিছুটা উপকার পেতে পারেন৷ রাস্তা-ঘাটে সরকার চাইলে তো পানি ছিটাতে পারে৷ ধূলাবালিতে যেসব জার্ম আছে সেগুলো তাহলে অনেক মরে যায়৷
আমাদের তো পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নেই?
আমাদের সরকার বা সিটি কর্পোরেশন ইচ্ছে করলে তো ছিটাতে পারে৷
এই রোগগুলো থেকে দূরে থাকতে আপনার পরামর্শ কী?
প্রথমত, এই শীত থেকে বাঁচতে হলে যথাসম্ভব গরম কাপড় পরতে হবে৷ বাইরে যেতে হলে গরম কাপড় পরে যেতে হবে৷ মাথা ঢেকে যাবে, কান ঢেকে বের হবে৷ ধূলাবালি থেকে যতদূর সম্ভব নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতে হবে৷ আর দিনের বেলায়, বিশেষ করে দুপুরের দিকে খুব ঠান্ডা থাকে না, তখন গোসল করা ভালো৷ যাদের সুযোগ আছে, তারা গরম পানি ব্যবহার করবে৷
যাদের ঘরে শিশু আছে, তাদের প্রতি পরামর্শ?
বাচ্চাদের সুন্দর করে লেপ বা কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে, যাতে ঠান্ডা না লাগে৷ আবার ঘেমে না যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে৷ আর বাচ্চারা যাতে ধূলাবালিতে খেলতে না যায়, সেদিকে নজর রাখতে হবে৷ আইসক্রিমসহ অন্যান্য ঠান্ডা খাবার যেন যেন না খায়৷ আর ঠান্ডা লেগে গেলে যেন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়৷
সর্দি, কাশি থেকে বাঁচার জার্মান উপায়
স্বাস্থ্যসেবায় জার্মানি বেশ উন্নত৷ তাই, চিকিৎসা নিয়ে বিশেষ চিন্তা-ভাবনার দরকার নেই জার্মানদের৷ তারপরেও তাঁরা নিজেরাই ডাক্তারি করতে চান৷ আর শীতের হাত থেকে বাঁচতে তাদের রয়েছে নিজস্ব কিছু কৌশল৷ চলুন সেগুলো জানা যাক৷
ছবি: Fotolia/drubig-photo
ফোটানো বিয়ার
গরমে ফোটানো বিয়ার দিয়ে কি ঠান্ডা প্রতিরোধ সম্ভব? কয়েক প্রজন্ম ধরে জার্মানদের কিন্তু বিশ্বাস যে, এটা সম্ভব৷ বিজ্ঞানও বিষয়টি সমর্থন করে, কেননা বিয়ারের মূল উপাদান ‘হপস’-এ নানা রকম অ্যান্টিভাইরাল বস্তু রয়েছে৷ তবে বিয়ার উৎপাদনকারীরা বলেন, এমন উপকার পেতে হলে একসঙ্গে ২০ লিটার বিয়ার পান করতে হবে, যা অসম্ভব৷
ছবি: Fotolia/Mikael Damkier
পায়ের ‘ডায়াপার’
কোনো জার্মানকে যদি দেখেন পায়ের গুল বা ডিমে ভেজা কাপড় জড়িয়ে শুয়ে আছেন, তাহলে বুঝবেন যে তিনি জ্বরের সঙ্গে লড়ছেন৷ আসলে কপালের চেয়ে পায়ে খেলা জায়গা অনেক বেশি৷ তাই পায়ের গুলে ভেজা কাপড় জড়ালে তাপমাত্রা দ্রুত কমে আসে৷ এক্ষেত্রে জার্মানদের পরামর্শ হচ্ছে কাপড়টি কুসুমকুসুম গরম পানিতে ডুবিয়ে পায়ের গুলে জল-পট্টির মতো ধরুন এবং ৩০ মিনিট পর সরিয়ে নিন৷
ছবি: Fotolia/photophonie
স্কার্ফ ইঙ্গিত বহন করে
ঘরের মধ্যে ঢিলেঢালা স্কার্ফ পরে থাকাটা ফ্যাশন৷ তবে সেটা ‘টাইট’ করে বসে পরে থাকাটা অসুস্থতার লক্ষণ৷ জার্মানরা স্কার্ফ ব্যবহার করেন গলা ব্যাথা কমানোর এবং ভাইরাস যাতে ‘টন্সিলাইটিস’-এর রূপ না নেয়, তা ঠেকানোর জন্য৷
ছবি: Fotolia/Creativa
ঘাড়ে ঠান্ডা!
জার্মানরা বিশ্বাস করেন যে, ঘরের মধ্য থেকে বয়ে যাওয়া বাতাস ঘাড়ে লাগলে ঘাড় ব্যথা, মাথা ব্যথা, ঠান্ডা, এমনকি ইনফ্লুয়েঞ্জাও হতে পারে৷ তবে জার্মান ভাইরোলজিস্টদের মত হচ্ছে, এটা সম্পূর্ণ ভুল একটি তত্ত্ব৷
ছবি: iTake Images - Fotolia.com
দু’বার সেঁকা বিস্কুট এবং কোকাকোলা
অসুস্থতা থেকে রক্ষার আরেকটি জার্মান ‘টিপ’ হচ্ছে দুবার সেঁকা ব্রেড বা বিস্কুট খাওয়া৷ ডায়রিয়া বা বমি হলে জার্মানরা এ ধরনের বিস্কুট খান৷ সঙ্গে আবার কোকাকোলাও পান করেন অনেকে৷ এতে নাকি খাওয়ার সহজে হজম হয়৷ কথা হচ্ছে, বিস্কুট উপকারী হতে পারে, কেননা এতে লবণ রয়েছে৷ কিন্তু কোক কীভাবে উপকারী হয়? কোকে থাকা ক্যাফেইন যে ‘মূত্রবর্ধক’!
ছবি: Fotolia/ag visuell
শান্তি দেয় ক্যামোমিল
জার্মানরা বিশ্বাস করেন ঠান্ডার বিভিন্ন উপসর্গ, এমনকি ব্যথা এবং যন্ত্রণা বিলুপ্ত হতে পারে যদি ক্যামোমিল লবণ মেশানো পানির মধ্যে শরীর ডুবিয়ে রাখা যায়৷ বিজ্ঞানও বলছে ক্যামোমিলে ব্যথা কমানোর উপাদান রয়েছে৷ এবং এটা শুধু জার্মান নয়, সবার জন্যই প্রযোজ্য৷ তবে ডাক্তররা বলছেন, এটা ২০ মিনিটের বেশি করলে উল্টে ক্ষতি হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Ariwasabi
দয়া করে সাহায্য করুন!
কিন্তু ভাইরাস পুরোপুরি হত্যার উপায় কী? সওনা বা স্টিম বাথ কি ‘নকল জ্বর’ তৈরি করতে পারে, যা ভাইরাস ধ্বংস করবে? ভাইরোলজিস্ট এডামস মনে করেন, জ্বর ভাইরাস ধ্বংস করতে পারে না, ফলে এই পন্থা কার্যকর নয়৷ আর ‘সাওনা’ শরীরের তাপমাত্রা সেই পর্যায়ে নিতে পারবে না, যে পর্যায়ে রাইনোভাইরাস বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ধ্বংস হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Spofi
দুধ এবং মধু
শুকনো, বিরক্তিকর কাশি ঠেকাতে কি মধু মেশানো এক কাপ গরম দুধ কাজে লাগতে পারে? মধু আসলে উপকারী৷ ২০০৭ এবং ২০১২ সালে মার্কিন গবেষণায় দেখা গেছে পরিমিত মাত্রার মধু রাতের বেলা শিশুদের কাশি প্রতিরোধে সহায়তা করে৷
গুজব রয়েছে পেয়াজ নাকি ভাইরাস সারাতে জাদুর মতো কাজ করে৷ আর তাই জার্মানিতে পেয়াজের জুস পানের প্রবণতা রয়েছে৷ যদিও এরকম পানীয় ‘রিহাইড্রেটে’ সহায়ক, তা সত্ত্বেও বৈজ্ঞানিকভাবে ভাইরাস সারাতে পেয়াজের জুস উপকারী হতে পারে, এমন কোনো প্রমাণ নেই৷ তাছাড়া এটি দেহে বমির ভাব সৃষ্টি করতে পারে৷
ছবি: Christian Jung - Fotolia.com
পুরুষরা ব্যথায় কাতর!
জার্মান মেয়েরা বিশ্বাস করে, পুরুষরা অসুস্থ হলে বাচ্চাদের মতো আচরণ করে৷ ব্যথা তাদের কাছে অনেক বেশি অসহ্যকর মনে হয়৷ সত্যিই কি তাই? স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন হাসপাতালে থাকা একলাখ ৬০ হাজার নথিপত্র ঘেঁটেছে, যেগুলোতে ২৫০ রকম রোগে কোন রোগী কতটা ব্যথার কথা জানিয়েছেন, তার উল্লেখ আছে৷ সেগুলো বলছে, ব্যথার কথা নারীরা বেশি বলেন, পুরুষরা নয়৷