আর কিছুদিন পরই ইউরোপে শীতকাল শুরু হচ্ছে৷ সেসময় ইউরোপের যেমন গ্যাস পাওয়া নিশ্চিত করা প্রয়োজন, তেমনই রাশিয়ার দরকার গ্যাস বিক্রি থেকে আমদানি৷ ইউক্রেন সংকটের কারণে এবার পরিস্থিতি একটু ভিন্ন৷
পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, অস্ট্রিয়া বা হাঙ্গেরি গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে দেখছে যে, তারা রাশিয়ার কাছ থেকে যে পরিমাণ গ্যাস চেয়েছিল, সেই পরিমাণ গ্যাস পাচ্ছে না৷ এর কারণ সম্ভবত এই যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঠিক ঐ সময়েই ইউক্রেন'কে গ্যাস পাঠাতে শুরু করে৷ অতঃপর রাশিয়ার তরফ থেকে এই সাবধানবাণী: গ্যাস কোথায় যাবে এবং কতোটা যাবে, রাশিয়াও তা নির্ধারণ করতে পারে৷ তার ওপর আবার পয়লা অক্টোবর থেকে গ্যাস কোম্পানিগুলোর ‘সিজন', অর্থাৎ শীতের মরসুম চালু হয়েছে৷ গ্যাসের দাম বাড়ার মরসুম এ'টি৷
জলবায়ু পরিবর্তনের সুফল!
ভূতত্ত্ববিদদের ধারণা, বিশ্বে এখনো যে পরিমাণ তেল ও গ্যাস আছে তার প্রায় এক চতুর্থাংশ রয়েছে আর্কটিকের বরফের নীচে৷ তাই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরফ গলে যাওয়ায় খুশি আর্কটিকের দেশগুলো৷
ছবি: Gazprom
বাকি বিশ্ব থেকে দ্বিগুণ
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারা বিশ্বে তাপমাত্রা যে হারে বাড়ছে, আর্কটিক বা সুমেরু অঞ্চলে সেই মাত্রাটা প্রায় দ্বিগুণ৷ এভাবে বরফ গলার কারণে আর্কটিকে যাওয়ার পথ সহজ ও সংক্ষিপ্ত হচ্ছে৷ ফলে সেখানে থাকা সম্পদ আহরণের কাজে সুবিধা হবে৷ তাই খুশি এ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী গোষ্ঠী৷
ছবি: imago
খুশি আর্কটিকের দেশগুলোও
ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি পাঁচটি আর্কটিক দেশ – ক্যানাডা, ডেনমার্ক, নরওয়ে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র – বিভিন্নভাবে সেখানে তাদের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে৷ উল্লেখ্য, আর্কটিকের কতটুকু অংশ কার নিয়ন্ত্রণে সেটা নিয়ে এখনো দেশগুলোর মধ্যে বিরোধ রয়েছে৷
ছবি: Gazprom
প্রায় এক চতুর্থাংশ
ভূতত্ত্ববিদদের ধারণা, বিশ্বে এখনো যে পরিমাণ তেল ও গ্যাস আছে তার প্রায় এক চতুর্থাংশ রয়েছে আর্কটিকের বরফের নীচে৷
ছবি: Crew of -Peter I-
সামরিক উপস্থিতি
সীমানা নিয়ে বিরোধ থাকার কারণে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আর্থিক লাভের বিষয়টি সামনে আসায় ডেনমার্ক, ক্যানাডা, রাশিয়া আর যুক্তরাষ্ট্র সেখানে তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে৷ ছবিতে মার্কিন একটি সাবমেরিনকে বরফের নীচ থেকে বের হতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গ্রিনপিসের বিরোধিতা
আর্কটিকে তেলের ড্রিলিং এর বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রিনপিসের৷ কারণ ড্রিলিং করতে গিয়ে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে উত্তর মেরুর পরিবেশের উপর তার বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে সংগঠনটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ কেননা দুর্গম ঐ পরিবেশে উদ্ধার তৎপরতা চালানোও বেশ কঠিন হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উত্তর মেরুতে বিমানযাত্রা
ছবিতে বিমান থেকে বরফ সরাতে দেখা যাচ্ছে৷ আর্কটিক সার্কেলে ওড়াওড়ি করা বিমানের জন্য এটা একটা নিয়মিত ব্যাপার৷ তবে গবেষণায় দেখা গেছে, আর্কটিকের উপর বিমান চলাচলের কারণে সেখানকার পরিবেশে কার্বনের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে৷ এই কালো কার্বনের পার্টিকেল সূর্যের আলো শোষণ করে বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে৷
ছবি: DW/I.Quaile
চীনের আগমন
আর্কটিকের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়া সেখান থেকে লাভবান হতে চায় চীনও৷ তাইতো ‘স্নো ড্রাগন’ নামের এই জাহাজটি ২০১২ সালে আর্কটিকের মধ্য দিয়ে যাত্রা করে ইউরোপে পৌঁছেছে৷ এ বছর মে মাসে চীনকে আর্কটিক কাউন্সিলের অবজারভার স্ট্যাটাস দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভারতের গবেষণা
২০০৮ সালে আর্কটিকের নরওয়ের অংশে এই গবেষণা কেন্দ্রটি চালু করে ভারত৷ এর বাইরে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াও আর্কটিক নিয়ে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে৷
ছবি: DW/I. Quaile
8 ছবি1 | 8
রাশিয়া ইউরোপের বৃহত্তম গ্যাস সরবরাহকারী৷ ইউরোপের যে পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস প্রয়োজন, তার এক-তৃতীয়াংশ আসে রাশিয়া থেকে, যার জন্য রুশ গ্যাজপ্রম সংস্থা তার ইউরোপীয় গ্রাহকদের কাছ থেকে বছরে আট হাজার কোটি ডলার পরিমাণ আয় করে থাকে৷ অপরদিকে এ'ও সত্যি যে, গ্যাজপ্রম'এর মোট রোজগারের একটা বড় অংশ আসে ইউরোপ থেকে৷
ঘটনা যা ঘটেছে
দু'পক্ষের বিরোধের সূচনা ইউক্রেন সংকট থেকে৷ মস্কো গত দশ বছরে তিনবার ইউক্রেন অভিমুখে গ্যাসের প্রবাহ বন্ধ রেখেছে: ২০০৬ সালে, ২০০৯ সালে এবং সম্প্রতি গত জুন মাস থেকে - যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইইউ ইউক্রেনকে গ্যাস পাঠাতে শুরু করে৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও এ'বছর ইউক্রেন হয়ে ইউরোপ অভিমুখে গ্যাসের প্রবাহ ব্যাহত হয়নি৷
পোল্যান্ড গতমাসে ইউক্রেনে গ্যাস পাঠানো বন্ধ করে, কেননা রাশিয়া দৃশ্যত পোল্যান্ড যতোটা গ্যাস চেয়েছিল, তার চেয়ে কম গ্যাস পাঠাচ্ছে - বলে ওয়ারশ জানিয়েছে৷ অপরদিকে হাঙ্গেরি ইউক্রেনকে গ্যাস পাঠানো বন্ধ করে, কেননা হাঙ্গেরি দৃশ্যত শীতের আগে তার নিজের স্টোরেজ ট্যাংকগুলো ভরে রাখতে চায়৷ ইউরোপের তরফে স্লোভাকিয়া থেকেই ইউক্রেনে সবচেয়ে বেশি গ্যাস পাঠানো হচ্ছিল, কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে রাশিয়া থেকে স্লোভাকিয়াতেও কম গ্যাস এসেছে৷
লাখো মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে যে রাস্তা
প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ যে রাস্তা দিয়ে পালিয়ে বেঁচেছেন, আর যে রাস্তা দিয়ে একটা অবরুদ্ধ শহরের মানুষের জন্য প্রায় ১৫ লক্ষ টন খাবার সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে, সেটাকে তো ‘রোড অফ লাইফ’ বলাই যায়৷ এ নিয়েই দেখুন ছবিঘর৷
ছবি: DW/V. Rjabko
বরফের ওপর রাস্তা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়ার লেনিনগ্রাদ শহর ৮৭২ দিন অবরুদ্ধ ছিল৷ চারপাশ থেকে যোগোযোগ ছিল বন্ধ৷ সেই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে শীতের সময় লাদোগা হৃদের জমে যাওয়া পানির ওপর রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল৷ ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটাই লেনিনগ্রাদের মানুষের কাছে ‘রোড অফ লাইফ’ নামে পরিচিত৷
ছবি: picture-alliance/akg
দশ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু
অবরুদ্ধ নগরীতে বাস করা মানুষের জন্য খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকায় সেসময় বহু মানুষ মৃত্যবরণ করেছিলেন৷ এক হিসেবে জানা যায়, ৮৭২ দিনে লেনিনগ্রাদের অন্তত ১০ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছিলেন, যার প্রায় ৯০ শতাংশের মৃত্যুর কারণ ছিল খাবারের অভাব৷
ছবি: DW/V. Rjabko
বেঁচে গেছে প্রায় ১৫ লক্ষ
‘রোড অফ লাইফ’-এর কারণে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ শহর ছাড়তে পেরেছেন৷ আর যাঁরা শহরে থাকতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁদের জন্য প্রায় ১৫ লক্ষ টন খাবার সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে৷
ছবি: DW/V. Rjabko/Blockade Museum St. Petersburg
পরিকল্পনা
শহর অবরুদ্ধ হওয়ার পর প্রাণ বাঁচাতে শীতকালে জমে যাওয়া লাদোগা হৃদের পানির ওপর রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা করা হয়৷ এ সময়, যে স্থানে বরফের পুরুত্ব কম সেখানে গাছের গুঁড়ি কিংবা বরফ ফেলে জোড়া দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়৷
ছবি: DW/V. Rjabko
বিপদসংকুল
‘রোড অফ লাইফ’ দিয়ে চলাচল সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ ছিল৷ বরফ ভেঙে যাওয়ার মতো সমস্যাতো ছিলই৷ আরও ছিল শত্রুপক্ষের বোমা হামলার আশঙ্কা৷ সড়কের নিরাপত্তা রক্ষায় ব্যবস্থা নেয়া হলেও মাঝেমধ্যেই শত্রুপক্ষের হামলার সম্মুখীন হতে হতো৷
ছবি: picture-alliance/akg
প্রথম বাহন
ঐ রাস্তার ওপর দিয়ে ঘোড়াচালিত এমন বাহন প্রথম চলাচল করে৷ তবে পর্যাপ্ত খাবার না পাওয়া এসব ঘোড়া মানুষ ও পণ্য টানতে গিয়ে প্রায়ই ক্লান্ত হয়ে পড়তো৷ ফলে অনেক ঘোড়া দিয়ে পুরো রাস্তা পাড়ি দেয়া সম্ভব হতো না৷
ছবি: DW/V. Rjabko/Blockade Museum St. Petersburg
এরপর ট্রাক
ঘোড়াচালিত গাড়ির পর ‘রোড অফ লাইফ’ দিয়ে ট্রাক চলাচল শুরু করে৷ শহরে ঢোকার সময় যে ট্রাক খাবার নিয়ে যেত, ফেরার সময় সেটা মানুষ নিয়ে ফিরত৷ তবে সড়কটা বরফের হওয়ায় বেশি পণ্য বা মানুষ বহন করতে পারতো না ট্রাকগুলো৷ ফলে রাস্তা চালু হওয়ার প্রথম দু’সপ্তাহে ১৫৭টি ট্রাক বরফ ভেঙে হৃদের পানিতে ডুবে গিয়েছিল৷
ছবি: DW/V. Rjabko/Blockade Museum St. Petersburg
যাত্রা শুরুর আগেই মৃত্যু
লেক লাদোগা পাড়ি দেয়ার জন্য অবরুদ্ধ লেনিনগ্রাদের অধিবাসীদের আগে ট্রেনে করে লেক পর্যন্ত পৌঁছতে হতো৷ কিন্তু ট্রেনে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় বেশিরভাগ মানুষকেই অপেক্ষায় থাকতে হতো৷ এভাবে বেশিদিন অপেক্ষায় থাকতে না পেরে অনেক লোক, যাঁদের বেশিরভাগই শিশু, ট্রেনে ওঠার আগেই মারা পড়তো৷
ছবি: DW/V. Rjabko/Blockade Museum St. Petersburg
প্রতিদিন ১২৫ গ্রাম
ছবিতে একটি ব্রেড দেখা যাচ্ছে যেটা, রেশন হিসেবে অবরুদ্ধ লেনিনগ্রাদের অধিবাসীদের দেয়া হতো৷ প্রতিদিন একেকজনকে ১২৫ গ্রাম ব্রেড দেয়া হতো বলে জানা গেছে৷ সে হিসেবে সেন্ট পিটার্সবার্গের (যুদ্ধের সময় এই শহরের নাম ছিল লেনিনগ্রাদ) ‘রোড অফ লাইফ’ জাদুঘরে রাখা ছবির এই ব্রেডটি আকারে যেন একটু বড়ই দেখাচ্ছে৷
ছবি: DW/V. Rjabko/Blockade Museum St. Petersburg
9 ছবি1 | 9
গ্যাস যুদ্ধ?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একে যুদ্ধ বলা না গেলেও, রাশিয়া যে এই পন্থায় একটা ওয়ার্নিং দিচ্ছে, তা'তে কোনো সন্দেহ নেই৷ রাশিয়া জানাচ্ছে যে, ব্রাসেলস ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে মস্কোর বিরুদ্ধে আরো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরোপ করলে রাশিয়া তার পাল্টা ব্যবস্থা নেবে৷ রাশিয়া থেকে গ্যাস সরবরাহ যতটুকু কমেছে, তা'তে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই; কিন্তু রাশিয়া যে কাউকে না বলে-কয়ে একতরফাভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে, তার মাধ্যমে রাশিয়া যেন ইউরোপকে বলছে, ‘আমি কি করতে পারি না পারি, সে ব্যাপারে বেশি নিশ্চিন্ত বোধ কোরো না'৷
বাস্তব সত্য হচ্ছে এই যে, রাশিয়া থেকে গ্যাস আসা যতোটা কমেছে, তা সরবরাহ চুক্তিতে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যেই আছে৷ এছাড়া রাশিয়া গ্যাস সাপ্লাই ঠিক তখনই কমিয়েছে, যখন ইউরোপে গ্যাসের ট্যাংকগুলো ভর্তি৷ বলতে কি, ইউরোপের গ্যাসের ট্যাংকগুলো এখন প্রায় ৯০ শতাংশ ভরা; গতবছর এই সময়ে সেগুলো ছিল মাত্র ৬৮ শতাংশ ভর্তি৷ কাজেই একদিকে ইউরোপের গ্যাস ট্যাংকগুলো ভর্তি; অন্যদিকে গ্যাজপ্রম'কে রাশিয়ার বিভীষণ শীত আর অভ্যন্তরীণ চাহিদার কথা ভাবতে হবে৷ দু'য়ে মিলে ইউরোপ অভিমুখে গ্যাসের প্রবাহ কিছুটা কমতেই পারে৷
গ্যাজপ্রম'এর বৃহত্তম খদ্দের জার্মানির চিন্তা নেই, কেননা তাদের গ্যাস আসে নর্থ স্ট্রিম পাইপলাইন দিয়ে, যার সঙ্গে ইউক্রেনের কোনো সম্পর্ক নেই৷ অপরদিকে মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের গ্যাস আসে প্রায় পুরোপুরি রাশিয়া থেকে - ইউক্রেন হয়ে৷ কাজেই তাদের চিন্তার কারণ আছে বৈকি৷ কিন্তু এ'ও সত্যি যে, গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে কোনো পক্ষেরই লোকসান ছাড়া লাভ নেই৷