1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শীত এলো, এলো শীত

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৯ জানুয়ারি ২০১৮

শীত জেঁকে বসেছে বাংলাদেশে৷ এ মাসে তিনটি শৈত্য প্রবাহের আগাম বার্তা দেয়া হয়েছিল৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশের তাপমাত্রাও বাড়ছে৷ সেকারণে শীত দেরিতে এলেও গত ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছে বাংলাদেশে৷

Bangadesch Winter Impressionen
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman

বাংলাদেশে সাধারণত নভেম্বরের মাঝমাঝি থেকেই শীত পড়তে শুরু করে৷ আর তা জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে গিয়ে কমে যায়৷ আর নভেম্বরের শুরুতেই শীতের আগমনী বার্তা শুরু হয়৷ কিন্তু নভেম্বর ও ডিসেম্বর পেরিয়ে জানুয়ারি মাসে কিছুটা শীত এসেছে৷ আর এ মাসে তিনটি শৈত্য প্রবাহের বার্তা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর৷

পৌষ, মাঘ এই দুই মাস বাংলাদেশে মূলত শীত কাল৷ এখন চলছে পৌষ ( ১৯ পৌষ)৷ আর কথায় আছে, মাঘের শীতে বাঘ পালায়৷ কিন্তু এবার যা অবস্থা তাতে বাঘ কেন উল্টো শীতের পোশাকের যেন পলায়নপর অবস্থা৷

‘পরির্বতনগুলো ধীরে ধীরে আমরা লক্ষ্য করছি’

This browser does not support the audio element.

পৌষের দ্বিতীয় সপ্তাহে বরিশালে গ্রামের বাড়িতে পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন ঢাকার ব্যবসায়ী আবুল হাসিব৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘গ্রামে অনেক শীত পড়বে ভেবে বেশি করে গরম কাপড়- চোপড় নিয়ে গিয়েছিলাম৷ শেষ পর্যন্ত তা বোঝায় পরিণত হয়৷ আমাদের রাতে ফ্যান চালিয়ে ঘুমাতে হয়৷ ব্যাগের গরম পোশাক ব্যাগের ভিতরই থেকেছে৷''

২ জানুয়ারি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ ২৭ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী সাত দিনের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হলো: ২৭ দশমিক ১ এবং ১৬ দশমিক ৪,২৪ দশমিক ৬ এবং ১৬ দশমিক ২, ২৭ এবং ১৪ দশমিক ৮, ২৯ দশমিক ১ এবং ১৬ দশমিক ২, ২৮ দশমিক ৩ এবং ১৫ দশমিক ৩, ২৬ দশমিক ৮ এবং ১৫ দশমিক ৫, ২৬ দশমিক ৫ এবং ১৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, গত বছরের একই সময়ে তাপমাত্রা অনেক কম ছিল৷ আর এবার এখনো শীত তেমন অনুভূত হচ্ছে না৷

গত নভেম্বরেও ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল৷ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৭ নভেম্বর ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ গত ২৫ বছরের রেকর্ড হলো, ৭ নভেম্বর এবং আশপাশের তারিখে ঢাকার দিনের তাপমাত্রা ছিল ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে যায়নি৷

‘তাপমাত্রা গত ৬০ বছরে ১ ডিগ্রি বেড়ে গেছে’

This browser does not support the audio element.

রাতের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তাকে শৈত্যপ্রবাহ বলেন আবহাওয়াবিদরা৷ কিন্তু ২ জানুয়ারি পর্যন্ত ১০ ডিগ্রির উপরেই ছিল বাংলাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা৷

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গত তিন-চার বছরের তুলনায় এবার শীতের প্রকোপ কম৷ আর ঢাকায় তো সবচেয়ে কম৷ ঢাকায় জনবসতি বেশি, গাছপালা নাই৷ পুকুর-ডোবা- নালা নাই৷ এসি, ফ্রিজ, গাড়ির ব্যবহার বেড়েছে৷ ফলে কার্বন উৎপাদন বেড়েছে৷ ফলে তাপমাত্রা বাড়ছে৷ শীতে তাই তাপমাত্রা তেমন কমছে না৷ আর ঋতুতেও পরিবর্তন আসছে৷ উত্তরবঙ্গে যেভাবে অতীতে তাপমাত্রা নেমে যেতো এবার সেভাবে নামছে না৷ এই পরির্বতনগুলো ধীরে ধীরে আমরা লক্ষ্য করছি৷''

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকেনোলজি (বুয়েট)-এর ইন্সটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক এবং ক্লাইমেট স্টাডি সেলের সমন্বয়কারী ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বিশ্বের তাপমাত্রা গত ৬০ বছরে ১ ডিগ্রি বেড়ে গেছে৷ ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি ১ দশমিক ৩ ডিগ্রি বেড়েছিল৷ আর যদি আমারা কার্বন নির্গমণ কমাতে না পারি, তাহলে পরবর্তী একশ' বছরে তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি বেড়ে যাবে৷ আর বাংলাদেশের জলবায়ু এবং আবহাওয়া তার বাইরে নয়৷ এ কারণে অতি বর্ষণ হচ্ছে৷ শীতের সময় শীত নেই৷ অথবা শীত আসছে দেরি করে, চলেও যাচ্ছে আগে৷ ২০১৫ সালের প্যারিস অ্যাগ্রিমেন্টে ১৯৫টি দেশ তাই এই শতাব্দিতে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রির নিচে রাখার কথা বলেছে৷ আর এটা সম্ভব শিল্পায়নের মাধ্যমে যে কার্বন নিঃস্বরণ হচ্ছে, তা কমিয়ে৷''

‘বাংলাদেশে ছয় ঋতু আর নেই’

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘এভাবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে, যা হয় তা হলো, ২১০০ সাল নাগাদ সী লেভেল হবে ১ মিটার৷ এখনই আমাদের সমূদ্রের পানির উচ্চতা ২০ সেন্টিমিটারের মতো বেড়ে গেছে৷ ফলে আমাদের উপকুলীয় এলাকার একটি বড় অংশ পানির নিচে চলে যাবে৷ আর এরইমধ্যে আমরা ঋতুর চরিত্রের পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি৷ আমরা দেখছি, অতি বৃষ্টি এবং বন্যা৷ আবার শীত কমে যাচ্ছে৷ এর ফলে শীতকালীন ফসল, বিশেষ করে গম ও আলুর ফলন কমে যাবে৷ আবার গরমের সময় গরম আরো বাড়লে বোরো উৎপাদন শতকরা ২০ ভাগ কমে যাবে৷''

বাংলাদেশে ঋতুর চরিত্রের এই পরিবর্তনকে জলবায়ু নিয়ে কাজ করা সংগঠন ইক্যুইডি বিডির প্রধান নির্বাহী রেজাউল করিম চৌধুরী অভিহিত করেন ‘এরাটিক ওয়েদার' হিসেবে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এরাটিক ওয়েদারের বৈশিষ্ট্য হলো, এর চরিত্র বোঝা যায় না৷ ফোরকাস্ট করা যায় না৷ আগের চরিত্রের সঙ্গে মেলে না৷ সারাবিশ্বের মতো এবার বাংলাদেশেও তাপমাত্রা বেশি ছিল৷ এবার অতিবৃষ্টি হয়েছে৷ শীত দেরিতে এসেছে৷ আবার প্রচুর কুয়াশা পড়ছে৷ আর বাংলাদেশে যে ছয় ঋতুর কথা বলা হয়, সেই ছয় ঋতু আর নাই৷ কিছু ঋতু হারিয়ে গেছে৷''

‘এত অস্থির হওয়ার কিছু নাই’

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে মা দূর্গা আসেন শরতের আবহ নিয়ে৷ এটা শারদীয় উৎসব৷ কিন্তু এবার মা দূর্গা এসেছেন বষ্টি মাথায় নিয়ে৷ আর এখন হেমন্তের আবহে শীত এসেছে৷ বাংলাদেশের উপকুলীয় এলাকা কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় ঢাকার চেয়ে শীত কম৷ থাকার কথা কিন্তু বাস্তবে উল্টো৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘এই কার্বণ নিঃসরণ কমিয়ে তাপমাত্রা ঠিক রাখা না গেলে এরাটিক আবহাওয়ার আরো অবনতি ঘটবে৷ ধান ও গমের উৎপাদন ৩০ ভাগ কমে যাবে৷''

ব্র্যাক-এর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবাযূ পরিবর্তন কর্মসূচির পরিচালক নাইম গওহর ওয়ারা অবশ্য ঋতুর চরিত্রের পরিবর্তনকে অনেকটা স্বাভাবিকই মনে করেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এর মধ্যে বিজ্ঞান আছে৷ খনা হাজার বছর আগেই বলে গেছেন, ঊন বর্ষণ দুনো শীত৷ বর্ষা কম হলে শীত দ্বিগুন হবে৷ তার মানে হলো, বর্ষা বেশি হলে শীত কম হবে৷ এবার বর্ষা বেশি হয়েছে, ঠান্ডা কম পড়ছে৷ আর এতেই আমরা অস্থির হয়ে পড়েছি৷ এত অস্থির হওয়ার কিছু নাই৷''

তিনি বলেন, ‘‘এটা যে অস্বাভাবিকতা নয়, তা আমি বলব না৷ কিন্তু এটাই আবহাওয়া এবং জলবায়ুর চরিত্র৷ এটার সঙ্গে খাপ খাইয়ে আমাদের চলতে হবে৷ আমরা যেন অযথা ব্যস্ত হয়ে না পড়ি৷''

কেমন দেখছেন এবারের শীত? মন্তব্য করুন নিচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ