1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌শুটিং চলবে, ঘনিষ্ঠতা নয়

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
৮ জুন ২০২০

করোনা সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছে, এমন একটা পরিস্থিতিতে সিনেমা, সিরিয়ালের শুটিং শুরুর অনুমতি দেওয়া হলেও ঘনিষ্ঠ দৃশ্য বর্জনের বিধান দেওয়া হয়েছে৷ কতটা অস্বস্তিতে চলচ্চিত্রকারেরা?‌

ফাইল ছবিছবি: DW/S. Bandopadhyay

ঘনিষ্ঠ দৃশ্য রাখা যাবে না৷ আলিঙ্গন, চুম্বন, ইত্যাদি তো একেবারেই নয়৷ সিনেমা, সিরিয়াল, ওয়েব সিরিজের ক্ষেত্রে এই নব বিধানের দুটো সমস্যার জায়গা তৈরি হয়েছে৷ এক, আগে যেভাবে ঘনিষ্ঠতা বোঝাতে নানা ধরনের রূপকের আশ্রয় নিতে হতো, আবার কি সেই জায়গায় ফিরে যাবে সিনেমা?‌আর দ্বিতীয় সমস্যা ব্যবহারিক৷ যাঁরা বিভিন্ন প্রকল্প এর আগেই হাতে নিয়েছেন, হয়ত শুটিং শুরুও হয়ে গিয়েছিল, তাঁরা কীভাবে এই নিয়ম বজায় রেখে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবেন?‌
বিশিষ্ট চিত্র সমালোচক এবং তথ্যচিত্র নির্মাতা অনিরুদ্ধ ধর মনে করেন, ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের শুটিং বন্ধ রাখার এই বিধানে গেল গেল রব তোলার কোনও মানে হয় না৷ কারণ, এতদিন ধরে যে ধরনের ঘনিষ্ঠ দৃশ্য দেখানো হয়েছে, তা খুবই আড়ষ্ট এবং সুখকর নয়৷ তাঁর কথায়, ‘‌‘‌কেন টেলিভিশনের লোক এত আতঙ্কিত হয়ে উঠছে ঘনিষ্ঠ দৃশ্য নিয়ে, সেটা বলা খুব মুস্কিল৷ সিনেমা মানে তো শুধুমাত্র ঘনিষ্ঠ দৃশ্য নয়৷ এখন যাঁরা সিনেমা তৈরি করেন, তাঁরা প্রথমেই এমন একটা ভাব করছেন, যেন সিনেমা মানেই হল ঘনিষ্ঠ দৃশ্য!‌ পৃথিবীর বহু সফল সিনেমায়, বাংলা ভাষাতেও আছে, প্রচুর সফল সিনেমায় কোনও ঘনিষ্ঠ দৃশ্য নেই৷ এখন প্রশ্ন হল, তা হলে কি, এই যে নতুন নিয়ম তৈরি হল করোনার আবহে, এখন কি ফিরে আসবে প্রথম দিকের সেই দুটো ফুল মুখোমুখি ঘষা খাচ্ছে, বা দুটো পায়রা চুমু খাচ্ছে?‌হতে পারে৷ কিন্তু সেটা ফিরে এলে ‘‌দাও ফিরে সে অরণ্য’র মতো একটা জায়গায় আমরা ফিরে যাব-মন্দ কী?‌ হোক না৷ তার কারণ হচ্ছে, যা চলছিল এতদিন ধরে, যে জিনিসগুলো দেখানো হচ্ছিল, সেগুলো আদৌ খুব একটা সুখকর জিনিস নয়৷ এমনকী আমাদের বিশ্ববিখ্যাত সত্যজিৎ রায় পর্যন্ত কোনও ঘনিষ্ঠ দৃশ্য জমিয়ে তুলতে পারেননি৷ ‘‌ঘরে বাইরে'‌–তেও যে চুম্বন দৃশ্যটি রয়েছে, সেই চুম্বন দৃশ্যটি অত্যন্ত জোলো৷ মনে হচ্ছে খুব আড়ষ্ট৷ বাঙালিরা চুমু খেতে জানে না!‌ খুব সত্যি কথা৷ এর মধ্যে কোনও ভুল নেই৷ হয়ত ঘরের মধ্যে আলো নিভিয়ে চুমু খেতে পারে, কিন্তু প্রকাশ্যে ক্যামেরার সামনে চুমু খাওয়াটা খুব ডিফিকাল্ট বাঙালি অভিনেতাদের পক্ষে৷’’
কিন্তু সিনেমা-সিরিয়ালের এই আড়ষ্টতা কাটিয়ে আজকের বাংলা ওয়েব সিরিজ অনেকটাই প্রাপ্তবয়স্ক এবং সাহসী৷ সেখানে কতটা অসুবিধে তৈরি করতে পারে এই ঘনিষ্ঠতা বর্জনের বিধান?‌ এই সময়ের নবীন পরিচালকদের অন্যতম অয়ন চক্রবর্তী, যিনি বেশ কিছু ছবি এবং সিরিজ বানিয়েছেন ওয়েব প্ল্যাটফর্মের জন্য৷ এই করোনা পরিস্থিতিতে কাজ করতে গিয়ে তাঁর কতটা অসুবিধে হতে পারে?‌

কাজ করা যাবে না এভাবে, সম্ভবই নয়: অয়ন চক্রবর্তী

This browser does not support the audio element.

যে জিনিসগুলো দেখানো হচ্ছিল, সেগুলো আদৌ সুখকর নয়: অনিরুদ্ধ ধর

This browser does not support the audio element.

অয়ন বলছেন, ‘‌‘সিরিয়াল হয়ত হয়ে যাবে, কারণ সিরিয়ালে সেইভাবে ঘনিষ্ঠ দৃশ্য থাকে না৷ তার ফলে সিরিয়ালে হয়ত সমস্যা হবে না৷ কিন্তু সিরিজ অথবা সিনেমায় এইভাবে সোশাল ডিস্টেন্সিং মেনটেন করে, খুবই কঠিন৷ কিছু বিষয় নিশ্চয়ই করা যাবে৷ কিন্তু বেশিরভাগ বিষয় নিয়েই কাজ করা যাবে না এভাবে৷ মানে সম্ভবই নয়৷’’
একটা সময় ছিল, যখন বাংলা, তথা ভারতীয় সিনেমায় ঘনিষ্ঠ দৃশ্য থাকত না৷ শারীরিক ঘনিষ্ঠতা বোঝাতে পাশাপাশি দুটো ফুলের গলাগলি, বা দুটো পাখির ঠোঁটে ঠোঁট রাখার মতো নানা রূপকল্পের আশ্রয় নেওয়া হতো৷‌নতুন করোনা বিধান কি আবার সেই দিকে নিয়ে যাবে সিনেমাকে?‌ অয়নের বক্তব্য, ‘‌‘‌কী রকম ভাবে ট্রিট করবেন‌, সেটা একজন পরিচালক ভাববেন৷ যে সেটা নতুন কী কী ভাবে, সিম্বলিক ওয়েতে কাজ করা যায়৷ ইরানে যেমন একটা প্রচণ্ড সেন্সরশিপ ওদের ওখানে, তার মধ্যেও (‌জাফর)‌পানাহি যা কাজ করছেন-বুদ্ধি করে ডিরেক্টরদেরই বের করতে হবে, যে এই করোনা সেন্সরশিপের মোকাবিলা কীভাবে করতে হবে৷’’
অয়ন চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, তাঁর পরিচালিত একটি জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ ‘‌জাজমেন্ট ডে’-র দ্বিতীয় পর্বের শুটিং এই বছরই করার কথা ছিল৷ কিন্তু তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, এবছর ওটা শুট করা যাবে না৷ অন্তত এই নিয়মের আওতায় থেকে যাবে না৷ এবং একা অয়ন নন, অনেকেই তাঁদের শুটিং আপাতত মুলতবি রাখছেন, যতদিন না পরিস্থিতি ফের স্বাভাবিক হচ্ছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ