নিজ দেশে অনুষ্ঠিত গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হেরেছিল ব্রাজিল৷ চারবছর পর আবার আসছে বিশ্বকাপ৷ এবার সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন হবার ফেভারিটদের তালিকায় আছে নেইমাররা৷
বিজ্ঞাপন
ফুটবল বিশ্বকাপে অবশ্য ব্রাজিল সবসময়ই ফেভারিট৷ কিন্তু গতবার নিজ দেশে অমন শোচনীয় হারের লজ্জা কাটাতে এবার বিশ্বকাপ জিততে মরিয়া থাকবে সেলেকাওরা৷
বর্তমান ব্রাজিল দলেরসেই সামর্থ্যও আছে৷ তারাই এবার প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছে৷ যদিও বাছাইপর্বের শুরুটা ভালো ছিল না৷ ফলে ছয় ম্যাচ পর কোচ পরিবর্তন করতে হয়েছিল ব্রাজিলকে৷ ডুঙ্গার জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছিল আদেনোর লিওনার্দো বাকিকে – যাঁকে তিতে নামেই সারা বিশ্ব চেনে৷ তিতে ব্রাজিলের দায়িত্ব নেয়ার পর সেলেকাওরা প্রায় একরকম অপরাজেয় হয়ে উঠেছে৷
কোচ হিসেবে তিতে বায়ার্ন মিউনিখ ও রেয়াল মাদ্রিদের সাবেক কোচ কার্লো আনসেলত্তির অনুসারী৷ আনসেলত্তির ‘ব্যালেন্সড' দল গড়ার বিষয়টি তিতের পছন্দ৷ আর বর্তমান ব্রাজিল দলে তারকা খেলোয়াড়ের অভাব না থাকায় সব পজিশনেই ভালমানের ফুটবলার নির্বাচন করতে পারছেন তিনি৷
এবার পজিশন অনুযায়ী ব্রাজিল দলের অবস্থা দেখে নিন:
বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা
বিশ্বকাপ ফুটবল মানেই উন্মাদনা৷ আর সেই উন্মাদনা ঐ গোলপোস্টকে ঘিরেই৷ তাই যারা গোল করেন তারাই হয়ে ওঠেন সবচেয়ে জনপ্রিয়৷ এ পর্যন্ত বিশ্বকাপে যাঁরা প্রতিপক্ষের জালে অন্তত ১০ বার বল জড়িয়েছেন তাঁদের নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিরোস্লাফ ক্লোজে
ক্লোজে হলেন জার্মানির সৌভাগ্যের প্রতীক৷ যে ম্যাচেই তিনি দেশের হয়ে গোল করেছেন সে ম্যাচেই দল জিতেছে৷ তিনি জার্মানির সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা৷ ১৬টি গোল নিয়ে বিশ্বকাপেরও সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি৷ ২০১৪ বিশ্বকাপে ২টি গোল করে তিনি ব্রাজিলের রোনালদোকে টপকে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন৷ অংশ নিয়েছেন ২০০২, ২০০৬, ২০১০ ও ২০১৪ বিশ্বকাপে৷ জিতেছেন ২০১৪ বিশ্বকাপ৷
ছবি: Patrik Stollarz/AFP/Getty Images
রোনালডো
ব্রাজিলের এই কিংবদন্তীকে বলা হয় বিশ্বের সর্বকালের সেরা স্ট্রাইকারদের একজন৷ ‘দি ফেনোমেনোন’খ্যাত এই তারকা তিনবারের ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়, দু’বার ব্যালন ডি’অর ও একবার উয়েফার সেরা ক্লাব ফুটবলার এবং ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট জেতেন৷ ব্রাজিলের হয়ে তিনি ৯৮ ম্যাচে ৬২টি গোল করেন, যার ১৫টিই বিশ্বকাপে৷ ১৯৯৮ বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল ও ২০০২ আসরে জেতেন গোল্ডেন বুট৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Ugarte
গ্যার্ড ম্যুলার
পশ্চিম জার্মানির হয়ে খেলেছেন তিনি৷ প্রতিপক্ষের জালে বল ফেলার দক্ষতার জন্য তাঁকে সর্বকালের সেরাদের একজন হিসেবে মানা হয়৷ এই জার্মান কিংবদন্তীর ফিনিশিং ছিল অনবদ্য৷ দেশের হয়ে ৬২ ম্যাচে করেছেন ৬৮ গোল, যার ১৪টিই এসেছে বিশ্বকাপে তাঁর খেলা ১৩ ম্যাচে৷
ছবি: AP
জিস্ট ফুঁতেন
এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ডটি তাঁর৷ একবারই বিশ্বকাপ খেলেছেন এই ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড, ১৯৫৮ সালে৷ সে বিশ্বকাপেই ৬ ম্যাচে করেছেন ১৩ গোল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেলে
‘কালো মানিক’ নাম তাঁর৷ তাঁকে অনেকেই ফুটবলের সর্বকালের সেরা বলেই মানেন৷ ব্রাজিলিয়ান এই মহাতারকার বিশ্বকাপে ১৪ ম্যাচে ১২ গোল৷ এই তালিকায় একমাত্র তিনিই তিনবার বিশ্বকাপ জিতেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সান্দোর পিতার কচিশ
হাঙ্গেরির এই দুর্দান্ত ফিনিশার তাঁর সময়ে সেরাদের একজন ছিলেন৷ ১৯৫২ ও ৫৪ সালে তিনি যে কোনো ইউরোপিয়ান লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন৷ দেশের হয়ে ৬৮ ম্যাচে করেছেন ৭৫ গোল৷ ১৯৫৪ বিশ্বকাপে তিনি ১১ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন৷ একই বিশ্বকাপে দুইবার হ্যাট্রিক করার রেকর্ড তিনিই প্রথম গড়েন৷
ছবি: AP
ক্লিন্সমান
ক্লিন্সমান জার্মানির তারকা ফুটবলার ও কোচ৷ তিনি ২০০৬ বিশ্বকাপে জার্মানির কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷ পশ্চিম জার্মানির হয়ে বিশ্বকাপ খেলেছেন প্রথম ১৯৯০ সালে৷ এরপর ’৯৪ ও ’৯৮-এ খেলেছেন একীভূত জার্মানির হয়ে৷ বিশ্বকাপে তাঁরও মোট গোলসংখ্যা ১১৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O.Berg
হেলমুট রান
পশ্চিম জার্মানির এই কিংবদন্তীর নাম ছিল ‘দ্য বস’৷ ১৯৫৪-র বিশ্বকাপের ফাইনালে হাঙ্গেরির বিপক্ষে জয়সূচক গোলটি করেন তিনি৷ বিশ্বকাপে তাঁর মোট গোলসংখ্যা ১০৷
১৯৮৪ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেন তিনি৷ এরপর ৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে দেশের হয়ে ৮০ ম্যাচে গোল করেছেন ৪৮টি৷ ৮৬’র বিশ্বকাপে জিতে নিয়েছিলেন গোল্ডেন বুট৷ বিশ্বকাপে তাঁর গোলসংখ্যা ১০টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/STAFF
গাব্রিয়েল বাতিস্তুতা
আর্জেন্টাইন এই গোল মায়েস্ত্রোর গোলগুলোকে বলা হতো ‘বাতিগোল’৷ বিশ্বকাপে তাঁরও গোলসংখ্যা ১০টি৷ ১৯৯৪, ১৯৯৮ ও ২০০২ বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/Allsport/C. Villa
আরো যাঁরা
বিশ্বকাপে দশ গোল করাদের তালিকায় আরো আছেন পেরুর কুবিলাস, জার্মানির টোমাস ম্যুলার ও পোল্যান্ডের লাটো৷ এর মধ্যে টোমাস ম্যুলার এখনো খেলছেন জার্মানির হয়ে৷ তাই তাঁর সামনে আছে গুরুদের টপকে যাবার সুযোগ৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
11 ছবি1 | 11
গোলরক্ষক
তিতে কোচের দায়িত্ব নেয়ার পর সেলেকাওদের গোল সামলানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন সেইসময়কার অপরিচিত গোলরক্ষক আলিসন বেকারকে৷ এখন ২৫ বছর বয়সি বেকারের অন্যতম গুনমুগ্ধ সমর্থকদের মধ্যে একজন হলেন ইটালি ও ইয়ুভেন্তুসের বিখ্যাত গোলরক্ষক বুফন৷ হাত ও পায়ে সমান দক্ষতার কারণে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে খেলা এডারসন এখন দ্বিতীয় গোলরক্ষক হয়ে গেছেন৷
রক্ষণভাগ
ল্যাটিন অ্যামেরিকার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের শেষ ১২টি ম্যাচে কোচ ছিলেন তিতে৷ এই সময় তাঁর দল গোল খেয়েছে মাত্র তিনটি৷ এর বড় কারণ শক্তিশালী রক্ষণভাগ৷ এখন পর্যন্ত পিএসজির দানি আলভেস ও মার্কিনিয়ো এবং ইন্টার মিলানের মিরান্ডা ও রেয়াল মাদ্রিদের মার্সেলোকে নিয়ে ডিফেন্স গড়তে পছন্দ করেছেন তিতে৷ এর বাইরে বেঞ্চে যাঁরা বসে থাকবেন তাঁরাও খ্যাতিতে কম যাননা৷ পিএসজির থিয়াগো সিলভা, ইয়ুভেন্তুসের আলেক্স সান্দ্রো, ম্যান সিটির দানিলো – ফুটবল সমর্থক মাত্রই এদের ক্ষমতা সম্পর্কে জানেন৷
মধ্যমাঠ
চীনের একটি ক্লাবের হয়ে খেলা রেনাতো আউগুস্তর জায়গায় প্লেমেকার হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেন বার্সেলোনার ফিলিপ কুটিনিয়ো৷ আরও আছেন চেলসির উইলিয়ান, ম্যান সিটির ফার্নান্দিনিয়ো, বার্সার পাউলিনিয়ো ও রেয়াল মাদ্রিদের কাসেমিরো৷
বিশ্বকাপের কাউন্টডাউন শুরু
01:27
ফরোয়ার্ড
বর্তমান ব্রাজিল দলের সবচেয়ে বড় তারকা নিশ্চয় নেইমার৷ কিন্তু গত মার্চ মাসে আহত হওয়ার পর থেকে খেলার বাইরে আছেন তিনি৷ শুক্রবার তিনি তাঁর ক্লাব পিএসজিতে ফিরেছেন৷ সেখানকার চিকিৎসকরা আবার তাঁকে পরীক্ষা করে দেখবেন৷ তবে বিশ্বকাপ শুরুর আগে হয়ত নেইমারের আর প্রতিযোগিতামূলক খেলা হবে না৷ সেক্ষেত্রে একেবারে বিশ্বকাপেই মাঠে নামতে হবে তাঁকে৷ সেইসময় কোচ তিতে যদি মনে করেন নেইমার পুরো ফিট নন তাতেও সমস্যা হবে না৷ কারণ তিতের কাছে অপশন হিসেবে আছে ম্যান সিটির গাব্রিয়েল জেসুস, যিনি বাছাইপর্বে ব্রাজিলের সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন৷ এছাড়া আছেন চেলসির উইলিয়ান, লিভারপুলের ফির্মিনো ও ইয়ুভেন্তুসের কস্টা৷
বিশ্বকাপে ব্রাজিল পড়েছে গ্রুপ ই-তে৷ তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে আছে সুইজারল্যান্ড, কস্টা রিকা ও সার্বিয়া৷
জেডএইচ/ডিজি (এপি)
প্রতিবেদনটি নিয়ে কোনো মন্তব্য থাকলে লিখুন নীচের ঘরে৷