আজকাল অনেকেই ‘কার ওয়াশ সেন্টার’ থেকে নিজের অপরিষ্কার গাড়িটি ঝকঝকে করে বাড়ি ফেরেন৷ তাই বলে ‘ডগ ওয়াশ সেন্টার’ বা কুকুরদের গোসলখানা? হ্যাঁ, এক জার্মান দম্পতি এবার এমন এক গোসলখানা তৈরি করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
অনেক জার্মানই বাড়িতে নানা রকম পাখি, বেড়াল বা কুকুর পোষেন৷ তবে প্রভুভক্ত কুকুর পুষতেই তাঁরা যেন একটু বেশি ভালোবাসেন৷ হিসেব অনুযায়ী জার্মানিতে পাঁচ মিলিয়নেরও বেশি পোষা কুকুর আছে৷ কুকুরকে তাঁরা পরিবারের সদস্যদের মতোই দেখেন৷ এমনও শোনা যায় যে, বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দায় কুকুরের মালিকরা নাকি নিজের ক্ষেত্রে কিছুটা খরচ কমালেও কুকুরের প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র আগের মতোই কেনাকাটা করেন৷ গৃহপালিত কুকুরের স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ্য রেখে অর্গানিক খাবার কেনেন কিংবা অনলাইনে বিশেষ ধরণের খাবারের অর্ডার দেন৷ মালিকের মতো কুকুরও যেন সুস্থ থাকে সেজন্য স্বাস্থ্যবীমাও করে থাকেন অনেকে৷ এমনকি খাবারের রুচি বদলাতে মাঝে মধ্যে কুকুরকে নিয়ে যাওয়া হয় কুকুরদের জন্য তৈরি বিশেষ রেস্তোরাঁয়৷ এছাড়াও কুকুরদের জন্য জার্মানিতে আছে বিশেষ চুল কাটার সেলুন, আলাদা খেলনার দোকান, কত কী! সোজা কথায় কুকুরকে নিজের সন্তান, প্রকৃত বন্ধু এবং পরিবারের একজন সদস্য হিসেবেই দেখা হয় জার্মানিতে৷
কুকুরও আমাদেরই মতো প্রাণী
কুকুর জার্মানদের কাছে বেশ আদরের৷ অনেক জার্মানই শখ করে বাড়িতে বিভিন্ন জাতের কুকুর পোষেন৷ তবে জার্মানির হাইডেলব্যার্গের একটি সামাজিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান-এর সমীক্ষায় দেখা গেছে, জার্মানিতে কুকুর পোষেন বিত্তবান লোকেরা৷
ছবি: AP
রোদ দেখে কুকুরও আনন্দিত
কুকুর যে খুবই প্রভুভক্ত গৃহপালিত পশু তা আমাদের সকলেরই জানা৷ তবে কুকুর শুধু গৃহপালিত পশু নয়, জার্মানিতে কুকুরকে প্রাণী হিসেবেই ভাবা হয়৷ আর তারই কিছু নমুনা দেখা যাক আজকের এই ছবিঘরে ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিত্তবানেরাই কুকুর পোষেন
অনেক জার্মানই শখ করে বাড়িতে বিভিন্ন জাতের কুকুর পোষেন৷ তবে জার্মানির হাইডেলব্যার্গের একটি সামাজিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান-এর সমীক্ষায় দেখা গেছে, জার্মানিতে কুকুর পোষেন বিত্তবান লোকেরা৷ এই চকচকে বিশাল কুকুরটির ওজন ১১১ কেজি৷ মাসে ৫০ কেজি খাবার খায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কুকুরের সেলুন
কুকুরকে চুল কাটার জন্য সেলুনে নিয়ে যাওয়া হয়৷ যেন যেখানে সেখানে চুল না পড়ে যায় এবং ওকে দেখতেও যেন কুকুরের মালিকের মতোই ফিটফাট মনে হয়৷ এদেশে কখনো রাস্তায় কুকুরকে মালিক ছাড়া দেখা যায়না৷ গৃহপালিত কুকুর পথচারী বা বা অন্য কাউকে কামড় দেয়না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কুকুরও দেশের জন্য কাজ করে
কুকুর যে শুধু পরিবারের সাথেই থাকে, তাদের সঙ্গ দেয় তা নয়৷ ট্রেনিংপ্রাপ্ত কুকুরও আছে, যেগুলো অবৈধভাবে টাকার নোট পাচারকারীদের ধরিয়ে দিতে সরকারকে সাহায্য করে৷ এই ছবিটি ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরেররই একটি দৃশ্য, যাতে পাঁচশো টাকার নোট পাচারকারী ধরা পড়েছে, বুদ্ধিমান কুকুরটির সাহায্যে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কুকুর পালুন/ফিট থাকুন
বাইরে যে আবহাওয়াই থাকুক না কেন, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে কুকুরকে দিনে কয়েকবার বাড়ির বাইরে নিয়ে যেতে হয়৷ এদেশে অতিরিক্ত ওজনের মানুষদের ওজন কমানোর জন্য অনেক সময় ডাক্তাররাও কুকুর পোষার পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷ তখন তাকে কুকুরের জন্য হলেও বাইরে বের হতেই হবে, হাঁটতে হবে৷
ছবি: Maksim Nelioubin
কুকুরেও চাই বিনোদন
নিজে যে শুধু গরম পোশাক পরেন তাই নয়, প্রচণ্ড শীতের সময় প্রিয় কুকুরটিরও যেন কষ্ট না হয় তাই ওকেও গরম পোশাক পরিয়ে নিয়ে যান গাড়িতে করে হাওয়া খেতে৷ ঠিক যেন পরিবারের একজন সদস্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
কুকুরের রেস্তোরাঁ
কুকুরের মন-মেজাজ ভালো রাখতে মাঝে মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয় ওদেরই জন্য তৈরি বিশেষ রেস্তোরাঁতে৷ যেখানে কুকুর নিজের খাবার নিজেই পছন্দ করতে পারে তার ব্যবস্থা রয়েছে৷ কুকুরের জন্য আলাদা রেস্তোরাঁ, হোটেল, স্কুল, সেলুন, দোকান, গোরস্থান সবই রয়েছে৷
ছবি: picutre-alliance/dpa
মা আর সন্তান
মা বলে কথা! আদর করে মুখে তুলে খাওয়াতেই যেন আনন্দ৷ নিঃসন্তান এই মাকে কুকুরটিই দিয়েছে সন্তানের ভালোবাসা৷ মা’কে কিছুক্ষণ না দেখলেই অস্থির হয়ে পড়ে৷ মা বাইরে থেকে ফিরে এলে লাফিয়ে কোলে ওঠে নয় তো লেজ নেড়ে তার আনন্দ প্রকাশ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিয়মিত ডাক্তারের চেম্বারে
কুকুরকে চেকআপের জন্য নিয়মিত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়৷ রাস্তায় কোন কুকুর কখনো কোন পথচারীকে কামড় দিয়েছে, একথা সহজে শোনা যায়না৷ কুকুর সেভাবেই ট্রেনিংপ্রাপ্ত৷ কুকুরে জন্যও রয়েছে স্বাস্থ্যবীমা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কুকুরের খেলনার দোকান
কুকুরের খেলনা বা ব্যবহারযোগ্য জিনিসের দোকান৷ এখানে প্রায় বেশিরভাগ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরেই কুকুর বা বেড়ালের টিনজাত খাবারের জন্য আলাদা বিভাগ রয়েছে৷
ছবি: DW/V.Weitz
গর্বিত মা
তিন জাতের তিন কুকুরের গর্বিত পালক মা৷ এই কুকুরগুলোই তার গর্ব৷ শুধু তাই নয়, মা মহিলাটি গর্ব করে বলেন ওরা শুধু তার সন্তান নয়, তাঁর বডিগার্ডও বটে৷ কারণ তাঁর বিশাল বাড়িতে এই তিন সন্তানদের নিয়েই থাকেন তিনি৷ বাড়ির দেয়ালে ওদের ছবি টাঙানো৷ হাতব্যাগেও থাকে ওদেরই ছবি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
একই পরিবারের সদস্য
একটি সাধারণ কুকুরের মূল্য কিন্তু ২০০ ইউরোর কম নয়৷ তবে কুকুরের জাত বুঝে কয়েক হাজার ইউরোও হতে পারে৷ তাছাড়া একটি কুকুরের জন্য মাসে যে পরিমাণ টাকা খরচ করা হয়, সে টাকায় সহজেই একটি বাচ্চাও বড় হতে পারে৷ আর এরা ঠিক যেন ৬টি সন্তান ! একইসাথে বেড়ে উঠছে৷
ছবি: AP
12 ছবি1 | 12
এখানেই শেষ নয়, কুকুরপ্রেমী এক জার্মান দম্পতি ভেরা এবং গিয়র্গ মুর জার্মানির বাডেন-ভুর্টেমব্যার্গ রাজ্যে, অস্ট্রিয়া এবং ইটালিতে তৈরি করেছেন কুকরদের জন্য মোট ৩১টি বিশেষ ধরণের গোসলখানা বা ‘ডগ ওয়াশ সেন্টার'৷ মানে ‘কার ওয়াশ সেন্টার'-এর মতো এটা এমন একটা জায়গা, যেখানে মালিক পোষা কুকুরটি খুব সহজে গোসল করিয়ে দু'জনে একেবারে ‘টিপটিপ' অবস্থায় বাড়ি ফিরতে পারেন৷
গোসলখানাগুলো দেখতে কেমন আর কী সুবিধাই বা সেখানে রয়েছে? কুকুরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে সোজা গোসলখানার বাথটবে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়৷ টবের মেঝেতে লাগানো রয়েছে বিশেষ ধরনের ‘ম্যাট', যাতে কুকুর পা পিছলে পড়ে না যায়৷ তারপর ‘কয়েন বক্সে' পয়সা ঢুকিয়ে দিলেই খোলা জায়গায় তৈরি গোসলখানার যন্ত্রগুলো, অর্থাৎ পানি, শ্যাম্পু, ড্রায়ার ইত্যাদি সচল হয়ে যায়৷ দেয়ালে ঝুলে থাকা শাওয়ার টেনে নিয়ে কুকরকে গোসল করানো শুরু হয় তারপর৷ আরো একটি বোতামে টিপ দিলেই বেরিয়ে আসে শ্যাম্পু৷ এছাড়া কুকুরের চুল ও গায়ের লোম শুকানোর জন্য রয়েছে অন্য আরেকটি বোতাম৷ ১৫০ কেজি পর্যন্ত ওজনের যে কোনো কুকুরকে এখানে গোসল করানো যায়৷ ছোট কুকুরের জন্য দিতে হয় মাত্র তিন ইউরো আর বড় কুকরদের জন্য লাগে প্রায় ১২ ইউরো৷
কুকুরের মালিক স্ভেন কাম্পস তাঁর মেয়েকে সাথে নিয়ে কুকুরকে গোসল করাতে নিয়ে গেছেন বাডেন-ভুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের ঐ ‘ডগ ওয়াশ সেন্টারে'৷ ছোট্ট মেয়েটি খুবই আনন্দের সাথে বাবাকে সঙ্গে নিয়ে প্রিয় বন্ধু কুকুরকে গোসল করায়৷ বাবা স্ভেনের কথায়, ‘‘কুকুরকে সাধারণত চার থেকে ছয় সপ্তাহ পর পর গোসল করাতে হয়৷ তাছাড়া বাড়িতে কুকরকে গোসল করাতে বেশ ঝামেলা হলেও, এখানে খুব সহজেই তা সম্ভব৷''
কুকুরের গোসলখানার মালিক ভেরা মুর আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেন, ‘‘৩০ বছর আগে ‘কার ওয়াশ সেন্টার' ছিল না, এখন যা বেশ জনপ্রিয়৷'' আর ভেরার স্বামী গিয়র্গ বলেন, ‘‘জার্মানি, অস্ট্রিয়া এবং ইটালি মিলিয়ে আমাদের ৩১টি সেন্টার থাকলেও ইটালিতেই ব্যবসা সবচেয়ে ভালো চলছে৷''
কুকুরের গোসল শেষে আরেকজন কুকুরের মালিক এলিজাবেথ মোরা বলেন, ‘‘বাড়িতে কুকরকে গোসল করানো, সারা গায়ের চুল শুকানো ইত্যাদি করতে তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায়, যা কুকুরের জন্য ‘স্ট্রেস'-এর কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ এখানে কুকুররা বিরক্ত বোধ করলে সরাসরি ড্রায়ারটা বন্ধ করে দিলেই শেষ৷ কত সুবিধা! তাছাড়া কুকুর তো প্রাণী, গাড়ি ধোওয়ার মেশিন তো নয়!''