সবকিছুই তো বদলে গেল৷ ক্রিকেটের সেই ধ্রুপদী রূপ, ভদ্রতা, সৌন্দর্য, সম্মান, ব্যাকরণ৷ তা হলে পড়ে থাকলো কী?
বিজ্ঞাপন
সেই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি, ক্রিকেট হলো জেন্টেলম্যানদের খেলা৷ মারদাঙ্গা বা খুনখারাপির খেলা নয়, একেবারে ধ্রুপদী স্পোর্টস৷ শীতের দুপুরে দুধসাদা জামা-প্যান্ট, সোয়েটার, প্যাড পরা ব্যাটসম্যানের হাতের উইলো কাঠের ব্যাটের ঠিক মাঝখানে এসে যখন লাগে লাল রঙের বল, তখন এক মধুর শব্দ হয়৷ সেটা না কি অসাধারণ কোনো গায়কের নিখুঁত তান শোনার মতোই শ্রুতিমধুর৷ ওই শব্দ এবং তারপর কভার ও এক্সট্রাকভারের মধ্যে দিয়ে মাটি ঘেঁষা বল সোজা বাউন্ডারি সীমানার বাইরে যাওয়া দেখতে ও শুনতেই তো মাঠে যাওয়া৷ তার সঙ্গে ব্যাটসম্যানের পা বলের লাইনে থাকবে, মাথা ঝুঁকে থাকবে৷ সবমিলিয়ে একটা শিল্প সৃষ্টি হবে৷ এর নামই ক্রিকেট৷
সবচেয়ে কম বয়সের টেস্ট সেঞ্চুরিয়ানরা
১৭ বছর আগে এক বাংলাদেশি কিশোর সবচেয়ে কম বয়সে টেস্টে শতক করার রেকর্ড গড়েছিলেন৷ পূর্ববর্তী রেকর্ড ভাঙা দেখতে ক্রিকেটবিশ্বকে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ চার দশক৷ এই ছবিঘর টেস্ট ক্রিকেটের এমন কিছু বিস্ময়কে নিয়ে৷
ছবি: Lakruwan Wanniarachchi/AFP/Getty Images
মোহাম্মদ আশরাফুল (বাংলাদেশ)
২০০১ সাল৷ শ্রীলঙ্কার সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব গ্রাউন্ডে চলছে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ৷ টেস্ট অভিষেকেই আশরাফুল করে বসলেন অসাধারণ কীর্তি৷ মাত্র ১৭ বছর ৬১ দিন বয়সে ১১৪ রান করে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করলেন৷ সে ম্যাচে বাংলাদেশ ইনিংস ও ১৩৭ রানের ব্যবধানে পরাজিত হলেও আশরাফুল রয়ে গেছেন ইতিহাসের পাতায়৷
ছবি: Lakruwan Wanniarachchi/AFP/Getty Images
মুস্তাক মোহাম্মদ (পাকিস্তান)
আশরাফুলের আগের রেকর্ড ছিল পাকিস্তানের মুস্তাক মোহাম্মদের দখলে৷ ১৯৬১ সালে নয়া দিল্লিতে ভারতের বিপক্ষে ১০১ রানের ইনিংস খেলেন তিনি৷ তখন তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর ৭৮ দিন৷ (ছবিতে বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয়)
ছবি: AP
শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)
১৯৯০ সালে ম্যানচেস্টারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ১১৯ রানের ইনিংস খেলে সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়নের তালিকায় তৃতীয় স্থান দখল করেছেন ক্রিকেট বিশ্বে ‘বিস্ময় বালক’ হিসেবে পরিচিত শচীন টেন্ডুলকার৷ ম্যাচের শেষ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে প্রথম শতরান পেলেও খেলায় শেষ পর্যন্ত কোনো ফল আসেনি৷
ছবি: Reuters
হ্যামিলটন মাসাকাদজা (জিম্বাবুয়ে)
২০০১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট শতক করেন জিম্বাবুয়ের মাসাকাদজা৷ ১১৯ রানের ইনিংস করার সময় তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর ৩৫২ দিন৷ এই ইনিংসের ফলে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে অভিষেকে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড করেন মাসাকাদজা৷ অবশ্য মাত্র দুই মাস পরেই আশরাফুল ভাঙেন সেই রেকর্ড৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
ইমরান নাজির (পাকিস্তান)
২০০০ সালে ব্রিজটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করার সময় নাজিরের বয়স ছিল ১৮ বছর ১৫৪ দিন৷ তবে পরবর্তীতে পাকিস্তান দলে নিয়মিত জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হন তিনি৷ ১৯৯৯ সালে অভিষেকের পর থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত টেস্ট খেলেছেন মাত্র ৮টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Vidanagama
সেলিম মালিক (পাকিস্তান)
১৯৮২ সালে করাচিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাকিস্তানের পক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় সেলিম মালিকের৷ প্রথম ইনিংসে মাত্র ১২ রান করলেও, দ্বিতীয় ইনিংসে করেন অপরাজিত শতরান৷ তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ১৮ বছর ৩২৩ দিন৷
ছবি: Getty Images/AFP
পৃথ্বী শ (ভারত)
অভিষেকেই জাত চিনিয়েছেন ভারতের পৃথ্বি শ৷ ২০১৮ সালে রাজকোটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৩৪ রান করেন তিনি৷ ১৮ বছর ৩২৯ দিন বয়সে দখল করে নেন ভারতের সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেকে শতরান করার রেকর্ড৷ তবে অভিষেকের হিসেব বাদ দিলে সবচেয়ে কমবয়সী ভারতীয় টেস্ট সেঞ্চুরিওনদের তালিকায় তিনি চতুর্থ৷
ছবি: Getty Images/H. Trump
শহীদ আফ্রিদি (পাকিস্তান)
১৯৯৯ সালে চেন্নাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ১৪১ রানের ইনিংস খেলেন শহীদ আফ্রিদি৷ তখন তাঁর বয়স ছিল ১৮ বছর ৩৩৩ দিন৷ তবে ২০১০ সালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরে যাওয়ার আগে তিনি ম্যাচ খেলেন মাত্র ২৭টি, শতরানের ইনিংস খেলেছেন ৫টি৷ অবসরে যাওয়ার সময় আফ্রিদি বলেন, টেস্ট ক্রিকেট তিনি উপভোগ করেন না৷
ছবি: AP
8 ছবি1 | 8
শুনেছি, বিজয় হাজারে ক্রিজে নেমে শট নেওয়ার আগে আধঘণ্টা বা তারও বেশি সময় নিতেন সবকিছু দেখে নেয়ার জন্য৷ পিচের অবস্থা, বোলারের লাইন-লেন্থ, তাঁর নিজের চোখ সইয়ে নিয়ে টাইমিং নিখুত হচ্ছে কি না, তা বুঝে নিতে ওই সময়টুকু তো লাগবেই! তারপর শুরু হবে শট খেলা৷ সেটাও বল দেখে শুনে, কেতাবি ঢঙে৷ ব্যাটের কোণে লেগে স্লিপের মাথার উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে চার হলো, এ তো লজ্জার কথা৷ ভালো ব্যাটসম্যানের শট হবে নিখুঁত৷ ব্যাটের মাঝখান দিয়ে খেলতে হবে, শট হবে ব্যাকরণ মেনে৷ তবেই না তা ক্রিকেট৷ গাভাস্কার যখন ব্যাট করতেন, তখন অন, অফ বা স্ট্রেট ড্রাইভ দেখে মনে হতো, একেবারে ক্রিকেট বইয়ের পাতা থেকে উঠে এসেছে শটগুলো৷ বিশ্বনাথের লেট কাট দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত৷ পরে ভিভ রিচার্ডস যখন বোলারদের কচুকাটা করতেন, তাঁর শটও থাকত ব্যাকরণ মেনে৷ ব্রায়ান লারা, শচিন টেন্ডুলকরও তাই৷
তার উপর ক্রিকেটাররা হবেন একেক জন জেন্টলম্যান৷ বোলাররা একবার আবেদন করবেন৷ আবেদন বাতিল হয়ে গেলে মুখ বুজে চলে যাবেন রান আপের দিকে৷ গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ যেমন৷ নিজের যদি মনে হয় আউট ছিলেন বা সত্যিই ক্যাচ ছিল, কোনোদিন আম্পায়ারের দিকে তাকাতেন না৷ সোজা হাঁটা দিতেন প্যাভিলিয়নের দিকে৷ গাভাস্কারও তাই করতেন৷ বিশ্বনাথ তো একবার আম্পায়ার আউট দেয়ার পরেও তাঁর অনুমতি নিয়ে বিপক্ষের ব্যাটসম্যানকে ডেকে এনেছিলেন ক্রিজে৷ কারণ, আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল৷ এই হলো ক্রিকেট৷ ধ্রুপদী, ভদ্রলোকের খেলা৷
দর্শকও আলাদা৷ কলকাতায় ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগান মাঠের ফুটবল দর্শকদের সঙ্গে ইডেনের দর্শকদের চরিত্রগত ফারাক বিশাল৷ ফুটবল মাঠের উত্তেজনা, হইহুল্লোড়, গালাগালির কোনো রেশ ইডেনে থাকত না৷ সেখানে শীতের দুপুরের রোদ গায়ে মেখে কমলালেবুর খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে ধ্রুপদী ক্রিকেটের সৌন্দর্য দর্শন৷ গালাগালি দূরস্থান, অকারণ একটা কথাও নয়৷ বিপক্ষের প্লেয়ার ভালো শট মারলেও হাততালির বন্যা৷ ওয়েস্ট ইন্ডিজের এভার্টন উইকস, ক্লাইভ ওয়ালকট, রোহন কানহাই তো ইডেনের দর্শকদের নয়নের মণি৷ ইংল্যান্ডের দীর্ঘদেহী টনি গ্রেগ সেঞ্চুরি করার পর হাঁটু মুড়ে বসে জোড়হাত করে ইডেনের অভিনন্দন গ্রহণ করেছিলেন, সেটাই তো ক্রিকেট৷ মুহূর্তে ইডেনের মন জয় করে নিয়েছিলেন তিনি৷ সারাদিনে কত রান উঠল, সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো, খেলাটা দৃষ্টিনন্দন হলো কি না, ব্যাকরণ মেনে হলো কি না, তা দেখা৷
যেসব টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ
সেই ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৪৩ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে টাইগাররা৷ তার মধ্যে জয় এসেছে ২১টিতে৷ চলুন জেনে নিই সেই টেস্টগুলোর কথা৷
ছবি: Anjum Naveed/AP/picture alliance
আগস্ট ৩০-সেপ্টেম্বর ০৩, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী
পরপর ২ টেস্ট পাকিস্তানকে নিজেদের মাটিতে হোয়াইট ওয়াশ করেছে বাংলাদেশ৷ রাওয়ালপিন্ডিতে বাবর আজমদের দুই ইনিংসে ২৭৪ ও ১৭২ রানে অলআউট করে ৬ উইকেটের জয় তুলে নেন শান্তরা৷ লিটনের সেঞ্চুরি, মিরাজের অর্ধশতক ও ৫ উইকেট, হাসান মাহমুদের ৫ উইকেট এই জয়ে বড় ভূমিকা রাখে৷ এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মধ্য সিরিজ জয় পায় বাংলাদেশ৷
ছবি: Anjum Naveed/AP Photo/picture alliance
আগস্ট ২১-২৫, ২০২৪, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান
টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ১০ উইকেটের জয়। এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। ১৪তম টেস্টে ঐতিহাসিক জয়। টেস্টে নবম দল হিসেবে পাকিস্তানকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বাকি থাকলো শুধু ভারত ও সাউথ আফ্রিকা। দেশের বাইরে বাংলাদেশের এটা সপ্তম জয়। ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান। জবাবে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে ৫৬৫ রানের বড় সংগ্রহ তোলে। পাকিস্তানের ২য় ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৪৬ রানে।
ছবি: Farooq Naeem/AFP/Getty Images
২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর, ২০২৩, প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫০ রানের বিশাল এক জয় পায় অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর দল। বাংলাদেশের হয়ে ৬ উইকেট নেন তাইজুল। নিউজিল্যান্ড : ৩১৭ ও ১৮১, বাংলাদেশ:৩১০ ও ৩৩৮৷
ছবি: Munir uz Zaman/AFP
জুন ১৪-১৮ (২০২৩), প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান
মিরপুরে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ৷ ৫৪৬ রানের বিশাল ব্যবধানে ম্যাচ জেতে বাংলাদেশ, যা টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানে জয়ের তিন নম্বরে আছে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৩৮২ রানে অল-আউট হয়। পালটা ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তান ১৪৬ রান তুলেছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ৪২৫ রান তুলে ব্যাটিং ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ। শেষ ইনিংসে আফগানিস্তান অল-আউট হয় ১১৫ রানে।
ছবি: Munir uz Zaman/AFP
এপ্রিল ৩-৭ (২০২৩), প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ৭ উইকেটের জয় পায় টাইগাররা৷ আয়ারল্যান্ড ১ম ইনিংসে ২১৪ এবং ২য় ইনিংসে ২৯২ করে৷ বাংলাদেশ ১ম ইনিংসে ৩৬৯ এবং ২য় ইনিংসে ৩ উইকেটে ১৩৮ রান করে ৭ উইকেটের জয় পায়৷
ছবি: Farooq Naeem/AFP/Getty Images
জানুয়ারি ১-৫ (২০২২), প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ডকে তাদেরই মাটিতে হারিয়ে টেস্টে ঐতিহাসিক এক জয় পায় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে যেকোনো ফরম্যাটেই এটি বাংলাদেশের প্রথম জয়। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে প্রথম টেস্টের শেষ দিনে ৮ উইকেটের বড় জয় পেয়েছে মুমিনুলবাহিনী।
ছবি: Marty Melville/Photospor/AP/picture alliance
জুলাই ৭-১১ (২০২০) প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে
হারারের একমাত্র টেস্ট ২২০ রানে জিতেছে সফরকারীরা। বাংলাদেশের দেওয়া ৪৭৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে পঞ্চম দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবোয়ে অলআউট হয় ২৫৬ রানে। এই জয়ের অন্যতম রূপকার মেহেদী হাসান মিরাজ।
মুশফিকুর রহিমের দ্বিশতক (২০৩) আর মুমিনুলের শতকে (১৩২) ভর করে বাংলাদেশ জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে এক ইনিংস ও ১০৬ রানের জয় পায়৷ প্রথমে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবোয়ে ২৬৫ রান করেছিল৷ এরপর বাংলাদেশ খেলতে নেমে ছয় উইকেটে ৫৬০ রান তোলে৷ পরের ইনিংসে জিম্বাবোয়ে ১৮৯ রান করে অলআউট হয়ে যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman
নভেম্বর ৩০-ডিসেম্বর ২, ২০১৮ প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
মিরপুর টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংস ও ১৮৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ৷ এই প্রথম প্রতিপক্ষকে ফলো অন করানো ও ইনিংস ব্যবধানে জয়ের অনির্বচনীয় দুটি স্বাদ দল পেল একদিনেই৷ দুই ম্যাচের সিরিজে ২-০তে জয়৷ ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ৷ ১১৭ রানে ১২ উইকেট, বাংলাদেশের হয়ে এক ম্যাচে সেরা বোলিংয়ের কীর্তি৷ ম্যান অব দা ম্যাচ মেহেদী হাসান মিরাজ৷ ম্যান অব দা সিরিজ সাকিব আল হাসান৷
ছবি: Picture-alliance/AP Photo/A.M. Ahad
নভেম্বর ২২-২৪, ২০১৮ প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
প্রতিপক্ষকে দুই ইনিংস মিলিয়ে সবচেয়ে কম বলে দুবার অলআউট করে জেতা ম্যাচের নতুন রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ৷ আড়াই দিনে টেস্ট জিতেছিল টাইগাররা৷ সাড়ে সাত সেশনের মতো খেলা হয়েছে এই টেস্টে৷ এটিই টেস্টে বাংলাদেশের দ্রুততম জয়৷ নাঈম হাসান প্রথম ইনিংসে পেয়েছেন ৫ উইকেট৷ দ্বিতীয় ইনিংসে তাইজুল পেয়েছেন ৬ উইকেট৷ মুমিনুল হক পেয়েছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman
নভেম্বর ১১-১৫, ২০১৮ প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে
জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ২১৮ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ৷ সিরিজ ১-১ ড্র৷ ৪৪৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় দ্বিতীয় সেশনে জিম্বাবুয়ে থামে ২২৪ রানে৷ ৩৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের সফলতম বোলার মেহেদী হাসান মিরাজ৷ দ্বিশত হাঁকিয়ে ম্যাচ সেরা মুশফিকুর রহিম৷ সিরিজ সেরা হয়েছেন তাইজুল ইসলাম৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
জানুয়ারি ৬-১০, ২০০৫, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ২২৬ রানে জয়ী
টাইগাররা প্রথমবারের মতো টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় চট্টগ্রামে৷ ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৪৮৮ রান তোলে স্বাগতিকরা৷ আর দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ৯ উইকেটে ২০৪ রান করে৷ প্রথম ইনিংসে জিম্বাবোয়ের স্কোর ছিল ৩১২ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫৪ রান৷
ছবি: Getty Images/AFP
জুলাই ৯-১৩, ২০০৯, প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ: বাংলাদেশ ৯৫ রানে জয়ী
দেশের বাইরে বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট জয়ের দেখা পায় ২০০৯ সালের ১৩ জুলাই৷ কিংসটাউনে সেই টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৯৫ রানে হারায় টাইগাররা৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Samad
জুলাই ১৭-২০, ২০০৯, প্রতিপক্ষ ওয়েস্টইন্ডিজ: বাংলাদেশ চার উইকেটে জয়ী
সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর ছিল সাফল্যে ঠাসা৷ দ্বিতীয় টেস্টে সেন্ট জর্জেসে স্বাগতিকদের হারায় টাইগাররা, সেবার জিতেছিল চার উইকেটে৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Brooks
এপ্রিল ২৫-২৯, ২০১৩, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ১৪৩ রানে জয়ী
জিম্বাবোয়ের হারারেতে স্বাগতিকদের আবার ‘বধ’ করে টাইগাররা৷ প্রথম ইনিংসে ৩৯১ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ উইকেটে ২৯১ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ৷ জবাবে প্রথম ইনিংসে ২৮২ আর দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫৭ রানেই গুটিয়ে যায় জিম্বাবোয়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Njikizana
অক্টোবর ২৫-২৭, ২০১৪, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ তিন উইকেটে জয়ী
ঢাকায় বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়৷ তিন দিনে শেষ হওয়া সেই টেস্টে শুরুতে ব্যাট করতে গিয়ে প্রথম ইনিংসে ২৪০ রান করে জিম্বাবোয়ে৷ আর দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের সংগ্রহ ছিল ১১৪৷ অন্যদিকে, প্রথম ইনিংসে ২৫৪ আর দ্বিতীয় ইনংসে ৭ উইকেটে ১০৭ রান তুলে জিতে যায় স্বাগতিকরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
নভেম্বর ৩-৭, ২০১৪, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ১৬২ রানে জয়ী
খুলনায় জিম্বাবোয়েকে হারায় বাংলাদেশ৷ সেই টেস্ট পাঁচ দিন পর্যন্ত গড়ালেও শেষমেশ তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি জিম্বাবোয়ে৷ ফলাফল স্বাগতিকদের ১৬২ রানের জয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
নভেম্বর ১২-১৬, ২০১৪, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ১৮৬ রানে জয়ী
আবারো চট্টগ্রামে জিম্বাবোয়েকে হারায় টাইগাররা৷ সেবার ব্যবধান ছিল ১৮৬ রানের৷
ছবি: Getty Images/AFP/Strdel
অক্টোবর ২৮-৩০, ২০১৬, প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড: বাংলাদেশ ১০৮ রানে জয়ী
এখন পর্যন্ত বড় কোনো ক্রিকেট শক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের একমাত্র টেস্ট জয় এটি৷ ঢাকায় ইংল্যান্ডকে নাস্তানাবুদ করে টাইগাররা৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
মার্চ ১৫-১৯, ২০১৭, প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী
একদিকে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের শততম ম্যাচে জয়, অন্যদিকে প্রথমবারের মত শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয়-দুই দিক দিয়েই ঐতিহাসিক বাংলাদেশের এই টেস্ট ম্যাচটি৷ পঞ্চম দিনে ৪ উইকেটে জয় নিশ্চিত করে টাইগাররা৷ ম্যাচ সেরা হয়েছেন তামিম ইকবাল৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
আগস্ট ২৭-৩০, ২০১৭, প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া: বাংলাদেশ ২০ রানে জয়ী
প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বাংলাদেশ ইতিহাস গড়ে৷ এটা ছিল সাকিব ও তামিমের ৫০তম টেস্ট। সাকিব মোট ১০ উইকেট নিয়ে এবং তামিম দুই ইনিংসেই অর্ধশত করে স্মরণীয় করে রাখলেন এই টেস্টকে৷ ম্যাচ সেরা সাকিব আল হাসান৷ দ্রষ্টব্য: ইএসপিএন ক্রিকইনফো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ছবিঘরটি তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
21 ছবি1 | 21
এই ক্রিকেটই তো শিখিয়েছিল, হারা-জেতা বড় কথা নয়, আসল কথা হলো খেলাটাকে ভালবাসতে হবে, আনন্দ দিতে হবে, আনন্দ পেতে হবে৷ ক্রিকেট মানে পাঁচদিনের দীর্ঘ টেস্ট ম্যাচ৷ একটা টিকিট পেলে মনে হতো বিশ্বজয় হয়ে গেছে৷ এমনো হয়েছে, একটা টিকিট জোগাড় করা গেছে৷ তাতে লাঞ্চ পর্যন্ত একজন, টি পর্যন্ত অন্য বন্ধু এবং তারপর শেষের অংশটুকু তৃতীয় বন্ধু দেখেছে৷ তখন এভাবে খেলা দেখা সম্ভব ছিল৷ তখন ক্রিকেট উপভোগ করার বিষয় ছিল৷ সেই ইডেনেই যখন ‘জিতেগা ভাই জিতেগা, ইন্ডিয়া জিতেগা' বলে ভয়ংকর রব উঠল, তখন বোঝা গেল, ভারতে ক্রিকেটের নন্দনকানন বদলে গেছে৷ ধ্রুপদী ক্রিকেটের জায়গায় জয়ের তীব্রতম আকাঙ্খাই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে৷
দেখতে দেখতে কত কীই তো বদলে গেল৷ পাঁচদিনের ক্রিকেটের বদলে ১৯৮৩ সালে প্রথমে এলো ষাট ওভার ও পরে পঞ্চাশ ওভারের একদিনের ক্রিকেট৷ তাকে পিছনে ফেলে দিয়ে ২০০৫ থেকে টি-২০৷ এখন তো শোনা যাচ্ছে ১০ বা ১৪ ওভারের খেলা হবে৷ ক্রিকেটের পুরো চেহারাটাই বদলে গিয়েছে৷ বদলে যাবে৷ বদলে গিয়েছে ক্রিকেটের চাল-চরিত্র-চেহারা৷ বদলে গিয়েছে ধারণা৷ ক্রিকেটের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে ঢুকে গেছে জাতীয়তাবাদ৷ এসে গেছে অপরিমিত অর্থ৷ ক্রিকেট মানে এখন শুধু বিনোদন৷ নিজের টিম ব্যাট করলে শুধু ছক্কা, চার, বিপক্ষের টিম ব্যাট করলে বলে বলে উইকেট৷ বিদায় নিয়েছে ক্রিকেটের ভদ্রতা, এটিকেট৷ ঢুকে গেছে স্লেজিং, আম্পায়ারের উপর চাপ দিয়ে আউট আদায় করা৷ স্ট্যাম্প ক্যামেরার কল্যাণে জানা যাচ্ছে, ক্রিকেটাররা কীভাবে আম্পায়ারকে নাম ধরে ডেকে বলছেন, বলটা তো সোজা উইকেটেই লাগত৷ খেলার মাঠে আবেগের বিস্ফোরণ হলে, জঙ্গি, লড়াকু মনোভাবের ছড়াছড়ি হলে টিআরপি বাড়ে৷ সেই সব ক্রিকেটারকে নিয়ে পাতার পর পাতা আলোচনা হয়৷ লর্ডসের মক্কায় নিজের জামা খুলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়৷ কিছুদিন আগে হরভজন সিং একটি টিভি শো-তে বলেছিলেন, তিনিও একই কাজ করতে গিয়েছিলেন৷ রাহুল দ্রাবিড় তাঁকে বাধা দেন৷ সৌরভের জামা খোলা ও ক্রিকেটের মক্কায় গিয়ে বিদ্রোহের ধ্বজা তুলে দেয়া নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের বুক এখনো গর্বে ফুলে ওঠে৷ কিন্তু সাবেককালের ক্রিকেটভক্ত থাকলে বলতেন, দিস ইস নট ক্রিকেট৷
তাই এখন ক্রিকেটে যা হচ্ছে, তার অনেক কিছুই ব্যাকরণের বাইরে৷ দীর্ঘদিন পরে ভারতীয় দল যখন পাকিস্তানে ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিল, তখন সাবেক ও প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে বলেছিলেন, ‘দিল জিতকে আনা’, মানে হৃদয় জিতে এস৷ অসাধারণ পারফরমেন্স করে ভারতীয় ক্রিকেটাররা হৃদয় জিতেই এসেছিলেন৷
কোনো সন্দেহ নেই, কুড়ি-বিশের ক্রিকেট এসে এমন একটা উত্তেজনা দিয়েছে, যার থেকে বেরনো কঠিন৷ এর বিনোদনমূল্য অসীম৷ বলে বলে মার অথবা আউট৷ যে মারে ক্রিকেট ব্যাকরণের ছোঁয়া নাই বা থাকল, কিন্তু হেলিকপ্টার শট, স্কুপ স্টেপ আউট করে ক্রস ব্যাটে তাড়ু শট, ব্যাটের কানায় লেগে বল উড়ে যায়, ছক্কা হয়, লোকের হাততালির ঝড় বইতে থাকে৷ বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিং ধোনির জনপ্রিয়তা বা অর্থ শাহরুখ, সালমানের থেকে একেবারেই কম নয়৷
ক্রিকেট বদলে গেছে৷ আমূল বদলেছে৷ সেই শট, ধৈর্য, ভদ্রতা, সৌজন্য, জেন্টেলম্যানদের গেম কিছুই নেই৷ পয়সা, জুয়া, বিনোদন, উত্তেজনাসর্বস্ব খেলাকে অতীত দিনের মানুষরা টাইম ক্যাপসুলে এসে দেখলে বলতেন, নো ওয়ে, দিস ইস নট ক্রিকেট৷
কিন্তু ক্রিকেটকে দোষ দিয়ে কী লাভ৷ সবই তো বদলে গেছে৷ অতীতের সেই সময় আর নেই৷ পরিবেশ, পরিস্থিতি, মূল্যবোধ, জীবন সংগ্রাম, চাওয়া-পাওয়া, যৌথ-পরিবার, আশা, আকাঙ্খা, লোভ, উচ্চাশা সবকিছুর বদল হয়েছে৷ সব বদলাবে, আর ক্রিকেট তার ব্যাকরণ আঁকড়ে থেকে ভদ্রলোকের নান্দনিক খেলা হয়ে থাকবে, তা কী হয়? তবে এতকিছুর পরেও যখন নিখুঁত আউটসুইংয়ে উইকেট তুলে নেন কোনো পেসার, কোনো নিখুঁত স্ট্রেট ড্রাইভ বা স্কোয়্যার ড্রাইভে ব্যাটের মাঝখানে বল লেগে বিদ্যুৎগতিতে বাউন্ডারি সীমানা ছাড়ায়, তখনো সেই মধুর শব্দ ওঠে৷ বোঝা যায়, সবকিছু হারায়নি, হারায় না৷