1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শুধু পদ্মা গর্ভেই ৫১ বছরে এক জেলার সমান জমি

২ অক্টোবর ২০১৮

গত ৫১ বছরে প্রায় ৬৬৩ বর্গ কিলোমিটারের বেশি জমি বিলীন হয়ে গেছে পদ্মার গর্ভে৷ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে৷

ছবি: Bdnews24.com

পদ্মার গর্ভে বিলীন হওয়া জমির পরিমাণ মেহেরপুর জেলার আয়তনের (প্রায় ৭১৬ বর্গ কিমি.) কাছাকাছি বা ঢাকা শহরের আয়তনের প্রায় আড়াই গুণ৷

নদী ভাঙন নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশের একটি সংস্থা, ‘সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস'৷ প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক মমিনুল হক সরকার ডয়চে ভেলেকে জানান, গত চার দশকে বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদীতে দেড় লাখ হেক্টর জমি হারিয়ে গেছে৷ অন্যদিকে ফেরত পাওয়া গেছে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমি৷ সেই হিসাবে বাংলাদেশ প্রধান তিনটি নদীতে একল  হেক্টর জমি হারিয়েছে৷

বাংলাদেশে প্রবাদ আছে – নদীর একদিক ভাঙে, আরেকদিক গড়ে৷ কিন্তু নদীগর্ভে যে পরিমাণ জমি বিলিন হচ্ছে, চর জাগছে তার চেয়ে অনেক কম৷ আবার সেই চরে খুব একটা জনবসতিও গড়ে উঠতে পারছে না৷ ফলে মানুষ যেমন আবাসস্থল হারাচ্ছেন, পাশাপাশি হারিয়ে ফেলছেন সর্বস্ব৷ তাহলে কি নদীর ভাঙন ঠেকানোর কোনো পথ নেই? সরকারই বা এ ব্যাপারে কী করছে? আর একটু বেশি উদ্যোগ নিলে কি ভাঙন ঠেকানো সম্ভব?

ড. নাসরিন আহমেদ

This browser does not support the audio element.

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘চেষ্টা করলেও ভাঙন ঠেকানো সম্ভব না৷ এখন যে এখন এলাকা ভাঙছে, ২০-২৫ বছর পর ওই এলাকাতেই চর জেগে উঠছে৷ সেটার ব্যবস্থাপনা জরুরি৷ আসল কথা হলো – এখন যে ভাঙন, সেটা যে নতুন করে শুরু হয়েছে এমন নয়৷ এটা আগেও ছিল৷ কিন্তু আমাদের জনবসতি আগে এত ঘন ছিল না৷ ফলে কিছু জমি নদীগর্ভে গেলেও খুব একটা প্রভাব পড়ত না৷ কিন্তু এখন এক ইঞ্চি জমিও নেই যেখানে মানুষের বসতি নেই৷ এখন যেখানে ভাঙছে সেখানেই দেখা যাচ্ছে বহু মানুষ গৃহ হারাচ্ছেন, হারাচ্ছেন তার সর্বস্ব৷ ফলে প্রচারণাটা বেশি হচ্ছে৷ বালুর বস্তা বা ব্লক দিয়ে কত শতাংশ ভাঙন আটকানো যাচ্ছে – প্রশ্ন করেন তিনি৷

পদ্মার আয়তন, আকৃতি বদল আর স্থান পরিবর্তন নিয়ে নাসার প্রতিবেদনটি অনলাইন প্রচারমাধ্যম ‘আর্থ অবজারভেটরি'তে প্রকাশ করা হয়৷ সেখানে বলা হয়েছে, ১৯৮৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত স্যাটেলাইটে ধারণকৃত ১৪টি ছবি নিরীক্ষা তারা দেখেছেন, বিগত ৩০ বছর ধরে পদ্মার আয়তন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থান পরিবর্তন হচ্ছে বিভিন্ন আকৃতিতে৷ আর এ কারণেই দেখা দেয় ভূমিক্ষয়৷ ১৪টি ছবিই নেওয়া হয়েছে প্রত্যেক বছরের শুষ্ক মৌসুম জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে৷ স্যাটেলাটের ব্যবহারকৃত ল্যান্ডস্যাট ৫ ছিল থিমেটিক ম্যাপারের, ল্যান্ডস্যাট ৭ ছিল বৃদ্ধি পাওয়া থিমেটিক ম্যাপারের এবং ল্যান্ডস্যাট ৮ ছিল প্রয়োগগত ভূমির ছবির জন্য৷ লক্ষাধিক কৃষিজীবী মানুষকে নদীটির ১৩০ কিলোমিটার উপকূলের পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে চলতে হয়৷

১৯৬৭ সাল থেকে আজ অবধি ৬৬ হাজার হেক্টরের বেশি ভূমি পদ্মায় হারিয়ে আয়তন বিচারে যা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় শহর শিকাগোর সমান৷ ভয়াবহ মাত্রার এ ভূমিক্ষয়ের অন্যতম কারণ হচ্ছে, উত্তাল নদী প্রবাহের মধ্যে উপকূল সুরা কর্মসূচিতে খুব কম এলাকা থাকা এবং নদীর তীরে বিশাল বালুচর থাকা৷ দীর্ঘদিন যাবত পদ্মা নদীর প্রশস্ততা, গভীরতা, আকৃতি নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞানীরা নাসার স্যাটেলাইটে ধারণকৃত ছবিকে ব্যাখ্যা করে বলেন, ১৯৮৮ সাল থেকে পদ্মার আকৃতি ও প্রশস্ততার পরিবর্তন হচ্ছে ব্যাপকভাবে৷ এমনকি বিজ্ঞানীদের কাছে নদীটির আঁকা-বাঁকা গতিপথসহ ভূ-তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি উঠে এসেছে৷

মমিনুল হক সরকার

This browser does not support the audio element.

মমিনুল হক সরকার বলেন, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে নদীর ভাঙন নিয়ে কাজ করি৷ এর মধ্যে ১৯৬৭ সাল থেকে স্যাটেলাইটের ব্যবহার শুরু হয়েছে৷ এই ৫১ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি, শুধু যমুনা নদীতে আমরা হারিয়েছি, দেড় হাজার বর্গ কিলোমিটার জমি৷ যেটা একটা ছোট জেলার সমান৷ আবার মেঘনা থেকে আমরা ফিরে পেয়েছি প্রায় এক হাজার ৭০০ স্কয়ার কিলোমিটার জমি৷ পদ্মা-মেঘনা ঘমুনা মিলিয়ে আমরা এই সময়ের মধ্যে এক হাজার ২০০ স্কয়ার কিলোমিটার জমি নদীগর্ভে হারিয়েছে৷ যা পেয়েছি তা বাদ দিয়েই হিসাবটা এমন৷''

তিনি বলেন, ‘‘কুড়িগ্রাম থেকে যমুনা ঢোকার পর থেকেই  সেখানকার জেলাগুলোয় ভাঙন হচ্ছে৷ গাইবান্ধা, জামালপুর ও পাশের জেলাগুলো এর মধ্যে রয়েছে৷ কয়েক দশক ধরেই সিরাজগঞ্জ সবচেয়ে বেশি ভাঙন প্রবণ এলাকা৷ আবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের যে এলাকা থেকে গঙ্গা প্রবেশ করেছে, যাকে আমরা গবেষকরা আরিচা পর্যন্ত গঙ্গা বলেই সম্বোধন করছি, সেটিও সেখানে একসময় প্রচুর ভাঙন ঘটালেও এখন প্রবণতা কিছুটা কম৷ তবে আশির দশকে যে ভাঙন ছিল এখন সেটা অনেক কম৷''

জনাব সরকার আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশে সব মিলিয়ে প্রতিবছর প্রায় ছয় হাজার হেক্টর জমি নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে৷ স্যাটেলাইটের ইমেজ পরীক্ষা করে আমরা নদীগুলোর তখনকার অবস্থা আর এখনকার অবস্থা বিচার করে দেখতে পেয়েছি যে, গত চার দশকে বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদীতে দেড় লাখ হেক্টর জমি হারিয়ে গেছে৷ আর ফেরত পাওয়া গেছে প্রায় পঞ্চাশ হাজার হেক্টর জমি৷ এখানেও একটি পার্থক্য রয়েছে যে, নদীতে যেসব জমি হারিয়ে যাচ্ছে, সেগুলো কিন্তু উর্বর জমি, রাস্তা ঘাট, স্কুল কলেজ বাড়িঘর রয়েছে৷ কিন্তু যে জমি উঠছে, সেটাও ব্যবহার উপযোগী হতে আরো অনেক বছর দরকার হবে৷'' তাঁর মতে, ছোটছোট নদীগুলোর ভাঙন ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ কিছুটা সক্ষম হয়েছে৷ তবে প্রাকৃতিক কারণে যে ভাঙন হচ্ছে সেটা ঠেকানোর জন্য আমাদের এখন সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে হবে৷ সরকারকেও বরাদ্দ বাড়াতে হবে৷

মাহাফুজুর রহমান

This browser does not support the audio element.

সম্প্রতি শরীয়তপুরের নড়িয়ায় যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে, তাতে বহু মানুষ বাড়ি ঘর হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন৷ সরকারের তরফ থেকে এই নদী ভাঙন ঠেকাতে কী পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে? বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মাহাফুজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে নদী ভাঙন এত বেশি হয় যে, অর্থ ও আমাদের সামর্থ্য বিবেচনায় কোনটা আগে, কোনটা পরে, সেরকম করে কাজ করতে হচ্ছে৷ পদ্মা, মেঘনা, যমুনার সব তীর রক্ষা করা বিশাল কাজ, এটা চাইলেও সম্ভব না৷ এ কারণে কোনো কোনো এলাকায় আগে কাজ হচ্ছে, কোথাও পরে৷ আমার চেষ্টা করছি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, শহরগুলো আগে রক্ষা করার৷ সবগুলো নদী যদি একসঙ্গে ভাঙতে শুরু করে তাহলে আমরা চাইলেও সব ঠেকাতে পারব না৷''

মাহফুজুর রহমান রহমান বলেন, ‘‘শরীয়তপুরের নড়িয়ায় যে ঘটনা ঘটেছে সেটা একটু ভিন্ন৷ ৫-৭ কিলোমিটার এলাকা একসঙ্গে ভাঙতে শুরু করেছে৷ ফলে সেখানকার পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে৷ তারপরও আমরা চেষ্টা করছি৷ আমি যখন আপনার সঙ্গে বলছি, আমি নিজেই নড়িয়ার ভাঙন কবলিত এলাকায় অবস্থান করছি৷''

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় পদ্মার ভাঙনে ব্যাপক জানমালের ক্ষয়ক্ষতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ একইসঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের নদী ভাঙনের কবলে পড়ে ব্যাপক ক্ষতির ঘটনায়ও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ পাশাপাশি এখন থেকে ভাঙনকবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে সহায়তা নিয়ে দাঁড়াতে মন্ত্রী, স্থানীয় এমপিসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন৷ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর ভাঙন রোধে ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করেছে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটি৷ খুব তাড়াতাড়ি সেখানে কাজ শুরু হচ্ছে বলে জানা গেছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ