ক্যানসারের চিকিৎসা, বিশেষ করে কেমোথেরাপি অত্যন্ত কষ্টকর এক প্রক্রিয়া৷ টিউমারের কোষ শনাক্ত করাও কঠিন কাজ৷ নতুন এক পদ্ধতির আওতায় শুধু রক্ত পরীক্ষা ও সুনির্দিষ্ট ওষুধের মাধ্যমেই চিকিৎসার উন্নতির চেষ্টা চলছে৷
বিজ্ঞাপন
উটে বুক্সেল ক্যানসারের রোগী৷ এক বিশেষ রক্ত পরীক্ষার কল্যাণে তাঁর মতো ক্যানসারের রোগীরা টিউমার থেকে তন্তু বার করার মতো অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রক্রিয়া এড়িয়ে যেতে পারেন৷ তাছাড়া তাঁর ক্ষেত্রে প্রচলিত বায়োপ্সি কাজ করতো না৷ কারণ সেই ক্ষুদ্র বিন্দুগুলি ফুসফুসের এমন কঠিন অংশে থাকে, যে তার নাগাল পাওয়া কঠিন৷
লিকুইড বায়োপ্সি পদ্ধতির কল্যাণে তিনি এখন আরও সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার আশা করছেন৷ কারণ এখনো পর্যন্ত কেমোথেরাপি তাঁর গোটা শরীরকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে৷ উটে বুক্সেল বলেন, ‘‘শুরুর দিকে আমার সত্যি খুব কষ্ট হতো৷ কেমোথেরাপি আমাকে পুরোপুরি কাবু করে ফেলেছে, আমার রক্ত নষ্ট করে দিয়েছে৷''
যে হাসপাতালে উটে বুক্সেল-এর চিকিৎসা চলছে, সেটির মালিক আসলে বিশেষজ্ঞদের এক নেটওয়ার্ক৷ তাঁরা রোগীদের রক্তের নমুনার মধ্যে টিউমারের ডিএনএ শনাক্ত করার চেষ্টা করেন৷ এভাবে তাঁরা ক্যানসারের সঠিক গোত্র জানতে পারেন৷ এর মধ্যে কয়েকটির চিকিৎসার জন্য সুনির্দিষ্ট ওষুধ রয়েছে৷ উটে বুক্সেল-এর ক্ষেত্রেও এমন এক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে৷ চিকিৎসক হিসেবে ড. উলরিশ মালক্নেশ্ট বলেন, ‘‘কোনো ট্যাবলেট কাজ করবে কিনা, তা নিয়ে আমাদের সত্যি ভাবনাচিন্তা করতে হবে৷ তবে তার আগে স্বাস্থ্য বিমা কোম্পানির কাছে অনুমোদন নিতে হবে৷''
ক্যানসারের যে ধরনের চিকিৎসা সম্ভব
ক্যানসার চিকিৎসার নানা উপায় রয়েছে৷ রোগের ধরন, মাত্রা এবং নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো অবলম্বন করা হয়৷ চলুন জেনে নেই ক্যানসার চিকিৎসার সাত উপায় সম্পর্কে৷
ছবি: Imago/photothek
সার্জারি
একজন রোগীর দেহ থেকে ক্যানসারের জীবাণু বের করে ফেলতে অনেক সময় সার্জারি করা হয়৷ এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা ছোট এবং পাতলা ছুরি ব্যবহার করে চামড়া, মাংস, এমনকি কখনো কখনো হাড় কেটেও রোগীর ক্যানসার আক্রান্ত অংশ বের করে আনেন৷ এই অপারেশনের সময় ব্যথা অনুভূত না হলেও পরবর্তীতে চামড়ার ক্ষত শুকাতে বেশ সময় লাগে এবং সেই সময় তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Philbey
রেডিয়েশন থেরাপি
রেডিয়েশন থেরাপি বা রেডিওথেরাপিতে উচ্চমাত্রার রেডিয়েশন ব্যবহার করে ক্যানসার সেল ধ্বংস করা হয় এবং টিউমার ছোট করে ফেলা হয়৷ বিষয়টি অনেকটা এক্স-রে’র মতো৷ এক্সরে-তে কম মাত্রার রেডিয়েশন ব্যবহার করা হয়৷ ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে মাত্রাটা বেশি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কেমোথেরাপি
কেমোথিরাপির মাধ্যমে আসলে ঔষধ ব্যবহার করে ক্যানসার সেল ধ্বংস করা হয়৷ এই প্রক্রিয়ায় ক্যানসার সেলের বৃদ্ধি থামানো কিংবা কমানো হয়৷ অনেক সময় শরীরের ভেতরে ক্যানসার টিউমারের আকার ছোট করে ব্যথা কমাতেও কেমোথেরাপি ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah
ইমিউনথেরাপি
ইমিউনথেরাপির মাধ্যমে আসলে একজন ক্যানসার রোগীর শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেষ্টা করা হয়৷ এটি একটি বায়োলজিক্যাল থেরাপি৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Thompson
টার্গেটেড থেরাপি
টার্গেটেড থেরাপির ক্ষেত্রে ক্যানসার সেলের বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট কারণ বের করে তা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ঔষধ ব্যবহার করা হয়৷ এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা একজন রোগীকে নিয়ে যত গবেষণা করেন, ততই নির্ভুলভাবে রোগ প্রতিরোধের উপায় বের করতে পারেন৷
ছবি: Rhombos Verlag
হরমোনথেরাপি
যেসব ক্যানসার হরমোন ব্যবহার করে শরীরের মধ্যে বৃদ্ধি ঘটায়, সেগুলো প্রতিরোধে হরমোনথেরাপি ব্যবহার করা হয়৷ এই থেরাপির মাধ্যমে রোগ নিরাময় করা হলে তা আবার ফিরে আসার ঝুঁকি কম থাকে৷
ছবি: Colourbox
স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট
উচ্চমাত্রার কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশনথেরাপি ব্যবহারের ফলে যেসব ক্যানসার রোগীর শরীরের রক্ত উৎপাদনকারী স্টেমসেল ধ্বংস হয়ে যায়, তাদের চিকিৎসায় স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট থেরাপি ব্যবহার করা হয়৷ এই প্রক্রিয়ায় রোগীর শিরায় সিরিঞ্জের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবান স্টেমসেল প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়৷ এরপর সেগুলো বোন মেরো০তে পৌঁছে কাজ শুরু করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ Waltraud Grubitzsch
প্রিসিশন মেডিসিন
এই প্রক্রিয়ায় একজন ক্যানসার রোগীর ‘জেনেটিক্যাল’ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে চিকিৎসকরা তাঁর জন্য উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন৷ কেউ কেউ এটাকে ‘পার্সোনালাইজড মেডিসিন’-ও বলেন৷ তথ্যসূত্র: ক্যানসার ডটগভ
ছবি: Colourbox/Pressmaster
8 ছবি1 | 8
একমাত্র ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের ক্ষেত্রেই এই রোগের ছাড়পত্র রয়েছে৷ ফুসফুসের ক্যানসারের ক্ষেত্রে এই ওষুধ দেওয়ার অনুমতি নেই, উটে বুক্সেল যে রোগে ভুগছেন৷ ড. মালক্নেশ্ট বলেন, ‘‘কোনো এক সময়ে এমন এক পরিস্থিতি আসবে, যখন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ প্রায় সব টিউমারের চিকিৎসা করতে পারবেন৷ স্তন ক্যানসার, ডিম্বাশয়ের ক্যানসার বা যাই হোক না কেন৷ আরও সূক্ষ্মভাবে টিউমারের কোষ শনাক্ত করা জরুরি৷ যখনই সম্ভব কেমোথেরাপির বদলে ওষুধ প্রয়োগ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে৷ ফলে রোগীদেরই কল্যাণ হবে, তাদের আর বেশি চুল পড়বে না৷ এমন অনেক সমস্যা দূর হয়ে যাবে৷ টিউমারের কোষের সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার কারণেই এমনটা সম্ভব হতে পারে৷ তখন রোগীর জীবন অনেক সুখকর হয়ে উঠবে৷''
উটে বুক্সেল পুরোপুরি কেমোথেরাপি ছাড়াই চিকিৎসা চালিয়ে যেতে চান৷ যদিও তাঁকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে প্রায় পাঁচ বছর ধরে তাঁর কেমোথেরাপি চলছে৷ উটে বলেন, ‘‘পরিবার, আমার স্বামী, আমার মেয়ে, নাতিনাতনিরা আমার পাশে রয়েছে৷ হয়ত সে কারণেই এমনটা হচ্ছে৷ যখনই অবসাদ এসেছে, তখনই তারা আমাকে টেনে বার করেছে৷''
অদূর ভবিষ্যতেই তিনি নতুন ওষুধের ভিত্তিতে চিকিৎসা শুরু করার আশা করছেন৷