বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে ফেরত পাঠানো শুরু করার কথা ছিল মঙ্গলবার থেকে৷ কিন্তু প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়ায় এই প্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের শরণার্থী সংক্রান্ত ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনার আবুল কালাম বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং ডিপিএ-কে বলেন, ‘‘এখনো অনেক কাজ বাকি৷ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে আরও সময় লাগবে৷’’ ঠিক কবে নাগাদ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো শুরু হবে, সে ব্যাপারেও তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানাতে পারেননি আবুল কালাম৷ তিনি বলেন, ‘‘যাদের ফেরত পাঠানো হবে, তাদের তালিকা তৈরি হয়নি৷ ভেরিফিকেশন ও ট্রানজিট ক্যাম্প স্থাপনের কাজও বাকি রয়েছে৷’’
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে গত ১৬ জানুয়ারি দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, তাতে দু'টি রিসেপশন কেন্দ্র থেকে রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করার কথা মিয়ানমারের৷ মঙ্গলবার থেকে যা শুরু হয়ে দুই বছর ধরে চলার কথা৷ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের গ্রহণ করে মিয়ানমারের রাখাইনে সীমান্তের কাছে একটি অস্থায়ী শিবিরে রাখার কথা রয়েছে৷
প্রত্যাবাসনের জন্য নতুন কোনো তারিখ ঠিক করা হয়নি বলে জানিয়েছেন কালাম৷ তিনি জানান, ‘‘এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া৷ এর সাথে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার ব্যাপারটি জড়িয়ে আছে৷ তাই এতে আরও কিছুটা সময় লাগবে৷’’
মিয়ানমারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং অভিবাসন দপ্তর অবশ্য স্থানীয় একটি পত্রিকাকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার থেকে রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করার সব প্রস্তুতি তাদের রয়েছে৷
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, মিয়ানমারের মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, মিয়ানমারে তাদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে এবং তারা স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে চাইলেই কেবল তাদের ফেরত পাঠানো উচিত৷
রবিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ঢাকায় কূটনীতিকদের সাথে এক বৈঠকে জানান, বাংলাদেশ কখনোই রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরে যেতে বল প্রয়োগ করবে না৷
গত ২৫শে আগস্ট রাখাইনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ৩০টি চৌকিতে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির হামলার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নির্বিচারে রোহিঙ্গা নিধন শুরু করে৷ নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে৷
এপিবি/এসিবি (এপি, এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ)
২৮ নভেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...
রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংসতার চিত্র
মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে৷ রয়টার্সের আলোকচিত্রীর ছবিতে সেইসব নৃশংসতার ছবি ফুটে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
একবছরের শিশু
মনকে নাড়া দেয়া ব্যান্ডেজে মোড়ানো তুলতুলে ছোট্ট এই দু’টি পা শহিদের৷ বয়স মাত্র এক বছর৷ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে দাদি তাহেরা যখন পালাচ্ছিলেন, তখন তাঁর কোল থেকে পড়ে যায় ছোট্ট শহিদ৷ ছবিটি কক্সবাজারে রেডক্রসের এক হাসপাতালে ২৮ অক্টোবর তোলা৷
ছবি: Reuters/H. McKay
কালাবারো, ৫০
রাখাইনের মংদুতে তাঁদের গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয় সেনা সদস্যরা৷ এতে স্বামী, মেয়ে ও এক ছেলেকে হারান কালাবারো৷ তাঁর ডান পায়ে আঘাত করা হয়৷ যেখানে পড়ে গিয়েছিলেন সেখানেই কয়েক ঘণ্টা মারা যাওয়ার ভান করে ছিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
সেতারা বেগম, ১২
নয় ভাই-বোনের মধ্যে একজন সে৷ সেনারা যখন তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, তখন বাকি আটজন বের হয়ে যেতে পারলেও সে আগুনের মধ্যে আটকা পড়ে গিয়েছিল৷ পরে তাকে উদ্ধার করা হয়৷ তবে পা পুড়ে যায়৷ এই অবস্থায় বাংলাদেশে পৌঁছেছে সে৷ বাংলাদেশেই তার চিকিৎসা করা হয়৷ এখন তার দুই পা থাকলেও নেই কোনো আঙুল৷
ছবি: Reuters/J. Silva
নূর কামাল, ১৭
নিজের ঘরে লুকিয়ে ছিল সে৷ সেখান থেকে সৈন্যরা তাকে খুঁজে বের করে প্রথমে রাইফেলের বাট, পরে ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করে৷ ছবিতে সেটিই দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
আনোয়ারা বেগম, ৩৬
ঘরে আগুনের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুম থেকে উঠে পালাতে গিয়েছিলেন তিনি৷ তবে এর মধ্যেই পুড়ে যাওয়া ছাদ তাঁর মাথায় ভেঙে পড়ে৷ ফলে শরীরে থাকা নাইলনের কাপড় গলে হাত পুড়িয়ে দেয়৷ ‘‘আমি মনে করেছিলাম, মরে যাব৷ তবে আমার সন্তানদের জন্য বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি,’’ রয়টার্সকে বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মমতাজ বেগম, ৩০
সেনারা তাঁর বাড়িতে ঢুকে মূল্যবান জিনিসপত্র দিতে বলেছিল৷ তখন মমতাজ তাঁদের দারিদ্র্যের কথা জানালে সৈন্যরা বলেছিল, ‘‘যদি তোমার কোনো অর্থ না থাকে, তাহলে আমরা তোমাকে হত্যা করব৷’’ এই বলে, সৈন্যরা তাঁকে ঘরে বন্দি করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল৷ কোনোরকমে সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে বের হয়ে দেখেন তাঁর তিন ছেলে মৃত, আর মেয়েকে প্রহার করা হয়েছে, তার রক্ত ঝরছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
ইমাম হোসেন, ৪২
মাদ্রাসায় পড়িয়ে ফেরার পথে তিন ব্যক্তি ছুরি নিয়ে তাঁর উপর হামলা করেছিল৷ পরের দিনই তিনি তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গ্রামের অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন৷ এরপর তিনিও কক্সবাজারে পৌঁছান৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মোহাম্মদ জাবাইর, ২১
গ্রামের বাড়িতে এক বিস্ফোরণে তার শরীরের এই অবস্থা৷ ‘‘আমি কয়েক সপ্তাহ অন্ধ ছিলাম৷ কক্সবাজারের এক সরকারি হাসপাতালে ২৩ দিন চিকিৎসাধীন ছিলাম,’’ বলেছে সে৷