বিশ্বের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বইমেলা৷ বইমেলা ছাড়াও, বিশ্বের স্বনামধন্য লেখকরা তিন দিন ধরে আলোচনা চালিয়ে ‘‘রাজনীতিকদের জন্য উপহার’’ নামের একটি ইস্তাহার পেশ করবেন৷ উদ্যোগটির নাম: ‘‘ফ্রাংকফুর্ট আন্ডারকভার’’৷
বিজ্ঞাপন
ফ্রাংকফুর্ট বইমেলার পরিচালক ইয়ুর্গেন বোস-এর মতে এই উদ্যোগ লেখকদের ‘‘নিজেদের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতার'' প্রতিফলন৷ এনএসএ কেলেঙ্কারিই হোক, আর আন্তঃ-অতলান্তিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, কিংবা প্রকাশক এবং অ্যামাজন অনলাইন সংস্থার মধ্যে বিরোধই হোক – লেখকরা সেই জগতের অঙ্গ এবং সেই জগত সম্পর্কে তাদের মতামত আছে৷ ‘‘এই তিনদিন যাবার পর আমরা একটি গভীরভাবে রাজনৈতিক বিবৃতি আশা করতে পারি,'' বলেছেন বোস৷
নিজেদের পারিশ্রমিক কিংবা রয়াল্টি নিয়ে লেখকরা মাথা ঘামাবেন না, বলেই বোস-এর ধারণা: ‘‘আমি সামাজিক ও রাজনৈতিক সংশ্লেষ যুক্ত (একটি বিবৃতি) আশা করছি৷'' লেখকদের আলাপ-আলোচনা চলবে নিভৃতে, পাঠক জনতা এবং প্রকাশক মহল থেকে অনেক দূরে৷ কাজেই এই আলাপ-আলোচনার এক উদ্যোক্তা, ডেনমার্কের লেখিকা ইয়ানে টেলার আশা করছেন যে, লেখকরা মুক্তভাবে কথা বলবেন এবং ‘ফিল্টার ছাড়াই' নানা ধরনের নতুন আইডিয়া দেবেন৷ নয়তো দুনিয়াটা রাজনৈতিক বিচারে ‘‘আটকে গেছে'', বলে তাঁর ধারণা৷
সর্বাধুনিক ফ্রাংকফুর্ট বইমেলাও চলবে যথারীতি পাঁচদিন ধরে – ৮ থেকে ১২ই অক্টোবর পর্যন্ত৷ উদ্বোধন অনুষ্ঠান মঙ্গলবার ৭ই অক্টোবর৷ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লেখকদের মধ্যে থাকবেন ব্রাজিলের পাওলো কোয়েলহো, নোবেল পুরস্কার বিজয়িনী হ্যার্টা ম্যুলার এবং ব্রিটেনের জনপ্রিয় লেখক কেন ফলেট, যাঁর নতুন নভেল, ‘‘এজ অফ ইটার্নিটি'', এখন সারা বিশ্বে বেস্টসেলার লিস্টের শীর্ষে৷
ফ্রাংকফুর্টের ৬৫তম বইমেলা
আয়োজক, শত শত লেখক, প্রকাশক এবং যাদের বইয়ের সাথে কোনো না কোনোভাবে সম্পর্ক রয়েছে, তারা সকলে মিলিত হয়েছেন এই বিশাল বইয়ের নন্দনকাননে৷
ছবি: DW/J. Kürten
বই পড়ার নেশায় ডুবে আছে ফ্রাংকফুর্ট
কয়েকদিন থেকে আবারো বিশ্বের বৃহত্তম বইমেলার শহর ফ্রাংকফুর্ট বিশাল মঞ্চে পরিণত হয়েছে৷ আগামী রবিবার পর্যন্ত মেলার হলগুলোতে বইমেলার আয়োজক, উদ্যোক্তা আর বইপ্রেমীদের ভিড়ের বন্যা বইছে৷ এমনকি মূল মেলার বাইরে এবং হলের মাঝামাঝি জায়গাগুলোতে কথাবার্তা হচ্ছে আয়োজক এবং পাঠকদের৷ বইয়ের ব্যবসার দরকারি কথাবার্তা চলছে হলের ভেতর আর বাইরে আয়েশ করে বইপ্রেমীরা পছন্দের বই পড়ছেন৷
ছবি: DW/J. Kürten
সারা বিশ্ব এখন ফ্রাংকফুর্টের অতিথি
আয়োজক, শত শত লেখক, প্রকাশক এবং যাদের বইয়ের সাথে কোনো না কোনোভাবে সম্পর্ক রয়েছে, তারা সকলে মিলিত হয়েছেন এই বিশাল বইয়ের নন্দনকাননে৷ এখানে যেমন এসেছেন ছোট প্রকাশক, তেমনি আছেন ইউরোপ, অ্যামেরিকার নামকরা প্রকাশকরাও৷
ছবি: DW/J. Kürten
দূরের বিশ্বকে কাছে নিয়ে আসা
বইমেলার এবারের পার্টনার কান্ট্রি ব্রাজিলের প্যাভিলিয়নে দর্শকদের ভিড় দেখা গেছে৷ ব্রাজিলের রয়েছে ঐতিহ্যবাহী সাহিত্যভাণ্ডার৷ বিশ্ববাসীর সামনে সেটা তুলে ধরতে সে দেশ থেকে এসেছেন ৭০ জন লেখক৷
ছবি: DW/J. Kürten
ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার মাঝামাঝি
ব্রাজিলের প্যাভিলিয়নটি তৈরি করেছেন ব্রাজিলীয় তরুণ ডিজাইনার এবং স্থপতিরা, যা আগুনে পোড়েনা এমন ধরনের বিশেষ শক্ত কাগজ দিয়ে৷ এই কাগজ ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে বোঝানো হয়েছে, যে বই কাগজেই ছাপা হয়৷ আবার অন্যদিকে আধুনিক টিভি স্ক্রিনে বইয়ের ভবিষ্যতকেও আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে৷
ছবি: DW/J. Kürten
সারা বিশ্ব থেকে আসা অতিথি
বইমেলার বিভিন্ন হলে সারা বিশ্ব থেকে আসা বই প্রকাশকরা তাদের বইয়ের ভাণ্ডার সাজিয়ে বসেছেন৷ তবে উত্তর অ্যামেরিকা আর ইউরোপের স্টলের সংখ্যাই বেশি৷ আফ্রিকা, দক্ষিণ অ্যামেরিকা এবং এশিয়া থেকেও এসেছেন অনেক প্রকাশক তাদের বই নিয়ে৷ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অন্যান্য সমস্যার মধ্যে বই প্রকাশনাও একটি৷ তবে এখানে কুয়েত থেকে আসা একটি স্টল রয়েছে৷
ছবি: DW/J. Kürten
রান্না, খাওয়া-দাওয়া এবং উপভোগ
একটি হলে রান্নার বড় বড় হাঁড়ি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে৷ বইমেলায় সবসময়ই রান্না করা হয়৷ রান্নার রেসিপি ও পানীয় বইয়ের স্টলগুলো সবসময়ই বেশ জনপ্রিয়৷ এখানে খাওয়া-দাওয়ার বইয়ের প্রকাশকরা শুধু বইই উপস্থাপন করেননা, সে সব রান্না করে দর্শকদের চেখে দেখারও সুযোগ দেন৷ এসব যাঁরা রান্না করেন তাঁরা সাধারণ কেউ নন, একেরারে তারকা রাঁধুনি৷
ছবি: DW/J. Kürten
ছবির জগত
ভবিষ্যতে কাগজে ছাপানো কমিক্স-এর বই নিয়ে কাউকে ভাবতে হবেনা৷ আর তাই দেখাচ্ছেন বেশ কিছু কমিক্স বইয়ের প্রকাশক৷ আর তা জাপানি মাংগাস-ই হোক আর ক্লাসিক ওয়াল্ট ডিজনির বইই হোক৷ বাচ্চাদের এসব বইয়ের অনেক চাহিদা ৷ শুধু বাচ্চারা নয়, এসব বই দেখে কিন্তু বড়রাও মুগ্ধ৷ ফ্রাংকফুর্ট বইমেলায় বাচ্চাদের কমিক্সের বই এবার বেশ আলোড়ন তুলেছে৷
ছবি: DW/J. Kürten
ঐতিহ্য ও আধুনিক
আজকের ডিজিটাল যুগে ই-বুকের উন্নতি যেমন হচ্ছে তেমনি বইমেলায় ঐতিহ্যের ট্রেন্ডও লক্ষ্যনীয়৷ তবে বইমেলায় বিভিন্ন আলোচনা ও বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বোঝা গেছে বই পড়ার পুরনো মাধ্যমের গুরুত্ব কতটা৷
ছবি: DW/J. Kürten
8 ছবি1 | 8
ফ্রাংকফুর্ট বইমেলায় আরেকটি পরিসংখ্যান এ বছর বদলে যাচ্ছে: সাধারণত এই বইমেলায় জার্মান প্রকাশক এবং আন্তর্জাতিক প্রকাশকদের অনুপাত মোটামুটি একই থাকে: এ বছর কিন্তু সেই ভাগ হল ৩৫-৬৫, অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশ প্রদর্শকই অ-জার্মান৷ এই অ-জার্মান প্রদর্শকরা আসছেন প্রায় ১০০টি দেশ থেকে, যাদের মধ্যে সিরিয়া, ইউক্রেন ও আফগানিস্তানের প্রকাশকরাও আছেন৷ এ বছরের ‘গেস্ট অফ অনার' বা সহযোগী দেশ ফিনল্যান্ড৷
গতবছরের তুলনায় এশিয়া থেকে আগত প্রদর্শকদের সংখ্যা বেড়েছে পাঁচ শতাংশ৷ বিশ্বের অন্যান্য অংশের প্রকাশকদেরও ইন্দোনেশিয়ার মতো সুবৃহৎ, তরুণ, শিক্ষায় আগ্রহী পাঠক জনতাদের দিকে নজর – আন্তঃ-এশিয়া বইবাণিজ্যও যার মধ্যে পড়ে এবং যা থেকে নতুন করে ফ্রাংকফুর্ট বইমেলার বিশ্বায়িত বৈশিষ্ট্য প্রমাণ হয়৷
পঞ্চদশ শতাব্দীতে নাকি যে বইমেলার সূচনা, তা আজও কাহিনি ও কথকতার প্রথাগত তথা ভবিষ্যৎ, সাইফাই এবং হাইটেক সংস্করণ নিয়ে ব্যস্ত৷ ই-বুক এবং সেল্ফ-পাবলিশিং-ও ফ্রাংকফুর্টে অবহেলিত হবে না৷ খোদ হ্যারি পটারের স্রষ্টা জেকে রোলিং যাতে সংশ্লিষ্ট, সেই হ্যাচেট পাবলিশিং কনগ্লোমারেটের সঙ্গে অ্যামাজনের ই-বুক প্রাইসিং নিয়ে বিরোধ তো ফ্রন্ট লাইন নিউজ৷