বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গণমাধ্যমের ভুমিকা অনস্বীকার্য– এ বাস্তবতা তুলে ধরে শুরু হলো দশম ডয়চে ভেলে গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম৷ গণমাধ্যমের প্রযুক্তিনির্ভরতাকে ব্যবসাসফল ও কল্যাণমুখী করার তাগিদ দিলেন উদ্বোধনী পর্বের বক্তারা৷
ছবি: DW/K. Danetzki
বিজ্ঞাপন
গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামের এবারের স্লোগান অভিন্নতা ও বৈচিত্র্য৷ প্রতিবারের মতো গণমাধ্যম, অ্যাকাডেমিয়া, রাজনীতি, এবং উন্নয়ন সহযোগীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই কনফারেন্স৷ ১৩০টি দেশের ৬৫০ জন সাংবাদিক ৭৫০টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২,০০০ প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন এবারের কনফারেন্সে৷ এবারের কনফারেন্সে গুরুত্ব পাচ্ছে ব্রেক্সিট, ট্রাম্পের বিজয় ও জেনোফোবিয়াসহ জাতীয়বাদের ধারণা, ভুয়া সংবাদের প্রভাব এবং সাংবাদিকতায় প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়গুলো৷
উদ্বোধনী পর্বে বক্তারা বাক স্বাধীনতা, বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে গণমাধ্যমের ভূমিকা, গণমাধ্যমে ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশের প্রয়োজনীয়তা ও এর ক্ষতিকর দিক নিয়ে কথা বলেন৷ তাঁরা বলেন, গণমাধ্যম এখন নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি৷ একেই দিন দিন বাক মাধ্যমের ওপর আঘাত বাড়ছে, তারওপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিকাশের কারণে সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা ঝুঁকিতে পড়ছে৷
ডয়চে ভেলের মহাপরিচালক পেটার লিমবুর্গ স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘‘রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম শুধু মানবাধিকার ইস্যুতেই পক্ষ নিতে পারে, অন্য কোনো বিষয়ে নয়৷'' যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ সব রাষ্ট্রপ্রধানের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘গণমাধ্যম আপনাদের শত্রু নয়, বরং এটিকে অনেকেই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে৷ ''
জার্মানির অর্থনীতি ও জ্বালানি বিষয়ক ফেডারেল মিনিস্টার ব্রিগিটে স্যুপ্রিস প্রযুক্তিকে আরো সহজলভ্য ও ভবিষ্যতের জন্য উন্নতি করতে তার সরকারের নানা উদ্যোগের কথা জানান৷ একইসঙ্গে ভুয়া সংবাদের বিস্তার ঠেকাতে আরো কার্যকর কিছু করার আগ্রহের কথা জানান৷
তিনদিনের এই কনফারেন্স শেষ হবে বুধবারছবি: DW/K. Danetzki
তিনি বলেন, ‘‘ভিন্নমত থাকবেই৷ বিতর্কও করতে হবে৷ কিন্তু ইদানিীং ইন্টারনেটে কিছু কিছু বিতর্ক উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে৷ কারণ তাদের ভীত নেই৷'' তিনি মনে করেন, জনগণের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে, বিশেষ করে নির্বাচনের সময়, ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক মাধ্যমগুলো ভূমিকা রাখে৷ সেক্ষেত্রে প্রোপাগান্ডা বা ভুয়া সংবাদ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বিশেষ কিছু করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি৷
তিনদিনব্যাপী এই কনফারেন্স শেষ হবে বুধবার৷ মোট ৪০টি ইভেন্টে বৈশ্বিক নানা বিষয়ে গণমাধ্যমের ভুমিকা, সাংবাদিকতার উন্নয়ন, ডিজিটাল প্রযুক্তির বিশ্বে গণমাধ্যমের নানা ধারা ইত্যাদি বিষয়ে
বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্যানেলিস্টরা আলোচনা করবেন৷ শব্দ, শিল্প ও হাস্যরসও এবারের আয়োজনে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে৷ এছাড়া থাকছে এসব বিষয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শন৷
বন: জার্মানির সাবেক রাজধানী
১৯৯১ সালে, অর্থাৎ দুই জার্মানির মিলনের ঠিক এক বছর পরই জার্মান সংসদ বন থেকে বার্লিনে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়৷ যদিও বন এখন আর রাজধানী নেই, তবুও অধিবাসীদের মতে শহরটি ভালো আছে৷
ছবি: DW/L. Sanders
জার্মানির অস্থায়ী রাজধানী
অমর সুরস্রষ্টা লুডভিগ ফন বেটোফেনের জন্মস্থান হিসেবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত বন শহরকে জার্মানির রাজনৈতিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চার বছর পর৷ তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির অস্থায়ী রাজধানী করা হয় বনকে৷
ছবি: DW/L. Sanders
যেদিন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়
১৯৯১ সালের বিশ জুন, জার্মান সংসদের নিম্নকক্ষ, দ্য বুন্ডেসটাগ তথা সংসদ, রাজধানী কার্যালয়সহ অন্যন্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানও বার্লিনে সরিয়ে নেয়ার আইন পাস করে৷ তবে তখন জার্মানির প্রতিরক্ষা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা কার্যক্রম বনে রাখারও সিদ্ধান্ত হয়৷
ছবি: DW/L. Sanders
স্বস্তি
জার্মানির রাজধানী সরিয়ে নেয়ার সময় বনের অনেক বাসিন্দা মনে করেছিলেন, এর ফলে বন রাজনৈতিক গুরুত্ব হারাবে৷ তবে ১৯৯১ সালে শহরটিকে প্রায় দেড় বিলিয়ন ইউরো দেয়া হয়েছিল, যাতে রাজধানীর গুরুত্ব হারানোর ফলে ক্ষতির মাত্রা কমানো যায়৷
ছবি: DW/L. Sanders
কূটনীতিকদের বিদায়
বার্লিনকে রাজধানী করায় বনে কূটনীতিকদের উপস্থিতি একেবারে কমে যায়৷ অধিকাংশ দূতাবাস ও কূটনৈতিক মিশন বন থেকে বার্লিনে সরিয়ে নেয়া হয়৷ তা সত্ত্বেও, বনের যে ভবনটিতে একসময় জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ছিল, সেটিতে এখন বিচার মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগ কার্যক্রম পরিচালনা করছে৷
ছবি: DW/L. Sanders
ক্ষতি হয়নি
রাজধানী সরিয়ে নেয়ায় বনের ব্যবসায়ীদের কতটা ক্ষতি হয়েছে? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বনে পুরনো ক্যামেরা বিক্রির একটি দোকান চালু করা হয়৷ সেই দোকানের ইয়ান এরিক রুলেফস ডয়চে ভেলেকে জানান, রাজধানী সরে যাওয়ায় কূটনীতিক খদ্দের কমে গেছে, তবে সামগ্রিকভাবে ব্যবসার তেমন ক্ষতি হয়নি৷ ‘‘আমরা এখনও আশি এবং নব্বই দশকের সমপরিমাণ ছবি প্রিন্ট করছি,’’ বলেন তিনি৷
ছবি: DW/L. Sanders
বিশেষ কিছু নয়
জার্মানির অন্যতম পুরনো চার্চ বন মিনস্টারের এক কর্মী রাজধানী সরিয়ে নেয়াকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলে মানতে রাজি নন৷ তিনি বলেন, রাজধানী সরিয়ে নেয়ায় চার্চে দর্শনার্থী বা প্রার্থনারতদের সংখ্যার হেরফের হয়নি৷
ছবি: DW/L. Sanders
চাহিদা
বন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে হফগার্টেনে সাবেক পশ্চিম জার্মানির বেশ কয়েকটি প্রতিবাদসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ ১৯৭৯ সালে ‘থ্রি মাইল আইল্যান্ড’ পারমাণবিক দুর্ঘটনার পর সেখানে এক লাখের বেশি মানুষ ‘অ্যান্টি-নিউক্লিয়ার’ প্রতিবাদ সভায় অংশ নেন৷ বর্তমানে পার্কটিতে শিক্ষার্থী, পর্যটক এবং বনের অধিবাসীরা অবসর সময় কাটান৷
ছবি: DW/L. Sanders
জাতিসংঘ, ডয়চে ভেলে
জার্মানির সাবেক বুন্ডেসটাগ অফিস বিল্ডিংটি এখন জাতিসংঘের কার্যালয়৷ জাতিসংঘের আঠারোটি সংগঠনের কার্যালয় রয়েছে এখানে৷ আর সেটির পাশে যে ভবনটি সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল, সেটি এখন ডয়চে ভেলের সদর দপ্তর৷