শুল্ক নিয়ে আলোচনা করতে চায় বহু দেশ, দাবি ট্রাম্প প্রশাসনের
৭ এপ্রিল ২০২৫
ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে নতুন করে বাণিজ্য ও শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য লাগাতার ফোন আসছে হোয়াইট হাউসে।
প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক বসানোর পর অনেক দেশই অ্যামেরিকার সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায় বলে জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। ছবি: Alex Brandon/AP/picture alliance
বিজ্ঞাপন
ডনাল্ড ট্রাম্পের বিশ্ব জুড়ে নতুন শুল্ক ঘোষণার পর থেকেই ধস নেমেছে শেয়ার বাজারে। ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে নতুন করে বাণিজ্য ও শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য লাগাতার ফোন আসছে হোয়াইট হাউসে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন জানিয়েছেন ইইউ সমানুপাতিক হারে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তৈরি আছে। আগামী সপ্তাহে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ইজরায়েলের প্রধৈানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু শুল্ক কমানোর আর্জি জানাবেন বলে জানা গেছে।
এর মধ্যেই, ট্রাম্প জানিয়েছেন, চীন, ইইউ এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে 'বিশাল আর্থিক ঘাটতি' মেটানোর জন্য শুল্ক আরোপই একমাত্র পথ। তিনি জানান, "ইতিমধ্যেই নতুন শুল্ক চালু হয়ে গেছে। এটি একটি দেখবার মতো সুন্দর জিনিস।" তিনি আরো আগের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময়ের তৈরি ঘাটতি খুব দ্রুত মিটে যাবে বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, "কেউ কেউ বুঝতে পারবেন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই নতুন শুল্ক খুব ভালো জিনিস।"
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আতঙ্ক
অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ঘোষণার পর থেকেই ধস নেমেছে ওয়াল স্ট্রিট সহ অন্যান্য শেয়ার বাজারে। রোববার নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক ছিল নিম্নমুখি। স্বভাবতই, সোমবার বাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গে ওয়াল স্ট্রিট আরো রক্তক্ষরণ দেখবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
লেনদেন শুরু হওয়ার মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই ডাও জোন্স তিন দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক তিন দশমিক ৮৫ শতাংশ নিচে নামতে দেখা যায়। ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পরে মাত্র দুই দিনে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ১০ দশমিক পাঁচ শতাংশ পড়েছে। মার্চ ২০২০-র পর এটাই সব থেকে বড় পতন। এর ফলে এসঅ্যান্ডপি বাজার থেকে প্রায় পাঁচ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার লোকসান করলো।
অন্যদিকে, ডিসেম্বরে রেকর্ড উচ্চতায় যাওয়ার পর নাসডাক প্রায় ২০ শতাংশ পড়েছে। বৃহস্পতি এবং শুক্রবারে একই সঙ্গে ধস নামতে দেখা গেছে সারা পৃথিবীর শেয়ার বাজারে।
ট্রাম্পের ‘বাণিজ্য যুদ্ধের’ কোপানলে বিশ্ব
২ এপ্রিল একসঙ্গে বিশ্বের ১৬৪টি দেশের উপরে ‘রেসিপ্রোকাল’ বা পারষ্পরিক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এই তালিকায় বাংলাদেশ থেকে শুরু করে আছে আফ্রিকার দেশ লেসোথোও৷
ছবি: Mark Schiefelbein/AP Photo/picture alliance
বেশি চাপে এশিয়া
ট্রাম্পের শুল্ক বেড়াজালে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়েছে এশিয়ার দেশগুলো৷ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়ার পণ্য রপ্তানির উপর বসেছে ৪৯ শতাংশ শুল্ক। লাওসের পণ্যের উপরে দেয়া হয়েছে ৪৮ শতাংশ শুল্ক৷ এরপরই রয়েছে ভিয়েতনাম৷ যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে অন্যতম শক্তিশালী দেশটির উপর পড়েছে ৪৬ শতাংশ শুল্কভার৷ থাইল্যান্ডের ৩৬ শতাংশ এবং চীনের পন্যের উপর ৩৪ শতাংশ কর বসানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে৷
ছবি: I-HWA CHENG/AFP
দক্ষিণ এশিয়ায় চাপে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ
একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সবচেয়ে বড় গন্তব্য৷ তৈরি পোশাক থেকে শুরু করে বাংলাদেশের পণ্যের উপর দেশটিতে এখন ৩৭ শতাংশ শুল্ক বসবে৷ এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে শ্রীলঙ্কার উপরে (৪৪%)৷ তৈরি পোশাকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের পণ্যের উপরে বসছে ২৬ শতাংশ শুল্ক৷ আর পাকিস্তানের উপরে বসেছে ২৯ শতাংশ৷ সর্বনিম্ন ১০% শুল্ক নেপালের উপরে৷
ছবি: Joy Saha/ZUMA Press Wire/picture alliance
বাদ যায়নি মিত্ররাও
কয়েক দশকের ট্রান্স- আটলান্টিকের সুসম্পর্কে ছেদ টেনে ইউরোপের উপরের নতুন শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প৷ যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে গুনতে হবে ২০ শতাংশ শুল্ক৷ সুইজ্যারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের উপর বসেছে ৩১% ও ১০ শতাংশ করে৷
ছবি: Antonin Utz/SIPA/picture alliance
তালিকার বাইরে প্রতিবেশীরা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ক্যানাডা ও মেক্সিকোর উপর নতুন করে শুল্ক বসানো হয়নি৷ তবে চলতি বছর মার্চ মাসে দুই দেশের উপর ২৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়, যার প্রেক্ষিতে ক্যানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয়েছে৷
ছবি: DW
সুবিধাজনক অবস্থানে লাতিন অ্যামেরিকা
ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কের কোপানলে অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশগুলো৷ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরি সম্পর্ক থাকা ভেনেজুয়লার উপরে ১৫ শতাংশ, গায়ানার উপরে বসছে ৩৮ শতাংশ শুল্ক৷ মহাদেশের বৃহত্তম অর্থনীতি ব্রাজিলকে গুণতে হবে ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক৷ একই হার প্রযোজ্য চিলি ও কলম্বিয়ার জন্যেও।
ছবি: Diego Vara/REUTERS
বিপাকে আফ্রিকার দেশগুলোও
আফ্রিকা মহাদেশের ছোট্ট দেশ লোসোথোর উপর বসেছে সবচেয়ে বেশি ৫০ শতাংশ শুল্ক৷ তার প্রতিবেশী সাউথ আফ্রিকাকে গুণতে হবে ৩১ শতাংশ৷ এছাড়া মাদাগাস্কারকে ৪৭ শতাংশ, মরিশাসকে ৪০ শতাংশ, বতসোয়ানাকে ৩৭ শতাংশ, অ্যাঙ্গোলার পণ্যে ৩২ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে৷
ছবি: Roberta Ciuccio/AFP
বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণায় বিশ্বজুড়ে তোলপাড় পড়েছে৷ চীন জানিয়েছে, তারা মার্কিন শুল্কের পাল্টা ব্যবস্থা নেবে৷ অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজি বলেছেন, ট্রাম্প বন্ধুর মতো কাজ করেননি৷ আলোচনা ব্যর্থ হলে পাল্টা পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন৷ জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এই সিদ্ধান্তকে 'মৌলিকভাবে ভুল' বলেছেন।
এই অবস্থায় সোমবারের দিকে তাকিয়ে সারা পৃথিবী। কারো মতে শেয়ার বাজার নিজের নিয়েমেই উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে। আবার কেউ ভাবছেন এই পতন আগামী বেশ কিছু দিন চলতে থাকবে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের মতে 'পরিচিত পৃথিবীর দিন শেষ'। ট্রাম্পের নতুন আরোপে পৃথিবীর মূলগত পটপরিবর্তন হতে চলেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সানডে টেলিগ্রাফ পত্রিকার উত্তর সম্পাদকীয়তে তিনি জানান, নতুন পৃথিবী প্রথাগত নিয়মের দ্বারা পরিচালিত হবে না। বরং নতুন জোট এবং চুক্তি দ্বারা পরিচালিত হবে।
ব্রিটেনের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন ট্রাম্প। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশের উপর ২০ শতাংশ এবং চীনের উপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।