শূন্যপদ ছিল ৭৮১, হয়ে গেল প্রায় ৪৬ হাজার! ২৪ ঘন্টার মধ্যে বদলে গেল সংখ্যা। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি।
বিজ্ঞাপন
পশ্চিমবঙ্গের স্কুল শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে শিক্ষকের শূন্যপদ রয়েছে। এর ফলে ব্যাহত হচ্ছে পঠনপাঠন। এদিকে শূন্যপদে নিয়োগের দাবি তুলে আন্দোলন চালাচ্ছেন চাকরিপ্রার্থীরা। মামলার নিষ্পত্তি হলে চাকরি মিলবে, আশা এমনই। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রীর শূন্যপদ সংক্রান্ত বক্তব্য ঘিরে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
শিক্ষামন্ত্রীর তথ্য
মঙ্গল ও বুধবার রাজ্য বিধানসভায় স্কুল শিক্ষকের শূন্যপদ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘স্কুলের বিভিন্ন স্তর অর্থাৎ প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকের শূন্যপদ রয়েছে ৭৮১টি। এর মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকে ১৩টি, মাধ্যমিকে ২৮টি, উচ্চ প্রাথমিকে ৪৭৩টি এবং প্রাথমিকে ২৬৭টি শূন্যপদ।’’ শিক্ষামন্ত্রীর এই তথ্য ঘিরে বিস্ময় ও ক্ষোভ তৈরি হয় শিক্ষক ও চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের মধ্যে।
বুধবার শিক্ষামন্ত্রী রাজ্য বিধানসভায় নিজের তথ্য শুধরে বলেছেন, শূন্যপদের সংখ্যা অনেকটাই বেশি। তিনি বলেন, ‘‘বিধানসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে আমি বলেছিলাম, শিক্ষকের শূন্যপদ কত, আমার পক্ষে এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ অবসর নিচ্ছেন। আমার এই কথায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তথ্য দিয়ে বিতর্কের অবসান করতে চাই।’’
বিক্ষোভে রাস্তায় চাকরিপ্রার্থীরা, তাদের জীবনে উৎসব নেই
করোনার পর এবার শারদোৎসবে মেতেছে গোটা পশ্চিমবঙ্গ। তবে চাকরিপ্রার্থীরা উৎসবের মধ্যেও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
উৎসবের দিনেও প্রতিবাদ
এক বছর পরেও ছবিটা বদলালো না। ২০২১ সালের দুর্গোৎসবেও ঘরবাড়ি ছেড়ে এভাবেই আন্দোলনের মধ্যে কাটিয়েছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। এই বছরও কাটাচ্ছেন। তারা উৎসবে নেই, প্রতিবাদে আছেন। এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের কাছে উৎসবের আলাদা তাৎপর্য নেই। তাদের দাবি, পরীক্ষা দিয়ে পাস করার পরেও দুর্নীতির জন্য চাকরি পাননি। তাই সকলে যতদিন চাকরি না পাচ্ছেন, ততদিন প্রতিবাদ চলবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
তিন দফার প্রতিবাদ
এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০১৯-এ। তিন দফায় এই আন্দোলনের বয়স আজ সাড়ে পাঁচশ দিন পেরিয়ে গেছে। কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগে দুর্নীতি ছিল। কতজন এইভাবে চাকরি পেয়েছেন তা জানানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ঝড়-জল উপেক্ষা করে
এই কয়েকবছরে গান্ধীমূর্তির পাদদেশের এই ধর্নামঞ্চ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা এই মানুষগুলোর কাছে অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা, নেই শৌচাগারও। ঝড়-বৃষ্টি-রোদ উপেক্ষা করে দিনের পর দিন অবস্থান করে চলেছেন এরা। কেউ অসুস্থ বাবা-মাকে বাড়িতে রেখে কেউ বা কোলের শিশুকে সঙ্গে নিয়ে। আন্দোলন এখন এদের জীবনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
উৎসবের দিনেও
গত দুইবছর ধরে ধর্না মঞ্চেই কেটেছে উৎসবের দিনগুলি। দুইটি ঈদ, দুইটি দুর্গাপুজার মত বড় উৎসব এভাবে কেটেছে চাকরিপ্রার্থীদের। বস্তুত তাদের জীবনে উৎসব নেই, আনন্দ নেই, আছে কেবল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে চাকরি পাওয়ার লড়াই।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অর্পিতার কাহিনি
পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার অর্পিতা হাজরা। ধর্নামঞ্চে উপস্থিত থাকার জন্য যাতায়াত মিলিয়ে সাতঘণ্টা লাগে অর্পিতার। ভোর পাঁচটায় উঠে রান্না করে তারপর আসেন, আবার বাড়ি ফিরে ১০ বছরের মেয়েকে নিয়ে পড়াতে বসেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আনন্দ নয়, লড়াই
অর্পিতা জানালেন, ''ছোট্টো মেয়েটাকে নিয়ে যখন জামাকাপড়ের দোকানে গিয়ে শপিং করার কথা, পুজোর চারদিন কীভাবে কাটাব সেই পরিকল্পনা করার কথা, সেই সময় বসে রয়েছি রাস্তার ধারে। পুজোটা আমাদের কাছে প্রবল যন্ত্রণার। সকলকে আনন্দ করতে দেখে আরও যন্ত্রণা পাই ভেতরে ভেতরে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
ঈদও কেটেছে এখানেই
সরকারিভাবে বসতে নিষেধ ছিল, তাও এইবছর দুপুরের পরে এখানে বসেই ঈদ পালন করেছে কামরুজ্জামান, বাড়ির লোকেদের সঙ্গে দেখা করাও হয়ে ওঠেনি। অন্যান্যবার দুর্গাপুজোতেও মুর্শিদাবাদের বাড়ির সামনের পুজোতেই হাজির থাকে কামরুজ্জামান। এইবছর ধর্নামঞ্চেই কাটবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নিরানন্দ পিঙ্কি
হুগলির পিঙ্কি সাধুখাঁ জানালেন, ''আমাদের এবারের পুজোর দিনগুলো এভাবে কাটার কথা ছিল না। চাকরির নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে বাচ্চার হাত ধরে মণ্ডপে মণ্ডপে অনন্দ করে বেড়ানোর কথা ছিল। যেদিন থেকে জানতে পেরেছি আমরা দুর্নীতির শিকার, সেদিন থেকে আমাদের জীবনের আনন্দ চলে গিয়েছে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
সীমার প্রশ্ন
পুজোমণ্ডপে না গিয়ে কোলের বাচ্চা নিয়ে ধর্নামঞ্চে অবস্থান করছেন সীমা। তিনি বললেন, ''নিজের মনেই যদি আনন্দ না থাকে বাচ্চাকে কীভাবে আনন্দ দেব বলতে পারেন?''
ছবি: Subrata Goswami/DW
উৎসব আর নেই
আশিকুল ইসলাম জানালেন, ''যোগ্য হয়েও চাকরি পাইনি। এই আনন্দে এখন আর কোনও উৎসাহ পাই না। দিনলিপি থেকে মুছে গেছে উৎসব।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
দুর্গারা পথে
মুর্শিদাবাদের রহুল বিশ্বাস বললেন, ''একদিকে দেবী দুর্গা পুজিত হচ্ছেন আর এখানে দুর্গারা বঞ্চিত হয়ে পথের ধারে পড়ে আছে। সরকার চাইলে যেকোনও সময় আমাদের এই অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
নিরুপায় তপতী
বাড়িতে সন্তানকে রেখে চুঁচুড়া থেকে প্রতিদিন এই ধর্নামঞ্চে আসেন তপতী দাস। পুজোমণ্ডপে গেলেও মন পড়ে থাকবে এই ধর্নামঞ্চে। তিনি জানালেন, ''আমরা নিরুপায়। বাধ্য হয়ে একটা আশা নিয়েই দিনের পর দিন বসে রয়েছি এখানে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
চোখে জল জয়ন্তের
সাড়ে তিন বছরের বাচ্চা ফোনে তাকে বার বার বাড়িতে আসতে বলছে। বাবার কোলে চড়ে ঠাকুর দেখার বায়না ছোট্ট ছেলেটার। কথাগুলো বলতে বলতে চোখ মুছতে থাকে বীরভূমের জয়ন্ত। ''যখন সারা কলকাতা আলোর রোশনাইতে মেতে উঠেছে, আমরা গান্ধীমূর্তির পাদদেশে, অন্ধকারেই পড়ে আছি। দুইটি পুজো এভাবেই কেটেছে, চাকরির নিয়োগপত্র হাতে না পেলে জীবনের সব পুজো এখানেই কাটাতে পারি।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
নিয়োগপত্র চাই
বনগাঁর সোমা মালাকার বললেন, ''দুর্নীতি করে যারা চাকরি পেয়েছে, তারা আজ পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দে পুজো কাটাচ্ছে। অথচ আমরা যোগ্য হয়েও পথে পড়ে রয়েছি। চাকরির নিয়োগপত্রই আমাদের কাছে পূজার প্রসাদ। যেদিন হাতে পাব সেদিনই আমাদের সত্যিকারের পুজো।'' বললেন, বনগাঁর সোমা মালাকার।
ছবি: Subrata Goswami/DW
14 ছবি1 | 14
স্কুল সার্ভিস কমিশনকে ২০২২ সালে যে তথ্য রাজ্য দিয়েছে, সেই অনুযায়ী প্রাথমিকে এখন শূন্যপদ ১১ হাজার ৭৬৫। এই পদে নিয়োগ শুরু হয়েছে। উচ্চ প্রাথমিকে শূন্যপদের সংখ্যা ১৪ হাজার ৩৩৯। সেখানে আদালতের নির্দেশে কাউন্সেলিং চলছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। মাধ্যমিকে ১৩ হাজার ৫০০-র কিছু বেশি পদ খালি আছে। উচ্চ মাধ্যমিকে শূন্যপদের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি। আদালতের নির্দেশ পেলে এই পদে যাতে নিয়োগ শুরু করা যায়, তার চেষ্টা রাজ্য করছে বলে দাবি ব্রাত্যর।
এর ভিত্তিতে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘এই হিসেবের পরেও সামান্য যা পদ খালি পড়ে আছে, তা নিয়ে বিধানসভায় আমি তাৎক্ষণিক ভাবে মন্তব্য করেছিলাম।’’ শূন্যপদের আনুমানিক সংখ্যাই বলেছিলেন বলেও জানান ব্রাত্য।
তথ্য ঘিরে বিতর্ক
রাজ্যে বিভিন্ন স্কুলে ছাত্রের অনুপাতে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। এজন্য কোথাও কোথাও বিশেষ শাখা, যেমন বিজ্ঞান কিংবা গণিতের মতো বিষয়ের ক্লাস করানো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। দীর্ঘদিন নিয়োগ না হওয়ার ফলে এই পরিস্থিতি। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অনেকের চাকরি চলে গিয়েছে। সেসব মামলার নিষ্পত্তি ঝুলে রয়েছে।
বিক্ষোভকারী কমেছে, তাও প্রতিবাদ চলছে
কলকাতায় শহিদ মিনারের কাছে একধিক প্রতিবাদ চলছে। একটি তো প্রায় নয়শ দিন ধরে। এখন কেমন সেই প্রতিবাদের চেহারা?
ছবি: Subrata Goswami/DW
সবচেয়ে বেশিদিনের প্রতিবাদ
২০১৬ সালে তারা শিক্ষক হওয়ার পরীক্ষায় সফল হয়েছিলেন। তারপরেও চাকরি পাননি। কারণ, নিয়োগ-দুর্নীতি। অভিযোগ, পয়সা দিয়ে অযোগ্য প্রার্থীরা চাকরি পেয়ে গেছেন। প্রায় ৮৮০ দিন ধরে তারা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। আগে এই বিক্ষোভে প্রচুর মানুষ আসতেন। এখন দেখা যাচ্ছে মাত্র একজনকে। কোনো দিন আরো কিছু বিক্ষোভকারী আসেন। কিন্তু আগের মতো প্রতিদিন এক-দেড়শ মানুষের বিক্ষোভ হয় না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ডিএ আদায়ের দাবিতে
একই হাল বকেয়া মহার্ঘভাতা বা ডিএ আদায়ের জন্য গঠিত সংগ্রামী যৌঘ মঞ্চের। সেখানে কয়েকজন বসে-শুয়ে আছেন। একটা সময় এই মঞ্চও গমগম করত। প্রচুর মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে আসতেন। উৎসাহ-উদ্দীপনা তুঙ্গে ছিল। এখন আর সেই ছবি নেই।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিসিটিভি ক্যামেরা
যৌথ সংগ্রামী মঞ্চে সিসিটিভি ক্যামেরা বসেছে। কারা আসছেন, কী করছেন, তার উপর নজর রাখার জন্য। বিশেষ করে বহিরাগতরা যাতে ঢুকে কিছু করতে না পারে, তার জন্য বেশি করে এই সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অর্থ চাই
এই আন্দোলন টিকিয়ে রাখার জন্য অর্থের আবেদনও জানানো হয়েছে। রাখা হয়েছে ইউপিআইয়ের কিউআর কোড। যা স্ক্যান করে মানুষ পয়সা দিতে পারবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
টেট-বিক্ষোভের একই হাল
যারা টেট পরীক্ষায় পাস করেও চাকরি পাননি, তারা আলাদা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। টেট মানে টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট। যা পাস করলে প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর জন্য শিক্ষকের চাকরি পাওয়া যায়। এখানেও বিক্ষোভকারীর সংখ্যা কমেছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কেন এই অবস্থা?
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, শিক্ষকরাই তাদের মঞ্চে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় আসতেন। এখন স্কুল খুলে গেছে। পরীক্ষা চলছে। প্রশ্নপত্র থেকে খাতা দেখার কাজ আছে। তাই শিক্ষকরা সেভাবে আসতে পারছেন না। অন্য অনেকে ব্যস্ততার জন্য আসতে পারছেন না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
দীর্ঘ আন্দোলনের প্রস্তুতি
অনিরুদ্ধের দাবি, দীর্ঘ আন্দোলনের প্রস্তুতি তারা নিয়েছেন। অগাস্টে তারা দুইটি কর্মসূচি হাতে নিচ্ছেন। ১৪ অগাস্ট তাদের বিক্ষোভের দুইশ দিন পূর্ণ হবে। তখন একটা কর্মসূচি হবে। অগাস্টের প্রথম সপ্তাহেও একটা কর্মসূচি নেয়া হবে। তিনি স্বীকার করেছেন, সকলের একইরকমভাবে লেগে থাকার মানসিকতা থাকে না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
উৎসাহ কমছে
মধ্যমগ্রামের অভিষেক সেন স্বীকার করে নিয়েছেন, মানুষের উৎসাহ কমেছে। আগের মতো তাই বিক্ষোভকারী আসছেন না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এভাবে কতদিন?
কল্যানীর তনয়া বিশ্বাস বললেন, এভাবে আর কতদিন চলা যায়? পেট তো চালাতে হবে। কিছু না কিছু কাজ করতে হচ্ছে। তাই আন্দোলনে আর প্রতিদিন আসা যায় না। সবকিছু ছেড়ে যারা আন্দোলনে ঝাঁপিযে পড়েছিলেন, তারা এখন এই কঠোর বাস্তবের সামনে পড়েছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
তবু প্রতিবাদ চলছে
মানুষ আগের মতো আসতে পারছেন না। তা সত্ত্বেও প্রতিবাদ থেমে যায়নি। চলছে। প্রতিটি প্রতিবাদমঞ্চে অল্প হলেও মানুষ আসছেন। আগের মতো রোজ প্রত্যেকে আসতে পারেন না। কিন্তু প্রতিবাদের আগুন নিভে যায়নি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
10 ছবি1 | 10
হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী নিয়োগের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করছেন। তাদের দাবি, বিপুল সংখ্যায় শিক্ষক নিয়োগ করা না হলে সুষ্ঠুভাবে পঠনপাঠন সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে শূন্যপদের সংখ্যা মাত্র ৭৮১ হয় কী করে? এই প্রশ্ন ওঠে। এছাড়া মন্ত্রীর দাবির সঙ্গে তার দপ্তরের আদালতে পেশ করা বক্তব্যের মিল হচ্ছিল না। সেখানেও কয়েক হাজার শূন্যপদের কথা বলা হয়েছে।
অ্যাডভান্স সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেস-এর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতির বক্তব্য, ‘‘গত ২৯ জুলাই হাইকোর্টে শিক্ষা দপ্তর চারটি স্তরে যে শূন্যপদের সংখ্যা জানিয়েছিল, তার সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর দেয়া তথ্যের সাযুজ্য নেই। প্রায় পাঁচ বছর ধরে নিয়োগ হচ্ছে না। নিয়মিত শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা অবসর নিচ্ছেন। তাই সর্বশেষ শূন্যপদের সংখ্যা জানানো সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।’’
ধোঁয়াশা কি কাটলো?
বিতর্কের জন্ম হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা নিরসনের চেষ্টা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। এক লাফে শূন্যপদের সংখ্যা পৌছে গিয়েছে ৪৫ হাজার ৮৮৫ তে। ‘তাৎক্ষণিক মন্তব্যের’ পরের দিন শিক্ষামন্ত্রীর নয়া তথ্য কি চাকরি প্রার্থী বা শিক্ষকদের মনের ধন্দ মেটাতে পারলো?
চাকরির দাবিতে হবু শিক্ষকরা পথের ধারে বসে অবস্থান আন্দোলন করে চলেছেন মাসের পর মাস। তাদের অন্যতম আবু নাসের বলেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রীর দুদিনের বক্তব্য আমাদের ধোঁয়াশার মধ্যে ফেলেছে। দপ্তরের আধিকারিকরা স্বাভাবিক নিয়মেই বদলে যাবেন। কিন্তু মন্ত্রীকে সর্বশেষ তথ্য জানতেই হবে। কতজন অবসর নিলেন, কত শূন্যপদ তৈরি হল ইত্যাদি। আর শুধু পদ তৈরি করলেই হবে না, নিয়োগ দিতে হবে।’’
শিক্ষামন্ত্রীর দুদিনের বক্তব্য আমাদের ধোঁয়াশার মধ্যে ফেলেছে: আবু নাসের
শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘বিতর্কের মুখে শিক্ষামন্ত্রী তথ্য সংশোধন করতে বাধ্য হয়েছেন। এতেই হবে না, দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে ছাত্রছাত্রীরা বছরের পর বছর পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হবে।’’
মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষা
স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে একগুচ্ছ মামলা আদালতে বিচারাধীন। সুপ্রিম কোর্ট নিয়োগ দুর্নীতির মামলা নিষ্পত্তির সময় বেধে দিয়েছে। মামলার নিষ্পত্তি হলেই যে নিয়োগ হবে যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের, এমন নিশ্চয়তা কি আছে?
এই সংশয়ের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায় চাকরি বাতিল হওয়া পরীক্ষার্থীদের নিজেদের মত জানানোর সুযোগ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় নিয়োগপ্রাপ্ত ২৩ হাজার ৫৪৯ জনের চাকরি বাতিল করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এই মামলা সুপ্রিম কোর্টে যায়। শীর্ষ আদালত এদের প্রত্যেককে নোটিস পাঠাতে বলেছে রাজ্য সরকারকে।
যাদের চাকরি বাতিল হয়েছে তারা নিজেদের বক্তব্য আদালতে জানাতে পারবেন। ৯ জানুয়ারি মধ্যে এই মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চকে। এই সময়ের মধ্যে সিবিআই চূড়ান্ত রিপোর্ট দেবে। আর এক মাসের মধ্যে বোঝা যেতে পারে, প্রায় ২৪ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীর মধ্যে কাদের চাকরি বহাল থাকবে। এসব ক্ষেত্রে নিয়োগের প্রশ্ন আসবে তারও পরে।