গোটা বিশ্ব যখন বহুপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে মুক্ত বাণিজ্যের পথে এগোচ্ছে, তখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে অ্যামেরিকা আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে ‘একলা চলো রে’ পথে অগ্রসর হচ্ছে৷ এশিয়া সফরে ট্রাম্প ‘সাফল্য’ দাবি করছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘ এশিয়া সফরকে সাফল্য হিসেবে তুলে ধরতে মরিয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ বিশেষ করে ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আওতায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সুবিধা আদায় করতে ‘যথেষ্ট অগ্রগতি’র কথা বলছেন তিনি৷ এশিয়ায় ‘অভূতপূর্ব’ সাড়া পেয়েছেন বলে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে দাবি করেন ট্রাম্প৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁকে যেভাবে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে, তাঁর কোনো পূর্বসূরির সম্ভবত সে রকম অভিজ্ঞতা হয়নি বলেও বড়াই করেছেন তিনি৷
তবে উত্তর কোরিয়া সংকটসহ অন্য অনেক দাবির মতো তিনি এ ক্ষেত্রেও বিস্তারিত কিছুই বলেননি৷ তবে বুধবার হোয়াইট হাউস উত্তর কোরিয়া ও বাণিজ্যের বিষয়ে বিবৃতি দেবে বলে জানিয়েছেন তিনি৷
এক বছর আগে নির্বাচনে জয়ের আগে থেকেই চীনসহ বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অন্যায় আচরণের অভিযোগ করে আসছেন ট্রাম্প৷ তাছাড়া সরকারি ভরতুকির মাধ্যমে বাজারে বিকৃতির বিরুদ্ধেও তোপ দেগে এসেছেন তিনি৷ ভিয়েতনামে অ্যাপেক দেশগুলির শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত নেতারাও বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে রাজি হয়েছেন৷ তবে ট্রাম্প যেভাবে দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে শুধু অ্যামেরিকার জন্য সুবিধা আদায় করতে চান, সেই পথে যেতে নারাজ বাকি দেশগুলি৷ তিনি এশীয় প্রশান্তমহাসাগরীয় বাণিজ্য কাঠামো থেকে অ্যামেরিকাকে বিচ্ছিন্ন করলেও বাকি ১১টি দেশ এই চুক্তি চালু রাখতে সম্মত হয়েছে৷ বিশেষ করে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বহুদেশীয় চুক্তির পক্ষে সওয়াল করেছেন৷
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সম্পর্কে ট্রাম্পের মনোভাব ম্যানিলায় আসিয়ান দেশগুলির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ছবি তোলার সময়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷ সোমবার নেতারা আড়াআড়িভাবে পরস্পরের হাত ধরে সহাস্য ছবি তুলেছেন৷ কিন্তু ট্রাম্প কিছুতেই নিজের হাত দুটি ঠিকমতো সাজাতে পারছিলেন না৷ শেষ পর্যন্ত তিনি দুটি হাতই ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রীর দিকে বাড়িয়ে দেন৷ কয়েক মিনিট পর ভুল বুঝতে পেরে তিনি অবশ্য ফিলিপাইন্সের প্রেসিডেন্টের দিকেও একটি হাত বাড়িয়ে দেন৷ উল্লেখ্য, এবারের আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে সদস্য দেশগুলি ছাড়াও অ্যামেরিকা, চীন, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত, ক্যানাডা, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স , ডিপিএ)
ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের কথা জানা গেল যেভাবে
গতবছর মার্কিন নির্বাচনের প্রচারণার সময় থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ক্রেমলিনের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে কানাঘুষা চলছে৷ সম্প্রতি একাধিক তথ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানও জানিয়েছে যে, মার্কিন নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে চেয়েছিল রাশিয়া৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Lei
২০১৩: রাশিয়ায় ট্রাম্প
২০১৩ সালের ১৮ জুন ট্রাম্প টুইট করেন, ‘‘নভেম্বরের ৯ তারিখ মিস ইউনিভার্স প্যাজেন্ট রাশিয়ার মস্কো থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে৷ একটি বড় চুক্তি যা আমাদের দেশগুলোর মিলন ঘটাবে৷’’ পরবর্তীতে তিনি আরো লেখেন যে, ‘‘আপনাদের কি মনে হয় পুটিন (অনুষ্ঠানে) আসবে, যদি আসেন, তাহলে কি তিনি আমার নতুন বেস্ট ফ্রেন্ড হবেন?’’ সেবছর এক চ্যাট শোতে ট্রাম্প জানান যে, রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর অনেক ব্যবসা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Prokofyev
সেপ্টেম্বর ২০১৫: হ্যাকিংয়ের অভিযোগ
এক এফবিআই এজেন্ট ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির (ডিএনসি) এক তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তা দেয়া কন্ট্রাক্টরকে জানান যে, ডিএনসি সম্ভবত হ্যাকড হয়েছে৷ ২০১৬ সালের ১৪ জুন, ডিএনসি হ্যাকিংয়ের ঘটনার কথা স্বীকার করে জানায় যে, রাশিয়ার হ্যাকাররা কাজটা করেছে৷
ছবি: picture alliance/MAXPPP/R. Brunel
জুলাই ২২, ২০১৬: আসাঞ্জ জানালেন আরো বিস্তারিত
জুলিয়ান আসাঞ্জের উইকিলিক্স ডিএনসি থেকে চুরি যাওয়া ২০,০০০ ইমেল প্রকাশ করে যাতে দেখা যায় যে সিনেটর বার্নি সেন্ডারসের চেয়ে হিলারি ক্লিন্টনকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/N. Hall
জুলাই ২৫, ২০১৬: তদন্তে এফবিআই
এফবিআই ঘোষণা দেয় যে ডিএনসি হ্যাকিংয়ের ঘটনা তদন্ত করছে সংস্থাটি৷ হ্যাকিংয়ের ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নেয়ার কারণ রয়েছে বলেও জানায় এফবিআই৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
নভেম্বর ৮, ২০১৬: জিতলেন ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ এই খবর শুনে রাশিয়ার সংসদের আনন্দের বন্যা বয়ে যায়৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
নভেম্বর ১০, ২০১৬: রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার
রাশিয়ার সরকারের সঙ্গে ট্রাম্পের নির্বাচনি ক্যাম্পেইনের যোগাযোগ ছিল বলে জানান রাশিয়ার উপপরাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই রিবাকভ৷ তবে ট্রাম্পের ক্যাম্পেইন একথা অস্বীকার করে৷
ছবি: Imago/Itar-Tass
মার্চ ২০, ২০১৭: ট্রাম্প-ক্রিমলিন যোগাযোগ তদন্তে করছে এফবিআই
এফবিআই পরিচালক জেমস কমি ইন্টেলিজেন্স সংক্রান্ত হাউস সিলেক্ট কমিটিকে নিশ্চিত করেন যে রাশিয়া এবং ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের মধ্যে সম্ভাব্য সম্পর্কের বিষয়ে তদন্ত করছে গোয়েন্দা সংস্থাটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/J. S. Applewhite
মে ৯, ২০১৭: কমিকে চাকুরিচ্যুত করলেন ট্রাম্প
কমিকে দেয়া ইস্তফা পত্রে ট্রাম্প লিখেছিলেন: ‘‘যদি আমি এটার প্রশংসা করি যে, আপনি তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাকে জানিয়েছেন যে, আমাকে নিয়ে কোন তদন্ত হচ্ছে না, তাসত্ত্বেও আমি জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে একমত হয়েছি যে, আপনি এফবিআই কার্যকরভাবে পরিচালনায় সক্ষম নন৷’’
ছবি: Reuters/J. Ernst/K. Lamarque
সেপ্টেম্বর ২০১৭: সিনেট কমিটির সঙ্গে আলোচনায় ট্রাম্প জুনিয়র
ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটিকে জানান যে, বিদেশি কোনো সরকারের সঙ্গে কোনো আঁতাত করেননি তিনি৷ কমিটির সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ২০১৬ সালের জুনে ট্রাম্প জুনিয়র এবং তাঁর ভগ্নিপতি জেরড কুশনার ও ক্যাম্পেইন ম্যানেজার পাউল মানাফোর্টের সঙ্গে রাশিয়ান আইনজীবী নাটালিয়া ভেসেলনিৎসকায়ার সাক্ষাতের বিষয়ে আলোচনা হয়৷
ফেসবুক, টুইটার এবং গুগল মার্কিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছে যে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় রাশিয়া এ সব প্লাটফর্মের অপব্যবহার করে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছে৷ কোম্পানি তিনটি নভেম্বরে সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির মুখোমুখি হতে পারে৷