শেখ হাসিনার বিচারে কি পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়েছে?
২৭ নভেম্বর ২০২৫
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম মামলার বিচার শেষ হতে সময় লেগেছে এক বছর এক মাস৷ আর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যুদ্ধাপরাধের বিভিন্ন মামলার বিচার শেষ করতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিন বছরও লেগেছে৷
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার বিচারে পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার মনে হচ্ছে শেখ হাসিনার বিচারে হারিড জাস্টিসের একটি বিষয় আছে৷ প্রিন্সিপাল হলো ‘জাস্টিস হারিড জাস্টিস বারিড’৷ ফলে, মামলার বিচারকাজে প্রয়োজনীয় সময় দেয়া দরকার৷ গোলাম আযমের মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানিতে কিন্তু পাঁচ মাস সময় দেয়া হয়েছিল৷ ফলে, আসামির উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠনে পর্যাপ্ত সময় দেয়া উচিত৷ সেখানে হাসানুল হক ইনু সাহেবের মামলায় মাত্র দুই সপ্তাহ সময় দেয়া হয়েছে৷’’
তবে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিচারে কোনো তাড়াহুড়ো করা হয়নি৷ স্ট্যান্ডার্ড টাইমেই বিচার হয়েছে৷ আইনের কোনো ব্যত্যয়ও হয়নি৷’’
যার বিচার শেষ হতে যত সময় লেগেছে
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত বছরের ১৭ অক্টোবর মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ শুরু হয়৷ মামলার অপর দুইজন আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন৷ বিচারকাজ শেষে মামলার রায় হয় গত ১৭ নভেম্বর৷ এতে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয়৷ চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন একই অপরাধে অপরাধী হলেও রাজসাক্ষী হওয়ায় তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ এই মামলার বিচারকাজ শেষ করতে ট্রাইব্যুনাল সময় নিয়েছে এক বছর এক মাস (৩৯৭ দিন)৷
একই আদালতে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের আট ও বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছিল৷ আর গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ৯০ বছরের কারাদণ্ডের রায় হয়েছিল৷
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রথম রায়টি এসেছিল জামায়াতের রুকন মাওলানা আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে৷ ২০১২ সালের ২ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে প্রথম আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন৷ ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেয় ট্রাইব্যুনাল-২৷ তিনি পলাতক থাকায় তার অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ শেষ হয়৷ তার বিচারকাজ শেষ করতে লেগেছে পাঁচ মাস৷
জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ১ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালে (ট্রাইব্যুনাল-১) আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয়া হয়৷ তার বিচারকাজ শেষ করে ট্রাইবুন্যাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি৷ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ হতে সময় লাগে এক বছর তিন মাস৷ তবে পরে আপিলে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড হয়৷ সেই রায় দেয়া হয় ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর৷ ওই বছরেরই ১২ ডিসেম্বর রাতে তার ফাঁসি কার্যকর হয়৷ এটিই ছিল কার্যকর করা প্রথম ফাঁসি৷ আগে আইনে আপিলের সুযোগ না থাকলেও কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ের পর আইন সংশোধন করে আপিলের বিধান যুক্ত করা হয়৷ সেই আপিলে তার শাস্তি বেড়ে যাবজ্জীবন থেকে মৃত্যুদণ্ড হয়৷
২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে জমা দেন প্রসিকিউশন৷ তবে সেটি সঠিকভাবে বিন্যস্ত না হওয়ায় আমলে নেওয়ার পরিবর্তে ফিরিয়ে দেন ট্রাইব্যুনাল৷ ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি প্রসিকিউশন কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে পুনরায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন৷ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শেষে ২০১৩ সালের ৯ মে জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল৷ আপিল শেষে রায় কার্যকর হয় ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল৷ ট্রাইব্যুনালের রায় দিতে সময় লেগেছে এক বছর পাঁচ মাস৷
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগের একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে গ্রেপ্তার করার পর ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়৷ মামলার শুনানি শেষে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ২১ জুন ট্রাইব্যুনালে মুজাহিদের বিচার শুরু হয়৷ ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই ট্রাইব্যুনাল মুজাহিদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন৷ ট্রাইব্যুনালে বিচারে সময় লেগেছে তিন বছর৷ আপিল নিস্পত্তি শেষে ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর তার ফাঁসি কার্যকর হয়৷
একই দিনে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী)-র মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়৷ ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন ট্রাইব্যুনাল৷ ২০১২ সালের ১৭ জানুয়ারি সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছিল৷ আপিলেও তার মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে৷ ট্রাইব্যুনালে তার বিচারকাজ শেষ হতে সময় লেগেছে এক বছর ৯ মাস৷
জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হয় ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর৷ ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেন৷ আপিল নিস্পত্তির পর তার ফাঁসি কার্যকর হয় ২০১৬ সালের ৮ মার্চ৷ ট্রাইব্যুনালে তার বিচার শেষ হতে সময় লেগেছে এক বছর দুই মাস৷
২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল৷ ২০১২ সালের ৮ মে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ও বিচার শুরু হয়৷ ট্রাইব্যুনালে তার বিচারে সময় লেগেছে দুই বছর ছয় মাস৷ আপিল নিস্পত্তি শেষে ২০১৬ সালের ১১ মে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়৷
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগের একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯শে জুন প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সাবেক সংসদ সদস্য ও জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে৷ ২০১১ সালের ১৪ জুলাই সাঈদীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল৷ ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়৷ বিচারে সময় লাগে এক বছর সাত মাসের মতো৷ তবে আপিলে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড কমে আমৃত্যু কারাদণ্ড হয় ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর৷
২০১২ সালের ১৩ মে জামায়াত নেতা গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়৷ তার বিরুদ্ধে ৯০ বছরের কারাদণ্ডের রায় হয় ২০১৫ সালের ১৫ জুলাই৷ এই বিচার শেষ হতে সময় লেগেছে দুই বছর পাঁচ মাস৷ ট্রাইব্যুনাল তার অপরাধ সর্বোচ্চ শাস্তিযোগ্য বললেও বয়স বিবেচনায় ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয়৷
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল জামায়াত নেতা মাওলানা এটিএম আজহারুল ইমলামকে মৃত্যুদণ্ড দেয়৷ আপিলেও তার মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে৷ তবে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ দ্বিতীয়বার আপিল শুনে চলতি বছরের ২৭ মে তাকে বেকসুর খালাস দেন৷ ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন করা হয়৷ ট্রাইব্যুনালে তার বিচার শেষ হতে সময় লেগেছে এক বছর এক মাস৷
‘হারিড’ জাস্টিসের প্রশ্ন
শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন প্রসিকিউরের কাছে দুই সময়ের ট্রাইব্যুনালের ব্যাপারে নানা বিষয়ে মূল্যায়ন জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷
তবে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের আইনজীবী এবং তার বোন অ্যাডভোকেট নাজনীন নাহার বলেন, ‘‘আমি যাতে মামলাটি পরিচালনা করতে না পারি সেই চেষ্টা করা হচ্ছে৷ আদালতে আমরা সঙ্গে যা ঘটছে তা তো সবাই দেখছে৷ এর বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না৷’’
প্রসঙ্গত, গত ২৩ নভেম্বর আইন অনুসরণ না করে মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করার অভিযোগ তোলেন তার বোন ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাজনীন নাহার৷ ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনালে নাজনীন বলেন, জিয়াউল আহসানকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে৷ তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা কিংবা প্রসিকিউশনের লোকজনের বাইরে গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিসও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন৷
জিজ্ঞাসাবাদের সময় নাবিলা ইদ্রিসের সেখানে থাকার জন্য ট্রাইব্যুনালের অনুমতি ছিল কি না, তা জানেন না বলে দাবি করেন নাজনীন নাহার৷ জিজ্ঞাসাবাদের সময় জিয়াউলকে নাবিলা হুমকি দেন বলেও দাবি করেন তিনি৷
এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘জিজ্ঞাসাবাদের সময় তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য ভুক্তভোগীদের আনেন তদন্ত কর্মকর্তারা৷ আর নাবিলা ইদ্রিস ঘটনা সম্পর্কে জানেন৷’’
প্রথম আলোর খবরে আরো বলা হয়, একপর্যায়ে চিফ প্রসিকিউটর জিয়াউল আহসানকে নিয়ে একটি মন্তব্য করলে নাজনীন নাহার তার প্রতিবাদ করেন৷ নাজনীনের উদ্দেশে চিফ প্রসিকিউটর তখন বলেন, ‘‘আপনাকেও (নাজনীন) আসামি করা হতে পারে৷’’ অ্যাডভোকেট নাজনীন নাহার তখন বলেন, ‘‘করেন৷’’
ট্রাইব্যুনালকে তাজুল ইসলাম তখন বলেন, ‘‘তার (নাজনীন) সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে নানা জায়গায়৷ জিয়াউল একাই প্রায় এক হাজার মানুষকে হত্যা করেছেন৷’’
পরে সংবাদ সম্মেলনে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘জিজ্ঞাসাবাদ ফলপ্রসূ করার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা যাঁকে প্রয়োজন মনে করবেন, তাকেই পাশে রাখতে পারবেন৷ ভুক্তভোগীর মুখোমুখি হলে আসামি সত্য বলতে বাধ্য হন৷ এ রকম প্রক্রিয়া তদন্ত সংস্থা অনুসরণ করছে৷’’
এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক বলেন, ‘‘আমার মনে হচ্ছে শেখ হাসিনার বিচারে হারিড জাস্টিসের একটি বিষয় আছে৷ প্রিন্সিপাল হলো ‘জাস্টিস হারিড জাস্টিস বারিড’৷ ফলে, মামলার বিচারকাজে প্রয়োজনীয় সময় দেয়া দরকার৷ গোলাম আযমের মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানিতে কিন্তু পাঁচ মাস সময় দেয়া হয়েছিল৷ ফলে আসামির উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠনে পর্যাপ্ত সময় দেয়া উচিত৷ সেখানে হাসানুল হক ইনু সাহেবের মামলায় মাত্র দুই সপ্তাহ সময় দেয়া হয়েছে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘যে আইনে এখন বিচার করা হচ্ছে, আমার বিবেচনায় এই আইনটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার জন্য৷ ২০২৪ সালের ঘটনার বিচার ওই আইনে করা যায় কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে৷ তখন ওই আইনে বলা হয়েছে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ও তার পরের৷ আসলে ১৬ ডিসেম্বরের পরও মিরপুর হানাদারমুক্ত হয়নি৷ আরো পরে হয়েছে৷ ওই সময়ে জহির রায়হানের অন্তর্ধানের ঘটনা ঘটেছে৷ পরে বলা হয়েছে সেই বিবেচনায়৷ কিন্তু এখন ওনারা বলছেন, পরে বলায় এই সময় পর্যন্ত কাভার করে৷ এখন এরকমই ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে৷’’
ব্যারিস্টার শফিক আরো বলেন, ‘‘আমরা দেখতে পাচ্ছি একই ঘটনায় একাধিক মামলা হচ্ছে৷ হাজারখানেক মামলা আছে সম্ভবত৷ একই ঘটনায় এবং অপরাধে তো একাধিক মামলা হতে পারে না৷ এটা নিয়ে এখন কেউ তেমন প্রশ্ন তুলছেন না৷ কিন্তু এক সময় তো প্রশ্ন উঠতে পারে৷’’
‘‘আর চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম তো যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন৷ সেটা নিয়ে তো প্রশ্ন আছেই৷ এখানে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হচ্ছে কিনা সেই প্রশ্ন আছে৷’’
সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা তো আমার কথা নয়, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো শেখ হাসিনার মামলায় ‘হারিড’-এর কথা বলছে৷ আলোচনায় এসেছে৷ স্টেট ডিফেন্স যখন আর্গুমেন্টের সময়ে আরো টাইম চেয়েছে, তখন কিন্তু টাইম দেয়া হয়নি৷’’
‘‘তবে এখানে বিচারকদের কোনো দায় নেই৷ সরকার ও সরকার সমর্থকরা চেয়েছে দ্রুত বিচার করতে৷ এনসিপি তো বলেছেই বিচার না হলে নির্বাচন হবে না৷ উপদেষ্টারাও বলেছে৷ ফলে, দ্রুত বিচারের জন্য একটা মানসিক চাপ ছিল৷ আরেকটা বিষয় হলো, দেশটা একটা ক্রান্তিকালের মধ্যে আছে৷ নির্বাচন তো হতে হবে৷ সেই কারণেই নির্বাচনটা যাতে হয় তাই বিচারটা দ্রুত করার চাপ ছিল৷ তবে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, যুদ্ধাপরাধীদের যখন বিচার হয়েছে, তখন তারা শেখ হাসিনার চেয়ে বিচারে বেশি দিন সময় পেয়েছে৷’’
অ্যাডভোকেট মোরসেদ বলেন, ‘‘ক্রিমিনাল জুরিসপ্রুডেন্সে একটা কথা আছে - ‘জাস্টিস হারিড, জাস্টিস বারিড’৷ এই কথা তো এমনি এমনি হয়নি৷ এর কারণ আছে৷ বিচারে তাড়াহুড়ো করতে গেলে ভুল হতেই পারে৷ কারণ, আমরা তো হিউম্যান বিইং৷ ফলে এখানেও সেই ভুল হওয়ার আশঙ্কা থেকেই গেছে৷ এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাবে না৷’’
‘স্ট্যান্ডার্ড টাইমেই বিচার হয়েছে’
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার কাছে জুলাই শহিদদের পরিবার ও আহতরা এসেছিলেন৷ তারা বলেছেন, পৃথিবীর সবচেয়ে ডিলেইড প্রসিডিং হয়েছে ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচারে৷ এর চেয়ে বিলম্ব আর হতে পারে না৷ অ্যাকিউসড ফ্যামিলিরা বলছে, পৃথিবীর সবচেয়ে স্পিডি ট্রায়াল হয়েছে৷ আর আমরা মনে করি, একটা রিজনেবল টাইমে বিচারটা হয়েছে৷ স্পিডিও হয়নি, ডিলেইডও হয়নি৷’’
‘‘এক বছর একটা মামলার জন্য স্ট্যান্ডার্ড টাইম৷ ছয় মাস-সাড়ে ছয় মাস ইনভেস্টিগেশন পিরিয়ড আর জুনের ১ তারিখে আমরা ফাইল করেছি৷ এটা স্ট্যান্ডার্ড পিরিয়ড৷ আর এটা পুরোপুরি ডকুমেন্টভিত্তিক মামলা৷ ফলে, এই মামলায় বেশি সময় লাগারও কোনো কারণ নেই৷ যারা ট্রাইবুন্যালে সরাসরি সাক্ষ্য দিয়েছেন, তারা মূলত ডকুমেন্টারি এভিডেন্সকেই এক্সিকিউট করেছেন,’’ বলেন তিনি৷
প্রসিকিউটর তামীম বলেন, ‘‘এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি৷ বরং এর আগের ট্রাইব্যুনালে যে বিচার হয়েছে, তার চেয়ে শতভাগ স্বচ্ছ ও ন্যায়বিচার হয়েছে৷ কারণ, যেখানে ব্যাসিকালি ডকুমেন্টারি অ্যাভিডেন্স-বেইজড বিচার, সেখানে পক্ষে-বিপক্ষে বলার তেমন কোনো সুযোগ নেই৷ আমরা শেখ হাসিনার কথোপকথনের যে রেকর্ড পেয়েছি৷ এটা ফরেনসিক টেস্টে প্রমাণ হয়েছে যে, এটা ওনার ভয়েস৷ বাংলাদেশি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ফরেনসিক টেস্ট৷ বিবিসি এয়ার শট নামে একটি ইন্টারন্যাশনাল ফরেনসিক এজেন্সি দিয়ে পরীক্ষা করিয়েছে, তারা বলেছে, শেখ হাসিনার ভয়েস৷ ইউএন বলেছে, শেখ হাসিনার ভয়েস৷ আল জাজিরা বলেছে, শেখ হাসিনার ভয়েস৷ হিউম্যান রাইচস ওয়াচ বলেছে শেখ হাসিনার ভয়েস৷’’
‘‘এখন ওটা যদি শেখ হাসিনার ভয়েস হয়, যে লেথাল উইপন ব্যবহার করো, সামনে যেখানে পাবে গুলি করবে৷ এটা যদি সঠিক হয়, তাহলে এটা এভিডেন্স কি না? রেজাল্ট কী হলো? সরকার এই সময়ের মধ্যে গেজেট আকারে শহিদদের তালিকা প্রকাশ করলো৷ আহতদের তালিকা প্রকাশ করলো৷ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রাইভেট অর্গ্যানাইজেশন তালিকা প্রকাশ করলো৷ আহতরা আদালতে এসে বললো, সাক্ষ্য দিলো - হ্যাঁ পুলিশ আমাকে গুলি করেছে, আওয়ামী লীগ আমাকে গুলি করেছে৷ এই হলো সাক্ষী,’’ বলেন তিনি৷
তার কথা, ‘‘আসামিরা আইনে যে সময় পায়, তা তাদের দেয়া হয়েছে৷ চার্জ ও ডিফেন্স প্রিপেয়ার করার জন্য ২১ দিন৷ সাক্ষীকে জেরা করার আগে তালিকা, নাম দিতে হয় সময়মতো৷ এগুলো সব আমরা ফলো করেছি৷’’
‘‘এখানে কোনো আইনের ব্যত্যয় হয়নি৷ আর যেহেতু এটা ডকুমেন্ট-বেইসড বিচার এটা যে-কোনো প্রশ্নে উতরে গেছে৷ এবং আমরা মনে করি, আমরা যে ডকুমেন্টারি এভিডেন্স দিয়েছি, এটা পৃথিবীর যে-কোনো এভিডেন্সারি টেস্টে উতরে যাবে৷ এবং ট্রাইব্যুনাল যে শাস্তি দিয়েছে পৃথিবীর যে-কোনো কোর্ট বা ট্রাইব্যুনালে একই শাস্তি দেয়া হবে৷’’