শেখ হাসিনার উদ্দেশে আমার কিছু কথা আছে৷ আপনার নাগাল পাচ্ছি না বলে ফর রেকর্ড এখানেই বলে রাখছি৷
বিজ্ঞাপন
একজনকে রাজবাড়ী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কারণ একটি ফেসবুক পোস্টে তিনি আপনার সুনাম ক্ষুন্ন ও মানহানি করেছেন৷ এই অপরাধের কারণে তিনি এখন কারাগারে আছেন৷ আমাদের প্রশ্ন তিনি আপনার ঠিক কতটা সুনাম ক্ষয় করেছেন, মানে সংখ্যাতাত্ত্বিকভাবে কিছু বললে আমার বুঝতে সুবিধা হয়৷ ধরা যাক আপনার সুনাম ১০০, অভিযুক্ত কি আপনার ১০/২০/৩০/৪০ নাকি তারও বেশি সুনাম ক্ষয় করেছিলেন? তাকে গ্রেপ্তারের পর আপনার সুনাম আবার ঠিক জায়গায় ফেরত চলে এসেছে তো?
আপনার সুনাম ও মানহানি নিয়ে আরও দুই একটি কথা এই বেলায় বলে রাখি৷ সামসুল আরেফিন চৌধুরী নামের স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা রাজবাড়ী সদর থানায় আপনার সুনাম রক্ষায় লিখিত অভিযোগ দেন৷ মঙ্গলবার দিবাগত রাতে রাজবাড়ী পৌরসভার বেড়াডাঙ্গা এলাকার নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ এ খবরটি নিশ্চয়ই আপনার কানে গেছে, এখন কি ওই আওয়ামী লীগ নেতা বা পুলিশ কর্মকর্তাকে আপনি পুরস্কৃত করবেন? এই পুরস্কারে কি আপনার মান ও মর্যাদা আরও বাড়বে? বাড়তে বাড়তে তা কোথায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা আপনার?
গ্রেপ্তারকৃত সোনিয়া আক্তার স্মৃতি বিএনপি করেন, রাত না পোহাতেই নিশ্চয়ই শুনতে পাব তিনি আরও অনেক দুষ্কর্মের সঙ্গে জড়িত? এমনকি আপনার গুরুত্বপূর্ণরা তাকে রোমহর্ষক সব বিশেষণে ভূষিতও করতে পারেন৷ শুধু ফেসবুকে স্ট্যাটাসই তাকে গ্রেপ্তারের একমাত্র কারণ নয় এরকমও হয়তো বলবেন আপনার সভাসদেরা৷ আমার প্রশ্ন, এই রকম একজন মারাত্মক যে রাজবাড়ীতে আছেন তা কি বোঝা গেল আপনাকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেওয়ার একমাস পর?
শেখ হাসিনা এখন যারা আপনার সুনাম করে তাদের তো আপনি চেনেনই৷ যারা দুর্নাম করে বা করতে চায় তারা নিশ্চয়ই হামলা-মামলায় শিখে যাবে, মানে কোনটা করা যাবে আর করা যাবে না৷ এইসব যোগ বিয়োগে আপনার সুনামের হালখাতাটা শক্ত করে ধরে রাখবেন৷ এই আমার পরামর্শ, পিরিয়ড৷
১৩ মের ছবিঘরটি দেখুন...
ডিজিটাল মামলা: কারা, কাদের বিরুদ্ধে, কী অভিযোগে করেন
সিজিএস ২০১৮ সাল থেকে চলতি বছরের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা ১ হাজার ২৯৫টি মামলার তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। বিশ্লেষণ বলছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে।
সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ সিজিএস ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা ১ হাজার ২৯৫টি মামলার তথ্য বিশ্লেষণ করেছে।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
মামলার তথ্য নিয়ে গবেষণা
সিজিএস বিশ্লেষণ বলছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে। আসামি হওয়া রাজনীতিকের সংখ্যা ৪০৩ জন (৩১ শতাংশ)। এর পরেই আছেন সাংবাদিক (৩৫৫ জন)। তারপর আছেন শিক্ষার্থী (১১৮ জন)। গবেষণায় নেতৃত্ব দেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিঙ্গুইশড প্রফেসর ও সিজিএসের উপদেষ্টা আলী রীয়াজ৷
ছবি: Privat
বাদী আওয়ামী লীগ এবং দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। গত চার বছরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার মধ্যে ৩৫৩টি মামলার তথ্য-উপাত্ত আইন ও সালিশ কেন্দ্র থেকে সংগ্রহ করেছে সংগঠনটি। সেসব মামলা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৫৫টি মামলা হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ৩০টির বাদী আওয়ামী লীগ এবং দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী।
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
প্রধানমন্ত্রীকে অবমাননা করায় ৯৮ মামলা
গত বছরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রীকে অবমাননা করায় যেসব মামলা হয়েছে তার ১৩টি করেছে বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা, বাকি ৮৫টি ব্যক্তিগত উদ্যোগে করা হয়েছে৷ এর মধ্যে ৫০ জন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের কর্মী৷ ছাত্রলীগের ২০ জন ও আওয়ামী লীগের ১৯ জন মামলা করেছেন৷ এসব মামলায় ৫৮ জন অভিযুক্তকে আটক করার তথ্য পেয়েছে সিজিএস৷
নিরাপত্তা সংস্থা করেছে তিনটি মামলা৷ মন্ত্রী বা তার পরিবারের সদস্যরা করেছেন চারটি৷ বাকি ৪৪টি বিভিন্ন ব্যক্তির দায়ের করা মামলা৷ এর মধ্যে ২৮ জন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের কর্মী৷ এসব মামলায় ২৩ জনকে আটক করা হয়েছে৷ ২০২০ সালে আওয়ামী লীগ সাংসদ সাইফুজ্জামান শিখর মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান ও ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলসহ (ছবি) ৩২ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা করেছিলেন৷
ছবি: Facebook/Shafiqul Islam Kajol
রাজনীতিবিদদের অবমাননায় কমপক্ষে ৭৫ মামলা
এর মধ্যে আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদদের অবমাননা করায় মামলা হয়েছে ৭৪টি৷ অন্যজন জাতীয় পার্টির রাজনীতিবিদ৷ এসব মামলায় ৫৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
ছবি: bdnews24.com
মামলাকারীদের পরিচয়
৮৯০টি মামলার মধ্যে ৫০৮টি মামলা করা ব্যক্তির পরিচয় জেনেছে সিজিএস৷ এর মধ্যে ১১১টি করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা৷ ৪৩টি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা৷ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী আছেন ২০৬ জন৷ এর মধ্যে ১৬৭ জন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত৷ দুইজন জড়িত বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে৷ ছবিতে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের করা মামলায় আটক সাংবাদিক তানভীর হাসান তানুকে দেখা যাচ্ছে৷ পরে তিনি জামিন পান৷
ছবি: Jeebon Haq
জনপ্রতিনিধিদের করা মামলা
মামলাকারীদের মধ্যে ৩৭ জন জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধি৷ এর মধ্যে আছেন সাংসদ (পাঁচ জন), মেয়র (৬), ওয়ার্ড কাউন্সিলর (১১), ইউপি চেয়ারম্যান (৮) ও উপজেলা চেয়ারম্যান (৪)৷ ২০২১ সালে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক ডিজিটাল আইনে সাংবাদিক আবু তৈয়ব মুন্সীর (ছবি) বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন৷
ছবি: BD News
ফেসবুকে পোস্ট ও মন্তব্যের কারণে মামলা
উল্লেখিত সময়ে ফেসবুকে পোস্ট ও মন্তব্যের কারণে ১,১৭৫ জনের বিরুদ্ধে ৫৬৮টি মামলা হয়েছে৷ এর মধ্যে ৫১টি মামলা হয়রানির, ২৯টি আর্থিক প্রতারণা ও ৮৫টি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মামলা৷ ২০২০ সালের মে মাসে বঙ্গবন্ধু, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণসহ নানা অভিযোগে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল৷ ঐ সময় ‘আই এম বাংলাদেশি’ পেজের এডিটর পরিচয় দিয়ে লেখক মুশতাক আহমেদকে আটক করা হয়৷ পরে তিনি কারাগারে মারা যান৷