ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি ফটোশপের মাধ্যমে ব্যঙ্গচিত্র তৈরি করে ভিডিও হিসেবে পোস্ট করায় বৃহস্পতিবার সিলেটে একজনকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/J. Gilles
বিজ্ঞাপন
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির নাম আনহার আলী (৩০)৷ বিশ্বনাথের পূর্ব দশঘর গ্রামের বাসিন্দা আনহার আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন বিশ্বনাথের সদর ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা মনোহর হোসেন৷
দৈনিক প্রথম আলোতে মামলার এজাহারের একটি অংশ প্রকাশ করা হয়েছে৷ এজাহারে বলা হয়, ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় আনহার আলী তার ফেসবুকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি ফটোশপের মাধ্যমে ব্যঙ্গচিত্র তৈরি করে ভিডিও হিসেবে পোস্ট করেন৷ সেই ভিডিও দেখে বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়৷
এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে শুধু চলতি মাসে করা কয়েকটি মামলার কথা শোনা যাক৷
জয়পুরহাটের কালাইতে ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় ২১ এপ্রিল মো. আমানুল্লাহ আমানকে (১৯) গ্রেপ্তার করা হয়৷ মামলাটি করেন কালাই উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক তাফিকুল ইসলাম৷ (ডেইলি স্টার)
প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি ও সরকারবিরোধী অপপ্রচার করার দায়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ২২ এপ্রিল গ্রেফতার হন মানিকগঞ্জের সিংগাইরের আওয়ামী লীগ নেতা অলি আহমেদ মোল্লা (৫০)৷ মামলাটি করেন সিংগাইর উপজেলা ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক মো. টিপু সুলতান৷ (বাংলা ট্রিবিউন)
ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি, সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে নেতিবাচক ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এবং সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে উসকানিমূলক স্ট্যাটাস দেওয়ায় ২৫ এপ্রিল সাতকানিয়ায় দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ মামলাটি করেন সাতকানিয়া পৌরসভা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ৷ (কালের কণ্ঠ)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটূক্তি করে ফেসবুকে ছবিসহ পোস্ট দেয়ার অভিযোগে ৬ এপ্রিল রাজশাহীতে ফিরোজ কবীরকে (২৪) পুলিশে সোপর্দ করা হয়৷ ফিরোজ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাড়িও উপহার পেয়েছে তার পরিবার৷ পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলে রেজভি আল হাসান মুঞ্জিল স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সহায়তায় ফিরোজকে পুলিশের হাতে তুলে দেন৷ (যুগান্তর)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ব্যঙ্গ ও কটূক্তি করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় বরিশালে ২৩ এপ্রিল মাহাবুব হোসেন (১৯) নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশ৷ বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম মাস্টার, মেম্বার মনোয়ার হোসেন জুয়েল ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মাহাবুবকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন৷ (বাংলানিউজ)
জাহিদুল হক, ডয়চে ভেলে বাংলাছবি: DW
বিরোধী রাজনীতি না থাকায় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের কর্মীদের পক্ষে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে মুন্সিয়ানা দেখিয়ে শীর্ষ নেতাদের সুনজরে আসার সুযোগ কমে গেছে৷ সে কারণে তারা এ ধরনের মামলা করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষ নেতাদের নজরে আসতে ডিজিটাল আইনকে ব্যবহার করছেন - যা ডিজিটাল আইনের প্রত্যক্ষ অপব্যবহার৷
শুধু আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের কর্মীরাই নন, ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষনেতা ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে কেউ অভিযোগ তুললে তাদের বিরুদ্ধেও ডিজিটাল আইনে মামলা দেয়া হচ্ছে৷
বাকস্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান ‘আর্টিকেল ১৯' সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানায়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে ৩৮টি মামলা হয়েছে৷ সংস্থার বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক ফারুক ফয়সাল বলেন, ‘‘এই আইনে হওয়া মামলাগুলোর বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন দলের করা৷'' ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো সমাধানে ব্যবহার করা উচিত বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়৷
যেসব অভিযোগে ডিজিটাল আইনে মামলা
করোনা মহামারি শুরুর পর বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার সংখ্যা বেড়ে গেছে৷ কী অভিযোগে এসব মামলা হচ্ছে, জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: facebook.com/michelkumirthakur
মুশতাক আহমেদ
বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, করোনা ভাইরাস নিয়ে গুজব, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে ২০২০ এর ৫ মে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে র্যাব-৩৷ তাদের একজন মুশতাক আহমেদ৷ এজাহারে বলা হয়েছে, ‘‘তিনি ‘আই এম বাংলাদেশি’ পেজের এডিটর৷ তিনিও গুজব ছড়িয়েছেন৷ এছাড়া হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে৷’’ ২৫ ফেব্রুয়ারি কারাগারে তার মৃত্যু হয়৷
ছবি: facebook.com/IamBangladeshi.71
কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোর
ব়্যাবের মামলার গ্রেপ্তার হওয়া চারজনের একজন কিশোর৷ তার ফেসবুক পাতায় রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট, করোনা, সরকারদলীয় বিভিন্ন নেতার কার্টুন দিয়ে গুজব ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে এজাহারে বলা হয়৷ এছাড়া তার ব্যবহৃত ফোনে তাসনিম খলিল, শায়ের জুলকারনাইন, শাহেদ আলম ও আসিফ মহিউদ্দিনের সঙ্গে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেও জানানো হয়৷ ৪ মার্চ তিনি জামিনে মুক্তি পান৷
ছবি: facebook.com/AKK30M
দিদারুল ভূঁইয়া
ব়্যাবের মামলায় গ্রেপ্তার আরেকজন দিদার ‘রাষ্ট্রচিন্তা’ নামে একটি সংগঠনের সদস্য৷ ব্রিটিশ মানবাধিকার সংস্থা ‘আর্টিকেল ১৯’ বলছে, দিদার করোনা মহামারির বিরুদ্ধে লড়তে বাংলাদেশ সরকার যে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে, তা মনিটর করার জন্য গঠিত একটি কমিটির সদস্য৷ নিজের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেস দিদার অভিযোগ করেন, সবচেয়ে গরিব মানুষেরাই সরকারি ত্রাণের সবচেয়ে কম অংশ পেয়েছেন৷ সম্প্রতি তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান৷
ছবি: Facebook/didarul.bhuiyan
তাসনিম খলিল
ব়্যাবের মামলার ১১ আসামির একজন সুইডেন প্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল৷ তার সম্পর্কে এজাহারে বলা হয়েছে, তার ফেসবুক আইডিতে জাতির জনক, মুক্তিযুদ্ধ, করোনা ভাইরাস, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান ও বাহিনী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার বা বিভ্রান্তি ছড়াতে অপপ্রচার বা গুজবসহ বিভিন্ন ধরনের পোস্ট পাওয়া গেছে৷
ছবি: Facebook/tasneem.khalil
শফিকুল ইসলাম কাজল
২০২০ সালের ৯ মার্চ ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় ফটো সাংবাদিক কাজলসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা করেন মাগুরা-১ আসনের সাংসদ সাইফুজ্জামান শেখর৷ যুব মহিলা লীগের নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার ওয়েস্টিন হোটেলকেন্দ্রিক কারবারে ‘জড়িত’দের নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কারণে এই মামলা করেছিলেন তিনি৷ এছাড়া কাজলের বিরুদ্ধে হাজারীবাগ ও তেজগাঁও থানায়ও ডিজিটাল আইনে আরও দুটি মামলা হয়৷
ছবি: Facebook/Shafiqul Islam Kajol
বেরোবি শিক্ষক
ফেসবুকে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিমের মৃত্যু নিয়ে ‘অবমাননাকর’ পোস্ট দেয়ায় ডিজিটাল আইনের মামলায় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) বাংলা বিভাগের শিক্ষক সিরাজুম মনিরাকে ২০২০ সালের ১৩ জুন গ্রেফতার করা হয়৷ পোস্টটি দেয়ার কিছুক্ষণ পর তিনি তা মুছে দিয়েছিলেন৷
ছবি: bdnews24.com
রাবি শিক্ষক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক কাজী জাহিদুর রহমানকে গতবছর ১৮ জুন গ্রেপ্তার করা হয়৷ পুলিশ কর্মকর্তা মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিমকে নিয়ে ফেসবুকে ‘আজেবাজে কথা লিখে কটূক্তির অভিযোগে’ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ বার্তা সংস্থা ডিপিএ বলছে, ২ জুন প্রকাশিত এক পোস্টে তিনি স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছিলেন৷ যদিও নাসিমের নাম উল্লেখ করেননি৷ পোস্টটি তিনি পরে মুছেও দেন৷
ছবি: DW/A. Khanom
নবম শ্রেণির ছাত্র ইমন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তির অভিযোগে ময়মনসিংহের ভালুকায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা এক মামলায় নবম শ্রেণির ছাত্র মো. ইমনকে ২০২০ সালের ২০ জুন গ্রেপ্তার করা হয়৷ এরপর তাকে কিশোর শোধনাগারে পাঠানো হয়৷ ভালুকার ওসি জানিয়েছেন, ইমন পরে পোস্টটি মুছে ক্ষমা চেয়েছিল৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
সুশান্ত দাশ গুপ্ত
‘আমার হবিগঞ্জ’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক৷ এই পত্রিকায় স্থানীয় সাংসদ আবু জাহিরের অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর প্রকাশের জেরে ২০২০ সালের ২০ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সায়েদুজ্জামান জাহির৷ এর পরদিন সুশান্তকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ১৪ জুন তিনি জামিন পান৷