1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হাসিনা কিছুই করতে পারবেন না

আশীষ চক্রবর্ত্তী১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

‘যদি', ‘কিন্তু', ‘অথবা' – এ সব শব্দ বারবার ব্যবহার করার মানেই হলো আশার গুড়ে অল্প অল্প করে বালু ঢেলে দেয়া৷ তা জেনেও বলতে হচ্ছে, ‘‘সংখ্যাগুরু যদি মানুষের মর্যাদা না বোঝে, প্রধানমন্ত্রী একা সংখ্যালঘুর হলেও তাহলে লাভ নেই৷''

Bangladesh Hindus Überfall Jessore
প্রতীকী ছবিছবি: DW

কিন্তু অনেকেই আশা করছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যেভাবে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে থেমেছে, অর্পিত সম্পত্তি প্রকৃত মালিকদের ফিরিয়ে দেয়া এবং সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগ রোধ করাও সেভাবেই সম্ভব৷ মহাভুল৷ শুধু প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকলে আরো কিছুদিন হয়ত মরীচিকার পেছনে ছোটা হবে, কাজ হবে না৷

বাংলাদেশে একটি মহল সব সময়ই সংখ্যালঘু বিরোধী৷ সেই মহলে এক সময় বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীদেরই একাধিপত্য ছিল৷ গত কয়েক বছরে পরিস্থিতি অনেক অন্যরকম হয়েছে৷ এখন ‘খাঁটি' আওয়ামী লীগার, নব্য আওয়ামী লীগাররাও জমি দখলে অতি তৎপর হয়ে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা আরো লঘু করায় ভূমিকা রাখছেন৷ আর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতনে তো এক রকম সর্বদলীয় ঐক্যই চলছে বাংলাদেশে৷

এই ঐক্যবদ্ধ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে শেখ হাসিনা নিজের দলের ভেতরে কতটুকু পরিবর্তন আনতে পারবেন? প্রধানমন্ত্রী কি পারবেন, তাঁর আত্মীয় ইঞ্জিনিয়র মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে হিন্দু সম্পত্তি দখলের অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্য নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে? একটা তদন্ত কমিটি হয়েছে বটে, কমিটি শেষ পর্যন্ত মাথা উঁচু করে আড়ালের সত্য প্রকাশ করবে, নাকি মাথা নীচু করে মুখ থুবড়ে পড়বে, তা তো আমরা জানি না৷ আমরা তো জানি না, সমাজতান্ত্রিক আদর্শ থেকে একটু সরে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া দবিরুল ইসলামকে শায়েস্তা করে ঠাকুরগাঁওয়ের সংখ্যালঘুদের জীবনে শান্তি ফেরানো হবে কিনা৷

সংখ্যালঘুদের জীবনে শান্তি এবং সম্মান খুব দরকার৷ সম্পত্তি গেলে জানাজানি হয়, শান্তি তার অনেক আগেই সঙ্গোপনে বিদায় নেয়, কেউ খবর রাখে না, হয়ত রাখতে চায়ও না৷ স্বাধীনতার পরের ৪৪ বছরে কোন শ্রেণি-পেশার মানুষ সংখ্যালঘুদের অধিকার, মর্যাদা, কিংবা সামাজিক গুরুত্বের কথা ভেবে কিছু করেছে?

৪৪ বছরে কয়টি গল্প লেখা হয়েছে সংখ্যালঘুদের নিয়ে? কয়টি চলচ্চিত্র হয়েছে যেখানে হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিষ্টানের ছোট হলেও গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতি আছে? সংবাদমাধ্যমে একটা সময় পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে ‘পাকিস্তানের সেনাবাহিনী' বলা বা লেখা যেত না, বঙ্গবন্ধুর নামটাও ছিল নিষিদ্ধ৷ ৪৪ বছরের বড় একটা সময় কি সংখ্যালঘুরাও গল্প-কবিতার বর্ণনায়, নাটক-চলচ্চিত্রের কাহিনীতে অলিখিতভাবে নিষিদ্ধ ছিলেন?

রাজনীতিবিদরা তো সংখ্যালঘুদের নিয়ে রাজনীতি করেছেন, করছেন, ভবিষ্যতেও হয়ত করবেন৷ বুদ্ধিজীবী বা সুশীল সমাজ কী করেছেন এতকাল? তাদের কেউ কেউ ‘বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানদের সংখ্যালঘু বলা ঠিক কিনা' – এই বিতর্কে যত ‘পাণ্ডিত্য' জাহির করার চেষ্টা করেছেন, সংখ্যালঘু নির্যাতন বা জমি দখলের প্রতিবাদে তার কণাভাগ সক্রিয়তাও দেখিয়েছেন? সুশীল সমাজের কাছে প্রশ্ন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান বা মুসলমান ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বীদের কী নাম দেয়া যায় – তা নিয়ে এত মাথাব্যথা আপনাদের, যার মান গিয়েছে, সম্পত্তিও যায়, তাঁদের নামে কি বা আসে যায়?

অর্পিত সম্পত্তি আইনের ৫০ বছর পূর্ণ হলো কয়েকদিন আগে৷ সংখ্যালঘূদের সম্পত্তি এবং মর্যাদা হরণেরও অর্থশত বছর পূর্ণ হলো একই সঙ্গে৷ সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার শাব্দিক অস্তিত্ব ধরে রাখা গেলেও, ধর্মের প্রশ্নে নিরপেক্ষতা সেখানে নেই৷ আইনের চোখে কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায় ‘শত্রু' না হলেও, কিছু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি ‘শত্রুর সম্পত্তি' আখ্যা পেয়েছে৷ তারপরও সেই সম্প্রদায়গুলো রাষ্ট্রের কোন শ্রেণির নাগরিকের মর্যাদা, নিরাপত্তা পেতে বা আশা করতে পারে?

অর্পিত সম্পত্তি প্রকৃত মালিকের হাতেই আবার অর্পণ করার উদ্যোগ চলছে৷ খুব ভালো৷ কিন্তু এই ভালো কতদিন থাকবে, ভালোর সুফল আদৌ ভুক্তভোগীরা কোনোদিন পাবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ, সংশয় অবশ্যই আছে৷ এবং সে সংশয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক চেষ্টাতেও দূর হবার নয়৷

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুর সম্পত্তি আদালতের রায়ে, সরকারের প্রেচেষ্টায় সাময়িকভাবে হয়ত ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব হবে, কিন্তু সব পর্যায়ে নীরব, নিষ্ক্রিয়, নিস্পৃহ বা আপাত উদাসীন থেকে শুধু আইন প্রণয়ন এবং কার্যকর করার মাধ্যমে সংখ্যালঘূর অধিকার পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা করা কখনোই সম্ভব নয়৷

আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

টুইটারে এক ভদ্রলোক সংখ্যালঘুদের মর্যাদা এবং অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য তৃণমূল পর্যায়ে কোনো কাজ হচ্ছে না দেখে আক্ষেপ করেছেন৷ তৃণমূল পর্যায়ে মৌলবাদী চেতনা ও সম্পদের লালসা চরিতার্থ করার ক্রমবর্ধমান প্রয়াস রুখতে না পারলে যে সব আশা মরীচিকা হবে তা আমাদের রাজনীতিবিদ বা সুশীল কেউই হয়ত এখনো বুঝতে পারছেন না৷

না বুঝলে প্রধানমন্ত্রী একা কিছুই করতে পারবেন না৷ শিক্ষার্থীদের ভ্যাট প্রত্যাহার করা সহজ, সংখ্যালঘুর সম্মান – সম্পত্তি নিরাপদ রাখা, হাতছাড়া হলে তা আবার ফিরিয়ে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর একার পক্ষে অসম্ভব৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ