শেঙেন চুক্তির কারণে ইউরোপের ২৬টি দেশে বাধাহীনভাবে যাতায়াত করা যায়৷ তবে শরণার্থী ইস্যুকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে গত চার বছর ধরে সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু রেখেছে জার্মানিসহ কয়েকটি দেশ৷
বিজ্ঞাপন
কিন্তু এটি বৈধ নয়, বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় সংসদের সদস্য তানিয়া ফায়োন৷ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বর্তমান ‘শেঙেন বর্ডার কোড’ অনুযায়ী, একটি দেশ সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু রাখতে পারে৷
২০১৫ সালে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপে শরণার্থী আসা শুরু হলে প্রথম দেশ হিসেবে জার্মানি সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ শুরু করে৷ এরপর অস্ট্রিয়া, সুইডেন, ডেনমার্ক ও নরওয়েতেও এই ব্যবস্থা চালু হয়৷ আর ঐ বছরেরই নভেম্বরে প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার পর সন্ত্রাসবাদের হুমকির কথা উল্লেখ করে ফ্রান্সও সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ বসায়৷
সেই থেকে চার বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও ঐ ছয় দেশের সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু আছে৷ বুধবার আবারও ছয় মাসের জন্য এই ব্যবস্থার মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে৷
জার্মান ব্লুকার্ড বেশি পাচ্ছেন কোন দেশের নাগরিকরা?
জার্মান অভিবাসী ও শরণার্থী মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশটি ২০১৮ সালে ২৭ হাজার ইউরোপের বাইরের নাগরিককে ব্লুকার্ড দিয়েছে৷ ছবিঘরে দেখুন কোন দেশের নাগরিকরা এ সময়ে সবচেয়ে বেশি ব্লুকার্ড পেয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/chromorange
ভারত
তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত৷ জার্মান মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে দেশটির প্রায় সাত হাজার জন নাগরিককে ব্লু কার্ড দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P. Gill
চীন
তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন৷ উল্লেখিত সময়ে প্রায় দুই হাজার চীনা অভিবাসী এ সুবিধা পেয়েছে৷
ছবি: Imago Images/Xinhua/W. Lie
রাশিয়া
ব্লুকার্ড প্রাপ্তির দিক থেকে তৃতীয় অব্স্থানে রয়েছে রাশিয়া৷ তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে রাশিয়ার এক হাজার ছয়’শ তিন জন নাগরিক জার্মান ব্লুকার্ড পেয়েছে৷
ছবি: DW/S. Dick
তুরস্ক
তুরস্কের প্রায় এক হাজারের অধিক নাগরিক ২০১৮ সালে জার্মান ব্লুকার্ড পেয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AA/E. Yildirim
ব্রাজিল
ব্লুকার্ড প্রাপ্তির দিক থেকে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ব্রাজিল৷ ২০১৮ সালে দেশটির এক হাজার নাগরিক জার্মান ব্লুকার্ড পেয়েছে৷
ছবি: Reuters/P. Olivares
বাড়ছে জনপ্রিয়তা
২০১২ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন দক্ষ অভিবাসীদের ব্লুকার্ড প্রদান সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের পর থেকে জার্মানিতে ব্লুকার্ড দেওয়ার হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে৷ পরিসংখান বলছে ২০১৩ সালে মোট ১১ হাজার অ-ইউরোপীয়কে ব্লুকার্ড প্রদান করেছিল জার্মানি৷ আর ২০১৮ সালে তা দাঁড়ায় ২৭ হাজার-এ৷
ছবি: picture-alliance/chromorange
6 ছবি1 | 6
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংক-ট্যাংক ইউরোপিয়ান পলিসি সেন্টারের ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টা ইভেস পাসকুয়াও বলছেন, ‘‘২০১৫ থেকে ২০১৭, এই দুই বছর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের বৈধ কারণ ছিল৷ কিন্তু এরপর থেকে তা ভিত্তিহীন হয়ে পড়েছে৷’’
সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ বলতে এমন নয় যে প্রতিটি মানুষের পাসপোর্ট দেখা হচ্ছে৷ জার্মানির ক্ষেত্রে শুধু অস্ট্রিয়া সীমান্তে কয়েকটি স্থানে নজরদারি করা হচ্ছে৷ সুইডেনও ২০১৭ সালের পর থেকে ডেনমার্ক সীমান্তে আর প্রত্যেক মানুষকে চেক করছে না৷ এর পরিবর্তে ‘টার্গেটেড' নিয়ন্ত্রণ ও স্বয়ংক্রিয় নজরদারি ব্যবস্থা চালু করেছে৷
শেঙেন চুক্তি না মানা প্রসঙ্গে জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, কর্মকর্তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, ‘শেঙেন বর্ডার্স কোডে যে সময়সীমার কথা বলা হয়েছে তা দিয়ে প্রতিটি আলাদা নতুন অর্ডারের কথা বলা হয়েছে৷’ অর্থাৎ শেঙেন চুক্তিতে যে সময়সীমার কথা বলা হয়েছে, সেটি ছয় মাস মেয়াদ বৃদ্ধির প্রতিটি সিদ্ধান্তের সঙ্গে নতুন করে শুরু হবে৷
তবে ইউরোপীয় সংসদের সদস্য তানিয়া ফায়োন জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঐ কর্মকর্তার ব্যাখ্যার সঙ্গে একমত নন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বিশ্বাস এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং এটা বৈধ নয়৷’’
গত জুনে জার্মানির বাম দলের কয়েকজন সাংসদ সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চারটি কারণের কথা উল্লেখ করে৷ এগুলো হলো, জার্মানিতে অননুমোদিত প্রবেশ সংখ্যা ‘এখনও অনেক বেশি’, অস্ট্রিয়া সীমান্তে পাচারকারীদের উপস্থিতি, আশ্রয় আবেদনের সংখ্যাএবং ‘ভূমধ্যসাগরের পূর্বদিকের রুট দিয়ে সম্ভাব্য অভিবাসন’৷
তবে পরিসংখ্যান বলছে, গতবছর জার্মানিতে অবৈধভাবে প্রবেশের সংখ্যা ২০১৪ সালের তুলনায় কমেছে৷ এছাড়া আশ্রয় আবেদন ও পাচারকারীর সংখ্যাও কমেছে৷
কিরা শাখট/জেডএইচ
২০১৮ সালের মে মাসের ছবিঘরটি দেখুন...
ইউরোপে বাংলাদেশিদের আশ্রয় পাওয়ার হার বাড়ছে
ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যান বিষয়ক সংস্থা ‘ইউরোস্ট্যাট’-এর গত ১০ বছরের হিসেব বলছে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের আশ্রয়ের আবেদন সফল হওয়ার হার বাড়তির দিকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. de Sakutin
তিন ধরনের সুরক্ষা
শরণার্থী, হিউম্যানিটারিয়ান ও সাবসিডিয়ারি – এই তিন ক্যাটাগরিতে আশ্রয় দেয়া হয়ে থাকে৷ যাঁরা শরণার্থী স্ট্যাটাসের যোগ্য নন, কিন্তু দেশে ফিরে গেলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ার ঝুঁকিতে আছেন, তাঁদের সাবসিডিয়ারি সুরক্ষা দেয়া হয়৷ আর অসুস্থতা ও অভিভাবকহীন শিশুদের মানবিক (হিউম্যানিটারিয়ান) বিবেচনায় আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/R. Schlesinger
২০১৭
বাংলাদেশি নাগরিকদের পক্ষ থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গতবছর ১৬,০৯৫টি আশ্রয়ের আবেদন পড়েছে৷ আর একই সময়ে বাংলাদেশিদের করা ২,৮৩৫টি আবেদন সফল হয়েছে৷ শতকরা হিসেবে সেটি ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ৷ জার্মানিতে আবেদন পড়েছে ২,৭২৫টি৷ সফল হয়েছে ৩১৫টি৷ এমনিভাবে অন্য কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান এরকম – যুক্তরাজ্য (আবেদন ১,৬৩০; সফল ৬৫), ইটালি (আবেদন ৫,৭৭৫; সফল ১,৮৮৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৪,১১৫; সফল ৪৪০)৷
ছবি: imago/Cronos
২০১৬
বাংলাদেশিরা ১৪,০৮৫টি আবেদন করেছেন৷ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে ২,৩৬৫টি৷ অর্থাৎ সফলতার হার ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৬৬৫; সফল ১১০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ১,৪০৫; সফল ৮০), ইটালি (আবেদন ৬,২২৫; সফল ১,৬১০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৪,১১০; সফল ৪৪০)৷
ছবি: picture alliance/dpa/D. Kalker
২০১৫
সেবছর সফলতার হার ছিল ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ৷ আবেদন পড়েছিল ১১,২৫০টি৷ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত ১,৭৮৫টি৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ২৬৫; সফল ৩৫), যুক্তরাজ্য (আবেদন ১,০১৫; সফল ১২০), ইটালি (আবেদন ৫,০১০; সফল ১,২২৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৫৬০; সফল ৩১৫)৷
ছবি: Imago/Frank Sorge
২০১৪
আবেদন ৭,৫৮০টি৷ সফল ৭৮৫৷ শতকরা হার ১০ দশমিক ৩৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৪৬৫; সফল ৫০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৭০০; সফল ৭৫), ইটালি (আবেদন ৭৩৫; সফল ৩১৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৮৭০; সফল ২৬৫)৷
ছবি: Megan Williams
২০১৩
সফলতার হার ৭ দশমিক ১ শতাংশ৷ আবেদন ৮,৩৩৫৷ সফল ৫৯৫৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ২৫০; সফল ২০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৮৩০; সফল ৫৫), ইটালি (আবেদন ৫৯০; সফল ৩০০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৬১৫; সফল ১৪৫)৷
ছবি: picture alliance/robertharding/A. Robinson
২০১২
সফলতার হার ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ১৯০; সফল ১০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৮০০; সফল ৫০), ইটালি (আবেদন ১,৪১০; সফল ১,০৪৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৭৫৫; সফল ৮৫)৷
ছবি: Imago/Rainer Weisflog
২০১১
সফলতার হার ২ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ১১০; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৪৮০; সফল ৪০), ইটালি (আবেদন ৮৬৫; সফল ৬৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৭৭০; সফল ৪৫)৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com/M. Cohen
২০১০
সফলতার হার ৪ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ১০৫; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৪৬০; সফল ৫৫), ইটালি (আবেদন ২১৫; সফল ৪০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ২,৪১০; সফল ২৫)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Uhlemann
২০০৯
সফলতার হার ৩ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৪০; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৩৭৫; সফল ৪৫), ইটালি (আবেদন ৮৮৫; সফল ৮৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ১,৭৮০; সফল ৩৫)৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. de Sakutin
২০০৮
সফলতার হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৪০; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৩৯৫; সফল ৯৫), ইটালি (আবেদন ৯৫০; সফল ৫০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ১,৬৬০; সফল ৩৫)৷
ছবি: picture alliance/dpa/D. Kalker
৩২ দেশের হিসাব
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮ সদস্যরাষ্ট্র এবং ‘ইউরোপিয়ান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট’ বা ইএফটিএ-এর অন্তর্ভুক্ত আইসল্যান্ড, লিখটেনস্টাইন, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডের পরিসংখ্যান অন্তর্ভুক্ত করেছে ইউরোস্ট্যাট৷ আরও পরিসংখ্যান জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷