দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সৌলের মেয়র পাক ভন-সুনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ৷ তিনি আত্মহত্যা করেছেন ধরে নিয়ে তদন্ত করা হবে৷ নিখোঁজ হওয়ার আগে মেয়ের মোবাইলে ‘শেষ ইচ্ছা' জানিয়েছিলেন পার্ক৷
বিজ্ঞাপন
২০১১ সাল থেকে সৌলের মেয়র পাক৷ গতবছর জুনে তিনি তৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন৷ তিনি দেশটির শাসক দলের সদস্য ছিলেন৷ ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়েরও আগ্রহ ছিল তার৷
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে সরকারি বাসভবন থেকে বের হন পাক৷ এই সময় তিনি নিজের মেয়ের মোবাইলের ‘অ্যান্সারিং সার্ভিসে' একটি বার্তা রেখেছিলেন৷ পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় পর সেই বার্তা শোনেন মেয়রের মেয়ে৷ এরপর বাবার ফোন বন্ধ পেয়ে তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানালে মেয়রের খোঁজ শুরু হয়৷
পাকের মেয়ে জানান, মোবাইলে রেখে যাওয়া তার বাবার বার্তা ‘শেষ ইচ্ছার' মতো শুনিয়েছে৷
ড্রোন ও কুকুর দিয়ে খোঁজ শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার মাঝ রাতের পর পাকের মরদেহ খুঁজে পায় পুলিশ৷ সৌলের উত্তরে বুগাক পাহাড়ের ঢালে এক বৌদ্ধমন্দিরের কাছে জঙ্গলে তার মরদেহ পাওয়া যায়৷ তার শরীরে আঘাতে কোনো চিহ্ন নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
করোনার পাশাপাশি আত্মহত্যার আতঙ্ক
এক নারীর আত্মহত্যা করোনা সংকট নিয়ে নতুন ভাবনায় ফেলেছে থাইল্যান্ডকে৷ কাজ হারানোর হতাশা আর দুর্ভাবনায় কেউ আত্মঘাতী হতে চাইলে তাকে বাঁচিয়ে রাখাও এখন বড় চ্যালেঞ্জ৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
করোনা কাড়ছে বাঁচার আগ্রহ?
২০১৯ সালে থাইল্যান্ডে প্রতিমাসে গড়ে ৩৬৮ জন আত্মহত্যা করেছিলেন৷ এ বছরের প্রথম চার মাসে তা ৩৫০-এ নেমে আসে৷ তবে করোনার কারণে লকডাউন শুরুর পর থেকে পরিস্থিতি আবার খারাপ হচ্ছে৷ কাজ হারানো অনেকেই খুঁজছেন আত্মহননের পথ৷
ছবি: Colourbox
চিরপ্রস্থানে প্রতিবাদ
জাপানি এক রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন নিতিওয়াদি সায়-তিয়া৷ ভালোই ছিলেন৷ লকডাউন শুরুর পরও আপনজনদের সঙ্গে কথা বলতেন ফোনে, ভিডিও চ্যাটে৷ কিন্তু ৫০ বছর বয়সি এই নারী চাকরি হারানোর হতাশা বেশিদিন সহ্য করতে পারেননি৷ আত্মহত্যা করেন নিজের ঘরেই! ওপরে ঘর থেকে তার মৃতদেহ বের করে নেয়ার দৃশ্য৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
যেভাবে জানা গেল...
বেশ কিছুদিন নিতিওয়াদির সাড়া-শব্দ না পাওয়ায় তার চাচি প্রাফাই ইয়োদপ্রাদিত-এর ভীষণ চিন্তা হচ্ছিল৷ একদিন চলে যান নিতিওয়াদির বাড়িতে৷ গিয়ে যা দেখেছিলেন তা বলতে গেলে এখনো কান্নায় ভেঙে পড়েন ইয়োতপ্রাদিত, ‘‘ভেতরে ঢুকেই থ হয়ে যাই আমি৷ দেখি মেঝেতে পড়ে আছে ওর নিথর দেহ!’’
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
নিতিওয়াদি একা নন
লকডাউন শুরুর পর থেকে থাইল্যান্ডে আত্মহত্যা আবার বাড়ছে৷ এ বছরের প্রথম চারমাসে আত্মহত্যা আগের বছরের তুলনায় কমলেও মে মাসে আবার সংখ্যাটা আবার বাড়তে শুরু করে৷ জাতীয় আত্মহত্যা প্রতিরোধ কেন্দ্রের পরিচালক নাত্তাকর্ন চাম্পাথং মনে করেন, ‘‘ছয় মাস পর (করোনা) সংকট শেষ হলে থাই সরকারকে খুব বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে৷’’
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
অপ্রতুল উদ্যোগ
কাজ হারানো মানুষদের জন্য বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার৷ করোনার কারণে বেকারত্ব বরণ করা মানুষদের তিন মাসে ১৫ হাজার বাথ, অর্থাৎ ৪৬০ ডলার দেয়া হচ্ছে৷ কিন্তু এই প্রণোদনা প্রয়োজনের তুলনায় এত কম যে আকস্মিকভাবে বেকার হওয়া মানুষদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুর্ভাবনা কমছে না, আত্মহত্যা চলছেই৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়া একজন
৫৯ বছর বয়সি উন্নাকরম বুব্রাসার্টও হতাশা থেকে মুক্তির জন্য বেছে নিয়েছিলেন আত্মহননের পথ৷ নিজের ঘরে আত্মহত্যা করতে গেলে এতদিনে শেষকৃত্য হয়ে যেতো তার৷ তবে তিনি চেয়েছিলেন সবার হয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে জীবন থেকে বিদায় নিতে৷ আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন থাইল্যান্ডের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামনে৷ কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে সফল হতে দেননি৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
নতুন জীবনের অপেক্ষায়
উন্নাকরম বুব্রাসার্ট-এর জীবনে আবার স্বচ্ছলতা ফিরেছে৷ সরকার দিয়েছে বিশেষ অনুদান, দেশের মানুষও সামর্থ অনুযায়ী দাঁড়িয়েছে প্রায় ষাট ছুঁই ছুঁই এই নারীর পাশে৷ করোনা বিদায় হবে, সবার জীবনে ফিরবে স্বাভাবিক ছন্দ, আবার একটা চাকরি জুটবে- এ আশা পূরণের দিন গুনছেন উন্নাকরম বুব্রাসার্ট৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
7 ছবি1 | 7
এদিকে, বাসভবনের এক টেবিলে মেয়রের হাতে লেখা একটি চিঠি পাওয়া গেছে৷ পরিবারের অনুমতি নিয়ে শুক্রবার টেলিভিশনে সেটি প্রচার করা হয়েছে৷ পাক লিখেছেন, ‘‘আমি সবার কাছে ক্ষমা চাইছি৷ আমার সঙ্গে আমার জীবনে যারা ছিলেন তাদের সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি৷ আমি আমার পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইছি, কারণ, আমি শুধু তাদের কষ্টই দিয়েছি৷ দয়া করে আমার দেহ পুড়িয়ে আমার মা-বাবার কবরে ছড়িয়ে দেবেন৷''
দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যম জানাচ্ছে, বুধবার সন্ধ্যায় পাকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তার এক সাবেক সেক্রেটারি৷ পাকের বিরুদ্ধে ‘অযাচিত শারীরিক সম্পর্ক' ও ‘অসঙ্গত বার্তা পাঠানো'র অভিযোগ আনা হয়৷
পুলিশ এই অভিযোগ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি৷ দক্ষিণ কোরিয়ার আইন অনুযায়ী, পাকের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এই অভিযোগের তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেছে৷
সৌলের শহর কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ সম্পর্কে ‘অবগত নয়' বলে জানিয়েছে৷
পাকের পরিচয়
১৯৭০-এর দশকে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন ৬৪ বছর বয়সি পাক৷
পরবর্তীতে মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন৷ আশি ও নব্বইয়ের দশকে রাজনৈতিক কর্মীদের হয়ে আইনি লড়াই করেছেন৷
দেশের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসমতার নিয়মিত সমালোচক ছিলেন৷
২০১৭ সালে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আয়োজিত ‘মোমবাতি বিক্ষোভের' অন্যতম আয়োজক ছিলেন৷ এই প্রতিবাদের কারণে ক্ষমতা হারিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট পাক গুন-হে৷