জিএসএ চিঠি দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়ার কথা জানালো বাইডেন শিবিরকে। টুইট করলেন ট্রাম্প। জানালেন, জিএসএ-র যা করণীয়, তা করুক।
ছবি: Adam Schultz/Biden for President/ZUMAPRESS/picture alliance
বিজ্ঞাপন
ডনাল্ড ট্রাম্প কি শেষ পর্যন্ত হার স্বীকার করে নিলেন? সোমবার মার্কিন জেনারেল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিএসএ) একটি চিঠি ঘিরে এই আলোচনা শুরু হয়েছে। জিএসএ প্রধান জো বাইডেন শিবিরকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, এ বার ধীরে ধীরে প্রশাসনিক কাজ হস্তান্তর করা হবে। এত দিন ট্রাম্প এ কাজ করতে দেননি। কারণ, তিনি হার স্বীকার করেননি। জিএসএ-র এই ঘোষণার পরে ট্রাম্প টুইট করে বলেছেন, জিএসএ-র যা করণীয়, তা করা হোক। তবে তিনি লড়াই চালিয়ে যাবেন।
জিএসএ প্রধান এমিলি মরফি। তিনি ট্রাম্পের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। দুই সপ্তাহ আগে নির্বাচনের ফলাফলে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, জো বাইডেন জয়ী। কিন্তু তার পরেও জিএসএ তাঁকে জয়ী ঘোষণা করেনি। বাইডেনকে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে কিছু জানানোও হয়নি।
মার্কিন নির্বাচন: যে বিশ্বনেতারা এখনো বাইডেনকে শুভেচ্ছা জানাননি
ইউরোপ, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন মিত্রদের অনেকেই দ্রুত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷ তবে, এখনো কিছু রাষ্ট্রনেতা আছেন যারা এই বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন৷
ছবি: Alexei Druzhinin/dpa/picture-alliance
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং
বেইজিং জানিয়েছে যে মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া অবধি কাউকে অভিনন্দন জানাবে না দেশটি৷ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমরা লক্ষ্য করেছি বাইডেন নির্বাচনে বিজয় ঘোষণা করেছেন৷ আমরা যেটা বুঝতে পারছি তাহচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল দেশটির আইন এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া অনুসরণের পর ঘোষণা করা হবে৷’’
ছবি: Ju Peng/Xinhua/picture-alliance
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন
পুটিনের মুখপাত্র দিমিত্রি প্যাস্কভ জানিয়েছেন যে মার্কিন নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট আইনি জটিলতার নিরসন না হওয়া পর্যন্ত বাইডেনের জয় নিয়ে কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকবে ক্রিমলিন৷ তিনি বলেন, ‘‘সেখানে নির্দিষ্ট কিছু আইনি প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে যার কথা বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট ইতোমধ্যে জানিয়েছেন৷ ফলে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন, তাই আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার আগ অবধি অপেক্ষা করাটা যৌক্তিক মনে করছি আমরা৷’’
ছবি: Alexei Druzhinin/dpa/picture-alliance
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো
ডানপন্থি এই প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন যে তিনি বিশ্বের প্রথম নেতা হবেন যে ডনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানাবে৷ তবে, বাইডেনের বিষয়ে চুপ রয়েছেন বলসোনারো৷ দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যামিল্টন ম্যুরাও এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমি মনে করি ভোট জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন হওয়া অবধি অপেক্ষা করছেন প্রেসিডেন্ট৷’’ ‘‘সময়মত’’ বাইডেনকে অভিনন্দন জানানো হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
ছবি: Marcos Corrêa/Presidência da República do Brasil
লোপেজ ওব্রাডোর জানিয়েছেন যে মার্কিন নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট আইনি জটিলতার নিরসন না হওয়া অবধি বিজয়ীকে অভিনন্দন না জানাতে তার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে৷ তিনি উল্টো প্রশ্ন করেছেন, ‘‘কীভাবে একজন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ঠিক করবে (মার্কিন নির্বাচনে) কোন প্রার্থী জয়লাভ করেছে?’’ তবে, তিনি তার বক্তব্যে বাইডেনকে ‘‘সম্ভাব্য বিজয়ী’’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন৷
ছবি: Reuters/H. Romero
উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উন
মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি কিম৷ উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমও এই বিষয়ে চুপ রয়েছে৷ ২০১৬ সালে ডনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার দু’দিন পর অবধিও চুপ ছিল পিয়ংইয়ং৷ অতীতে অবশ্য বাইডেনকে কিম ‘স্বল্প বুদ্ধির বোকা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন৷ জবাবে বাইডেন তাকে ‘গুণ্ডা’ বলেছিলেন৷
ছবি: Reuters/KCNA
স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী জেনেজ জানিয়া
উগ্র ডানপন্থী ও অভিবাসনের বিরোধী হিসেবে পরিচিত স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী জেনেজ জানিয়া মার্কিন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর দ্রুতই ডনাল্ড ট্রাম্পকে বিজয়ের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন৷ তবে ভোট গণনা প্রায় শেষ হওয়ার পর যখন বাইডেনকে বিজয়ী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, তখন চুপ হয়ে গেছেন তিনি৷ জানিয়া শুধু এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আশা করছে তার দেশ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Leskovsek
6 ছবি1 | 6
জিএসএ মার্কিন প্রশাসনের একটি গুরুত্ব বিষয়। প্রেসিডেন্টের যাবতীয় প্রশাসনিক কাজকর্ম এরাই করে। প্রেসিডেন্টকে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে ব্রিফিং দেওয়া থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক খুঁটিনাটি-- সমস্ত বিষয় জিএসএ-র মাধ্যমেই হোয়াইট হাউসে পৌঁছয়। সাধারণত, নির্বাচন হয়ে গেলে নতুন প্রেসিডেন্টকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নেয় এই সংস্থা। আগামী ২০ জানুয়ারি নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট শপথ নেবেন। তারপরেই সরকারি ভাবে তিনি নতুন প্রেসিডেন্ট।
কিন্তু মধ্যবর্তী দুই মাস হলো ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়। পুরনো প্রেসিডেন্টের অফিসের সঙ্গে নতুন প্রেসিডেন্টের অফিসের সমন্বয়ের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়। এই কাজটি করে জিএসএ। সে জন্য প্রথমেই তাদের ভাবী প্রেসিডেন্টের কাছে একটি চিঠি পাঠাতে হয়। গত দুই সপ্তাহ ধরে জিএসএ সেই কাজটি করেনি। অনেকেই মনে করেছিলেন, এমিলি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বলেই তিনি বাইডেনকে চিঠি পাঠাচ্ছেন না। ট্রাম্প হার স্বীকার না করা পর্যন্ত জিএসএ বাইডেনকে চিঠি পাঠাবে না বলেও মনে করেছিলেন অনেকে।
সোমবার সেই চিঠি পৌঁছেছে বাইডেন এবং কমলা হ্যারিসের কাছে। এ দিকে জিএসএ চিঠি দেওয়ার পরেই ট্রাম্প স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে টুইট করেছেন। তাতে লিখেছেন, এমিলি এবং তাঁর অফিসের সকলের প্রতি তিনি শুভকামনা জানাচ্ছেন। তাঁদের যা করণীয়, তা তাঁরা করুন। তবে লড়াই চলবে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, ট্রাম্পের সুর আগের চেয়ে অনেক নরম হয়েছে। তিনি বুঝে গিয়েছেন, তাঁর পক্ষে আর কিছু করা সম্ভব নয়। ফলে এক পা এক পা করে পিছিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এ দিনের টুইটেও সে ইঙ্গিত আছে। বস্তুত, মিশিগানের সরকারি ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পরে ট্রাম্প সুর নরম করতে বাধ্য হলেন বলেও কেউ কেউ মনে করছেন।
এ দিকে বাইডেন-হ্যারিসের অফিস জানিয়ে দিয়েছে, প্রথমেই তারা করোনা প্যানডেমিক নিয়ে কাজ করতে চায়। ফলে জিএসএ যেন সে বিষয়ে সমস্ত তথ্য দেয়। এত দিন হোয়াইট হাউস থেকে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্রিফিং পাচ্ছিলেন না বাইডেন। এ বার তাও তিনি পেতে শুরু করবেন।