মহারাষ্ট্রের এক বিস্তীর্ণ এলাকায় জলসংকট৷ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের জন্য যে পরিমাণ জল খরচ হচ্ছে বা হবে, তার বৈধতা নিয়ে এক জনস্বার্থ মামলায় ৩০শে এপ্রিলের পর মহারাষ্ট্র থেকে সব ম্যাচ সরিয়ে নেয়ার কথা বলেছে মুম্বই হাইকোর্ট৷
বিজ্ঞাপন
ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই) এবং মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (এমসিএ) কর্তৃপক্ষকে এমনই আদেশ আদালতের৷ তবে জল অনেক দূর গড়াবার পরই রাজ্যে জলসংকটের মোকাবিলায় ত্রাণকর্তার ভূমিকা নিতে হয়েছে মুম্বই হাইকোর্টকে৷ বিসিসিআই এবং এমসিএ-কে বলতে হয়েছে অবশিষ্ট ১৩টি ম্যাচ রাজ্য থেকে সরিয়ে নেয়ার জন্য৷ আর আদালতের নির্দেশে অবশেষে শুধু আইপিএল কর্তৃপক্ষেরই নয়, টনক নড়েছে মহারাষ্ট্র সরকারেরও৷ মহারাষ্ট্রের বিস্তীর্ণ এলাকা যেখানে খরা পরিস্থিতির কবলে, সেখানে আইপিএল ক্রিকেট ম্যাচের জন্য যে পরিমাণ জল খরচ করা হয়েছে বা হবে, তার যৌক্তিকতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মুম্বই হাইকোর্ট৷ রীতিমত ধমক দিয়ে আদালত বলেছে, মানুষ যেখানে জল পাচ্ছে না, জলাভাবে চাষীদের যেখানে মাথায় হাত, সেখানে ক্রিকেট মাঠের পিচ সংরক্ষণের জন্য লক্ষ লক্ষ লিটার জল খরচের কোনো যুক্তি নেই৷ সেক্ষেত্রে অবশিষ্ট ম্যাচগুলি অন্য রাজ্যে স্থানান্তরিত করতে অসুবিধা কোথায়?
আইপিএল ম্যাচ পরিচালনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যে জল মাঠে খরচ করা হচ্ছে তা পানের অযোগ্য৷ শহরের বোর-ওয়েল, কুঁয়ো এবং নর্দমার অপরিষ্কার জল শোধন করে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ পুনে ও নাগপুরের অবশিষ্ট ১৭টি ম্যাচের জন্য রয়্যাল ওয়েস্টার্ন টার্ফ ক্লাব ট্যাঙ্কারে করে জল পৌঁছে দেবে, তারজন্য টাকা দেওয়া হবে৷ মুখ্যমন্ত্রীর খরাত্রাণ তহবিলে আইপিএল-এর তরফ থেকে আলাদা আলাদাভাবে পাঁচ কোটি টাকা করে চাঁদা দেওয়া হয়েছে৷ লাটুরের মতো সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জল সরবরাহের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে৷ কিন্তু তাতেও আদালতের মন টলেনি৷
জলপরি নয়, এরা হলো ‘জলপত্নী’
ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের বেশ কয়েকটি প্রত্যন্ত গ্রামে পুরুষরা শুধুমাত্র পানি এনে দেওয়ার জন্য বহুবিবাহ করেন! দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্ত্রীর কাজ বাড়িতে যথেষ্ট পরিমাণ পানির ব্যবস্থা করা৷ এরাই হলো ‘ওয়াটার ওয়াইফ’ বা ‘জলপত্নী’৷
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
একজন পুরুষের তিনজন স্ত্রী
৬৬ বছর বয়সি সাখারাম ভাগতের এখন মোট তিনজন স্ত্রী৷ ওঁদের একজনের নাম সাখরি, পরের জন টুকি এবং তৃতীয় বউ ভাগি৷ ‘‘আমার প্রথম স্ত্রীকে সন্তানদের দেখাশোনা করতে হয়, তাই পানি আনার জন্য দ্বিতীয় বিয়ে করি৷ কিন্তু দ্বিতীয় স্ত্রী যখন অসুস্থ হয়ে যায়, তখন পানি আনতে ভীষণ সমস্যা হতো৷ তাই তৃতীয়বার বিয়ে করি আমি’’, বলেন শাখারাম৷
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
‘ওয়াটার ওয়াইফ’-এর সম্মান
ছবিতে ভাগত তাঁর দুই স্ত্রী ভাগি এবং সাখরিকে নিয়ে পানি আনতে যাচ্ছেন৷ এর জন্য তাঁদের গ্রাম ছাড়িয়ে অনেকটা পথ যেতে হয়৷ সংসারের প্রয়োজনে যাঁরা এতদূর থেকে পানি বয়ে আনেন, তাঁদের, অর্থাৎ এই ‘ওয়াটার ওয়াইফ’ বা ‘জলপত্নী’-দের গ্রামের মানুষরা কিন্তু খুবই সম্মানের চোখে দেখেন৷
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
অত্যন্ত পরিশ্রমের কাজ
ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম ফেডারেল রাজ্য ‘মহারাষ্ট্রের’ এমনই একটি গ্রামর চিত্র এটি৷ কুয়ার সামনে স্থানীয় এক ‘জলপত্নী’ পানির পাত্র আর কলসিগুলোতো একে একে পানি ঢালছেন৷ সরকারি হিসেব অনুযায়ী, গত বছর ভারতের প্রায় ১৯ হাজার গ্রামে খাবার পানি ছিল না৷
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
বাঁচার জন্য পানি সঞ্চয়
মহারাষ্ট্রে খরা নতুন কিছু নয়৷ শেষবারের খরার সময় সাখারাম ভাগতের পরিবার জলকষ্টে ভীষণভাবে ভুগেছে৷ তাই আর জলের কষ্ট নয়! পিতলের কলসিগুলোতে আজকাল সব সময়েই যথেষ্ট পরিমাণে পানি ভরে রাখছে ওরা, যাতে আর ভোগান্তি না হয়৷
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
ভারতে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ
ভারতে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও প্রত্যন্ত এ সমস্ত গ্রামে ‘ওয়াটার ওয়াইফ’-এর রীতি বেড়ে চলেছে৷ তবে বেশিরভাগ সময়ই যেসব পুরুষ শুধু পানি আনার জন্য বিয়ে করেন, তাঁরা ‘জলপত্নী’-দের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর মতো এক বিছানায় ঘুমান না৷ ঠিক সেরকমই একটি পরিবারের কর্তা নামদেব৷ তাঁর দুই স্ত্রী শিবারতি (বামে) এবং বাগাবাই৷
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
মাথায় পানি, কোলে নাতি
নামদেবের দ্বিতীয় স্ত্রী শিবারতি অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাথায় পানি বহন করে ফিরে যাচ্ছেন গ্রামে৷ কোলে নাতিটিকেও সঙ্গে নিতে হয়েছে তাঁর৷ ‘ওয়াটার ওয়াইফ’ বা ‘জলপত্নী’-দের জীবন এরকমই৷ তাঁরা এক হয় বিধবা অথবা একক মা৷ আগের পক্ষের সন্তান বা নাতি-নাতনিকে বড় করে তোলার জন্য অনেকক্ষেত্রে একাই অভিভাবকের সমস্ত দায়িত্ব পালন করতে হয় তাঁদের৷
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
সাদা-কালো স্মৃতি চিহ্ন
নামদেবের প্রথম স্ত্রী বাগাবাই৷ তাঁর ঘরের দেয়ালে টাঙানো রয়েছে স্বামী-স্ত্রী দু’জনের পুরনো আমলের সাদা-কালো একটি ছবি৷ দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্ত্রীর মর্যাদা যে প্রথম স্ত্রীর সমান নয়, দেয়ালের ঠিক মাঝখানে টাঙানো ছবিটি সেটাই বলে দিচ্ছে৷ তারপরও স্বামীকে একেবারে নিজের বলার উপায় আছে কি?
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
7 ছবি1 | 7
মাঠে ব্যবহার করা জল পানের অযোগ্য কিনা তার ল্যাবরেটারি পরীক্ষার রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পর, আদালত অবশিষ্ট ম্যাচগুলির জন্য ব্যবহার করা জল পরীক্ষার দিকেও নজর রাখার কথা বলেছে৷ উল্লেখ্য, ক্রিকেট মাঠ ঠিকঠাক রাখতে রোজ জল লাগে প্রায় ৬০-৬৫ লাখ লিটার৷
জলাভাবে পীড়িত মহারাষ্ট্রে প্রচুর পরিমাণ জল খরচ করে আইপিএল-এর ম্যাচ চালিয়ে যাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়েও ক্রিকেট খেলোয়াড়, ক্রিকেট প্রেমী ও ক্রীড়া সাংবাদিকরা দ্বিধাবিভক্ত৷ এক বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক দেবাঞ্জন বন্দোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, আইপিএল ম্যাচ মহারাষ্ট্রের বাইরে নিয়ে যাওয়াটা জলাভাব মেটানোর স্থায়ী সমাধান নয়৷ মহারাষ্ট্রের খরা কবলিত মারাঠাওয়াড়া এলাকার চিনি কলগুলিতে যে পরিমাণ জল খরচ হয়, তাহলে তাদেরকেও রাশ টানতে বলা হচ্ছেনা কেন? চিনি কলগুলি সেচের জলের ৫০-৬০ ভাগ ব্যবহার করে৷ অবশ্য অন্য রাজ্যে নিয়ে যেতে তেমন কোনো অসুবিধা হবার কথা নয়৷ ভারতীয় ক্রিকেটের বর্তমান ও অতীত তারক ভিভিএস লক্ষণ এবং ক্যাপ্টেন ধোনি মনে করেন, জল সংকটের সমাধান অবশ্যই জরুরি, কিন্তু ম্যাচ সরিয়ে নিয়ে গেলেই তার সমাধান হবে না৷ এর সমাধান হওয়া দরকার দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে৷ ধোনির প্রশ্ন, টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সময় তো জল সংকটের কথা ওঠেনি? কলকাতা নাইটরাইডার্স বা কেকেআর টিমের অধিনায়ক গৌতম গম্ভীরের মতে, মানুষের কষ্টকে মূল্য দিতে হবে সবার আগে৷ খেলা তো আছেই৷ কুড়ি ওভারেই তা শেষ হয়ে যায় না৷ ভবিষ্যত আইপিএল-এর জন্য মাঠে জলের চাহিদা মেটাতে বৃষ্টির জল ভূগর্ভস্থ রিজার্ভারে ধরে রাখা দরকার৷ দরকার কৃত্রিম জল সিঞ্চন যাতে মাটির নীচের জলস্তর বাড়ে, ডয়চে ভেলেকে বললেন সমুদ্র বিজ্ঞানী অধ্যাপক এস হাজরা৷
ক্রিকেট পাগলদের জন্য দশটি তথ্য
ক্রিকেট বিশ্বকাপের ১১তম আসর চলছে৷ অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠানরত এ আসর নিয়ে ব্যস্ত সবাই৷ আসুন সেই ব্যস্ততার মাঝেই দশটি মজার তথ্য জেনে নেই৷
ছবি: Reuters/B. Malone
যৌথ আয়োজন
ক্রিকেট বিশ্বকাপের ক্ষেত্রে এটা স্বাভাবিক বলা চলে৷ একাধিক দেশ যৌথভাবে এই আসর আয়োজন করে থাকে৷ চলতি বিশ্বকাপে ভেন্যুর সংখ্যা ১৪টি৷ এরমধ্যে সাতটি ভেন্যু অস্ট্রেলিয়ায়, বাকি সাতটি নিউজিল্যান্ডে৷ প্রতিটি দেশ ২১টি করে ম্যাচের আয়োজন করছে৷ ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে, ২৯ মার্চ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Miller
রাউন্ড রবিন ফর্ম্যাট
চলতি আসরে সাতটি করে দল প্রাথমিক পর্যায়ের দু’টি গ্রুপে খেলছে৷ রাউন্ড রবিন ফর্ম্যাটে খেলা হচ্ছে, যার অর্থ গ্রুপের সবগুলো দল একে অপরের বিপরীতে খেলছে৷ দ্বিতীয় পর্যায় থেকে খেলা হবে ‘নক আউট’ পদ্ধতিতে৷
ছবি: Saeed Khan/AFP/Getty Images
বাংলাদেশের কাছে হার
বাংলাদেশের কাছে হেরে শুরু হয়েছে আফগানিস্তানের বিশ্বকাপ মিশন৷ এর আগে তিনবার আইসিসি ওয়ার্ল্ড টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছে দলটি৷ প্রতিবারই প্রথম পর্যায় থেকে বাদ পড়ে আফগানরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Lukas Coch
বিপুল টিভি দর্শক
২০১১ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয় ভারত৷ সেই খেলা টেলিভিশনে দেখেছেন ৯৮৮ মিলিয়ন মানুষ৷ সম্ভবত এটাই গোটা বিশ্বের মধ্যে টেলিভিশনে সর্বাধিক দর্শক টানা ম্যাচ৷ এর আগে ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনাল টিভিতে দেখেছিল ৯০৯ মিলিয়ন মানুষ৷
ছবি: Reuters/Omar Sobhani
সবচেয়ে দীর্ঘ সময় অপরাজিত...
ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিহাসে টানা সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া৷ ১৯৯৯ থেকে ২০১১ সময়ের মধ্যে তিনটি বিশ্বকাপ আসর মিলিয়ে টানা ৩৪টি ম্যাচ জিতেছে তারা৷ ওই তিনবারের চ্যাম্পিয়নও তারা৷ওই তিন আসরে সাফল্য অর্জন করতে গিয়ে ১৫টি দলকে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া৷
ছবি: Getty Images/R. Cianflone
সবচেয়ে দ্রুত গতির রেকর্ড
পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতারের দখলে রয়েছে বিশ্বকাপে সবচেয়ে দ্রুত গতির বল করার রেকর্ড৷ ২০০৩ সালের বিশ্বকাপের এক ম্যাচে ঘণ্টায় ১০০ মাইল (১৬০ দশমিক নয় কিলোমিটার) গতিতে একটি বল করেছিলেন তিনি৷ ক্রিজে তখন ছিলেন ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যান নিক নাইট৷
ছবি: AP
সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড়
বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় নেদারল্যান্ডসের নোলান ক্লার্ক৷ ১৯৯৬ বিশ্বকাপ খেলার সময় তাঁর বয়স ছিল প্রায় ৪৮ বছর৷ আর ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম বয়সি খেলোয়াড় ইউনাইটেড আরব আমিরাতের ইয়োদিন পুনজা৷ চলতি বিশ্বকাপ দলে থাকা এই খেলোয়াড়ের বয়স ১৬ বছর৷
ছবি: Fotolia/S.White
সবচেয়ে কম স্কোর
বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম স্কোর করার রেকর্ডটি ক্যানাডার৷ ২০০৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ৩৬ রান করতে সক্ষম হয়েছিল তারা৷ বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় স্কোর করার রেকর্ডটি ভারতের৷ ২০০৭ সালে বারমুডার বিপক্ষে ৪১৩ রান করেছিল ভারত৷
ছবি: William West/AFP/Getty Images
সবচেয়ে দুর্বল জার্মানি
ফুটবল বিশ্বকাপে জার্মানি বর্তমানে এক নম্বর দল হলেও ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) এর ব়্যাংকিংয়ে জার্মানি রয়েছে সবার নিচে৷ ৩৭টি দেশের মধ্যে জার্মানদের অবস্থান ৩৭তম!
ছবি: DW
সবচেয়ে সফল অস্ট্রেলিয়া
ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অস্ট্রেলিয়া৷ দশ আসরের মধ্যে চারবারই কাপ গেছে তাদের ঘরে৷ চলতি আসরেও ফেভারিট তারা৷