বনানী থানার ওসি নুরে আযম মিয়া বিডিনিউজকে বলেন, সড়ক পরিবহণ আইনের ৯৮ ও ১০৫ ধারায় করা মামলায় গাড়ির চালকের নাম উল্লেখ করা হয়নি৷
‘‘গাড়িটি জব্দ করার ও আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে ৷’’ তবে মামলা নিতে প্রায় দুই সপ্তাহ দেরি করার কারণ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ওসি৷
২ ডিসেম্বর মধ্যরাতে বিমানবন্দর সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত হন মনোরঞ্জন হাজং৷ দুই দফা অস্ত্রপচারে তার ডান পা হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলতে হয়েছে৷ তিনি বারডেম হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন৷
ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) সার্জেন্ট মহুয়ার অভিযোগ, তার বাবাকে ধাক্কা দেওয়া লাল রঙের বিএমডব্লিউ গাড়িটির চালকের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে বনানী থানা মামলা নেয়নি৷ এজাহারে তিনি গাড়িচালক এবং তার ‘প্রভাবশালী' বাবার নাম তিনি লিখেছিলেন৷
মহুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, থানার একজন পরিদর্শক তাকে বলেন, ‘তোমার চাকরির বয়স তো অল্পদিন৷ এ সমস্ত বিষয় নিয়ে বেশি মাতামাতি করো না, বিপদে পড়ে যাবা৷ আমি তো তোমার চেয়ে সিনিয়র, আমার কথা শোনো'৷’’
যারা দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে আপোশের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান মহুয়া ৷ অবসরে থাকা মনোরঞ্জন গুলশানের এক রেস্তোঁরায় নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন ৷
এই দুর্ঘটনার খবর বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার করা হয়েছে৷ খবরের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ২ ডিসেম্বর রাত ২টার পর বিমানবন্দর সড়কে মোড় ঘোরার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মনোরঞ্জন হাজং৷ একটি গাড়ি এসে ধাক্কা দিলে তিনি ছিটকে পড়েন৷ মনোরঞ্জন হাজংকে উদ্ধার করে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতালে) ভর্তি করে পুলিশ৷
গত ৩ ডিসেম্বর অস্ত্রোপচার করে মনোরঞ্জনের ডান পায়ের গোড়ালি কেটে ফেলা হয়৷ পরে সংক্রমণ ছড়ায় ৮ ডিসেম্বর আবারও অস্ত্রপচার করে হাঁটুর নিচ থেকে ডান পা কেটে ফেলতে হয়৷ ষাটোর্ধ্ব মনোরঞ্জনের হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস থাকায় পরে তাকে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷
গত ১৪ ডিসেম্বর যমুনা টিভিতে প্রচারিত এক ভিডিও ফুটেজে, দুর্ঘটনার পর একটি লাল রঙের বিএমডাব্লিউ গাড়ি জনতা আটক করে পুলিশে দেয়৷ সেখানে গাড়ির চালকের ছবিও দেখানো হয়৷
পুলিশ সার্জেন্ট মহুয়ার মামলা না নেওয়ার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার আসাদুজ্জামান যমুনা টেলিভিশনকে টেলিফোন সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘বিষয়টা আমাদের সদস্যের৷ আমাদের একটা সিনিয়র কমান্ড আছে, অথরিটি আছে, সবই আছে৷ আমার তো মনে হয় যে এটা গণমাধ্যমে যাওয়ার কোনো দরকার ছিল না৷’’
‘‘আমাদের সহকর্মী মহুয়ার মামলা না করতে পারার তো কোনো কারণ নেই৷ এটা তদন্ত হচ্ছে, তদন্তের পরেই আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব৷’’ বলেন পুলিশের উপ কমিশনার আসাদুজ্জামান৷
মামলার পর প্রতিক্রিয়া জানতে সার্জেন্ট মহুয়া হাজংয়ের সাথে টেলিফোন কিংবা এসএমএস-এ যোগাযোগ করে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
মামলা যখন হয়রানির জন্য
কেউ অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে মামলা হবে৷ সে অনুযায়ী তদন্ত ও বিচার হবে এমনটাই স্বাভাবিক৷ কিন্তু এর ব্যতিক্রমও হয়৷ অপরাধ না করেও মামলায় ফাঁসছেন অনেকে৷ এমন অনেক অভিযোগ আছে৷ অনেক মামলার অভিযোগ হাস্যরসও তৈরি করে৷
ছবি: bdnews24.com
হাস্যকর মামলার একাল-সেকাল
জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গভবনের কাপ, পিরিচ চুরির মামলা দেন মোশতাকের বিরুদ্ধে৷ ট্রাইব্যুনালের বিচারে তাঁর তিন বছরের জেল ও এক লাখ টাকা জরিমানা হয়৷ অব্যাহতি পান ১৯৭৯ সালে ৷ জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছিল প্লেট চুরির মামলা৷ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলনের বিরুদ্ধে ভ্যানিটি ব্যাগ, স্বর্ণের নেকলেস ছিনতাইয়ের অভিযোগ আনা হয়েছিল মহাজোট সরকারের আমলে৷
ছবি: Fotolia/Mehmet Dilsiz
মৃত ব্যক্তিও আসামি!
২০১৭ সালে ডেঙ্গুতে মারা যান চট্টগ্রামের বিএনপি কর্মী জসিম৷ ২০১৮ সালের অক্টোবরে পুলিশের উপর ককটেল ছুড়ে মারার মামলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে৷ ঢাকার চকবাজার থানা বিএনপির আহবায়ক আব্দুল আজিজুল্লাহ মারা গেছেন ২০১৬ সালের মে মাসে৷ প্রায় আড়াই বছর পর তাঁর বিরুদ্ধেও ককটেল ছোড়ার অভিযোগ আনে পুলিশ৷
ছবি: bdnews24.com
অন্ধ প্রবীণের অগ্নিসংযোগ, পঙ্গু ব্যক্তির হামলা!
৭০ বছর বয়স, নেই দৃষ্টিশক্তি৷ তবুও জাতীয় নির্বাচনের আগে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় গাড়ি পোড়ানো মামলার আসামি করা হয়েছিল কেরামত আলীকে৷ শারীরিক প্রতিবন্ধী সুনামগঞ্জের তারা মিয়ার বিরুদ্ধেও চাপাতি হকস্টিক নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগে মামলা করা হয়েছিল প্রায় একই সময়ে৷ ভোটকেন্দ্র দখলের অভিযোগ আনা হয়েছে আশি বছরের প্রৌঢ়ের বিরুদ্ধেও৷ নির্বাচনের আগে পরে এমন অনেক মামলার খবরই এসেছে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে৷
ছবি: Reuters
অজ্ঞাতনামা মামলা
কোনো একটি ঘটনা ঘটলে সেখানে চিহ্নিত ব্যক্তিদের পাশাপাশি নামহীন সংখ্যা দিয়েও অনেককে আসামি করা হয়, যা পরিচিত অজ্ঞাতনামা মামলা হিসেবে৷ সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে এমন অনেক মামলা হয়েছে৷ এধরণের মামলায় বিরোধী দলের কর্মীসহ সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও পুলিশের বিরুদ্ধে বাণিজ্যের অভিযোগ আছে৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/Shariful Islam
নির্বাচনের আগে মামলা
সবশেষ জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ৪,৪২৯টি মামলা করা হয়েছে৷ যাতে ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৯৭৫ জনকে আসামি করা হয় বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman
কোটা বিরোধী আন্দোলন
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে আন্দোলন তুঙ্গে উঠে বাংলাদেশে৷ এসময় ৭০০ জনের বিরুদ্ধে অজ্ঞাত মামলা করা হয় বলে খবর বের হয় গণমাধ্যমে৷ পরে অনেককে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ৷
ছবি: bdnews24
সড়ক নিরাপত্তার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের হয়রানি
স্কুল ছাত্রীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সড়কে নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন শিক্ষার্থীরা৷ এই আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা নিয়ে ঢাকা মহানগরে ৪৩টি সহ ৯৫টি মামলা দায়েরের বিষয়ে খবর বের হয় গণমাধ্যমে৷ এই সময়ে গ্রেপ্তার করা হয় প্রখ্যাত ফটোগ্রাফার শহীদুল আলমকে৷ তাঁর বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করে পুলিশ৷
ছবি: bdnews24
অজ্ঞাত মামলা পোশাক শ্রমিকদের বিরুদ্ধে
ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর সমন্বয়ের দাবিতে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে রাস্তায় নামেন তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা৷ পুলিশের সাথে সংঘর্ষে এসময় এক শ্রমিকের মৃত্যুও হয়৷ এই ঘটনায় ২৯টি মামলা করা হয়েছে৷ যেখানে ৫৫১ জনের নামে আর ৩,০০০ অজ্ঞাতনামা শ্রমিককে আসামি করা হয়, যা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছিল হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷
ছবি: AFP/Getty Images
মিথ্যা মামলা, সাজানো আসামি
অনেক সময় নাটক সাজিয়েও অনেককে আসামি বানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ একুশে আগস্ট মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া জজ মিয়া৷ সাতটি মামলায় ভুয়া পরোয়ানায় এক কৃষকের ১০০ দিন হাজতবাসের খবরও সম্প্রতি গণমাধ্যমে বেরিয়েছে৷