বিরোধী ১৮ দলীয় জোটকে নির্বাচনে আনার জন্য শেষ মুহূর্তেও তত্পরতা চালাচ্ছেন মার্কিন এবং ব্রিটিশ কূটনীতিকরা৷ তাঁরা চাইছেন, নির্বাচন পিছিয়ে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে৷ এ জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে বৈঠকও করছেন তাঁরা৷
বিজ্ঞাপন
শুরুটা করেন ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট গিবসন৷ এরপর যুক্ত হন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা৷ রবার্ট গিবসন বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসূচির শেষ দিন, সোমবার বিকেলে৷ তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন৷ তবে ব্রিটিশ হাই কমিশনার বৈঠকের বিষয় নিয়ে মুখ খোলেননি৷ এর একদিন পর, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন গিবসন৷ সেই বৈঠকের বিষয় নিয়েও কেউ মুখ খোলেননি৷
মঙ্গলবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা বৈঠক করেন বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে৷ বৈঠকের পর তিনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন৷ তিনি সহিংসা বন্ধে সংলাপ এবং সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব দেন৷ গুরুত্ব দেন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ওপর৷ বলেন, বিরোধী দলকে মত প্রকাশ করতে দেয়া উচিত৷ এরপর মার্কিন দূত বুধবার আবারো বৈঠক করেন বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট শমসের মুবিন চৌধুরীর সঙ্গে৷ শমসের মুবিন অবশ্য বলেন যে, মার্কিন দূত নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাতেই তাঁর বাসায় এসেছিলেন৷
তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে ভিন্ন কথা৷ জানা গেছে, এই দুই কূটনীতিক মোট তিনটি বিষয় নিয়ে কাজ করছেন৷ সহিংসতা বন্ধ, নির্বাচন পিছানো এবং বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসা৷ এ জন্য তাঁরা প্রকাশ্য বৈঠকের পাশাপাশি গোপনেও কথা বলছেন দুই দলের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে৷ তাঁরা মনে করেন, এখনই যদি দুই দলের মধ্যে একটি সংলাপ শুরু করা যায় তাহলেও পরিস্থিতি ইতিবাচক দিকে মোড় নিতে পারে৷ মার্কিন রাষ্ট্রদূত হয়ত এ নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই সরকারের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলবেন৷ জানা গেছে, এ জন্য কয়েকদিন আগে সুশীল সমাজের প্রস্তাবটি আলোচনায় রাখা হচ্ছে৷ আর তা হলো, সংসদের মেয়াদ শেষে ২৪শে জানুয়ারি সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী তিন মাসে নির্বাচন করা৷ সেটা হলে আলোচনার জন্য ২৪শে জানুয়ারি পর্যন্ত সময় পাওয়া যাবে৷
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং রাজনীতির বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, শেষ মুহূর্তে এই দুই প্রভাবশালী কূটনীতিকের তত্পরতা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ৷ তবে তাঁদের এই তত্পরতা ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন, না এই নির্বাচনের পর কত দ্রুত সব দলের অংশগ্রহণে আরেকটি নির্বাচন করা যায়, তা নিয়ে – সেটা এখনো স্পষ্ট নয়৷ কারণ কোনো দিক থেকেই সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি৷ তবে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন যে গ্রহণযোগ্য হবে না, তা তাঁরা স্পষ্ট করেছেন৷
নতুন ভোটারদের নির্বাচনি ভাবনা
যারা প্রথমবার ভোটার হয়েছেন সেরকম কয়েকজনের কাছে তাঁদের নির্বাচনি ভাবনা জানতে চাওয়া হয়েছিলো৷ ছবিঘরের মধ্য দিয়ে তাঁদের মতামত তুলে ধরা হলো৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিভ্রান্ত দিলরুবা
দিলরুবা নোমানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী৷ নির্বাচন না হয়েও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনপ্রতিনিধির নির্বাচিত হওয়া একটি গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না তিনি৷ ভোট দিবেন কিনা এখনো ঠিক করেন নি ঢাকার এই প্রথম ভোটার৷
ছবি: DW/M. Mamun
আগ্রহে ভাটা পড়লেও ভোট দেবেন
আনন্দকুমার শীল৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র৷ বাড়ি যশোরের কেশবপুরে৷ প্রথম ভোটার হিসেবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাঁর উৎসাহ ছিল অনেক বেশি৷ তবে বিরোধী দলবিহীন একতরফা নির্বাচনের কারণে তাঁর সে উৎসাহে ভাটা পড়েছে৷ তারপরেও একজন সুনাগরিক হিসেবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দিতে যাবেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ঈশান দ্বিধাগ্রস্ত
ঈশান ভূঁইয়া৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী৷ ঢাকার ভোটার তিনি৷ দেশের অন্য ১৫৪টি আসনের মতো হতভাগ্য ভোটার কিনা সেটাও তিনি জানেন না এখনো৷ ভোটের আমেজও চোখে পড়ছে না তাঁর৷ বিদেশি কোনো পর্যবেক্ষকও আসছেন না ৫ জানুয়ারির ভোট দেখতে৷ এধরণের একটি নির্বাচনে ভোট দেয়ার আপাতত পরিকল্পনা নেই তাঁর৷
ছবি: DW/M. Mamun
নির্বাচনে বিশ্বাস নেই, তবুও ভোট দেবে
ফাহিম হাসান৷ ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্র৷ ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার টিকবে না এই বিশ্বাস তাঁর৷ তারপরেও প্রথম ভোটার হিসেবে নিজের মত প্রকাশ করতে চান তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ক্ষুব্ধ ইশরাত রেজা
ইশরাত রেজা৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে পড়েন৷ ঢাকার ভোটার তিনি৷ ইতিমধ্যেই তাঁর এলাকার জনপ্রতিনিধি একক প্রার্থী নিসেবে নির্ধারিত হয়ে গেছে৷ প্রথম ভোটার হিসেবে অংশগ্রহণ করতে না পেরে ক্ষুব্ধ তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
হতাশ, তাই ভোট দেবেন না
মোলাব্বিয়া সুলতানা৷ হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের এই ছাত্রীর বাড়ি চাঁদপুরে৷ প্রথমবারের মতো ভোটার হওয়া দেশের এই নাগরিক রাজনীতিবিদদের উপর কোনোরকম আস্থা খুঁজে পান না৷ এতো চেষ্টার পরেও রাজনীতিবিদরা কোনো সমঝোতায় আসতে না পারায় হতাশ তিনি৷ রাজনীতিবিদদের এই স্বার্থপর মনোভাব থেকে দেশের মুক্তি চান তিনি৷ ৫ জানুয়ারির মতো একটি একদলীয় নির্বাচনে ভোট দেয়া তাঁর মতে অর্থহীন৷
ছবি: DW/M. Mamun
দুই দলের কবল থেকে মুক্তি
প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের সমঝোতায় বিশ্বাসী রিফাত বিন তারেক৷ পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে৷ ঢাকার ভোটার তিনি৷ তাঁর এলাকার জনপ্রতিনিধিও ইতিমধ্যেই নির্ধারিত হয়ে গেছে৷ দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কবল থেকে দেশের মুক্তি চান তরুণ এই ভোটার৷
ছবি: DW/M. Mamun
সহিংসতা না হলে ভোট দেবেন জাবেদ
জাবেদ ইবেনে ওয়াহেদ৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র তিনি৷ বাড়ি নোয়াখালীতে৷ প্রতিদিন যে হারে দেশে সহিংসতা হচ্ছে ভোটের দিনও হয়ত এর রেশ থাকতে পারে৷ তারপরেও নিরাপদ মনে করলে ভোট দিতে যাবেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
সুজন তাঁর মতামত দেবে
সুজন কুমার কুণ্ডু৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র৷ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি অনেকটাই একনায়কতন্ত্রের ছোঁয়া দেখতে পাচ্ছেন৷ দেশের প্রধান দুই দলই ক্ষমতার লোভে পাগল৷ দেশের উন্নতি নিয়ে তাদের চিন্তা আছে বলে মনে হয় না৷ তারপরেও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দেয়ার ইচ্ছা আছে ঝিনাইদহের তরুণ এই ভোটারের৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভোট দিয়ে লাভ নেই
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমন দাস৷ ৫ জানুয়ারির মতো একটি নির্বাচনে ভোট দেয়ার প্রয়োজন দেখছেন না তিনি৷ প্রধান বিরোধী দল বিহীন নির্বাচন তাঁর কাছে অনেকটা সাজানো নাটকের মতো মনে হয়৷ যাকেই ভোট দিন না কেন জনপ্রতিনিধি নির্ধারিতই আছেন৷ কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগেরই এক দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তাঁর কাছে দৃষ্টিকটু লেগেছে৷ এই নির্বাচনে ভোট দিবেন না তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ
সৈয়দ মোহাম্মদ সাদাত৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী৷ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দেয়ার ইচ্ছা আছে তাঁর৷ তবে বাইরে থেকে কোনো পর্যবেক্ষক না আসায় এ ভোটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে তাঁর মনে সন্দেহ আছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
স্থায়ী হবে না, তাই ভোট দেবেন না
খুলনার ভোটার মেহজাবিন পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে৷ তাঁর মতে এ ধরনের একটি সরকারের স্থায়িত্ব দীর্ঘায়িত হবে না৷ বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য বারবার ব্যয়বহুল নির্বাচন খুবই ক্ষতিকর৷ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দেবেন না তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
12 ছবি1 | 12
অধ্যাপক আহমেদ বলেন, নির্বাচনের আগে বা পরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অবশ্যই সমঝোতা হবে৷ আর এই দুই কূটনীতিক চেষ্টা করছেন যাতে দ্রুত সেই সমঝোতা সম্ভব হয়৷ তিনি বলেন, ভারতীয় পত্র-পত্রিকার খবর অনুযায়ী ভারতের অবস্থানের কিছুটা হলেও পরিবর্তন হয়েছে৷ তারা এখন চাইছে জনগণের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন৷ এটা আলোচনার মাধ্যমে নিশ্চিত করার কথা বলছে তারা৷ স্বাভাবিকভাবেই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত বাংলাদেশ নিয়ে তাদের অবস্থানের দূরত্ব কমাতে চাইছে৷
মার্কিন এবং ব্রিটিশ দূতের এই প্রচেষ্টার সঙ্গে দ্রুতই আরো অনেক দেশের কূটনীতিক যুক্ত হবেন বলে মনে করেন অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ৷