সংসদে দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে শেষ বাধাও অতিক্রম করলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ রাজনৈতিক মঞ্চে অভিজ্ঞ দলগুলিকে পেছনে ফেলে নিজের নতুন দলকে অভূতপূর্ব সাফল্য এনে দিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Huguen
বিজ্ঞাপন
জনমত সমীক্ষায় যে বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতার পূর্বাভাষ পাওয়া যাচ্ছিল, সেই লক্ষ্য অর্জন করতে না পারলেও সংসদের ৫৭৭ আসনের মধ্যে ৩৫১টি দখল করলো ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ'র নতুন রাজনৈতিক দল আরইএম ও তার জোটসঙ্গীরা৷ দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোট গ্রহণের পর এবার দেশ শাসনের কাজে মন দিতে পারবেন প্রেসিডেন্ট৷ মাত্র ১৬ মাস আগে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে একজন নেতার ছত্রছায়ায় প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচনে এমন সাফল্য নজিরবিহীন৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্সে অন্য কোনো প্রেসিডেন্ট সহজে এমন ক্ষমতা ভোগ করতে পারেননি৷ অতএব মাক্রোঁ বিনা বাধায় তাঁর প্রস্তাবিত সংস্কার কর্মসূচি কার্যকর করতে পারবেন – এমনটাই ধরে নেওয়া যায়৷
তবে আসনের বিচারে সাফল্য সত্ত্বেও ৪৪ শতাংশেরও কম ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করায় জনসমর্থন নিয়ে কিছু সংশয় থেকে যাচ্ছে৷ দেশের দীর্ঘমেয়াদি অচলাবস্থা কাটাতে তিনি যেসব সাহসি সংস্কার কর্মসূচি চালাতে চান, তার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে৷ বিশেষ করে শ্রমিক অধিকার আইনে ব্যাপক রদবদল ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের ফলে অনেক মানুষ অসন্তুষ্ট হবেন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নকে চাঙ্গা করে তুলতেও তিনি বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে চান৷
একের পর এক নির্বাচনে মাক্রোঁ-ঝড়ের ফলে বিরোধী শিবির বিপর্যস্ত৷ রক্ষণশীল দল জোরালো ধাক্কা খেয়েছে৷ মাত্র ২৯টি আসন পেয়ে সমাজতন্ত্রী দল কার্যত নির্মূল হয়ে পড়েছে৷ এমনকি চরম দক্ষিণপন্থি ন্যাশানাল ফ্রন্ট দলের নেত্রী মারিন ল্য পেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করলেও তাঁর দল সংসদে মাত্র ৮টি আসন পেয়েছে৷ তিনি নিজে জীবনে প্রথমবার সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন৷
এবারের সংসদ নির্বাচনে আরও কিছু চমক রয়েছে৷ এই প্রথম প্রায় ১৫৬ জন নারী সংসদে প্রবেশ করছেন, যা বিদায়ী সংসদের রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছে৷ এছাড়া তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বও চোখে পড়ার মতো৷ বিদেশি বংশোদ্ভূত অনেক মানুষ জনপ্রতিনিধি হয়েছেন৷ এমন আরও অনেক বৈচিত্র্য দেখা যাচ্ছে সংসদ সদস্যদের মধ্যে৷
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্বে শুধু দুই প্রার্থীর মোকাবিলা হচ্ছে না, দুই সম্পূর্ণ ভিন্ন ভবিষ্যতের স্বপ্নের মধ্যে সংঘাত ঘটছে৷ ফলাফলের প্রভাব ফ্রান্সের সীমা ছাড়িয়ে ইউরোপ তথা গোটা বিশ্বের উপর পড়তে পারে৷
ছবি: Reuters/R. Pratta
মুক্ত, উদার, ইউরোপপন্থি
মধ্যপন্থি প্রার্থী এমানুয়েল মাক্রোঁ ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যেই ফ্রান্সের অবস্থান আরও মজবুত করতে চান৷ দেশের জর্জরিত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে তিনি কোম্পানিগুলির উপর করের হার কমানো এবং বিপুল রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছেন৷
ছবি: Reuters/P. Wojazer
ইউরোপের সামনে চ্যালেঞ্জ
মারিন ল্য পেন যেভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তথা অভিন্ন মুদ্রা ইউরো ত্যাগ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা গোটা ইউরোপে স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি৷ চূড়ান্ত নির্বাচনের আগে তিনি এ বিষয়ে কিছুটা সুর নরম করলেও এমন ইউরোপ-বিদ্বেষ নিয়ে দুশ্চিন্তার বড় কারণ থেকে যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. Zihnioglu
অভিন্ন মুদ্রার সংকটের আশঙ্কা
ইউরোপের দক্ষিণের কয়েকটি দেশে আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংকটের পর ইউরো এলাকায় স্থিতিশীলতা আনতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷ ইউরোপের চালিকা শক্তি হিসেবে জার্মানি ও ফ্রান্স এই কাঠামোর মূল ভিত্তি৷ ল্য পেন ক্ষমতায় এলে ইউরো এলাকায় চরম অরাজকতার আশঙ্কা রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/Schönberger
রাশিয়ার ‘কালো ছায়া’
গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের জোরালো অভিযোগ নিয়ে যখন তদন্ত চলছে, তখন ইউরোপেও রাশিয়ার ‘কালো ছায়া’র বিষয়টি বারবার উঠে আসছে৷ মারিন ল্য পেন মস্কোর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি গোপন করেন না৷ এমনকি রাশিয়া থেকে আর্থিক সাহায্যও পেয়েছেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Klimentyev
অভিবাসন নিয়ে মতপার্থক্য
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের পর শরণার্থীদের ঢল নিয়ে ইউরোপের রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠেছিল৷ তার সুযোগ নিয়ে মারিন ল্য পেন বিদেশি, শরণার্থী ও অভিবাসীদের ক্ষেত্রে কঠোর নীতির অঙ্গীকার করেছেন৷ ফ্রান্সের সীমা আর উন্মুক্ত রাখতে চান না তিনি৷ অন্যদিকে মাক্রোঁ শরণার্থীদের প্রতি উদার নীতিতে বিশ্বাসী৷
ছবি: picture-alliance/AA/NnoMan Cadoret
জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ফ্রান্সের কাঠামো ঢেলে সাজাতে চান মারিন ল্য পেন৷ সামরিক জোট ন্যাটোয় ফ্রান্সের ভূমিকা থেকে শুরু করে আরও পুলিশ নিয়োগ করতে চান তিনি৷ বিদেশি বংশোদ্ভূত অপরাধীদের বহিষ্কারের পরিকল্পনাও আছে তাঁর৷ মাক্রোঁ নিরাপত্তা জোরদার করতে চাইলেও নাগরিক অধিকার খর্ব করার বিরোধী৷