শেষ হল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্ব
১১ মে ২০১১
বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের মাওবাদী অধ্যুষিত জঙ্গলমহলের ১৪টি আসনে সবার শেষে ভোটগ্রহণের একমাত্র উদ্দেশ্যই ছিল যাতে নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য ও কেন্দ্রীয় প্রশাসন তার পূর্ণ শক্তি দিয়ে যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারে৷ গত দু-তিন বছরে এই জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষত প্রত্যন্ত এলাকায় এমন বেপরোয়া সন্ত্রাস, নাশকতা ছড়িয়েছিল মাওবাদী গেরিলারা যে প্রশাসন নাকাল হয়েছিল অবস্থা সামাল দিতে৷ যে কারণে বাকি রাজ্যের ভোটপর্ব শেষ করে, মোট ৬০৪ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী জড়ো করা হয়েছিল এই একটি অঞ্চলে৷ অর্থাৎ ১৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রায় ২৬ লক্ষ ভোটার এবং সেইসঙ্গে ভোটকর্মী ও প্রশাসনিক কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য প্রায় সাড়ে ছ হাজার সেনা জওয়ান৷ হাতে তাদের অত্যাধুনিক অস্ত্র, সঙ্গে সাঁজোয়া গাড়ি, মাইন অকেজো করার বিশেষ যান, বায়ুসেনার হেলিকপ্টারে আকাশপথে নজরদারি৷ জঙ্গলমহলে সশস্ত্র টহল শুরু হয়ে গিয়েছিল ভোটের দুদিন আগে থেকেই৷ সেনা জওয়ানেরা লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলে এসেছিলেন ভয় না পেয়ে ভোট দিতে৷
শেষ পর্যন্ত সাফল্যের সঙ্গেই জঙ্গলমহলে মাওবাদী চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করল নির্বাচন কমিশন৷ জিত হল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার৷ নাশকতা এড়াতে আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল দুপুর তিনটের মধ্যে ভোটপর্ব মিটিয়ে ফেলার যাতে দিনের আলো থাকতে থাকতেই ভোটকর্মীরা নিরাপদ জায়গায় চলে আসতে পারেন৷ কার্যত দেখা গেল, তিনটে বাজার আগেই অনেক বুথে শেষ হয়ে গেল ভোট৷ কারণ অনেক বছর পর জঙ্গলমহলে ভোট বয়কটের কোনও ডাক ছিল না, ভোট দিলে আঙুল, হাত বা মাথা কেটে নেওয়ার কোনও হুমকি ছিল না৷ ফলে অধিকাংশ ভোটার একেবারে সকাল সকাল গিয়ে ভোট দিয়ে এসেছেন৷ বেলা ১১টার মধ্যে ৫০ শতাংশ ভোট পড়ে গেছে৷ প্রত্যন্ত এলাকার বুথগুলিতে, যেখানে ভোটারসংখ্যা কম, সেখানে প্রায় ৮০ শতাংশ ভোটই পড়ে যায় দুপুর ১২টার মধ্যে৷ দিনের শেষে তিন জেলার ভোটের হার দাঁড়ায় ৮৩ শতাংশ৷ এর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরে ৮৬.২৬ শতাংশ, বাঁকুড়ায় ৮৪ শতাংশ এবং পুরুলিয়ায় ৭৬.৫৯ শতাংশ ভোট পড়েছে৷ কোথাও কোনও অশান্তি, হাঙ্গামার খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন৷
মঙ্গলবার জঙ্গলমহলের এই ভোটপর্বের সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হল ২০১১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ৷ ভোট গণনা এবং ফল ঘোষণা হবে আগামী ১৩ মে৷
প্রতিবেদন: শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন