1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শ্রমিকদের মজুরির হিসেবে নতুন কৌশল

১৫ এপ্রিল ২০২০

বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকরা গত মার্চের বকেয়া বেতন না পেয়ে বুধবার সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন৷ ১৬ এপ্রিলের মধ্যে সব তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার কথা৷

ফাইল ছবিছবি: bdnews24.com/M.Z. Ovi

কোনো কোনো মালিক বেতন না দিয়ে নতুন তারিখ নির্ধারণ করছেন বলে অভিযোগ শ্রমিকদের৷ বিজিএমইএ অবশ্য দাবি করেছে, তাদের সদস্যভুক্ত কারখানায় কর্মরত ৭৮ ভাগ শ্রমিকই বেতন পেয়েছেন৷  তাদের কথা, বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত মোট কারখানা দুই হাজার ২৭৪টি৷ আর এই সব কারখানায় মোট শ্রমিক ২৪ লাখ ৭২ হাজার ৪১৭ জন৷ কিন্তু শ্রমিক নেতারা বলছেন, বাস্তবে পোশাক কারখানা পাঁচ হাজার এবং শ্রমিক কমপক্ষে ৫০ লাখ৷

সিরাজুল ইসলাম রনি

This browser does not support the audio element.

এই পরিস্থিতিতে বুধবার ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরে কমপক্ষে ৪০টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন৷ তারা করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই বিক্ষোভ করায় আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়৷ ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকরা স্লোগান দেন, ‘‘পেটে মোদের ভাত নাই, করোনায় ভয় নাই৷’’ 

যে কারণে শ্রমিকদের ভয় নাই
ঢাকার মিরপুরের ক্লেমুন গার্মেন্টস-এর অপারেটর রবিউল ইসলাম জানান, ‘‘আজ (বুধবার) আমাদের বেতনের তারিখ ছিলো৷ কিন্তু গিয়ে জানতে পারি বেতন হবে না৷ এরপর আমরা কারখানার সামনের রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু করি৷ একপর্যায়ে পুলিশ ও মালিক পক্ষের লোকজন এসে আমাদের উঠিয়ে দেয়৷ কারখানার ম্যানেজার জানিয়েছেন, ২৬ তারিখের আগে বেতন দেয়া সম্ভব নয়৷ ২৫ তারিখের পর গার্মেন্টস খোলার কথা রয়েছে৷  যদি খোলে তাহলে তারা বেতন দিতে পারবেন৷ তার আগে নয়৷’’

তিনি বলেন, ‘‘করোনার ভয়ের মধ্যেও আমরা বেতনের জন্য রাস্তায় নেমেছি৷ কী করব? আমাদের পেটে ভাত নাই৷ পেতে ভাত না থাকলে করোনার ভয় দিয়ে কী হবে?’’

কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় ওয়েমার্ট ফ্যাশন-এর অপারেটর দোলনা আক্তার বলেন, ‘‘সকালে কারখানায় গিয়ে আমরা বেতন না পেয়ে সড়ক অবরোধ করি৷ এরপর পুলিশ ও মালিক পক্ষের লোকজন আমাদের কারখানার ভিতরে নিয়ে যায়৷ আমাদের সবাইকে পাঁচ হাজার টাকা করে দিয়ে বাসায় চলে যেতে বলে৷ বেতনের বাকি টাকা ২৬ তারিখের পরে দেয়ার কথা জানায়৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এই টাকা দিয়ে আমরা কী করব? ঘর ভাড়া দেব না খাব? আমরাতো কোনো ত্রাণও পাচ্ছি না৷''
উত্তরার টি এন এফ ফ্যাশনের শ্রমিক মাসুদ রানা জানান, ওই এলাকার পাঁচটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন দেয়ার কথা ছিলো৷ কিন্তু তাদেরটাসহ কোনো কারখানায় বেতন হয়নি৷ শ্রমিকরা রাস্তায় বিক্ষোভ করে পুলিশের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত চলে যান৷  তিনি বলেন, ‘‘মালিক পক্ষের কেউ নেই৷ আমরা কবে বেতন পাব জানি না৷’’

সরকারের দেয়া টাকা কে পাচ্ছে, কারা পাচ্ছে?

33:57

This browser does not support the video element.

বিজিএমইএর হিসাব
বিজিএমইএ জানিয়েছে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে বুধবার এক হাজার ১৮৬টি কারখানায় শ্রমিকদের বেতন দেয়া হয়েছে৷  ঢাকায় ৩৭২টি কারখানার মধ্যে ২০১ টি, গাজীপুরে ৮১৮ টি কারখানার মধ্যে ৪৩২টি, সাভার-আশুলিয়ায় ৪৯১টি কারখানার মধ্যে ২৪৩টি, নারায়ণগঞ্জে ২৬৯ টি কারখানার মধ্যে ১১৮টি, চট্টগ্রামের ৩২৪টি কারখানার মধ্যে ১৫৬টি এবং বিভিন্ন এলাকার আরো ৪২টি কারখানার মধ্যে ৩৬টি কারখানা মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করেছে৷

বিজিএমইএর দাবি, তাদের সদস্যভুক্ত দুই হাজার ২৭৪টি কারখানার মধ্যে এক হাজার ১৮৬টি কারখানায় বেতন দেয়া হয়েছে৷ সদস্যভুক্ত কারখানায় ২৪ লাখ ৭২ হাজার, ৪১৭ জন শ্রমিক কাজ করেন৷ তাদের মধ্যে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৬০০ শ্রমিক বুধবার পর্যন্ত বেতন পেয়েছেন৷ শতকরা হিসেবে ৭৮ ভাগ শ্রমিক বেতন পেয়ছেন৷ আর কারখানা হিসেবে  শতকরা ৫২ ভাগের বেশি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বেতন পেয়েছেন৷

হিসেবের ফাঁকি
বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ‘‘তারা এখানে কমপ্লায়েন্স ফ্যাক্টরির হিসেব দিচ্ছেন৷ বাস্তবে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ মিলিয়ে কারখানার সংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি৷ আর শ্রমিক ৫১ লাখ৷ বিজিএমইএ এর ডাটাবেজেই ৪২ লাখ শ্রমিকের কথা বলা আছে৷  তাদের সংগঠনের নির্বাচনের সময়ই সাড়ে চার হাজারের বেশি পোশাক কারখানার মালিক ভোটার ছিলেন৷ এখন তারা সংখ্যা কমিয়ে দেখাচ্ছে দায় দায়িত্ব এড়ানোর জন্য৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের হিসাবে সর্বোচ্চ ৫০ ভাগের মত পোশাক কারখানায় বেতন হয়েছে বুধবার পর্যন্ত৷  বেতন পেলে শত শত শ্রমিক এই করোনার মধ্যে রাস্তায় নামবেন কেন?’’ 

রুবানা হক

This browser does not support the audio element.

বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘‘আগামীকালের (১৬ এপ্রিল) মধ্যে ৮০ ভাগ কারখানায় বেতন হয়ে যাবে৷ বাকি কারখানাগুলোতে কবে হবে এখনো নিশ্চিত নয়৷ তবে কেউ বেতন ছাড়া থাকবেন না৷’’

তিনি দাবি করেন, ‘‘যেসব কারখানার শ্রমিকরা এখন রাস্তায় নামছেন ওইসব কারাখানা বিজিএমইএর সদস্য নয়৷  তারপরও আমরা চেষ্টা করছি তারাও যাতে মজুরি পান৷ ব্যাংকে বলছি তাদের ঋণ দিতে৷ কারণ শ্রমিকতো শ্রমিকই৷ আর আমরা যারা বেতন দিচ্ছি তারা নিজেদের ফান্ড থেকে দিচ্ছি৷ প্রণোদনার টাকা এখনো প্রসেস হয়নি৷’’

তিনি বিজিএমইএর সদস্যের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘‘যারা সরাসরি এক্সপোর্টার তারাই সদস্য৷’’

সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ‘‘অনেক ছোট এবং মাঝারি কারখানা আছে যারা এক্সপোর্টারদের হয়ে কাজ করে৷  তাদেরতো এখন অস্বীকার করলে চলবে না৷’’

ফৌজদারি মামলার দাবি
যেসব গার্মেন্টস মালিকদের কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনার মধ্যে শ্রমিকরা বেতনের জন্য রাস্তায় নামতে বাধ্য হচেছন তাদের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে ফৌজদারি মামলা দায়েরের দাবি জানান তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে৷ সব পোশাক শ্রমিককে খাদ্য সহায়তার আওতায় আনতে হবে৷’’

২০১৯ সালের জানুয়ারির ছবিঘরটি দেখুন....

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ