1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শ্রমিক সংকটে ভারতের শস্য ভাণ্ডার

রাজীব চক্রবর্তী
৮ এপ্রিল ২০২০

লকডাউন চলছে৷ চলবে আরও কিছুদিন৷ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে আপাতত আর কোনও বিকল্প নেই ভারতের হাতে৷ এই সংকটকালে ভূমিহীন শ্রমিক অথবা দিন-‌আনা দিন-‌খাওয়া ১৩৬ কোটি মানুষের খাদ্য জোগান সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ৷

Indien Ernährung
ছবি: AFP/Getty Images

‌লকডাউন চলাকালে দেশের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলি দরিদ্রদের বিনামূল্যে চাল, ‌গম, ‌ডাল বিতরণ করছে৷ খোলা রয়েছে রেশেনের দোকান৷ আপাতত জোগানে ঘাটতি নেই৷ কিন্তু, চিন্তার বিষয় হচ্ছে, লকডাউন পরবর্তী পরিস্থিতি কী হবে? ‌কারণ, ভারতের ‘‌শস্য ভাণ্ডার' ‌হিসেবে পরিচিত উত্তর ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে মাঠে পড়ে নষ্ট হচ্ছে ফসল৷ অথচ, সমগ্র ভারতে সারা বছরের শস্য চাহিদার বেশিরভাগই মেটায় এই তিন রাজ্যের উৎপাদন৷ তারাই ভারতের কৃষিকাজের মেরুদণ্ড৷ একই ছবি দক্ষিণ ভারতেও৷ সেখানেও ঘরে ফিরে যাচ্ছেন শ্রমিকরা৷ সংবাদমাধ্যমের ভাষায় তারা ‘পরিযায়ী শ্রমিক’৷

এমনিতে লকডাউন চললেও কৃষিকাজে ছাড় দিয়েছে সরকার৷ তবে, তাতে সমস্যা মিটছে না৷ কৃষিকাজ করবে কে? ‌শ্রমিক কই? ‌পোঁটলা-‌পুঁটলি ঘাড়ে নিয়ে কয়েকশো কিলোমিটার পথ হেঁটে নিজেদের রাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন তাঁরা৷ তাদের কেউ কেউ সরকারি ‘‌শেল্টার হোমে’ ‌কোয়ারান্টিনে রয়েছেন৷ ভারতে এখন লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে কেউ কেউ নিশ্চিত৷ কিন্তু,  এই পরিযায়ী শ্রমিকরা আবার কাজে ফিরবেন কিনা, ফিরলেও কীভাবে, কবে?‌ তা কারও জানা নেই৷

পাঞ্জাবের কৃষি বিশেষজ্ঞ সুমেশ চোপড়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‌‘‌শুধু পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় কৃষিকাজে ১৬ লক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়৷ যার অনেকটা সামাল দেন বিহার থেকে আসা উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ ‌সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করা ৬ লাখ শ্রমিক৷ আশেপাশে আছে আরও কয়েক লাখ৷ করোনা ভাইরাস ‌সঙ্কটে লকডাউন ঘোষণা হতেই প্রবল অনিশ্চয়তার কারণে ঘরের পথে ফিরে গিয়েছেন তাঁদের অনেকেই৷ ফি-‌বছর মার্চের শেষ সপ্তাহে খেত থেকে ফসল তুলে নেন কৃষকরা৷ পুরোনো ফসল উঠলে তারপর নতুন ফসল বপণ হবে৷ সবটাই আটকে রয়েছে৷ ‌যদিও হরিয়ানার কিছু এলাকায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহারে গম কাটা ও ঝাড়াই শুরু হয়েছে৷ কিন্তু  চাহিদার তুলনায় যন্ত্রের সঙ্কুলান নগণ্য৷’’

উত্তরপ্রদেশের মথুরা এলাকার সত্তরোর্ধ্ব কৃষক রামলাল যাদব ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‌‘‌‌বছরের এই সময়টায় গম কাটার কাজ অত্যন্ত দ্রুত গতিতে চলে৷ ক্ষেতের গম কেটে, ঝাড়াই করে বস্তাবন্দি করে গুদামে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সবটাই করেন আশেপাশের রাজ্য থেকে আসা গরিব শ্রমিকরা৷ এই কাজে দিন পনেরো সময় লাগে৷ ওইসময় খেতই সপরিবার বিহার থেকে আসা শ্রমিকদের অস্থায়ী সংসার গড়ে ওঠে৷ এই পর্ব মিটে গেলে তারপর ক্ষেতে কোন ফসল চাষ হবে, তা ঠিক করা হয়৷ কিন্তু, এবার লকডাউনের জেরে পুরো প্রক্রিয়া থমকে রয়েছে৷ ২৪ মার্চ লকডাউন ঘোষণার পর ওরা (‌শ্রমিক)‌ নিজেদের রাজ্যে ফিরে গেছেন৷’’

দিল্লির এক গম মিলের মালিক রাজনারায়ণ গুপ্তা জানিয়েছেন, ‘‌‘‌গুজরাট ও মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে গত ফেব্রুয়ারিতেই গমের চাষ শুরু হয়ে গেছে৷ সেখানে আপাতত কোনও সমস্যা নেই৷ কিন্তু, পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও পশ্চিমী উত্তরপ্রদেশে গম চাষ শুরু হওয়ার কথা আগামী ১০-‌১৫ দিনের মধ্যে৷ এই কাজে প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন৷ শ্রমিকের অভাবে চাষ থমকে রয়েছে৷’’

লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলে অথবা লকডাউন তুলে নেওয়া হলেও বিহারের শ্রমিকরা যে আবার কাজে ফিরে আসবেন, তার নিশ্চয়তা নেই৷ অতএব ভারতের ‘‌শস্য ভাণ্ডার' ‌নিয়ে সংশয়ের অবকাশ রয়েছে বৈকি৷

পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় উৎপাদিত গম দেশের মোট চাহিদার অনেকটাই পূরণ করে৷ প্রায় সবটাই কিনে নেয় কেন্দ্রীয় সরকার৷ কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের এজেন্সিগুলি কৃষকের কাছ থেকে গত মার্চেই গম ক্রয় করেছে ৪৬,০০০ কোটি টাকার৷ আগামী কয়েকমাসে কেন্দ্রীয় সরকারকে অনেক বেশি পরিমাণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতেই হবে৷ গতবছর সারা দেশে ৩৪ দশমিক ‌১৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন গম সংগ্রহ করেছিল ‘‌ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া'’৷ এবার করোনা ভাইরাসের কারণে আরো অনেক বেশি খাদ্য শস্য সংগ্রহ করার সম্ভাবনা কারও অজানা নয়৷ সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, খাদ্যশস্য বণ্টনে সরকারের দায়িত্ব কয়েক গুন বেড়েছে৷ হয়তো আরও বাড়বে৷ তাই এবার সরকার কমপক্ষে ৪০ মিলিয়ন মেট্রিক টন গম সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে৷ দেশে শীতের মৌসুমে (‌নভেম্বর-‌জানুয়ারি)‌ ৩৩ দশমিক ‌৬১ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে৷ যা গতবারের তুলনায় ৪ মেট্রিক টন বেশি৷ গতবার ১০২. দশমিক ১৯ মেট্রিক টন গম উৎপাদন হয়েছিল৷ এবার ১১০ মেট্রিক টন হতে পারে৷

এফসিআই জানিয়েছে, ১ মার্চ মজুত গমের পরিমাণ ছিল ২৭ দশমিক ‌৫২ মেট্রিক টন৷ ১ এপ্রিলও প্রয়োজনের তুলনায় সাত দশমিক ‌৪৬ মেট্রিক টন বেশি গম মজুত ছিল৷ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, জরুরি অবস্থার জন্য এফসিআই-‌কে সবসময় চার দশমিক ‌৪৬ মেট্রিক টন গম প্রক্রিয়াগত মজুত এবং তিন মেট্রিক টন গম ‘‌কৌশলগত মজুত’ ‌‌হিসেবে রাখতেই হয়৷

ক্ষেতে শ্রমিক সরবরাহকারী সংগঠন হরিয়ানার আর্থিয়া অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অশোক গুপ্তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‌‘বিপুল চাহিদা থাকলেও বর্তমানে একজন শ্রমিকও নেই৷‌ গম কাটার পর শষ্য ঝাড়াই করে যে অবশিষ্ট অংশ থাকে সেগুলি পশুখাদ্য হিসেবে মজুত করা হয়৷ যান্ত্রিক উপায়ে ফসল তোলা হলে ভবিষ্যতে পশুখাদ্য আসবে কোথা থেকে জানা নেই৷’’ ‌

ওদিকে, লকডাউনের জেরে শুধু ধান-‌গম নয়, শাক-‌সবজি উৎপাদন এবং ফসল বাজারজাত করার সমস্যা তৈরি হয়েছে৷ লখনউ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের এক গ্রামের শসা, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদির চাষি রামপ্রসাদ, গুরুপ্রসাদদের ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে৷ তাঁদের প্রশ্ন, যানবাহন সব বন্ধ৷ এই অবস্থায় ‌ফসল তুলে কী করব?‌

৩১ মার্চের ছবিঘর দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ