1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
সমান অধিকারবাংলাদেশ

শ্রমের স্বীকৃতি নেই, দাস-জীবন গৃহকর্মীদের

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বাংলাদেশে গৃহকর্মীরা হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও মানসিক নির্যাতনের নিত্য শিকার৷ একই সঙ্গে তারা শ্রমশোষণের শিকারও৷

Bangladesch, Frau wäscht ab
৭৫ শতাংশ খণ্ডকালীন গৃহকর্মী বস্তিতে বাস করেন৷ ফাইল ছবি৷ ছবিটি ঢাকার একটি বস্তি থেকে তোলা৷ ছবি: picture-alliance/dpa/A. Abdullah

সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে৷ গৃহকর্মীদের সুরক্ষায় দেশে কোনো আলাদা আইনও নাই৷ আইনের কথা অনেক দিন ধরে বলা হলেও শুধুমাত্র একটি নীতিমালা৷ তবে সেটিও কার্যকর নয়৷

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের  (বিলস) এক জরিপের তথ্য বলছে, বাংলাদেশের গৃহকর্মীদের শতকরা ৬৭ ভাগ মানসিক নির্যাতনের শিকার৷ এছাড়া গৃহকর্মীদের প্রতি সহিংসতা ও লিঙ্গভিত্তিক সহিসংতা বাড়ছে৷

এদিকে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পাঁচ জন গৃহকর্মী সহিংসতার শিকার হয়েছেন৷ এই সময়ে সহিংসতার শিকার হয়ে মারা গেছেন একজন৷ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন একজন৷

গৃহশ্রমিকদের এখনো গৃহভৃত্য হিসেবে দেখা হয়: নূর খান

This browser does not support the audio element.

গত বছর ২০২২ সালে মোট ২৬ জন সহিংসতার শিকার হয়েছেন৷ নির্যাতনে নিহত হয়েছেন একজন৷ তাছাড়া আরো ১১ জন মারা গেলেও তাদের মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি৷ একজন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ আসকের এই হিসাব পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে করা৷ তবে তারা বলছে, অনেক ঘটনাই পত্রিকায় প্রকাশিত হয় না৷ স্থানীয় পর্যায়ে সমঝোতা করা হয়৷

বিলসের গবেষণা বলছে, কম মজুরি, নিয়োগপত্র না থাকা, বাসস্থান, গৃহকর্তার আচরণ গৃহকর্মীদের বিপর্যস্ত করে তুলছে৷প্রতিকার সম্পর্কে ধারণা না থাকা এবং কোনো শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত না থাকার কারণে এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো পথও খুঁজে পায় না তারা৷

‘সিকিউরিং রাইটস অব উইমেন ডমেস্টিক ওয়ার্কার্স ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক এক প্রকল্পের আওতায় এই গবেষণা করা হয়৷ গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা ও অক্সফাম ইন বাংলাদেশের সহযোগিতায় গবেষণাটি পরিচালনা করে বিলস৷

মজুরি ও বাসস্থান

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দারিদ্র্য, পেশার সহজলভ্যতা এবং বিবাহ বিচ্ছেদসহ বিভিন্ন কারণে নারীরা গৃহকর্মীর কাজ বেছে নেন৷ কিন্তু এই পেশায় এসে ৪২ শতাংশ আবাসিক গৃহকর্মী বসার ঘর অথবা রান্নাঘরের মতো খোলা জায়গায় ঘুমান৷ ৭৫ শতাংশ অনাবাসিক অথবা খণ্ডকালীন গৃহকর্মী বস্তিতে বাস করেন৷

আবাসিক গৃহকর্মীরা দৈনিক ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করেন৷ অনাবাসিক বা খন্ডকালীন গৃহকর্মীদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ কোনো সাপ্তাহিক ছুটি পান না৷

মানসিক নির্যাতন

বাসাবাড়িতে কাজ করতে গিয়ে মানসিক নির্যাতনের শিকার হন ৬৭ শতাংশ গৃহকর্মী৷ লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিষয়ে সাহায্য চাওয়ার যেসব উপায় রয়েছে, যেমন হটলাইন, হেল্পলাইন সম্পর্কে সচেতন নয় ৯১ শতাংশ গৃহকর্মী৷

করোনা মহামারির সময়ে গৃহকর্মীদের ওপর লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়৷

করোনার সময়ে দুই শতাংশ গৃহকর্মী চাকরি হারিয়েছেন এবং দুই শতাংশ গৃহকর্মী আয়ের উৎস হারিয়ে স্বামী বা পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷

লেবাননে বিপদে অভিবাসী শ্রমিকরা

01:11

This browser does not support the video element.

বেতন ও নিয়োগপত্র

শতভাগ গৃহকর্মীই কাজ করেন মৌখিক চুক্তির ভিত্তিতে৷ গৃহকর্মীদের গড় মাসিক আয় পাঁচ হাজার ৩১১ টাকা৷ কিন্তু তাদের মাসিক গড় ব্যয় ১০ হাজার ৮০১ টাকা৷

৯৬ শতাংশ গৃহকর্মী বলছেন, বর্তমান মজুরি তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়৷

কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতি বা বিলম্বের কারণে মজুরি কর্তনের শিকার হন ২৬ শতাংশ গৃহকর্মী৷ মাত্র চার শতাংশ গৃহকর্মী কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকেন৷

কেন এই পরিস্থিতি?

বিলসের সহ-সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, ‘‘গৃহকর্মীরা এখনো শ্রমিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়নি৷ তাদের কোনো নিয়োগপত্রও নেই৷ এই দুইটি কারণেই তারা এতটা নিগৃহীত৷’’

তার কথা, ‘‘এর ফলে যা হয়, তারা মজুরি নিয়ে কথা বলতে পারেন না৷ কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হন৷ তারা হয়তো ফৌজদারি অপরাধের প্রতিকার দেশের প্রচলিত আইনে চাইতে পারেন; কিন্তু তাদের বেতন কম দিলে , বেতন না দিলে, অতিরিক্ত কাজ করালে, মানসিক নির্যাতন চালালে তারা কোনো প্রতিকার পান না৷ শ্রম আইনে শ্রমিকদের যে প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ আছে, গৃহশ্রমিকদের সেই সুবিধা নেই৷  তারা শ্রম আদালতেও যেতে পরেন না৷ ফলে তারা সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করতে বাধ্য হন৷’’

তিনি জানান, ‘‘দেশে কোনো জরিপ না হলেও কম বেশি এক কোটির মতো গৃহশ্রমিক আছেন৷ অনেক দিন ধরে তাদের জন্য একটি সুরক্ষা আইনের কথা বলা হলেও নীতিমালা করে ফেলে রাখা হয়েছে , আইন করা হয়নি৷ তারা কোনো ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারেন না, ফলে তাদের কথা বলার কোনো ফোরামও নাই৷’’

গৃহকর্মীরা এখনো ‘গৃহদাস’

আসকের সাধারণ সম্পাদক নূর খান বলেন, ‘‘বাংলাদেশে গৃহশ্রমিকদের এখনো গৃহভৃত্য হিসেবে দেখা হয়৷ তাদের প্রতি দাসসুলভ একটি মনোভাব এখনো গৃহকর্তাদের অধিকাংশের মধ্যে কাজ করে৷ এই সামন্ততান্ত্রিক মনোভাবের কারণে তাদের প্রতি যেমন খুশি তেমন আচরণ করা হয়৷’’

তার কথা, ‘‘তাই বেতন কম দেয়া, মানসিক নির্যাতন ছাড়াও তারা সহিংসতা ও যৌন নির্যাতনের শিকার হন৷ তেমন কোনো প্রতিকারও নেই৷’’

তারা সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করতে বাধ্য হন: আমিরুল হক আমিন

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘আমরা দেখেছি গৃহকর্মী নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় দুই-একটি ছাড়া বিচারও হয় না৷ এর কারণ হলো তাদের পরিবার অর্থনৈতিকভাবে খুবই দুর্বল৷ তাই অর্থের লোভ দেখিয়ে থানায় যাওয়ার আগেই অনেক ঘটনা ধামাচাপা দেয়া হয়৷ আর মামলা হলেও শেষ পর্যন্ত চাপ ও অর্থ দিয়ে ওই মামলা অকার্যকর করে ফেলা হয়৷ এর সঙ্গে পুলিশও জড়িত থাকে৷’’

তিনি মনে করেন, ‘‘যদি কমপক্ষে গৃহকর্মীদের নিবন্ধনব্যবস্থা চালু এবং তাদের জন্য ৯৯৯ এর মতো একটি আলাদা হটলাইন চালু করা যেত তাহলেও তারা কিছুটা প্রতিকার পেত৷ আর কর্মঘণ্টাও সর্বনিম্ন বেতন বেধে দিলে শ্রমশোষণ বন্ধ হওয়ার পথ হতো৷

এদিকে বিলস তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশও করেছে৷  সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম- গৃহশ্রমিকের নিবন্ধন, থানাগুলোতে গৃহশ্রমিকদের জন্য পৃথক কোন অভিযোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ তৈরি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে গৃহশ্রমিকের অধিকার ও তা লঙ্ঘনের প্রতিকার বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, তাদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তনে ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা চালানোর উদ্যোগ গ্রহণ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ