অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার জন্য শ্রীলঙ্কা চায় অর্থ সহায়তা, তবে আইএমএফ দ্বীপদেশটিকে বলেছে, আর্থিক নীতিমালা জোরালো করা, কর আদায় বাড়ানো এবং সহজ বিনিময় হার নির্ধারণের মাধ্যমে বিপর্যয় কাটাতে৷
বিজ্ঞাপন
দুই কোটি ২০ লাখ মানুষের দেশ শ্রীলঙ্কা এমনিতেই ঋণে জর্জরিত৷ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়েছে বহু আগে৷ জ্বালানি সংকট এত চরমে যে, হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসা চালানোও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে৷ বিক্ষুব্ধ জনতা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ্রা রাজাপাকসের পদত্যাগ এবং দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানোর জন্য দ্রুত, কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করছেন৷ অন্যদিকে রাজাপাকসে সরকার পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য চাইছেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আর্থিক সহায়তা৷
গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ), বিশ্ব ব্যাংক এবং ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আর্থিক সহায়তার বিষয়ে আলোচনার জন্য শ্রীলঙ্কার অর্থমন্ত্রী আলী সাবরি ওয়াশিংটনে গিয়েছিলেন৷ সেই আলোচনায় খুব বড় কোনো সহায়তার আশ্বাস পাননি আলী সাবরি৷ মঙ্গলবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আনে-মারি গুল্ডে-ভোল্ফ-ও শোনাননি কোনো আশার বাণী৷ বরং আরো অর্থনৈতিক সহায়তা শ্রীলঙ্কার ঋণ-নির্ভরতা স্থায়ী করতে পারে- এমন ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, চলমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে হলে শ্রীলঙ্কাকে কর আদায় বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে৷ তিনি আরো বলেন, ‘‘এছাড়া মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আর্থিক নীতিমালা জোরালো করতে হবে৷ পাশাপাশি এক্সচেঞ্জ রেট শিথিল করাও প্রয়োজন বলে মনে হচ্ছে৷''
শ্রীলঙ্কায় পুলিশের গুলি, মৃত এক
এই প্রথম বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালালো শ্রীলঙ্কার পুলিশ। নিহত এক। আহত অন্তত ২৪। চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ছবি: Dinuka Liyanawatte/REUTERS
রেল অবরোধ
মঙ্গলবার রাজধানী কলম্বো থেকে ৯৫ কিলোমিটার দূরে রামবুক্কানা স্টেশনে রেল অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। তেলের দামবৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সংকটের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিলেন তারা।
ছবি: Eranga Jayawardena/AP Photo/picture alliance
পুলিশের গুলি
বিক্ষোভকারীদের অবরোধ তোলার জন্য প্রথমে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। তাতেও কাজ না হওয়ায় গুলি ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ। গুলিতে মৃত্যু হয় একজনের। ২৪ জন আহত হন। তাদের সকলকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানানো হয়েছে।
ছবি: Dinuka Liyanawatte/REUTERS
কেন গুলি
গোটা শ্রীলঙ্কা জুড়েই আন্দোলন করছেন সাধারণ মানুষ। পুলিশ বিক্ষোভ ঠেকাতে লাঠিচার্জ করেছে, কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়েছে। কিন্তু এই প্রথম তারা গুলি চালালো। পুলিশ কেন গুলি চালিয়েছে, তার প্রতিবাদে বুধবার দেশ জুড়ে আন্দোলন আরো তীব্র হতে পারে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
ছবি: Dinuka Liyanawatte/REUTERS
বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য
বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, বর্তমান সরকারের অপদার্থতার জন্যই আজ এই পরিস্থিতিতে এসে পৌঁছেছে শ্রীলঙ্কা। জ্বালানি তেলের দাম ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বত্র তেল পাওয়া যাচ্ছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। মিলছে না প্রয়োজনীয় খাবার।
ছবি: Pradeep Dambarage/Zumapress/picture alliance
পদত্যাগ করুন প্রেসিডেন্ট
দেশের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে প্রেসিডেন্টের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। গাড়ির হর্ন বাজিয়ে, স্লোগান দিয়ে তারা এই দাবি করছেন। বিরোধীরাও প্রেসিডেন্টের ডাকে সর্বদলীয় সরকার গঠনে রাজি হয়নি। তারাও সরকারের পদত্যাগ চাইছে।
ছবি: Lakruwan Wannniarachchi/AFP/Getty Images
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, দ্রুত শ্রীলঙ্কার অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। দেশের কোষাগারের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, রাতারাতি তার পরিবর্তন হবে না। দেশে বৈদেশিক মুদ্রাও নেই। ফলে বাণিজ্যও মুখ থুবড়ে পড়েছে।
ছবি: Eranga Jayawardena/AP Photo/picture alliance
ভারতের সাহায্য
ভারত ইতিমধ্যেই শ্রীলঙ্কার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এক জাহাজ তেল পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে আরো তেল পাঠানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কয়েক বিলিয়ন ডলার সাহায্যের কথাও বলা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ভারতের পাঠানো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস শ্রীলঙ্কার বাজারে পৌঁছেছে।
ছবি: Ishara S. Kodikara/AFP/Getty Images
মানুষ পালাচ্ছে
শ্রীলঙ্কা থেকে বেশ কিছু মানুষ ভারতের উপকূলে এসে পৌঁছেছেন। কোস্ট গার্ডের হেফাজতে আছেন তারা। আরো বহু মানুষ ভারতে অভিবাসন-প্রত্যাশী হয়ে আসতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।