পার্লামেন্টে ১২০-৬৩ ভোটে জরুরি অবস্থা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জয় লাভ করেছে। প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে জরুরি অবস্থা বাড়ানোর পক্ষে ছিলেন। তাকে সমর্থন জানিয়েছেন শাসকপক্ষ। কিন্তু বিরোধীরা জরুরি অবস্থা বাড়ানোর তীব্র বিরোধী ছিল। তাদের বক্তব্য, এর ফলে দেশে অস্থিরতা আরো বাড়ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পার্লামেন্টে সিদ্ধান্ত হয়েছে, জরুরি অবস্থা আরো এক মাস বাড়ানো হবে।
জরুরি অবস্থা বাড়ানোর জন্য শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে অনুমতি নিতে হয়। প্রেসিডেন্ট জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার দুই সপ্তাহের মধ্যে এই অনুমতি নিতে হয়। জরুরি অবস্থা ঘোষণা হলে সেনার ক্ষমতা বেড়ে যায়। ওয়ারেন্ট ছাড়াই আটক করতে পারে সেনা। আর তাতেই আপত্তি ছিল বিরোধীদের।
শ্রীলঙ্কায় যেভাবে প্রধানমন্ত্রীর অফিস দখল বিক্ষোভকারীদের
গোটাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালানোর পর তীব্র বিক্ষোভ শ্রীলঙ্কায়। প্রধানমন্ত্রীর অফিস দখল করে নিল বিক্ষোভকারীরা।
ছবি: Adnan Abidi/REUTERS
রাজাপাকসের দেশত্যাগের পর
বুধবার সকালেই সেনার বিমানে শ্রীলঙ্কা ছেড়ে মালদ্বীপে পালান প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাসকে। তারপরই বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে পড়েন। কলম্বোর রাস্তা চলে যায় হাজার হাজার বিক্ষোভকারীদের দখলে। তারা তখন রাজাপাকসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন।
ছবি: Adnan Abidi/REUTERS
স্পিকারের ঘোষণা
এরপর শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের স্পিকার ঘোষণা করেন, সংবিধান অনুযায়ী নতুন ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন। বিক্ষোভকারীরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। কিছুদিন আগেই বিক্ষোভকারীরা বিক্রমসিংহের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। স্পিকারের ঘোষণার পর তারা সোজা প্রধানমন্ত্রীর অফিসের দিকে যান।
ছবি: Rafiq Maqbool/AP Photo/picture allaince
গেট ভেঙে ঢোকা
প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সামনে হাজার হাজার মানুষ পৌঁছে যান। তারা অফিসে ঢোকার গেট উপড়ে ফেলে ভিতরে ঢোকেন।
ছবি: Adnan Abidi/REUTERS
ছত্রভঙ্গ করতে গ্যাস
বিক্রমসিংহে পুলিশ ও সেনাকে নির্দেশ দেন, বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। তাদের সরিয়ে দিতে হবে। দেশে জরুরি অবস্থাও জারি করা হয়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে।
ছবি: Adnan Abidi/REUTERS
কাঁদানে গ্যাস সহ্য করে
একটা সময় দেখা যায়, পুলিশ একের পর এক কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা জল দিয়ে চোখ ধুয়ে আবার বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। পুলিশ সমানে চেষ্টা করেও বিক্ষোভকারীদের একটুও সরাতে পারেনি।
ছবি: Rafiy Maqbool/AP Photo/picture alliance
প্রধানমন্ত্রীর অফিসে
প্রধানমন্ত্রীর অফিসের ভিতরে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। তারা বারান্দায় চলে যান। দেওয়াল বেয়েও উঠতে দেখা যায় তাদের।
ছবি: DINUKA LIYANAWATTE/REUTERS
বিজয়গর্বে
এর আগে প্রেসিডেন্টের বাড়িতে ঢুকে পড়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। এবার প্রধানমন্ত্রীর অফিসেও ঢুকে পড়লেন তারা। বিজয়গর্বে তারা ঘোরাফেরা করেছেন অফিসের ভিতরে।
ছবি: Adnan Abidi/REUTERS
ডাইনিং টেবিলে
কিছু বিক্ষোভকারী প্রধানমন্ত্রীর অফিসের ডাইনিং টেবিলের সঙ্গে রাখা চেয়ারে বসে পড়েন। এভাবেই তারা বুঝিয়ে দেন, বিক্রমসিংঘেকে তারা মানবেন না।
ছবি: Rafiq Maqbool/AP/picture alliance
সর্বদলীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত
এরপর সর্বদলীয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিক্রমসিংহেকে পদত্যাগ করতে হবে। স্পিকার আপাতত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব সামলাবেন। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল মিলে জাতীয় সরকার গঠন করবে। তারাই ঠিক করবে, কে প্রধানমন্ত্রী হবেন।
ছবি: Eranga Jayawardena/AP Photo/picture alliance
রাজাপাকসে সিঙ্গাপুর যেতে চান?
গোটাবায়া রাজাপাকসে আপাতত মালদ্বীপে আছেন। সেখানকার সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, রাজাপাকসে সিঙ্গাপুর যেতে চান। সেজন্য তিনি সরকারি বিমান চেয়েছেন।
ছবি: Abhishek Chinnappa/Getty Images
10 ছবি1 | 10
গোটাবায়ার খবর
শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পরেই সেখানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। গোটাবায়া প্রথমে মালদ্বীপ পালিয়ে গেছিলেন। সেখান থেকে সিঙ্গাপুরে যান তিনি। সেখানে প্রাইভেট ছুটিতে গেছেন বলে জানান তিনি। সিঙ্গাপুর সরকার তাকে ১৪ দিনের দেশে থাকার অনুমতি দিয়েছিল। বুধবার সেই অনুমতি আরো ১৪ দিন বাড়ানো হয়েছে।
কিন্তু সিঙ্গাপুরের প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে, গোটাবায়াকে অ্যাসাইলাম দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে বুধবারই শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভার মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, গোটাবায়া দেশে ফিরে আসছেন। তবে কবে ফিরবেন, সে কথা তিনি জানাননি।
গোটাবায়াকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে বলেছে ইন্টারন্যাশনাল ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস নামের এক এনজিও। ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধের জন্য রাজাপাকসেকে দায়ী করেছে তারা। দক্ষিণ আফ্রিকার এই এনজিও দীর্ঘদিন ধরেই শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছে।
অন্যদিকে অ্যামেরিকা চীনের কাছে আবেদন জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার ঋণের বোঝা যাতে কমে তার জন্য ব্যবস্থা নিক বেজিং। শ্রীলঙ্কার মতো অন্য যে দেশগুলি চীনের ঋণে জর্জরিত, সেখানেও একই কাজ করার অনুরোধ করেছে অ্যামেরিকা।