শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা, তদন্তে আন্তর্জাতিক সহায়তা
২৩ এপ্রিল ২০১৯
তদন্ত ও নিরাপত্তার স্বার্থে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট৷ ইন্টারপোল কলম্বোয় এক দল পাঠিয়েছে৷ সরকারের একাংশে গাফিলতির অভিযোগ নিয়ে সরব হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বীরা৷
বিজ্ঞাপন
শ্রীলঙ্কায় রবিবারের সিরিজ হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩১০ পেরিয়ে গেছে৷ হাসপাতালে প্রায় ৫০০ আহত ব্যক্তির চিকিৎসা চলছে৷ সোমবার আরও একটি বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব হয়েছে৷ ৮৭টি ডিটোনেটরও উদ্ধার করা হয়েছে৷ অর্থাৎ আরও হামলার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ একযোগে এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছে এবং নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে৷ হামলায় নিহতদের স্মরণে মঙ্গলবার সকালে শ্রীলঙ্কায় ৩ মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়৷ সরকার মঙ্গলবার শোক দিবস পালন করছে৷
নিরাপত্তার স্বার্থে সোমবার রাত থেকে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে৷ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা এই ঘোষণা করেন৷ ফলে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ধরপাকড় ও তাদের বাড়িঘরে তল্লাশির বাড়তি ক্ষমতা এসে গেল৷ সেনাবাহিনীর কমান্ডার লেফট্যানেন্ট জেনারেল মহেশ সেনানায়েকে সাংবাদিকদের বলেন, কমপক্ষে কয়েক দিনের জন্য এই ক্ষমতা থাকলে নিরাপত্তা অভিযান চালানো সহজ হবে৷ সোমবার রাতেও কারফিউ জারি করা হয়েছিল৷ পুলিশ এক সিরীয় নাগরিককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে জানা গেছে৷ সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে৷
সন্ত্রাসী হামলার পরের দিনও হামলাকারীদের পরিচয় জানা যায়নি৷ কোনো গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করে নি৷ প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্তকারী দল গঠন করেছেন৷ সরকারের অনুরোধে ইন্টারপোলও বিশেষজ্ঞদের এক দল পাঠিয়েছে৷ ওয়াশিংটন পোস্ট সংবাদপত্রের সূত্র অনুযায়ী এফবিআই এজেন্টের এক দলও তদন্তের কাজে সহায়তা করতে শ্রীলঙ্কায় যাচ্ছে৷
সন্ত্রাসী হামলা সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা সত্ত্বেও সরকারের একাংশ যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি, এমন অভিযোগের সুর চড়া হচ্ছে৷ শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাকেন্দ্রে রাজনৈতিক বিবাদের জের ধরে প্রেসিডেন্টের হাতে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতা থাকায় তিনিই সমালোচনার পাত্র হচ্ছেন৷ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও পুলিশের দায়িত্বও তাঁর হাতে রয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহে পরোক্ষভাবে এই ব্যর্থতার ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ উল্লেখ্য, গত বছর তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টার পর নিরাপত্তার বিষয়গুলি থেকে তাঁকে দূরে রাখা হয়েছে৷ প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর দলের জোট সরকার কাজ চালিয়ে গেলেও দুই শিবিরের মধ্যে ব্যবধান বেড়ে গেছে৷
সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী রজিতা সেনারত্নে দাবি করেন, ন্যাশানাল তৌহিত জামাত নামের এক গোষ্ঠী এই হামলা চালিয়েছে৷ তাঁর মতে, রবিবার মোট সাতটি আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়েছে৷ হামলার পেছনে আন্তর্জাতিক মদত ছিল বলেও তিনি মনে করেন৷ সেনারত্নে বলেন, আগাম সতর্কবার্তা থাকলে সরকার প্রতিরোধী ব্যবস্থা নিতো৷ তিনি দেশের ইনস্পেকটর জেনারেলের পদত্যাগের দাবি করেন৷
শ্রীলঙ্কায় এই হামলা কি এড়ানো যেতো ?
রবিবার শ্রীলঙ্কায় মোট ৮টি সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের সংখ্যা আপাতত ২৯০৷আহত হয়েছেন ৫০০-রও বেশি মানুষ৷ হতাহতদের মধ্যে অনেক বিদেশি নাগরিকও রয়েছেন৷ বিস্তারিত ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/Stringer
ভয়াবহ ইস্টার সানডে
খ্রিষ্টানদের অন্যতম পবিত্র দিন ইস্টার সানডে৷ এমন দিনেই কলম্বো, নেগোম্বো ও বাট্টিকালোয়া শহরের বেশ কয়েকটি গির্জা ও হোটেলে ঘটে সিরিজ বোমা হামলা৷ শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী এই হামলায় নিহতের সংখ্যা ২৯০, আহত হয়েছেন ৫০০ জনেরও বেশি৷
ছবি: Reuters/Stringer
কোথায় হামলা
বোমা হামলার শিকার গির্জাগুলির মধ্যে রয়েছে উত্তর কলম্বোর সেইন্ট অ্যান্থনি'স শ্রাইন, নেগোম্বো শহরের পাশে সেইন্ট সেবাস্টিয়ান চার্চ ও পূর্বে বাট্টিকালোয়া শহরের জিয়ন চার্চ৷ এছাড়া তিনটি ফাইভ স্টার হোটেল সিনামন গ্রান্ড, কিংসবুরি ও দ্য সাংরিলাতেরও হামলা হয়৷ তিনটিই রাজধানী কলম্বোর কেন্দ্রে অবস্থিত৷
ছবি: Reuters/Stringer
শ্রীলঙ্কায় খ্রিষ্টান যারা...
পঞ্চদশ শতাব্দীতে পর্তুগিজ পাদ্রীদের আগমনের পর থেকে শ্রীলঙ্কায় বাড়তে থাকে খ্রিষ্টান জনসংখ্যা৷ বর্তমানে, দেশটির জনসংখ্যার ৭ শতাংশ মানুষ খ্রিষ্টধর্মের অনুসারী৷ এর মধ্যে রয়েছেন রোমান ক্যাথলিক, মেথডিস্ট ও প্রটেস্টান্ট ধারার মানুষ৷
ছবি: Reuters/Stringer
বিদেশিরাও হামলার শিকার
সংবাদসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৫ জন বিদেশি নাগরিক৷ হামলার শিকার হোটেলগুলিতে ছিলেন তাঁরা৷ নিহতদের মধ্যে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের আট বছর বয়সি নাতি জায়ান চৌধুরীও রয়েছে৷
ছবি: AFP/I. S. Kodikara
সহিংসতার ধারা
শ্রীলঙ্কায় মাত্র এক দশক আগেই থেমেছে গৃহযুদ্ধ৷তার আগে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সিনহালিজ ও সংখ্যালঘু হিন্দু তামিলদের মধ্যে দীর্ঘদিন চলে সশস্ত্র লড়াই৷বিগত দশকে গৃহযুদ্ধ থামার পর রবিবারের এ হামলাই সাম্প্রতিক কালে শ্রীলঙ্কায় সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/str
হামলার পেছনে কারা?
শ্রীলঙ্কার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, এই হামলার পেছনে রয়েছে স্থানীয় ইসলামী সংগঠন ন্যাশনাল তৌফিক জামাত৷ দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজিথা সেনারত্নে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, ৭ আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীই শ্রীলঙ্কার নাগরিক এবং তারা তৌফিক জামাতের সাথে জড়িত৷ হামলার পেছনে বিদেশি শক্তির হাত থাকার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেননি তিনি৷হামলায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters
বর্তমান পরিস্থিতি
রবিবার হামলার পর দেশজুড়ে কার্ফু জারি করেছিল শ্রীলঙ্কা সরকার৷ তবে সোমবার সকালে কার্ফু তুলে নেওয়া হয়৷ সোমবার রাত থেকে জরুরি অবস্থা জারি হতে পারে৷ ওপরের ছবিতে বিস্ফোরণের পর বিধ্বস্ত এক গির্জার পাশে স্থানীয় যাজকদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: AFP/I. S. Kodikara
এ হামলা কি এড়ানো যেতো?
শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্যমন্ত্রী সেনারত্নে জানিয়েছেন, পুলিশের কাছে এমন হামলার আশঙ্কার আগাম তথ্য থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে তা জানানো হয়নি৷ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য না এলেও প্রশ্ন উঠেছে – সত্যিই কি পুলিশ এমন তথ্য আগে পেয়েছিল? তাহলে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলে এই ভয়াবহ হামলা তো কিছুটা হলেও এড়ানো যেতো!