দেশব্যাপী কারফিউয়ের মধ্যেও শ্রীলঙ্কায় দুর্বৃত্তদের হামলায় এক মুসলিম নিহত হয়েছে৷ এদিকে গুজব ছড়ানো বন্ধ করতে সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিয়েছে সরকার৷
বিজ্ঞাপন
শ্রীলঙ্কায় নতুন করে ধর্মীয় দাঙ্গা শুরু হয়েছে৷ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় দেশজুড়ে জারি হওয়া সান্ধ্য আ্ইন মঙ্গলবার তুলে নিয়েছে সরকার৷ তবে তা দেশের উত্তর-পশ্চিমে বহাল রাখা হয়েছে৷ সোমবার রাতে দুর্বৃত্তদের হামলায় সেখানে এক মুসলিম নাগরিকের মৃত্যু হয়৷ ৪৫ বছল বয়সি ঐ ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেয়া হলে কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি মারা যান৷
‘‘দাঙ্গাকারীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁর দোকানে হামলা চালায়৷ এটিই দাঙ্গায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা,'' বার্তা সংস্থা এএফপিকে এই কথা বলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা৷
নতুন করে এই হামলা শুরু হয়েছে একজন ক্যাথলিক যাজকের ছড়ানো একটি বার্তা থেকে৷ সেখানে তিনি অনুসারীদের সতর্ক থাকার কথা বলেন, যা সহিংস এলাকাগুলোতে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে বলে বিবৃতি দিয়েছে পুলিশ৷
শ্রীলঙ্কায় এই হামলা কি এড়ানো যেতো ?
রবিবার শ্রীলঙ্কায় মোট ৮টি সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের সংখ্যা আপাতত ২৯০৷আহত হয়েছেন ৫০০-রও বেশি মানুষ৷ হতাহতদের মধ্যে অনেক বিদেশি নাগরিকও রয়েছেন৷ বিস্তারিত ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/Stringer
ভয়াবহ ইস্টার সানডে
খ্রিষ্টানদের অন্যতম পবিত্র দিন ইস্টার সানডে৷ এমন দিনেই কলম্বো, নেগোম্বো ও বাট্টিকালোয়া শহরের বেশ কয়েকটি গির্জা ও হোটেলে ঘটে সিরিজ বোমা হামলা৷ শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী এই হামলায় নিহতের সংখ্যা ২৯০, আহত হয়েছেন ৫০০ জনেরও বেশি৷
ছবি: Reuters/Stringer
কোথায় হামলা
বোমা হামলার শিকার গির্জাগুলির মধ্যে রয়েছে উত্তর কলম্বোর সেইন্ট অ্যান্থনি'স শ্রাইন, নেগোম্বো শহরের পাশে সেইন্ট সেবাস্টিয়ান চার্চ ও পূর্বে বাট্টিকালোয়া শহরের জিয়ন চার্চ৷ এছাড়া তিনটি ফাইভ স্টার হোটেল সিনামন গ্রান্ড, কিংসবুরি ও দ্য সাংরিলাতেরও হামলা হয়৷ তিনটিই রাজধানী কলম্বোর কেন্দ্রে অবস্থিত৷
ছবি: Reuters/Stringer
শ্রীলঙ্কায় খ্রিষ্টান যারা...
পঞ্চদশ শতাব্দীতে পর্তুগিজ পাদ্রীদের আগমনের পর থেকে শ্রীলঙ্কায় বাড়তে থাকে খ্রিষ্টান জনসংখ্যা৷ বর্তমানে, দেশটির জনসংখ্যার ৭ শতাংশ মানুষ খ্রিষ্টধর্মের অনুসারী৷ এর মধ্যে রয়েছেন রোমান ক্যাথলিক, মেথডিস্ট ও প্রটেস্টান্ট ধারার মানুষ৷
ছবি: Reuters/Stringer
বিদেশিরাও হামলার শিকার
সংবাদসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৫ জন বিদেশি নাগরিক৷ হামলার শিকার হোটেলগুলিতে ছিলেন তাঁরা৷ নিহতদের মধ্যে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের আট বছর বয়সি নাতি জায়ান চৌধুরীও রয়েছে৷
ছবি: AFP/I. S. Kodikara
সহিংসতার ধারা
শ্রীলঙ্কায় মাত্র এক দশক আগেই থেমেছে গৃহযুদ্ধ৷তার আগে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সিনহালিজ ও সংখ্যালঘু হিন্দু তামিলদের মধ্যে দীর্ঘদিন চলে সশস্ত্র লড়াই৷বিগত দশকে গৃহযুদ্ধ থামার পর রবিবারের এ হামলাই সাম্প্রতিক কালে শ্রীলঙ্কায় সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/str
হামলার পেছনে কারা?
শ্রীলঙ্কার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, এই হামলার পেছনে রয়েছে স্থানীয় ইসলামী সংগঠন ন্যাশনাল তৌফিক জামাত৷ দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজিথা সেনারত্নে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, ৭ আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীই শ্রীলঙ্কার নাগরিক এবং তারা তৌফিক জামাতের সাথে জড়িত৷ হামলার পেছনে বিদেশি শক্তির হাত থাকার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেননি তিনি৷হামলায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters
বর্তমান পরিস্থিতি
রবিবার হামলার পর দেশজুড়ে কার্ফু জারি করেছিল শ্রীলঙ্কা সরকার৷ তবে সোমবার সকালে কার্ফু তুলে নেওয়া হয়৷ সোমবার রাত থেকে জরুরি অবস্থা জারি হতে পারে৷ ওপরের ছবিতে বিস্ফোরণের পর বিধ্বস্ত এক গির্জার পাশে স্থানীয় যাজকদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: AFP/I. S. Kodikara
এ হামলা কি এড়ানো যেতো?
শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্যমন্ত্রী সেনারত্নে জানিয়েছেন, পুলিশের কাছে এমন হামলার আশঙ্কার আগাম তথ্য থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে তা জানানো হয়নি৷ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য না এলেও প্রশ্ন উঠেছে – সত্যিই কি পুলিশ এমন তথ্য আগে পেয়েছিল? তাহলে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলে এই ভয়াবহ হামলা তো কিছুটা হলেও এড়ানো যেতো!
ছবি: picture-alliance/AP Photo
8 ছবি1 | 8
সামাজিক গণমাধ্যমে বাধা
গত রোববার নতুন করে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর সামাজিক নেটওয়ার্ক ও ম্যাসেজিং অ্যাপগুলো বন্ধ করে দেয় সরকার৷ প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিংহে দাঙ্গার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন৷ পাশাপাশি জনগণের প্রতি গুজব না ছড়ানোর আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি৷ ‘‘আমি নাগরিকদের শান্ত এবং কোনো ধরনের মিথ্য তথ্যে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহবান জানাচ্ছি,'' টুইটারে এই বার্তা দেন তিনি৷ সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে সেখানে একমাত্র টুইটারই সচল রেখেছে সরকার৷
গত মাসে ইস্টার ডে-তে একযোগে তিনটি হোটেল ও তিনটি চার্চে হামলার ঘটনায় দেশটিতে ২৫০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়৷ এরপর থেকে সেখানে জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে৷
শ্রীলঙ্কার ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের মধ্যে দশ ভাগ মুসলমান, খ্রিষ্টান সাড়ে সাত ভাগ আর বাকি সিংহভাগই বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী৷