সন্দেহভাজন ইসলামী জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শেষে ১৫টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ৷ ইস্টার সানডের বোমা হামলার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্দেহভাজনদের ধরতে অভিযান চালিয়ে আসছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী৷
বিজ্ঞাপন
উদ্ধার করা মরদেহের মধ্যে ছয়টি শিশুর মরদেহও রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ শুক্রবার রাতে রাজধানী কলম্বো থেকে ৩৬০ কিলোমিটার দূরে সেইন্ট হামারুথু এলাকায় অভিযানে যায় পুলিশ৷
ইস্টার সানডের বোমা হামলায় ২৫৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় এই জঙ্গিদের যোগসাজশ ছিল বলে ধারণা করছে পুলিশ৷ বন্দুকযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর একটি বাড়ি থেকে ১৫টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়৷
আবার হামলার ঘটনা ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কায় দ্বীপরাষ্ট্রটির বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনার নিরাপত্তায় হাজার হাজার সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়েছে৷ একই সঙ্গে চলছে সন্দেহভাজনদের সন্ধানে অভিযান৷
প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা জানিয়েছেন, একটি ‘বড় ধরনের তল্লাশি অভিযান' শুরু করা হয়েছে৷ দেশের ‘প্রতিটি বাড়ি তল্লাশি করা হবে' বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি৷
হামলার পর বেশকিছু দেশ তাদের নাগরিকদের জন্য শ্রীলঙ্কায় ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে৷ জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তর জরুরি কাজ ছাড়া কলম্বো এবং অন্যান্য এলাকা এড়িয়ে চলার নির্দেশ দিয়েছে৷ এরই মধ্যে দেশটিতে অবস্থান করা পর্যটকদেরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও একই ধরনের সতর্কতা জারি করেছে৷
শ্রীলঙ্কায় এই হামলা কি এড়ানো যেতো ?
রবিবার শ্রীলঙ্কায় মোট ৮টি সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের সংখ্যা আপাতত ২৯০৷আহত হয়েছেন ৫০০-রও বেশি মানুষ৷ হতাহতদের মধ্যে অনেক বিদেশি নাগরিকও রয়েছেন৷ বিস্তারিত ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/Stringer
ভয়াবহ ইস্টার সানডে
খ্রিষ্টানদের অন্যতম পবিত্র দিন ইস্টার সানডে৷ এমন দিনেই কলম্বো, নেগোম্বো ও বাট্টিকালোয়া শহরের বেশ কয়েকটি গির্জা ও হোটেলে ঘটে সিরিজ বোমা হামলা৷ শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী এই হামলায় নিহতের সংখ্যা ২৯০, আহত হয়েছেন ৫০০ জনেরও বেশি৷
ছবি: Reuters/Stringer
কোথায় হামলা
বোমা হামলার শিকার গির্জাগুলির মধ্যে রয়েছে উত্তর কলম্বোর সেইন্ট অ্যান্থনি'স শ্রাইন, নেগোম্বো শহরের পাশে সেইন্ট সেবাস্টিয়ান চার্চ ও পূর্বে বাট্টিকালোয়া শহরের জিয়ন চার্চ৷ এছাড়া তিনটি ফাইভ স্টার হোটেল সিনামন গ্রান্ড, কিংসবুরি ও দ্য সাংরিলাতেরও হামলা হয়৷ তিনটিই রাজধানী কলম্বোর কেন্দ্রে অবস্থিত৷
ছবি: Reuters/Stringer
শ্রীলঙ্কায় খ্রিষ্টান যারা...
পঞ্চদশ শতাব্দীতে পর্তুগিজ পাদ্রীদের আগমনের পর থেকে শ্রীলঙ্কায় বাড়তে থাকে খ্রিষ্টান জনসংখ্যা৷ বর্তমানে, দেশটির জনসংখ্যার ৭ শতাংশ মানুষ খ্রিষ্টধর্মের অনুসারী৷ এর মধ্যে রয়েছেন রোমান ক্যাথলিক, মেথডিস্ট ও প্রটেস্টান্ট ধারার মানুষ৷
ছবি: Reuters/Stringer
বিদেশিরাও হামলার শিকার
সংবাদসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৫ জন বিদেশি নাগরিক৷ হামলার শিকার হোটেলগুলিতে ছিলেন তাঁরা৷ নিহতদের মধ্যে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের আট বছর বয়সি নাতি জায়ান চৌধুরীও রয়েছে৷
ছবি: AFP/I. S. Kodikara
সহিংসতার ধারা
শ্রীলঙ্কায় মাত্র এক দশক আগেই থেমেছে গৃহযুদ্ধ৷তার আগে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সিনহালিজ ও সংখ্যালঘু হিন্দু তামিলদের মধ্যে দীর্ঘদিন চলে সশস্ত্র লড়াই৷বিগত দশকে গৃহযুদ্ধ থামার পর রবিবারের এ হামলাই সাম্প্রতিক কালে শ্রীলঙ্কায় সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/str
হামলার পেছনে কারা?
শ্রীলঙ্কার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, এই হামলার পেছনে রয়েছে স্থানীয় ইসলামী সংগঠন ন্যাশনাল তৌফিক জামাত৷ দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজিথা সেনারত্নে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, ৭ আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীই শ্রীলঙ্কার নাগরিক এবং তারা তৌফিক জামাতের সাথে জড়িত৷ হামলার পেছনে বিদেশি শক্তির হাত থাকার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেননি তিনি৷হামলায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters
বর্তমান পরিস্থিতি
রবিবার হামলার পর দেশজুড়ে কার্ফু জারি করেছিল শ্রীলঙ্কা সরকার৷ তবে সোমবার সকালে কার্ফু তুলে নেওয়া হয়৷ সোমবার রাত থেকে জরুরি অবস্থা জারি হতে পারে৷ ওপরের ছবিতে বিস্ফোরণের পর বিধ্বস্ত এক গির্জার পাশে স্থানীয় যাজকদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: AFP/I. S. Kodikara
এ হামলা কি এড়ানো যেতো?
শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্যমন্ত্রী সেনারত্নে জানিয়েছেন, পুলিশের কাছে এমন হামলার আশঙ্কার আগাম তথ্য থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে তা জানানো হয়নি৷ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য না এলেও প্রশ্ন উঠেছে – সত্যিই কি পুলিশ এমন তথ্য আগে পেয়েছিল? তাহলে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলে এই ভয়াবহ হামলা তো কিছুটা হলেও এড়ানো যেতো!
ছবি: picture-alliance/AP Photo
8 ছবি1 | 8
জঙ্গিদের স্টুডিও'র সন্ধান
কারফিউ চলাকালে মুসলিম অধ্যুষিত একটি এলাকায় শুক্রবারের অভিযান চালানো হয়৷
এর কয়েক ঘণ্টা আগে আরেকটি বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ৷ তাদের ধারণা হামলাকারীরা ইস্টার হামলা চালানোর আগে এই বাড়িতেই ইসলামিক স্টেটের নেতা আবু বকর আল বাগদাদীর প্রতি আনুগত্য স্বীকারের ভিডিওটি রেকর্ড করেছিল৷ হামলার দুদিন পর ভিডিওটি অনলাইনে প্রকাশ করা হয়৷
বাড়িটি থেকে ডায়নামাইট, আইএসের পতাকা এবং জঙ্গিরা যে পোশাক পরে হামলা চালিয়েছিল, তেমন আরো কয়েকটি পোশাক উদ্ধার করা হয়েছে৷
আইএস হামলার দায় স্বীকার করলেও এর সপক্ষে এখনও কোনো প্রমাণ হাজির করেনি৷