শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা শনিবার সংসদ ভেঙে দিয়ে আগামী ৫ জানুয়ারি পুনরায় নির্বাচনের ঘোষণা করেছেন৷ এই ঘোষণার ফলে দেশটির জন্য ক্ষতিকর রাজনৈতিক অচলাবস্থা আরো অন্তত দুই মাস দীর্ঘায়িত হলো৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার রাতে প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তের ঘোর বিরোধিতা করছে দেশটির ২২৫-আসন বিশিষ্ট সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধিত্ব থাকা দলগুলো৷ তারা মনে করছে, সংসদ ভেঙে দেয়ার এই সিদ্ধান্ত ‘অবৈধ' এবং ‘অসাংবিধানিক'৷
সংসদ ভেঙে দেয়ার আগে অবশ্য পুলিশ বিভাগকেও নিজের হাতে নিয়ে নেন সিরিসেনা৷ তিনি এই বাহিনীকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভূক্ত করেছেন৷ পাশাপাশি তিনি রাষ্ট্রের মুদ্রণ বিভাগেরও দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন, যেটি বিভিন্ন ফরমান এবং ঘোষণাপত্র প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ গত ২৬ অক্টোবর দেশটির তখনকার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে পদচ্যুত করার পর রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমেরও দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছিলেন সিরিসেনা৷
দক্ষিণ এশিয়ার নির্বাচন কমিশনগুলো
বাংলাদেশ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা উঠে যাবার পর দক্ষিণ এশিয়াতে কেবল পাকিস্তানেই এটি চালু আছে৷ তবে এ অঞ্চলে যেমন রাজতন্ত্র আছে, তেমনি আছে এশিয়ার সবচেয়ে পুরনো গণতন্ত্রও৷
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন
বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৯ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি ও সংসদ নির্বাচন, ভোটার তালিকা তৈরি, নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ, সকল স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন ও আনুষঙ্গিক কার্যাদির সুষ্ঠু সম্পাদন কমিশনের দায়িত্ব৷ কমিশন স্বাধীন এবং কেবল সংবিধান ও আইনের অধীন হবেন। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল কর্তৃপক্ষের কর্তব্য।
ছবি: DW/M. M. Rahman
ভারতের নির্বাচন কমিশন
ভারতের নির্বাচন কমিশন পাঁচটি স্বায়ত্ত্বশাসিত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের একটি৷ মূলত লোক সভা, রাজ্য সভা, রাজ্যের বিধানসভা, প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজন করার দায়িত্ব কমিশনের৷ এছাড়া কোনো বিশেষ সময়ে যখন বিদ্যমান আইনে সুরাহা হচ্ছে না, তখন নির্বাচন কমিশনের সেখানে ‘যথাযথ উপায়ে’ ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা আছে৷
ছবি: A.K Chatterjee
পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন
পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে৷ কোনো সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হবার পর বা কোনো কারণে সংসদ বিলুপ্তির পর এই সরকার দায়িত্ব নেয়৷ তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে৷ তবে নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের৷ কমিশন জাতীয়, প্রাদেশিক ও অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করে৷
ছবি: AAMIR QURESHI/AFP/Getty Images
শ্রীলঙ্কার নির্বাচন কমিশন
এশিয়ার সবচেয়ে পুরোনো গণতন্ত্র হলো শ্রীলঙ্কা৷ সেখানেও রাষ্ট্রপতি, সংসদ, প্রাদেশিক ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের৷
ছবি: AP
মালদ্বীপের নির্বাচন কমিশন
মালদ্বীপে আলাদা নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে মাত্র এক দশক আগে৷ ২০০৮ সালের আগষ্টে এই স্বাধীন কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয় নির্বাচন আয়োজন করত৷ পরে এই অফিসটি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের অধীনে চলে যায়৷ রাষ্ট্রপতিই কমিশনার নিয়োগ দিতেন৷
ছবি: ADAM SIREII/AFP/Getty Images
নেপালের নির্বাচন কমিশন
১৯৫০ সালের নেপাল বিপ্লবের মধ্য দিয়ে নেপালের নির্বাচন কমিশনের জন্ম৷ এটি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান৷ শুধু জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন অনুষ্ঠানই নয়, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের নিবন্ধন করার দায়িত্ব রয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশনের কাঁধে৷ ছয় জন কমিশনারের সমন্বয়ে গঠিত কমিশন ছয় বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে৷
ছবি: PRAKASH MATHEMA/AFP/Getty Images
ভূটানের নির্বাচন কমিশন
ভূটানে রাজতন্ত্র আছে৷ তবে সংসদও আছে৷ সংসদের নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন৷ প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, সংসদের স্পিকার, জাতীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলের প্রধানের দেয়া তালিকা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও দুইজন কমিশনারকে নিয়োগ দেন রাজা৷ কমিশনের ক্ষমতাও অনেক৷ নির্বাচন ছাড়াও বিধি তৈরি, নির্বাচন পদ্ধতি রিভিউ করাসহ যে কাউকে তলব, তদন্ত ও কিছু অ্যাডজান্কটিভ ক্ষমতা রয়েছে৷
ছবি: AP
আফগানিস্তানের নির্বাচন কমিশন
যুদ্ধ-বিগ্রহ আর সহিংসতার কারণে আফগানিস্তানে ক্ষমতা বারবার পরিবর্তিত হয়েছে৷ সে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন বা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষমতাতেও তার প্রভাব পড়েছে৷ তবে সংবিধান অনুযায়ী, রেফারেন্ডাম, রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের৷
ছবি: WAKIL KOHSAR/AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
৫ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন ঘোষণার মাধ্যমে সিরিসেনা কার্যত দেশটির পরবর্তী সংসদ নির্বাচন দুই বছর এগিয়ে আনলেন৷ তাঁর সমর্থিত প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, যিনি অতীতে দীর্ঘসময় দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সংসদে নিজের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে যে ব্যর্থ হবেন, সেটা বোঝার পরই নির্বাচন এগিয়ে আনার এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তিনি৷ ৭২ বছর বয়সি রাজাপাকসে দুই সপ্তাহ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেও একবারও সংসদে যাননি৷ তবে, তিনি আগামী ১৭ জানুয়ারি নতুন সংসদদের অধিবেশন বসার আগ অবধি দেশটির নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার প্রধানের ভূমিকা পালন করবেন৷
রাজাপাকসের দলের নেতা সুশীল প্রেমাজয়ন্ত বলেছেন, ক্ষমতার লড়াইয়ের ইতি টানতে এবং নতুন সংসদ গঠনে জনগণকে সুযোগ দিতে সংসদ ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন সিরিসেনা৷
প্রসঙ্গত, রাজাপাকসে এবং ক্ষমতাচ্যুত বিক্রমাসিংহে গত দুই সপ্তাহ ধরে নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ে লিপ্ত ছিলেন৷ সংসদে নিজ জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় রাষ্ট্রপতি তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করলেও সেটা মেনে নেননি বিক্রমাসিংহে৷ বরং নিজেকে ‘বৈধ প্রধানমন্ত্রী' মনে করছেন তিনি৷ এমনকি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনও ত্যাগ করেননি৷
শ্রীলঙ্কায় কার্বন-মুক্ত হোটেল
05:43
এদিকে, শ্রীলঙ্কায় এই রাজনৈতিক সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরো বেশ কয়েকটি দেশ৷ সিরিসেনার সংসদ ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে ওয়াশিংটন বলেছে, ‘‘শ্রীলঙ্কার সংসদ ভেঙে দেয়ার খবর শুনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন৷ এতে করে রাজনৈতিক সংকট আরো গভীর হবে৷ শ্রীলঙ্কার এক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সঙ্গী হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি যে, স্থিতি এবং সমৃদ্ধি বজায় রাখতে দেশটির গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রক্রিয়ার প্রতি সম্মান বজায় রাখা উচিত৷''
উল্লেখ্য, ২ কোটি ১০ লাখ মানুষের দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার পর্যটন খাত অত্যন্ত সমৃদ্ধ৷ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এই খাতে বিরূপ প্রভাবের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা৷