শ্রীলঙ্কায় হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন হাশিম কে?
২৪ এপ্রিল ২০১৯
শ্রীলঙ্কায় হামলার দায় স্বীকার করেছে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস৷ মঙ্গলবার তারা একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে জাহরান হাশিমকে দেখা গেছে৷
বিজ্ঞাপন
শ্রীলঙ্কার সরকারও ইস্টার সানডের দিন পরিচালিত হামলার সঙ্গে হাশিম ও তার প্রতিষ্ঠিত ‘ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত' বা এনটিজে সদস্যরা জড়িত থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে৷ আইএস-এর ভিডিওতে হাশিমকে দেখা যাওয়ার পর সেই আশঙ্কা আরও বেড়েছে৷
রবিবার কয়েকটি গির্জা ও হোটেলে চালানো হামলায় কয়েকজন বিদেশিসহ সাড়ে তিনশর বেশি ব্যক্তি নিহত হয়েছেন৷
স্থানীয় গণমাধ্যম জানাচ্ছে, জাহরান হাশিম ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার কাত্তানকুডি এলাকায় এনটিজে নামে সংগঠনটি গড়ে তোলেন৷ ঐ এলাকার একটি ইসলামি কলেজে হাশিম ভর্তি হয়েছিলেন বলে বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন ‘মুসলিম কাউন্সিল অফ শ্রীলঙ্কা'-র ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিলমি আহামেদ৷ তবে হাশিম পড়াশোনা শেষ করতে পারেনি বলেও জানান তিনি৷
উল্লেখ্য, কাত্তানকুডি এলাকাটি শ্রীলঙ্কার পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এবং সেটি একটি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা৷
আহামেদ জানান, কাত্তানকুডির তাওহীদ মসজিদের সাধারণ মুসলমানরা হাশিমকে বিপজ্জনক মনে করতেন৷ একবার হাশিম তলোয়ার হাতে বের হয়ে মুসলমানদের হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিলেন বলেও জানান তিনি৷
শ্রীলঙ্কায় এই হামলা কি এড়ানো যেতো ?
রবিবার শ্রীলঙ্কায় মোট ৮টি সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের সংখ্যা আপাতত ২৯০৷আহত হয়েছেন ৫০০-রও বেশি মানুষ৷ হতাহতদের মধ্যে অনেক বিদেশি নাগরিকও রয়েছেন৷ বিস্তারিত ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/Stringer
ভয়াবহ ইস্টার সানডে
খ্রিষ্টানদের অন্যতম পবিত্র দিন ইস্টার সানডে৷ এমন দিনেই কলম্বো, নেগোম্বো ও বাট্টিকালোয়া শহরের বেশ কয়েকটি গির্জা ও হোটেলে ঘটে সিরিজ বোমা হামলা৷ শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী এই হামলায় নিহতের সংখ্যা ২৯০, আহত হয়েছেন ৫০০ জনেরও বেশি৷
ছবি: Reuters/Stringer
কোথায় হামলা
বোমা হামলার শিকার গির্জাগুলির মধ্যে রয়েছে উত্তর কলম্বোর সেইন্ট অ্যান্থনি'স শ্রাইন, নেগোম্বো শহরের পাশে সেইন্ট সেবাস্টিয়ান চার্চ ও পূর্বে বাট্টিকালোয়া শহরের জিয়ন চার্চ৷ এছাড়া তিনটি ফাইভ স্টার হোটেল সিনামন গ্রান্ড, কিংসবুরি ও দ্য সাংরিলাতেরও হামলা হয়৷ তিনটিই রাজধানী কলম্বোর কেন্দ্রে অবস্থিত৷
ছবি: Reuters/Stringer
শ্রীলঙ্কায় খ্রিষ্টান যারা...
পঞ্চদশ শতাব্দীতে পর্তুগিজ পাদ্রীদের আগমনের পর থেকে শ্রীলঙ্কায় বাড়তে থাকে খ্রিষ্টান জনসংখ্যা৷ বর্তমানে, দেশটির জনসংখ্যার ৭ শতাংশ মানুষ খ্রিষ্টধর্মের অনুসারী৷ এর মধ্যে রয়েছেন রোমান ক্যাথলিক, মেথডিস্ট ও প্রটেস্টান্ট ধারার মানুষ৷
ছবি: Reuters/Stringer
বিদেশিরাও হামলার শিকার
সংবাদসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৫ জন বিদেশি নাগরিক৷ হামলার শিকার হোটেলগুলিতে ছিলেন তাঁরা৷ নিহতদের মধ্যে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের আট বছর বয়সি নাতি জায়ান চৌধুরীও রয়েছে৷
ছবি: AFP/I. S. Kodikara
সহিংসতার ধারা
শ্রীলঙ্কায় মাত্র এক দশক আগেই থেমেছে গৃহযুদ্ধ৷তার আগে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সিনহালিজ ও সংখ্যালঘু হিন্দু তামিলদের মধ্যে দীর্ঘদিন চলে সশস্ত্র লড়াই৷বিগত দশকে গৃহযুদ্ধ থামার পর রবিবারের এ হামলাই সাম্প্রতিক কালে শ্রীলঙ্কায় সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/str
হামলার পেছনে কারা?
শ্রীলঙ্কার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, এই হামলার পেছনে রয়েছে স্থানীয় ইসলামী সংগঠন ন্যাশনাল তৌফিক জামাত৷ দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজিথা সেনারত্নে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, ৭ আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীই শ্রীলঙ্কার নাগরিক এবং তারা তৌফিক জামাতের সাথে জড়িত৷ হামলার পেছনে বিদেশি শক্তির হাত থাকার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেননি তিনি৷হামলায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters
বর্তমান পরিস্থিতি
রবিবার হামলার পর দেশজুড়ে কার্ফু জারি করেছিল শ্রীলঙ্কা সরকার৷ তবে সোমবার সকালে কার্ফু তুলে নেওয়া হয়৷ সোমবার রাত থেকে জরুরি অবস্থা জারি হতে পারে৷ ওপরের ছবিতে বিস্ফোরণের পর বিধ্বস্ত এক গির্জার পাশে স্থানীয় যাজকদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: AFP/I. S. Kodikara
এ হামলা কি এড়ানো যেতো?
শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্যমন্ত্রী সেনারত্নে জানিয়েছেন, পুলিশের কাছে এমন হামলার আশঙ্কার আগাম তথ্য থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে তা জানানো হয়নি৷ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য না এলেও প্রশ্ন উঠেছে – সত্যিই কি পুলিশ এমন তথ্য আগে পেয়েছিল? তাহলে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলে এই ভয়াবহ হামলা তো কিছুটা হলেও এড়ানো যেতো!
ছবি: picture-alliance/AP Photo
8 ছবি1 | 8
আহামেদ বলেন, প্রায় তিন বছর আগে হাশিম সম্পর্কে তাঁরা পুলিশকে সতর্ক করেছিলেন৷ ‘‘হাশিম আগে একা ছিলেন৷ পরবর্তীতে কোরান শিক্ষার নামে তরুণ প্রজন্মকে মৌলবাদের পথে পরিচালিত করেন তিনি,'' জানান ‘মুসলিম কাউন্সিল অফ শ্রীলঙ্কার ভাইস-প্রেসিডেন্ট আহামেদ৷
উল্লেখ্য, ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে হাশিমের অনেক অনুসারী রয়েছে৷
রবিবারের হামলার সময় হাশিম নিজে আত্মঘাতী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কিনা, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷ ফলে তিনি এখনও বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন, তা নিশ্চিত নয়৷
এদিকে, রবিবারের হামলা চালাতে হাশিমের এনটিজে সংগঠনকে ইসলামিক স্টেট কতখানি সহায়তা করেছে, তা তদন্ত করে দেখছে শ্রীলঙ্কার সরকার৷ তবে আহামেদ বলেন, হাশিমের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ছিল বলে স্থানীয় মুসলমান সম্প্রদায় জানত৷ ‘‘তার সব ভিডিও ভারত থেকে আপলোড করা হতো৷ তিনি মানবপাচারকারীদের নৌকা ব্যবহার করে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে নিয়মিত যাতায়াত করতেন,'' বলে জানান তিনি৷